নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ক্যান্ডাল

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৭

আজকে ছুটির দিন। অফিসে গিয়ে এফিশিয়েন্সীর নামে অনর্থক ঘ্যানঘ্যান করা নেই, এসি রুমের শীতলতায় একা একা বিহ্বলতায় ডুবে থাকবার কমেডি নেই, বসকে খুশী করতে আহাম্মকের মতো দাঁত ক্যালানো নেই। কিন্তু এরকম বহুবিধ আনন্দময় নেই এর সান্নিধ্য এই মুহূর্তে তারেক উপভোগ করতে পারছেনা।

ছুটির দিনে সারাদিন ধরে নেশাগ্রস্তের মতো ঘুমিয়ে থাকাটা তারেকের কখনোই পছন্দ নয়। তার ধারণা কর্পোরেট লাইফের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সপ্তাহের ছয়টা দিন গচ্চা দিয়ে ছুটির দিনে বেঘোরে ঘুমানোর প্রতীকি অর্থ হলো এট দি এন্ড অব দি ডে সেই ছুটির দিনটাও কর্পোরেশনের কাছে বন্ধক রেখে দেওয়া। এই কারণে তারেক পেশাগত জীবনের একেবারে শুরু থেকে সচেতনভাবেই ছুটির দিনটিকে যতোটা পারে উপভোগ করবার ব্যাপারে সিরিয়াস। স্ত্রী সামিয়া নিজেও আপাদমস্তক কর্পোরেট বলে স্বামীর এই ভাবনার সাথে সহজেই একাত্মতা পোষণ করতে পারে। এই ছুটির দিনটা উপভোগের শুরুটা তারা করে বারান্দায় একসাথে কফি খেয়ে। পত্রিকা দেখতে দেখতে, উল্লেখযোগ্য কোন খবর কি শিরোনাম চোখে পড়লে কফি খেতে খেতেই অপরের সাথে মতামত শেয়ার করার ব্যাপারটা তাদের কাছে দারুণ এনজয়বল। আজকেও তারা কফি খেতে খেতেই পত্রিকা খুলেছিলো। বিপত্তিটা ঘটলো তখনই।

“ব্যাপারটা খুবই স্যাড তাই না?” প্রশ্নটা করার পরে সামিয়ার পরিবর্তে বারান্দার গ্রিল অতিক্রম করে বাইরের যতোটুকু দেখা যায় তার দিকে চেয়ে থাকলো তারেক।

“আমরা কিন্তু এখন প্রফেশনাল নই, পার্সোনাল লাইফ লিড করছি।” সুযোগ পেলেই স্ত্রীর উইট করার অভ্যাসের সাথে ভালোভাবে পরিচিত বলে তার দুঃখ প্রকাশের ধরণকে খোঁচা দিয়েই সামিয়া কথাটা বলেছে বুঝতে তারেকের কষ্ট হলোনা।

সামিয়াকে কিছু বলতে গিয়েও বললোনা তারেক। বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলো। ঘটনাটা বেশ আলোড়ন সৃষ্টিকারী। এক শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী গতোকাল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। গলার সাথে ফাঁস লাগাতে গিয়ে। অভিনেত্রীর বাসার কাজের বুয়ার তড়িৎ চিৎকারের কারণে তড়িঘড়ি করে অভিনেত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আত্মহত্যার ঘটনাটি যতোটুকুই না আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম তার তার চাইতে বেশী জুসি গসিপিং বিষয় সুইসাইড এটেম্পটের সম্ভাব্য কারণ। দুই মাস আগেই হবে অভিনেত্রীটির একটি স্ক্যান্ডালাস ভিডিও ফেসবুক ইউটিউব হয়ে চারিদিকে ভাইরাল হয়ে পড়েছিলো। যা হয়ে থাকে আর কি, মানুষজন প্রথম প্রথম খুব আমোদ পায়। একজনকে নিয়ে রসালো আলাপ করার সুযোগ হয়েছে, তাও কিনা জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে নিয়ে। তাকে চোখের সামনে কম্প্রোমাইজিং সিচুয়েশনে দেখা গেছে এই আনন্দের তুল্য আর কি হতে পারে? অতঃপর দাও সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটে ভিডিওটি স্প্রেড করে। নিজে মৌজ করে দেখো, বন্ধুবান্ধবদের ফেসবুকে ইনবক্স করে ভিডিওর লিঙ্ক দাও কিংবা ফেস টু ফেস আড্ডাতে রসিয়ে রসিয়ে নিজের সমস্ত সিক্রেট ডিজায়ারগুলোকে আলোচনার নিমিত্তে বের করে এনে সবাই মিলে মজা লুটো। যারা যথেষ্টই চতুর তারা সচেতনভাবে নিজেদের প্রবৃত্তিগুলোকে গোপন রেখে ফেসবুকে নীতি নৈতিকতা সমাজের অবক্ষয় ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ে গরুর রচনা লিখে লাইক কমেন্ট শেয়ার এপ্রিসিয়েশনের দুর্দমনীয় ভার্চুয়াল নেশার রিয়েলিটিতে বুঁদ হয়ে নিজেদের ভাসিয়ে দেবে। কিছুদিন এই নিয়ে ব্লগ ফেসবুক সরগরম থাকবে। বন্ধুবান্ধবদের সাথে গসিপ করার জন্য আকর্ষনীয় টপিক পাওয়া যাবে, অতঃপর কিছু সময় পরেই সবকিছু আবার আগের মতো। পলিটিক্স, ইনফ্লেশন, মার্কেট ফেইলিওর, ট্রাফিক জ্যাম, রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টালিজম, ক্রিকেট, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ-চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, বলিউড, টালিউড, ঢালিউড, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম এইসবে মিডিয়া নিউজ পাবলিকেশন্স ব্লগ ফেসবুক টঙের দোকান কফিশপ পুনরুদ্যমে মেতে উঠবে। এমনটাই হয়ে এসেছে সবসময়। এমনটাই হবার নিয়ম। এই অনিবার্যতার বাইরে কোন হাইলী ফিকটিশাস ভাবনার কথা তারেকের মস্তিষ্কের ধারকাছ দিয়েও যায়না। কিন্তু সেই ভিডিও স্প্রেড করার দুই মাসের মাথায় অভিনেত্রীর এই ফেইলড সুইসাইড এটেম্পট খুব স্বাভাবিকভাবেই সমগ্র ঘটনাটাকে পুনরায় জনমানুষের চেতনায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

এই আলোচিত বিষয়টা নিয়ে তারেক কয়েকদিন খুব মগ্ন হয়ে থাকলো। যখনই বাসায় থাকে তখনই সামিয়ার সাথে কথোপকথনের মধ্যে কোন না কোনভাবে টপিকটা তারেক তুলবেই। স্কুলের সেই কুমিরের রচনার মতো। বিয়ের আগে দুই বছরের কোর্টশিপ ইনক্লুড করলে স্বামীকে কমসে কম আট বছর হবে সে চেনে। এই কারণে বিষয়টার প্রতি তারেকের আপাত অবসেশন দেখে মাঝেমাঝে তার ভ্রু কুঁচকে উঠলেও এই নিয়ে ঝগড়া কি মান অভিমান করার কথা চিন্তা আনা সামিয়ার কাছে নেহায়েতই ছেলেমানুষী। সে ভালো করেই জানে নিতান্তই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাঝেমাঝে অবসেসড হয়ে যাওয়াটা তারেকের অন্যতম প্রিয় পাসটাইম। এক ধরণের ভাবনাবিলাস। যা ছাড়া তারেকের পক্ষে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব বলে সামিয়া মনে করে। কিন্তু সময়ের ফাঁকে চকিতে ঘটনাটির কথা সামিয়া নিজেও ভাবে। চিন্তা করে সেই অভিনেত্রীর কথা। আচ্ছা, পাবলিকের কাছে তার ইমেজটা কি রকম দাঁড়াতে পারে? একে তো কনফিডেনশিয়াল একটি ভিডিও পাবলিক হয়ে গেলো তার পরে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা- আম পাবলিক খুব সম্ভবত যুগপৎভাবে পুলকিত হবে অতঃপর অভিনেত্রীটির প্রতি সমবেদনায় জর্জরিত হবে। নারীপুরুষ নির্বিশেষে সোসাইটির প্যাট্রিয়ার্কিক ভ্যাল্যুজের কানাগলি সামিয়ার চিনতে আর কিছু বাকি আছে? অন্তত সে নিজে তা করেনা। কাজেই একটা গোপন নির্জন আনন্দের মাঝে আম পাবলিক ঘুরপাক খাবে তা সহজেই অনুমেয়। যেহেতু অভিনেত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে অর্থাৎ জীবিত রয়ে গেছে কাজেই দ্বিতীয় ধাপে এসে পাবলিক তার প্রতি সমব্যথী হবে। সমগ্র ব্যাপারটাকে পাবলিক সাইকোলজীর জায়গা থেকে এনালাইজ করে সামিয়া যা পায় তা খুবই সহজ। প্রথম ধাপে পাবলিক ইতোমধ্যেই অভিনেত্রীর অসহায়ত্বে পুলকিত। এবারে অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাপে তারা অভিনেত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। যেহেতু সে আত্মহত্যার এটেম্পট করে ফেলেছে। অর্থাৎ এই কাজের মাধ্যমে অভিনেত্রী স্বয়ং ভিডিওটির ব্যাপারে নিজস্ব অপরাধবোধের ব্যাপারটা গোপন করতে পারেনি। পাবলিকলীই এক্সপোজ করে দিয়েছে।

তারপর যথারীতি যা হয় আর কি। নানাবিধ ব্যস্ততা, আপাত তুচ্ছ সব ঘটনার ডামাডোলে সবার মতো তারেক আর সামিয়াও অভিনেত্রীর বিষয়টি বিস্মৃত হয়ে নিজেদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। মাস চারেক কেটে গেলো। বাংলা কার্তিক মাস হবে, হাঁটতে বেরোলে শরীরে দোলা দেওয়া বাতাসকে অনুভব করা যায় এমন এক রাতে তারেক অফিস থেকে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরলে সামিয়া অবাক হয়। ব্যাপারটা কি? স্বামীকে অফিস থেকে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে দেখবার ঘটনাটা এতোটাই বিরল যে সামিয়া সেই তারিখ পর্যন্ত মনে রাখতে পারে। রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়ে তার হাসিমুখের কারণ জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই তারেক ব্রিফকেস থেকে একটা পেপার বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সামিয়ার দিকে চেয়ে বলে ‘পড়ো।’ বিস্মিত সামিয়া পত্রিকাটি হাতে নিয়ে খুঁজতে খুঁজতে শেষের দিকের একটি পৃষ্ঠায় নিউজটি দেখতে পায়। শিরোনাম দেখেই বোঝা যায় সাংবাদিক বেশ যত্ন করে ছেপেছে। সারমর্ম হলো আত্মহত্যার চেষ্টা করা সেই অভিনেত্রী অবশেষে পুনরায় অভিনয়ে ফিরবার ইচ্ছা পোষণ করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই তাকে পুনরায় দাপটের সাথে মিডিয়ায় দেখা যাবে অভিনেত্রী নিজে ঘোষণা দিয়েছে।

তারেক ততোমধ্যে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পুরাদস্তুর ফ্রেশ। মুখে এক ধরণের বিদ্রুপমাখা হাসি। তার চেহারায় সহজাত এক ধরণের জেল্লা আছে যা স্পষ্টতই প্রকাশ্য। সেদিকে তাকাতে তাকাতে সামিয়ার মনে হলো তাকে করুণার চাইতে আর বেশী কিছু করার ক্ষমতা তারেকের কখনোই ছিলোনা। অভিনেত্রীর সেই ফেইলড সুইসাইড এটেম্পটের ঘটনাটা তাদের দুইজনের জন্যেও স্ক্যান্ডালাস হয়ে গেছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৩

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: সুন্দর ! ভাল লাগল !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.