নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রোফাইল ছবি

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪১

বান্ধবী নীপা এবং নীপার প্রেমিক রুপমের সাথে উত্তরার দিয়াবাড়িতে বেড়াতে যাবার ঘটনাটা নওরীনের জন্য এতোটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে এটা তার কষ্টকল্পনাতেও ছিলোনা। নীপার আহ্বানে সে তাদের সাথে দিয়াবাড়িতে যেতে আগ্রহী হয়েছিলো। নওরীন সচরাচর তার প্রেমিক সাব্বির ছাড়া আর কারো সাথে কোথাও যায়না বলে বন্ধুমহলে তাকে নিয়ে আড়ালে প্রচুর হাসাহাসি করা হয়। এই বিষয়টা নওরীন ভালো করেই জানে। সে ভেবেছিলো নীপা এবং তার প্রেমিকের সাথে দিয়াবাড়িতে গেলে হয়তো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করার আগে অন্যরা এরপর থেকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে।

দিয়াবাড়িতে গিয়ে নওরীন মুগ্ধ হয়েছিলো। সত্যিকার অর্থেই। ঢাকা শহর দিনে দিনে সৌন্দর্যহীন এক প্রেতের শহরে পরিণত হচ্ছে এই কথাটা সাব্বির প্রায়ই বলে থাকে। খুব ভুল কিছু বলেনা। এরকম স্বচ্ছ খোলা জায়গার সন্ধান ঢাকা শহরে পাওয়াটা দুষ্কর। অবশ্য এই সৌন্দর্যের মাশুলও মাঝেমাঝে দিতে হয়। বিশেষত দলবেঁধে ঘোরাফেরা করা বখাটেদের উৎপাত অনেকের জন্যেই দুঃসহ ঠেকে। দিয়াবাড়িতেই স্থানীয় বখা ছেলেপেলেদের কাছে হেনস্থা হবার গল্প নওরীন অনেক শুনেছে। তাই সে কখনো সাব্বিরকে নিয়ে এখানে আসবার ব্যাপারে চিন্তাই করেনা। সাব্বির, মানে তার প্রেমিক নিজের বয়সীদের অন্যান্য ছেলেপেলেদের তুলনায় যথেষ্টই সফট। নওরীন মনে করে সাব্বিরের মধ্যে ম্যানলীনেস যথেষ্টই কম। একদঙ্গল বখা ছেলেপেলেকে নিজের পুরুষোচিত ম্যানারিজম দিয়ে ট্যাকল করা তার পক্ষে অসম্ভব বলেই নওরীন মনে করে। সম্পর্কের শুরুতেই প্রেমিক সম্পর্কে সে এই বিষয়টি টের পেয়েছিলো। এই নিয়ে তার ভেতরে অনেক খেদ থাকলেও সাব্বিরকে বদলানো যায়নি। সে যেমন ছিলো তেমনই আছে। কিছুমাত্র বদলায়নি। নওরীন হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের বহুবিধ ছোটখাটো শখ আহ্লাদকে যতোটা সম্ভব কাটছাট করে সাব্বিরের সাথে প্রেম করে যাচ্ছে। কিন্তু বান্ধবী এবং বান্ধবী প্রেমিকের সাথে এখানে বেড়াতে এসে এবং ঘন্টা তিনেক চমৎকার সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরবার পরে নওরীনের ভাবনার জগতে এক নতুন ঝড় আছড়ে পড়লো।

নীপার প্রেমিক রুপম নিখাদ কর্পোরেট চাকুরে। কিন্তু ছাত্রজীবন থেকেই ফটোগ্রাফি তার শখের বিষয়। নীপার সাথে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হবার পর থেকেই নিজের ক্যামেরায় প্রেমিকার অসংখ্য ছবি সে তুলে দিয়েছে। ডিএসলার ক্যামেরায়। এটা ইয়াং জেনারেশনের যারা ছবি তোলে তাদের মাঝে এক ধরণের কম্পিটিশনের মতো। ডিএসলার ক্যামেরা যোগাড় করো, ছবি তোলো। সাবজেক্ট হিসাবে প্রকৃতি, নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকো। তাদের অজস্র ছবি তোলো। অতঃপর মাপমতো কালারের এদিক ওদিক, এডিটিং ইত্যাদি করে ফেসবুক কি টুইটারে আপলোড করে দাও। নওরীন আগে থেকেই দেখেছে নীপা নিজের কোন নতুন ছবি প্রোফাইল পিক করলে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পাঁচশো থেকে ছয়শোজনের মতো সেই ছবিতে লাইক দেয়। অনেকে খুব প্রশংসাসূচক কমেন্টও করে কমেন্ট বক্সে। বেশীরভাগ কমেন্টই থাকে নীপার ছবির রুপে মুগ্ধ যুবক ছেলেদের। বিষয়টা নীপার খুবই পছন্দ এই কনফেশন বান্ধবীর মুখ থেকে নওরীন বহু আগেই শুনেছে। রুপম নিজে ফটোগ্রাফার এবং ডিএসলারে ছবি তোলার ব্যাপারে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে অনেকের ফ্যাসিনেশনের ব্যাপারে সে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল বলে প্রেমিকার প্রোফাইল ছবিতে মুগ্ধ যুবককুলের মুগ্ধতার ব্যাপারে সে যথেষ্টই ফ্লেক্সিবল। দিয়াবাড়ি থেকে চলে আসবার কিছু আগের সময়ে রুপম লক্ষ্য করছিলো বান্ধবীর ছবি তোলা দেখতে দেখতে নওরীন নিজে উসখুস করছে। রুপম সাথে সাথে প্রেমিকার বান্ধবীকে এপ্রোচ করে,

“নীপার তো অনেক ছবি তুলে দিলাম। এবারে তুমি আসো। তোমার ছবি তুলে দেই।”

“না না ভাইয়া। আমি ছবি তুলবোনা।” বান্ধবীর ফটোগ্রাফাত প্রেমিকের উদ্দেশ্যে নওরীন কথাগুলো ভদ্রতাবশত বলে বটে কিন্তু সেই নম্রতা প্রদর্শনে তার জান বেরিয়ে যাবার উপক্রম হয়।

ছবি তোলার প্রতি দুর্বল অনাগ্রহ নওরীন আর বেশী সময় ধরে রাখতে পারেনা। রুপম তার অনেকগুলো ছবি তুলে দেওয়ার পরে তারা যখন দিয়াবাড়ি থেকে বেরিয়ে অতঃপর সন্ধ্যাবেলা যার যার ঘরে ফিরে যায় তারপরে রাতেরবেলায় সে রুপমের কাছ থেকে নিজের ছবিগুলো নিয়ে সেগুলো গভীর মনোযোগে দেখতে থাকে। ফটো এডিটিঙের কাজ নওরীন আগে থেকেই জানতো। নিজের প্রতিটা ছবি সে মাপমতো কালার, সাইজ এডিট করে সে ফেসবুকে একটা ফটো এলবাম খুলে। তারপরে সেখান থেকে যেই ছবিটা তার সবচেয়ে বেশী পছন্দ সেটাকে প্রোফাইল ছবি করে।

ঘটনার সূত্রপাত সেদিন থেকেই। ছবিটি পাবলিক করা ছিলো বলে ফ্রেন্ডলিস্টের বাইরেও যারা আছে তাদের পক্ষেও সেই ছবিটিতে লাইক কমেন্ট করাটা সম্ভবপর হয়ে উঠে। নওরীনের সেই প্রোফাইল ছবিতে সাতশোর মতো লাইক এবং নব্বইটার মতো কমেন্ট আসে। কমেন্টগুলোর প্রায় নব্বই শতাংশই আসে নওরীনের ছবির রুপে মুগ্ধ যুবককূলের। যাদের অনেকেই এই মর্মে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে থাকে যে নওরীনের কোন সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত। এরপর থেকে নিয়মিতই দেখা যায় নওরীন আহ্বান পেলেই নীপা এবং রুপমের সাথে দর্শনীয় কোন জায়গায় ঘুরে আসে। সেটা কার্জন হল থেকে শুরু করে সোনারগাঁ যে কোন জায়গাতেই। পুরা বিষয়টা একটা রুটিনের মতো দাঁড়িয়ে যায়। নীপা এবং রুপম নওরীনের এই নব্য জন্মানো ফ্যাসিনেশনের বিষয়ে খুব ভালোভাবেই অবহিত ছিলো। এমনিতেই নওরীনের ফ্যাশনের প্রতি অনীহা এবং অন্যান্য বিমুখতার বিষয়ে তাদের ভার্সিটিতে নওরীনকে নিয়ে বন্ধুবান্ধবমহলে প্রচুর হাসাহাসি করা হয়। নীপা নিজেও আগে মাঝেমাঝে সেই হাসিঠাট্টায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু তার প্রিয় বান্ধবী ধীরে ধীরে রিজিড স্বভাব থেকে বেরিয়ে এসে অন্যান্য মেয়েদের মতোই ছবি তোলা এবং ঘুরতে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে দেখতে পেয়ে সে খুশী হয়। নীপা বান্ধবীকে ক্রমশ আরো বেশী করে তাদের সাথে ঘুরতে যাওয়া এবং ছবি তোলার বিষয়ে এনকারেজ করে। নওরীন সেই প্রচেষ্টায় সাড়া দেয়। যখন সে নিজের খুব পছন্দের কোন ছবি প্রোফাইল ছবি হিসাবে দেয় তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে সেই ছবিতে হাজারের মতো লাইক পড়ে। কমেন্ট থাকে শত শত। যার প্রায় প্রতিটাই নওরীনের রুপের প্রতি মুগ্ধতা ঝরে ঝরে পড়া।

কিন্তু প্রেমিকার এই রুপান্তরের বিষয়টিকে সাব্বিরের পক্ষে মেনে নেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আজকাল নওরীন কথায় কথায় তার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আর আট দশটা ছেলের মতো সে কেনো শিভালরাস নয় তার বিরুদ্ধে নওরীনের প্রধান অভিযোগ এটাই। সম্পর্কের শুরু থেকেই তার প্রতি এই নিয়ে নওরীনের মনে খেদ আছে এই সত্যটা সাব্বিরের অজানা নয়। কিন্তু প্রেমিকার কথানুযায়ী নিজেকে সে বদলাবে এই ব্যাপারটাই তার কাছে অচিন্তনীয়। বদলাবার কারণ ন্যায্য কি অন্যায্য যাই হোক। সাব্বির সচরাচর নওরীনের সাথে কোন ফুডশপ কিংবা কফিশপে বসেই ডেটিং করে। কিন্তু ইদানিং সে লক্ষ্য করেছে কিছু সময় বসে থাকার পরেই নওরীন বাইরে কোথাও বসে গল্প করার জন্য অধীর হয়ে উঠে। বিষয়টা এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও কথা ছিলো। কিন্তু সাব্বিরকে যা চূড়ান্তভাবে বিরক্ত করে তা হলো তাকে একটা ডিএসলার ক্যামেরা কিনতে বলা নিয়ে নওরীনের ধারাবাহিক অনুযোগ। একটা ডিএসলার ক্যামেরা কেনার মতো আর্থিক সঙ্গতি থেকে সাব্বিরের বাস্তবতা অনেক দূরে বসবাস করে নওরীন তা ভালো করেই জানে। তবুও প্রেমিকের প্রতি তার আচরণ নূন্যতম সংবেদনশীলতা ধারণ করেনা এই কথাটা বারবার নওরীনকে বোঝাতে যেয়েও সাব্বির ব্যর্থ হয়েছে।

একদিন রাতে ফেসবুকে চ্যাটিং করতে করতে নওরীনের সাথে সাব্বিরের তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেলো। সাব্বির কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে তার সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তাটুকুও না বলে নওরীন নিজের কোন ছবিতে তার প্রতি মুগ্ধতাসূচক কমেন্টগুলোর রিপ্লাই দেওয়ার প্রতিই বেশী আগ্রহী। তাছাড়া প্রেমিকার এই সকল অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনে তার ভেতরে সন্দেহের বীজ বপন করে দিয়েছিলো। প্রেমিকার ব্যাপারে ইনসিকিউরিটি, অন্তর্গত জেলাসীতে প্রভাবিত হয়ে এক ফেইক ফেসবুক আইডি খুলে নওরীনের সাথে চ্যাট করতে শুরু করেছিলো। সাব্বির চ্যাট করতে করতে লক্ষ্য করেছে চ্যাটিঙে নওরীনের রেসপন্স যথেষ্টই ফ্লার্টিয়াস। সাব্বির নিজেও অতীতে অনেক মেয়ের সাথে এভাবেই কথা বলেছে দেখে ফাঁকফোকর ধরতে তার বিশেষ বেগ পোহাতে হলোনা। সাব্বির একে একে নওরীনের এতোদিনকার অসঙ্গতিগুলার কথা তাকে গুছিয়ে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলে চ্যাটিঙেই টের পেলো নওরীন স্তব্ধ হয়ে তার কথাগুলো শুনছে। আসলে শুনতে বাধ্য হচ্ছে। কেননা নওরীন ততোমধ্যে নির্বাক, বোধশূন্য। পরেরদিন শুক্রবার। কোথাও বেরুবার তাড়া নেই। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চা নাস্তা খেয়ে ফেসবুকে লগ ইন করতে করতে গতোরাতে নওরীনের সাথে ঘটে যাওয়া এসপার ওসপারের কথা চিন্তা করতে সাব্বিরের চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠে। সে ফেসবুক খুলেই দেখে ইনবক্সে একটি মেসেজ আসবার লাল দাগ। সেটায় ক্লিক করতেই নওরীনের বিশাল একটা থ্রেড সাব্বিরের চোখের সামনে চলে আসলো।

“তোমাকে কথাগুলা কখনো জানাইনাই। কালকে তুমি যখন আমাকে আমার সমস্যাগুলার কথা বলে শেষ করলা তারপরে আমি সারারাত ঘুমাইতে পারিনাই। তারপরে মনে হইলো তোমাকে কথাগুলা জানাই। ইন্টারে পড়ার সময়ে আবির নামে একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন ছিলো। ছেলেটা আমার থেকে ছয় সাত বছরের সিনিয়র ছিলো। সেই সময়ে আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম না। শুকনা ছিলাম, ফ্যাশন, রুপচর্চার ব্যাপারেও আমার কোন আগ্রহ ছিলোনা। এই নিয়ে আবির আমাকে অনেক কথা শুনাইতো। আমাদের রিলেশন যখন এক বছর হবে তখন একদিন আমি বান্ধবীদের সাথে লেকে বেড়াইতে গিয়ে আবিরকে অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতে দেখি। দেখে আমি সোজা তার সামনে গিয়ে তাকে কনফ্রন্ট করলে সে আমাকে সেই মেয়েটার সামনেই আমার চেহারা নিয়ে বিশ্রী সব কথা বলে। তারপরে অনেকদিন আমি সেই চিটিঙের বিষয়টা ভুলতে পারিনাই। নীপা আর তার বয়ফ্রেন্ড রুপম ভাইয়ার সাথে যেদিন প্রথম দিয়াবাড়িতে গেছিলাম সেদিন নীপার ছবি তোলা দেখতে দেখতে আমার পুরানো কথা মনে পড়তেছিলো। রুপম ভাইয়া তখন আমাকে ছবি তুলার কথা বললে আমি না করতে পারিনাই। সেদিন রাতে নিজের ছবিগুলা দেখে আমার মনে হইছিলো ছবিগুলা এডিট করে তারপর ফেসবুকে আপলোড করি। সেদিন যেই প্রোফাইল পিকটা দিছিলাম সেখানে অনেক লাইক দেখে আমার মনে হইলো…………………………………………”

নওরীনের সম্পূর্ণ থ্রেড সাব্বিরের আর পড়া হয়ে উঠেনা। ডিএসলার ক্যামেরা, এডিট করা প্রেজেন্টেবল প্রোফাইল পিক, সেই ছবিতে লাইকের বন্যা, প্রশংসায় উপচে উঠা কমেন্টবক্স। খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনেক। কিন্তু এদের কার হাতে নাটাইটা ধরা আছে? নাকি অন্য কেউ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.