নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় পাইলে ব্লগ লেখাটা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। ব্যাস্ততার ফাকে যারা আমার ব্লগ দেখেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের অনুপ্রেরণা থাকলে নিশ্চই সামনের দিন গুলোতে লেখা চালিয়ে যাবো।

শিশির খান ১৪

বেস্ত সময়ের ফাঁকে যারা আমার ব্লগ পরেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ

শিশির খান ১৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: কৌশলগত সস্পর্ক

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:০১


পাকিস্তান নানা জটিল সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দার ফলে দেশটি মানবিক বিপর্যয়ের স্বীকার। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে সন্ত্রাসবাদ। সর্বশেষ জুন মাসে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানী উপজাতীয় অঞ্চল বাজাউরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে । এই দুর্ঘটনায় ৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। হামলার দ্বায় স্বীকার করে নেয় খোরাসান প্রদেশ ইসলামিক স্টেট যা আইএসআইএস এর সহযোগী সংগঠন। মূলত বাজাউর হামলার পর পাকিস্তান সরকার নড়েচড়ে বসে এবং ঘোষণা দেয় নথিপত্র ছাড়া আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের ১ নভেম্বরের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে হবে অন্যথায় নির্দেশ অমান্য করা শরণার্থীদের নির্বাসনের মুখোমুখি করা হবে।

বাজাউর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি বিভাগ ।শুধু ২০২৩ সালেই খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তিনশোর অধিক হামলা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হামলার দায় নিয়েছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তান তালেবান নামের একটি সংগঠন। টিটিপি বা পাকিস্তান তালেবান এর যাত্রা শুরু ২০০৭ সাল থেকে। আদর্শগত ভাবে পাকিস্তান তালেবান এবং আফগান তালেবান একই মতবাদে বিশ্বাসী। তবে সংঘটন পরিচালিত হয় ভিন্ন ব্যাবস্থাপনায়।হামলার মাধ্যমে টিটিপি পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। তাদের মূল দাবী সরকারি হেফাজতে থাকা সদস্যদের মুক্তি , খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রদেশের কিছু অংশে সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনা এবং ইসলামিক আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান ও খোরাসান প্রদেশ ইসলামিক স্টেট এর সদস্যদের নির্মূল করা পাকিস্তান সরকারের জন্য চেলেন্জিং। এরা পাকিস্তানের সীমান্তবর্তি অঞ্চল গুলোতে হামলা পরিচালনা করে । হামলার পর সন্ত্রাসীরা সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয় ।পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবী করে হামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আফগান নাগরিকরা জড়িত ।আদর্শগত দিক থেকে মিল থাকায় আফগানিস্তান সরকার এই সব সংগঠনের নেতাদের আশ্রয় দেয়। এখন পর্যন্ত আফগান সরকার নিজেদের মাটিতে এই সব সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধে শক্ত কোনো অবস্থান নেয় নি। পাকিস্তানে অবস্থানকালে আফগান সন্ত্রাসীরা শরণার্থীদের সাথে অবস্থান করে ফলে এদেরকে আলাদা করে চিন্নিত করা যাচ্ছে না । পাকিস্তান সরকার নানা ভাবে আফগান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না ।এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে পাকিস্তানের ভিতরে তাদের পক্ষে তো আর পাকিস্তানের ভিতরে যেয়ে কিছু করা সম্ভব না ।

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন শুরু হয়। সেই সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আফগান শরণার্থীদের পাকিস্তান আতিথেয়তা দিয়ে আসছে। দেশটিতে প্রায় চল্লিশ লক্ষ আফগান শরণার্থী রয়েছে এর মাঝে নথিপত্র আছে মাত্র পনেরো লক্ষ শরণার্থীর।বিশেষ করে কাবুলের পতনের পর আফগানিস্তান থেকে যখন মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করা হয় সেই সময় নতুন করে আরো সাত লক্ষ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউএনএইচসিআর আফগান শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে শুধু টোকেন ইস্যু করে। বর্তমানে পাকিস্তান আদালত ইউএনএইচসিআর এর টোকেনের আইনি মর্যাদা দিতে সম্মত নয় ।

পাকিস্তান সরকার জোরপূর্বক শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর নীতি নিয়ে জাতিসংঘের সংস্থা, অধিকার গোষ্ঠী এবং আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের কাছে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। তারা পাকিস্তান সরকারকে শরণার্থীদের জন্য আরও সময় দেওয়ার আহ্বান জানায়। যদিও তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর পাকিস্তানে আফগান শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে ।শরণার্থীদের মাঝে এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছে যারা যারা তালেবান শাসনের বিপক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে পত্রিকায় লেখালেখি করেছে , শরণার্থীদের মাঝে এমন অনেক নারী নেত্রী রয়েছে যার নারীদের অধিকার আদায়ে তালেবানদের বিপক্ষে কথা বলেছে , শরণার্থীদের মাঝে এমন অনেক ভিন্ন মত ও ভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে যারা তালেবানদের কট্টর ইসলামিক শাসন কায়েমের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছে , শরণার্থীদের মাঝে এমন অনেকে রয়েছে যারা তালেবানদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর হয়ে কাজ করেছে ।এদের সবার জন্য আফগানিস্তানে ফেরত যাওয়াটা হবে ঝুঁকির বিষয়। এমনকি তালেবান শাসকদের হাতে ধরা পারলে হতে পরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের কাছে ইউএনএইচসিআর ও পশ্চিমা দেশগুলো বার বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। উত্তরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছে পশ্চিমারা যদি আফগান শরণার্থীদের ব্যাপারে এতই সংবেদনশীল হয়, তাহলে তাদের উচিত ছিল কাবুলের পতনের পর যে দুই বছর সময় পাওয়া গেছে তার মাঝে তাদের স্থানান্তর নিশ্চিত করা। যেহেতু নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পশ্চিমারা তাদেরকে নিয়ে যায় নি সে ক্ষেত্রে এখন আর আমাদের কিছু করার নেই । শরণার্থীদের অবৈধ উদ্বাস্তু হিসাবে ঘোষণার করা হবে তারপর আটক করে নির্বাসনে পাঠানো হবে।

পশ্চিমা সামরিক বাহিনী দীর্ঘ দিন আফগানিস্তানে অবস্থান করেও সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যার্থ হয়েছে।শেষের দিকে পশ্চিমা সামরিক বাহিনী অস্ত্র সরঞ্জাম ফেলে কোনো রকমে জান নিয়ে কাবুল এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেছে।এটা নিশ্চিত আগামী বিশ বছরেও কোনো পশ্চিমা সামরিক বাহিনী আফগানিস্তানের নাম মুখে নিবে না। ভারত কিছু না বুঝেই পশ্চিমাদের আশ্বাসে আফগানিস্তানের অনেক স্থাপনায় দীঘমেয়াদে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনোয়োগ করেছে।এখন সেই বিনিয়োগকৃত অর্থ ভারত কিভাবে ফেরত পাবে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়েছে । ফলে তালেবান সরকারের সাথে ভারত নতুন করে কোনো বিবাদে জড়াবে না। চীন এই অঞ্চল নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে পাকিস্তানের মতামত গ্রহণ করে। আফগানিস্তান বিষয়ে চীন সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আসল কথা আফগানিস্তান নিয়া ভাবার সময় চীনের নেই। অন্যদিকে তালেবান বাহিনী ধৈর্যের সাথে দীর্ঘ দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। অবশেষে সঠিক সময় ও সুযোগ বুঝে ক্ষমতা দখল করেছে। এটা একেবারেই স্পষ্ট পাকিস্তানী গোয়েন্দা বাহিনী শুরু থেকেই তালেবান বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়ে আসছিলো।তালেবান সরকার এখনো আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পায় নাই ফলে বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র বলতে এক পাকিস্তানই রয়েছে।বুঝাই যাচ্ছে সহজে তালেবান সরকার পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থান নিবে না।এ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট আফগানিস্তানের মদদে বা আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যাবহার করে পাকিস্তানে যেই হামলা গুলো পরিচালিত হচ্ছে তার বিষয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী অবগত।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: বিশ্বে সমস্যা সৃষ্টি করে মুসলিম দেশ গুলো। এজন্য দায়ী তাদের ধর্ম।
এখন দরকার আধুনিক শিক্ষা। ১৪শ বছর আগের ধ্যানধারনা ভুলে যেতে হবে।

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০২

শিশির খান ১৪ বলেছেন: আধুনিক শিক্ষা তো দূরের কথা আফগানিস্তানে মে দের স্কুলে পাঠানো নিষেধ রাজীব ভাই। মে দের ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ সেই জন্য সব এনজিও আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ কইরা দিছে।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:২৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


সারা বিশ্বে ইসলামের যে ভার্সন চালু থাকুক না কেন,পাক-আফগান মাটিতে ভিন্ন ভার্সন সবসময় চালু থাকবে।

০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০৫

শিশির খান ১৪ বলেছেন: আসলেই ঠিক বলছেন এরা যে কোন ইসলাম অনুসরণ করে আল্লাহ জানে সৌদি দুবাই কাতার ইরান কারো সাথে এদের মিল নাই। এমন কেন এরা ?

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০০

কামাল১৮ বলেছেন: দুর্ঘটনা আর আত্মঘাতী হামলা এক না।

০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:১০

শিশির খান ১৪ বলেছেন: ঠিক বলছেন এটা তো আসলে ঠান্ডা মাথায় খুন তারপরও যেহেতু আত্মঘাতী হামলা কাউকে তো আর শাস্তি দেওয়ার উপায় নাই।

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১:২৬

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ভারত পাকিস্তানের মধ্যে হয়তো বন্ধুত্ব হতে পারে কিন্তু পাকিস্তান-আফগানিস্থানের মধ্যে কখনোই বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে না কারণ দুটি রাষ্ট্রই মুসলিম রাষ্ট্র। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক রেশারেশি থাকলেও দুই দেশের জনগণের মধ্যে কিন্তু ব্যাপক সখ্যতা লক্ষ করা যায়।

আফগানরা বর্বর জাতি ওদের মানুষ করা সম্ভব নয়, পাকিস্তানও ওদের ভায় পায়।

০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১২

শিশির খান ১৪ বলেছেন: হুম আফগানিস্তানরা আসলেই বর্বর জাতি ঠিক বলেছেন

৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আধুনিক শিক্ষা তো দূরের কথা আফগানিস্তানে মে দের স্কুলে পাঠানো নিষেধ রাজীব ভাই। মে দের ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ সেই জন্য সব এনজিও আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ কইরা দিছে।

আফগানিস্তান পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দেশ। ওই দেশের মীয়রা ভালো নেই। আসলে ধর্ম নারীদের কোনঠাসা করে ফেলেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.