নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Life is as a gas belun..।

রুবেল জামান

জিবনের অর্থ খুজে বেড়াই, খুঁজত চাই কেন এত অমিল!

রুবেল জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোয়ান্টাম মেথড ধর্মবা ইসলামবিরুদ্ধ কি না?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

কোয়ান্টাম মেথড ধর্ম
বা ইসলামবিরুদ্ধ কি না?
ইসলামবিরুদ্ধ কোনো কিছু
এতে আছে কি না?
এব্যাপারে জানতে হলে ইসলামের
বেসিক জ্ঞান থাকা একান্ত আবশ্যক।
তা না হলে বিভ্রান্ত হবার সমুহ
সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামের মৌলিক
বিষয়গুলো, ইমান-আকিদা, তাওহিদ,
কুফর, তাগুত, বিদআত এসব
বিষয়গুলো সম্বন্ধে পরিস্কার
ধারনা থাকা দরকার।
কোয়ান্টাম মেথড এর মৌলিক
বিষয়গুলোও জানতে হবে। এর মূল উৎস,
উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, কথা, কাজ, বিশ্বাস
ইত্যাদিও বিবেচনায় নিতে হবে।
ইসলামের মৌলিক
বিষয়গুলো এবং কোয়ান্টাম মেথড এর
মৌলিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলেই
এর বৈসাদৃশ্যগুলো ধরা পরবে।
কোয়ান্টাম মেথড এর মৌলিক
বিষয়গুলো ও এর মূল উৎস, উদ্দেশ্য,
লক্ষ্য, কথা, কাজ, বিশ্বাস ইত্যাদিসহ
এর খোল-নলচে পুরোটাই ইসলাম
বিরোধী।
আমরা এখানে কোয়ান্টাম মেথড এর
মৌলিক বিষয়গুলো ইসলামের শিক্ষার
আলকে আলোচনা করবো।
দেখবো কোয়ান্টাম মেথড
সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
কোয়ান্টাম মেথড : মূল উৎস
কোয়ান্টাম মেথড এর মূল উৎস
খুজলে আমরা দেখবো এই
মেথডটি উৎসারিত
হয়েছে নাস্তিক্যবাদ (atheism) থেকে।
কোয়ান্টাম মেথড এর মূল বইপত্র
বা প্রকাশনার পলে পলে,
ছত্রেছত্রে এর সাক্ষ্য ছড়িয়ে আছে।
কোয়ান্টাম মেথড এর মূল বই
‘কোয়ান্টাম মেথড’
থেকে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-
ধারনা ঋদ্ধ উদ্ধৃতি হাজির করবার
আগে নাস্তিক্যবাদ
কি তা জেনে নেয়া যাক।
নাস্তিক্যবাদ : উইকিপিডিয়ায়
নাস্তিক্যবাদ সম্বন্ধে বলা হয়েছে -
“নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি ভাষায়:
Atheism; অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ,
নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনের নাম
যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার
অস্তিত্বকে স্বীকার
করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত
এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির
ব্যাখ্যা দেয়া হয়। আস্তিক্যবাদ এর
বর্জন কেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়।
নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয়
বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর
প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয়
বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই
এখানে মুখ্য।
ইংরেজি ‘এইথিজম’(Atheism) শব্দের
অর্থ হল নাস্তিকক্য বা নিরীশ্বরবাদ।
এইথিজম শব্দটির
উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ‘এথোস’ (ἄθεος)
শব্দটি থেকে। শব্দটি সেই সকল
মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের
অস্তিত্ব নেই
বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর
প্রতি অন্ধবিশ্বাস
কে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ
করে। দিনদিন মুক্ত চিন্তা,
সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের
সমালোচনা বৃদ্ধির
সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার
ঘটছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম
কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক
বলে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমান বিশ্বের
জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের
নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯%
মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না।
জপানের ৬৪% থকে ৬৫% নাস্তিক
অথবা ধর্মে অবিশ্বাসী।
রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ৪৮%
এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নে ৬% (ইতালী)
থেকে শুরু করে ৮৫% (সুইডেন) পর্যন্ত।
পশ্চিমা দেশগুলোতে নাস্তিকদের
সাধারণ ভাবে ধর্মহীন বা পরলৌকিক
বিষয় সমূহে অবিশ্বাসী হিসেবে গণ্য
করা হয়। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের মত যেসব
ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করতে হয় না, সেসব ধর্মালম্বীদেরকেও
নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত
ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের
দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ
এবং প্রকৃতিবাদে বিশ্বাস করে।
নাস্তিকরা কোন বিশেষ মতাদর্শের
অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ
কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না।
অর্থাৎ ব্যক্তিগত
ভাবে যে কেউ,যে কোন
মতাদর্শে সমর্থক
হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র
এক জায়গাতেই,আর তা হল ঈশ্বরের
অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।
প্রাচীন ভারতীয় নাস্তিক্যবাদ ও
হিন্দু ধর্মে নাস্তিক্যবাদ
হিন্দু ধর্ম একই সাথে আস্তিক-নাস্তিক
সম্পর্কিত,অনেকটা সংবেদনশীলও।
ভারতীয় দর্শনের উল্লেখযোগ্য প্রধান
নয়টি দার্শনিক-প্রস্থানের
তিনটিকে বলা হয় নাস্তিক দর্শন,
এবং বাকি ছয়টিকে একসাথে বলা হয়
আস্তিক ষড়দর্শন। নাস্তিক দর্শন
তিনটি হলো চার্বাক-দর্শন, জৈন-দর্শন
ও বৌদ্ধ-দর্শন।
পৃথিবীতে জনসংখ্যার আধিক্য
বিবেচনায় প্রধান
চারটি ধর্মাবলম্বীদের
একটি হলো বৌদ্ধ। অথচ এই বৌদ্ধধর্ম ও
জৈনধর্ম দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠিত
দুটি নাস্তিক দর্শনের উপর!
নাস্তিকেরা নিশ্চয়ই বাহ্যবস্তুবাদী।
আস্তিকেরা ভাববাদী। কিন্তু জটিলতার
আকর্ষণটা এই যে,বাহ্যবস্তুবাদীর
দলে যেমন নাস্তিক মতাদর্শী রয়েছেন
তেমনি আস্তিকও রয়েছেন বহাল
তবিয়তে। একইভাবে ভাববাদীর দলেও
আস্তিক নাস্তিক
মিলিয়ে কয়েকটি দর্শনের মুখর
উপস্থিতি। যেমন, নাস্তিক
সম্প্রদায়ের মধ্যে চার্বাক দর্শন
এবং আস্তিক সম্প্রদায়ের ন্যায়,
বৈশেষিক ও
মীমাংসা দর্শনগুলো হলো দারুণভাবে বাহ্যবস্তুবাদী।
আর বাহ্যজগতকে অসত্য,
মিথ্যা বা মায়া বলে মনে করা চরম
ভাববাদী দর্শনের
কাতারে রয়েছে নাস্তিক সম্প্রদায়ের
জৈন ও বৌদ্ধ দর্শন এবং আস্তিক
সম্প্রদায়ের সাংখ্য,যোগ ও বেদান্ত
দর্শন।
জগত-স্রষ্টা হিসেবে কোন সর্বজ্ঞ-
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অস্তিত্ব
স্বীকার প্রসংগে আবার দর্শনগুলোর
মধ্যে রয়েছে ভিন্ন রকমের
শ্রেণীবিভাগ। জগৎ¯স্রষ্টা ঈশ্বরের
অস্তিত্বকে যারা স্বীকার করেন
তাদেরকে বলা হয়
ঈশ্বরবাদী এবং যারা ঈশ্বরের
অস্তিত্ব স্বীকার করেন
না তাদেরকে বলা হয় নিরীশ্বরবাদী।
অবশ্য অদ্বৈত-বেদান্ত
দার্শনিকেরা আবার প্রতিপক্ষ
দার্শনিকদের যুক্তির
জালে আটকে ঈশ্বর প্রসঙ্গ
এড়িয়ে নিজেদেরকে কৌশলে ব্রহ্মবাদী হিসেবে দাবী করে থাকেন।
এক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় ব্যাকরণের
সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ পাণিনির
‘অষ্টাধ্যায়ী’র সংশ্লিষ্ট ব্যাকরণসূত্র
উল্লেখ করা যেতে পারে। পাণিনির
প্রাচীনত্ব নিয়ে দ্বিমত না-থাকলেও
তার আনুমানিক সময়কাল ধরা হয়
খ্রীস্টপূর্ব ৬০০-৪০০ এর মধ্যে।
পাণিনি তাঁর
ব্যাকরণসূত্রে ‘অস্তি নাস্তি দ্বিষ্টং মতিঃ’-
এর মাধ্যমে দুটি বিপরীত মত-গোষ্ঠির
উদ্ধৃতি টেনেছেন। এই
সূত্রানুসারে ‘দ্বিষ্টং পরলোকো অস্তি’
অর্থাৎ পরলোক আছে এরূপ বুদ্ধি বিশিষ্ট
ব্যক্তিকে আস্তিক
এবং ‘দ্বিষ্টং পরলোকো নাস্তি’ অর্থাৎ
পরলোক নাই এরূপ বুদ্ধি বিশিষ্ট
ব্যক্তিকে নাস্তিক বলা হয়েছে।
নাস্তিক্যবাদ বা নিরীশ্বরবাদ
একটি আধুনিক মতবাদ হলেও সত্যিকার
অর্থে এই মতবাদ তেমন নতুন কিছু নয়।
প্রায় ২৫০০ বছর আগেও আমাদের
উপমহাদেশেই এই নাস্তিক্য মতবাদ
ছিল যা আমরা অনেকেই জানি না।
আমরা জানি, নাস্তিক শব্দটির অর্থ হল
যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। বৈদিক
সাহিত্য অবশ্য নাস্তিক শব্দএর একটু
অন্য ধরণের বিস্তৃত অর্থ তৈরি করেছে।
যথা-
বৈদিক মতে ছ'টি শ্রেণীর নাস্তিকের
কথা বলা হয়েছে। যথা - ১. মাধ্যমিক,
২. যোগাচার, ৩. সৌত্রান্তিক, ৪.
বৈভাষিক, ৫. চার্বাক ও ৬. দিগম্বর।
১. মাধ্যমিক : নাগার্জুন মাধ্যমিক
মতবাদের প্রবক্তা।
এটি একটি মহাযানপন্থী বৌদ্ধ দর্শন।
মাধ্যমিক মতে- আমরা যা দেখি,
যা অনুভব করি, সবই আপেক্ষিক
ভাবে মনে হওয়া, অনুভব করা। আলোয়
যে প্রকৃতিকে আমরা দেখতে পাই,
অন্ধকারে তা দেখা যায় না। চোখ
না থাকলে জগতের বস্তু, রঙ সবই
মিথ্যা। যে দ্রব্য একজন দুর্বল
দ্বারা পরীক্ষিত হলে কঠিন মনে হয়,
তাই একজন সবলের কাছে কম কঠিন
অনে হয়। গুণাবলী স্বয়ং অস্তিত্ববান
হতে পারে না। যে খাদ্যবস্তুর স্বাদ
একজনের কাছে উপাদেয়, অপরের
কাছে খারাপ মনে হতে পারে।
সুতরাং বস্তুর বাস্তব গুণ নেই। বস্তুগুণ
আপেক্ষিক।
একটি বস্তুর মধ্যে একই সঙ্গে সৃষ্টি-
স্থিতি-লয় থাকতে পারে না। জগতের
প্রকৃত কোনও অস্তিত্ব নেই। বস্তুসমূহ
চীরস্থায়ীও নয়,ক্ষণস্থায়ীও নয়। বস্তু
উৎপন্নও হয় না, বিলুপ্তও হয় না।
আমরা যে সব বস্তু
দেখছি তা আসলে অলীক।
২. যোগাচার : এটিও একটি মহাযান
বৌদ্ধ দর্শন। যোগাচার
বা বিজ্ঞানবাদ এর মতে - চৈতন্য,
চেতনা, জ্ঞান ও বিজ্ঞান নিজে থেকেই
ক্রিয়াশীল। বাইরের কোনও শক্তির
দ্বারাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি।
৩.
সৌত্রান্তিক :সৌত্রান্তিকপন্থীরা নিরীশ্বরবাদী।
তাঁরা মনে করেন, ঈশ্বর নেই। বিশ্ব-
ব্রহ্মাণ্ড, প্রকৃতির কোনও কিছুই
ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়। সব কাজের পিছনেই
থাকে কারনের বিবর্তনমূলক প্রক্রিয়া।
মাটিতে বীজ পুঁতলে অংকুর হয়। অংকুর
থেকে শিশু গাছ, কাণ্ড-শাখা-প্রশাখা-
পাতা-ফুল-ফল সবই একটা কারনের
বিবর্তনমূলক প্রকৃয়া। সৃষ্টি স্থান-কাল
নির্ভর। একটা বীজকে মাটিতে বপন
না করে মাটি বা ধাতুর
পাত্রে রেখে দিলে মাটি ও জলের
অভাবে বীজ থেকে অঙ্কুর
সৃষ্টি হবে না। মৈথুএর এক পক্ষের
মধ্যে জন্মও নেবে না একজন শিশু।
নারি-পুরুষের মিলন থেকে সকল শিশুর
জন্মানোর যে বিবর্তন প্রক্রিয়া,তার
জন্য একটা নির্দিষ্ট কালের প্রয়োজন।
ঈশ্বর এই স্থান-কালের
সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম
করে সৃষ্টি করতে পারে না।
সৌত্রান্তিক্রা শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ
প্রমাণকে গ্রহণ করতেন না।অভিজ্ঞতার
সঙ্গে প্রত্যক্ষপ্রমাণকে মিলিয়ে বিচার
করলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়
বলে মনে করতেন।
হীনযানী বৌদ্ধদেরই
একটি সম্প্রদায়ের নাম হল
সৌত্রান্তিক।
৪. বৈভাষিক :হীনযানী বৌদ্ধদেরই
আরও একটি শাখা বৈভাষিক।
বৈভাষিকদের মতে গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধত্ব
প্রাপ্তির পর যে'সব উপদেশ
দিয়েছিলেন, সেগুলি নিয়েই
সাতটি অভিধর্ম গ্রন্থ। এই অভিধর্ম
গ্রন্থই বৌদ্ধদর্শনের প্রামাণ্য
উৎসগ্রন্থ।
বৈভাষিকরা প্রত্যক্ষপ্রমাণকে শ্রেষ্ঠ
মনে করতেন। মনে করতেন সমস্ত বস্তু
চারটি ভূত (বস্তু) দ্বারা গঠিত।
এরা হল, পৃথিবী, জল, অগ্নি ও বায়ু।
বৈভাষিকরা ন্যায়বৈশেষিকদের
পারমাণবিক তত্ত্বকে স্বীকার করতেন।
বৈভাষিক দর্শনে বলা হয়েছে, পরমাণুর
ছয়টি কোণ আছে। বস্তুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র,
অবিভাজ্য বিশ্লেষণ অযোগ্য অ অস্থির
চরিত্র হল পরমাণুর গুণ।
এককভাবে অদৃষ্য হলেও
সমষ্টিগতভাবে দৃশ্যমান।
বৈভাষিকরা নিরীশ্বরবাদী। এমন
নিরীশ্বরবাদীদের পরবর্তী জন্মও
শেয়াল যোনিতে হবে বলে বৈদিক
পূজারীরা গালি দিলেও,
সেটা আদৌ অস্বাভাবিক ঠেকে না।
বাঁচোয়া- শকুনের অভিশাপে গরু
মরে না।
৫. চার্বাক :চার্বাক দর্শন প্রাচীন
ভারতের নিরীশ্বরবাদী মতবাদগুলোর
মধ্যে অন্যতম।
বৌদ্ধ ধর্মে নাস্তিক্যবাদঃ বৌদ্ধ
মতবাদে বৌদ্ধত্বের চেয়ে হিন্দুত্বের
প্রভাবই প্রবল। যে বুদ্ধ
নিরীশ্বরবাদী কার্যকারণ
সম্পর্কে বিশ্বাসী- সেই
বুদ্ধকে দেবতা বানিয়ে ছাড়তে কেউই
প্রায় কসুর কম করেননি।
বুদ্ধকে ঘিরে কাহিনী ও তথাকথিত
ইতিহাসে অলৌকিক ঘটনার ছড়াছড়ি।
পালি ভাষায় বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে প্রথম
লেখা হয় তাও বুদ্ধের মৃত্যুর কয়েক'শ
বছর পরে। তখন আদি বৌদ্ধ ধর্মের
রূপান্তর ও বিভাজন হয়েছে।
পালি বৌদ্ধশাস্ত্রে আমরা পেলাম
পল্লবিত,অলৌকিকে ভরা বুদ্ধকে।
গৌতম প্রথমে আলার কালাম এর
কাছে কিছু যোগাভ্যাস শেখেন। এরপর
রামপুত্তের কাছেও যোগবিদ্যা শেখেন।
এরপর তিনি বোধগয়ার (বুদ্ধগয়া)
কাছে ছয় বছর যোগ-সাধনা। দীর্ঘ সময়
ধরে উপবাস বা অনশনে থেকে যোগ-
সাধনা করেন।
তাতে পরিতৃপ্তি এলো না। বোধ
বা জ্ঞান এলো না। এলো অনশনের
কারণে কৃশতা ও দুর্বলতা। এই সময়
সুজাতা নামের এক গোপকন্যার
সঙ্গে গৌতমের পরিচয় হয়।
সুজাতা বলেন,এমন দুর্বল
শরীরে চিত্তের
একাগ্রতা আনা বা সমাধি আনা অসম্ভব।
শরীরকে সুস্থ রাখতে খাদ্যগ্রহণ
প্রয়োজন। সুজাতা ছিলেন উন্নতমনা।
তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা গৌতমের
পূর্ব-ধারণা পরিবর্তিত হয়।
গৌতম'বুদ্ধ' হবার পর নারীদেরকেও
দীক্ষা দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছিলেন।
ধনী মহিলা বিশাখা যেমন বুদ্ধের
গৃহীশিষ্যা ছিলেন,তেমন
বিমাতা গৌতমীও সঙ্ঘের সদস্যা হন।
সুজাতার যুক্তি মেনে গৌতম খাবার
গ্রহণ করলেন। এতে গৌতমের পাঁচ
সাধনসঙ্গী গৌতম আদর্শচ্যুত হয়েছেন
মনে করে তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেন।
বুদ্ধের চার সিদ্ধান্ত : বুদ্ধের
উপদেশাবলী বুঝতে হলে বুদ্ধের মূল চার
সিদ্ধান্ত জানাটা খুবই জরুরি।
সিদ্ধান্তগুলো হল : ১. ঈশ্বরের অস্তিত্ব
স্বীকার না করা। ২. আত্মাকে ‘নিত্য’
স্বীকার না করা। ৩. কোন
গ্রন্থকে স্বতঃপ্রমাণ হিসেবে স্বীকার
না করা। ৪. জীবন প্রবাহকে স্বীকার
করা।
ঈশ্বরের অস্তিত্বে সীকার না করা :
জগতের স্রষ্টা ও
নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে ঈশ্বরের
অস্তিত্ব বুদ্ধ অস্বীকার করেছিলেন।
তাঁর মতে- 'জগতের
সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক নিয়মে। জগৎ
নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রকৃতি জগতের
স্বাভাবিক নিয়ম দ্বারা।'কেউ কেউ
মনে করেন,ঈশ্বর জগতের স্রষ্টা,যেমন
কুম্ভকার মৃতপাত্রের স্রষ্টা। ঈশ্বর
সর্বব্যাপী। ঈশ্বর
স্রষ্টা হলে তিনি কুম্ভকারের মত
মাটি ও মৃতপাত্র হতে পৃথক। ঈশ্বর
যদি তাঁর সৃষ্টি থেকে পৃথক
হন,তবে তিনি সর্বব্যাপ্ত হতে পারেন
না।
ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হন,তাঁর
ইচ্ছাতেই যদি মানুষের কাজ-কর্ম
নির্ধারিত হয়,তবে অসৎ কাজের জন্য
মানুষ কেন দায়ী হবে? মনুষ্য জগতের
বাইরের অন্যান্য প্রাণী, যাদের ভাল-
মন্দ বিচার-বোধ নেই,তাদের কাজ-
কর্মের জন্য ঈশ্বর কীভাবে তাদের
দায়ী করবে?
অষ্টাঙ্গিক মার্গ : দুঃখ বিনাশের পথ
হিসেবে বুদ্ধ অষ্টাঙ্গিক মার্গের
কথা বলেছেন। অষ্টাঙ্গিক
মার্গকে তিনটি স্কন্ধে বা বিভাগে ভাগ
করা হয়েছে। ১. প্রাজ্ঞা বা জ্ঞান, ২.
শীল বা সদাচার ও ৩.
সমাধি বা চিত্তের একাগ্রতা।
১. প্রজ্ঞা :
ক. সম্মা দিট্ঠি বা সম্যক দৃষ্টি (বুদ্ধ
সঠিক জ্ঞান,যথার্থ দর্শনকে সম্যক
দৃষ্টি বলেছেন)
খ. সম্মা সংকল্প বা যথার্থ সংকল্প
(বুদ্ধ ক্রোধ-হিংসা-প্রতিহিংসা ত্যাগ
করাকেই যথার্থ সংকল্প বলেছেন)
২. শীল :
গ. সম্মা বাচা বা যথার্থ বাক্য (বুদ্ধ
যথার্থ বাক্য বলতে বলেছেন।
তিনি বলেছেন,সত্য এবং প্রিয় ভাষণ
দেবে। মিথ্যা ভাষণ,কটু বাক্য,হেতুহীন
বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত
থাকবে।
ঘ. সম্মা কম্মন্ত বা সৎ কর্ম
(হিংসা,চুরি,ব্যাভিচার না করা)
ঙ. সম্মা আজীবা বা সৎ জীবিকা (বুদ্ধ
বলেছেন,সৎ জীবিকা দ্বারা জীবন
ধারণ ও পরিবার পালন করবে। অসৎ
জীবিকা পরিত্যাগ করবে। অসৎ
জীবিকা বলতে বুদ্ধ
অস্ত্রব্যাবসা,প্রাণী-ব্যাবসা,মাংস
ব্যাবসা,মদ্য ব্যাবসার উল্লেখ
করেছেন। সুদ ব্যাবসা ও
দেহব্যাবসা সেই সময়কার
সমাজে প্রচলিত ছিল। এই দুই
বিষয়ে বুদ্ধ বিরুপ কিছু বলেন নি।)
৩. সমাধি :
চ. সম্মা বায়াম বা যথার্থ ব্যায়াম
(যথার্থ ব্যায়াম বলতে বুদ্ধ দৈহিক
বা মনষিক ব্যায়ামের কথা বলেছেন।
শারীরিক স্রম,সু-
চিন্তা ভাবনা করা,ইন্দ্রিয়কে সংযত
রাখার উপদেশ দিয়েছেন।
কুচিন্তাকে দূরে রাখতে বলেছেন।
ছ. সম্মা মতি বা সম্যক মনন (সম্যক মনন
বলতে বুদ্ধ মালিন্যহীন মনের
কথা বলেছেন। চিত্ত যে ক্ষণস্থায়ী,
এই বিজ্ঞানকে মনে রেখে অমলিন ও
সুন্দর মনের প্রবাহ বজায়
রাখতে উপদেশ দিয়েছেন।
জ. সম্মা সমাধি বা যথার্থ ধ্যান (বুদ্ধ
বলেছেন,চিত্তের একাগ্রতার নামই
সমাধি।)
বৌদ্ধ সংঘ : মূলত
সংসারত্যাগী মুক্তিকামী মানুষদের
নিয়ে বুদ্ধ সঙ্ঘ গড়ে তোলেন। সঙ্ঘের
নিয়ম-কানুনে বুদ্ধ
উপজাতি বা ট্রাইবাল সমাজের
প্রচলিত প্রথাগুলোকে অনুসরণ
করেছিলেন।
উপজাতি সমাজের অন্তর্ভূক্ত হবার
দুইটি প্রথা আছে। ১.
বয়ঃসন্ধিকালে অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে একজনকে সমাজের পূর্ণ সদস্য
করা হয়। ২. বহিরাগত কেউ সমাজের
সদস্য হতে গেলে সমাজের সকলের
সদস্যের প্রয়োজন হয়। কেউ
আপত্তি তুললে সদস্য করা হয় না। বৌদ্ধ
সঙ্ঘে একই নিয়মের প্রচলন করেছিলেন
বুদ্ধ। সঙ্ঘে যোগ
দিতে চাইলে নাম,ঠিকানা,বয়স,পিতা-
মাতার সম্মতির প্রমাণ ও অতীত
ইতিহাস ঘোষণা করতে হত। সংঘের
সকলের
সম্মতি মিললে তাকে দীক্ষান্তে গ্রহণ
করা হত। দীক্ষা গ্রহণকারীর বয়স
হতে হত অন্তত পনেরো বছর। কোন
বিবাহিতা রমণী সঙ্ঘের সদস্য
হতে চাইলে তার স্বামীর অনুমতির
প্রয়োজন হত।
আদিম কিছু উপজাতি সমাজে ব্যক্তিগত
সম্পত্তি বলে কিছুই নেই। তেমনই সঙ্ঘ
সদস্যের কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল
না। দিনে একবার খাবার খেতেন।
বিশেষ কোন খাবারের প্রতি আগ্রহ
নিশিদ্ধ ছিল। পোশাক বলতে হলুদ
রঙ্গে ছোপানো তিন টুকরা কাপড়।
সঙ্গে ওষুধ রাখতে পারতেন ভিক্ষুরা।
যে গ্রামেই ভিক্ষুরা থাকুন
না কেন,অমাবস্যা ও পূর্ণিমায়
তাঁকে নিজের সংঘের সদস্যদের
সঙ্গে মিলিত হতে হত।
ত্রিপিটক : বুদ্ধ নিজে কোন গ্রন্থ
রচনা করেননি। তাঁর মৃত্যুর পরে কিছু
বৌদ্ধ সন্ন্যাসী তিনটি 'পিটক'
বা পেটি রচনা করেছিলেন। তিনটির
একত্রিত নাম ত্রিপিটক। পিটক
তিনটি হল :
১. বিনয়পিটক : এতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের
আচরণ সঙ্ক্রান্তকিছু নির্দেশ আছে।
২. সূত্তপিটক : এতে আছে বুদ্ধের জাতক
কাহ্নী। এর আবার পাঁচটি ভাগ- ক.
দীর্ঘনিকায়, খ. মঝ্ঝিম নিকায়, গ.
সংযুক্ত নিকায়, ঘ. অঙ্গুত্তর নিকায় ও ঙ.
খুদ্দক নিকায়।
৩. অভিধম্মপিটক : এতে আছে দার্শনিক
আলোচনা।
বুদ্ধ একজন মানুষ ছিলেন।
তিনি বহুগুণাবলীর অধিকারী ছিলেন।
তাঁর মানবিক দুর্বলতাও ছিল, যেমন
অসহিষ্ণুতা, রোগকাতরতা (চাতুমা-সুত্ত,
সেখ-সুত্ত) ইত্যাদি।
হীনযানপন্থীরা রইলেন বুদ্ধের
নীতি নিয়ে। মহাযানপন্থীরা আবদ্ধ
রইলেন বুদ্ধকে ঈশ্বর
বানিয়ে পুজো করার মধ্যে। সঙ্গে যুক্ত
করলেন তন্ত্র-সাধনা।
মহাযানপন্থীদের হাতে শুরু হল বৌদ্ধ
ধর্মের অবক্ষয়।
যে বুদ্ধ ছিলেন
যুক্তিবাদী,নিরীশ্বরবাদী সেই বুদ্ধের
ধর্মে যুক্ত হল বহু দেব-দেবীর
পুজো,কার্য-কারণ সম্পর্কহীন
(প্রতীত্যসমুৎপাদবাদ বিরোধী)
অলৌকিক বিশ্বাস।
বর্তমান বুদ্ধ বিরোধী মহাযানপন্থার
ব্যাপক প্রচলন
হয়েছে তিব্বত,চীন,জাপানে।
ভারতে বৌদ্ধের সংখ্যা কম আর এদের
মধ্যে মহাযানপন্থীদের সংখ্যাই
বেশি। ফলে এ সব
দেশে নিরীশ্বরবাদী বুদ্ধ
ঈশ্বররূপে পূজিত হচ্ছেন।
জৈন ধর্ম-নাস্তিক দর্শন
ঈশ্বরের
অবিশ্বাসী বা নাস্তিকতা থেকে প্রাচীন
ভারতে যে কটি ধর্মের
উৎপত্তি হয়েছে, তার মধ্যে জৈন
ধর্মেই এথেইজিমের চূড়ান্ত বিকাশ
বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত। জৈন ধর্মই
একমাত্র ধর্ম, যা এথেইজিম
বা নাস্তিকতার প্রথম প্রতিপাদ্য
মেনে চলে। এই প্রথম প্রতিপাদ্য
হচ্ছে পরম সত্যের (এবসল্যুটিজম)
অস্ত্বিত্ব নেই এবং সেই জন্যেই
বহুত্ববাদই ( জৈন পরিভাষায়
বহুকান্তবাদি) একমাত্র গ্রহনীয়। জৈন
দর্শনের শুরুই হচ্ছে সেই পরম সত্যের
অনস্তিত্ব
থেকে এবং বলা হচ্ছে বাস্তববে সব
সত্যই আপেক্ষিক এবং একই
বাস্তবতাকে নানান আপাত
সত্যদিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
আদিম ভারতের নাস্তিক্য দর্শনে তার
প্রায় সবটাই পাওয়া যাবে জৈন ধর্মের
মধ্যে। পৃথিবীতে জৈন ধর্ম বাদ
দিয়ে সব ধর্মই ঈশ্বর, আল্লা, কৃষ্ণ
বা কোন না কোন পরম সত্য আছে।
বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর না থাকলেও
দুঃখ এবং দুর্দশার চার পরম সত্য আছে।
একবিংশ শতাব্দীতে কয়েকজন নাস্তিক
গবেষক ও সাংবাদিকের প্রচেষ্টায়
নাস্তিক্যবাদের একটি নতুন
ধারা বেড়ে উঠেছে যাকে "নব-
নাস্তিক্যবাদ" বা "New Atheism"
বলা হয়।
মোটাদাগে বলা যায়, নিরীশ্বরবাদ
বা নাস্তিকতাবাদ বা Atheism এমন
একটি দর্শনের নাম যাতে আল্লাহ
বা ঈশ্বর বা স্রষ্টার
অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়
না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক
উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
অর্থাৎ বস্তুই সব। বস্তু সয়ম্ভু
বা স্বয়ংক্রিয়, পরিপূর্ণ শক্তির
অধিকারী। বস্তুর বাইরে আর কোন
শক্তির কথা স্বীকার করেও
না বিশ্বাসও করে না।
যদিও বলা হয়ে থাকে, আস্তিক্যবাদ এর
বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা হয়।
নাস্তিক্যবা বিশ্বাস নয়
বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর
প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয়
বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই
এখানে মুখ্য।
কিন্তু ইদানিং নাস্তিকরা আল্লাহ
বা ঈশ্বর বা স্রষ্টার
অস্তিত্বকে অবিশ্বাস করার
সাথে সাথে ধর্ম, দ্বীন, রিলিজিওনসহ
সকল বিশ্বাস ও সংস্কার থেকে মুক্ত
হয়ে ‘মুক্ত বিশ্বাস’ ও ‘সংস্কার মুক্ত’
হওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা এই
‘মুক্ত বিশ্বাস’ ও ‘সংস্কার
মুক্তি’টা কি বা কিভাবে তা কখনই
ব্যাখ্যা করে না বা বলে না।
এখানে তারা একটা প্রপঞ্চের জটিল
জড়িমা তৈরি করে রেখেছে।
কোয়ান্টাম মেথড কে বুজতে হলে,
উপরের আলোচনাটি গুরুত্ব
সহকারে বিবেচনায় নিতে হবি।
বিশেষ কিছু শব্দ, পরিভাষা, চেতনা,
উপলব্দি করতে হবে এর মূল বক্তব্য।
এবার কোয়ান্টাম মেথড এর মূল বই
‘কোয়ান্টাম মেথড’
থেকে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-
ধারনা ঋদ্ধ উদ্ধৃতি হাজির করছি।
কোয়ান্টাম কিভাবে নাস্তিক্যবাদ
তা জেনে নেয়া যাক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.