![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা সবাই পাপী তবু নিজের পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ভিটামিন-এ ঘাটতি একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ শিশু এবং গর্ভবতী নারী ভিটামিন-এ ঘাটতিজনিত অপুষ্টির শিকার। আইসিডিডিআরবির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় (২০১৩ সালে প্রকাশিত) দেখা যায়, আমাদের দেশে ছয় মাস থেকে ৫ বছর বয়সী কমপক্ষে শতকরা ২০ ভাগ শিশু এবং প্রতি দশজনে একজন গর্ভবতী নারী ও প্রসূতি মাতা ভিটামিন-এ এর ঘাটতিজনিত অপুষ্টিতে আক্রান্ত।
ভিটামিন-এ ঘাটতি রাতকানা রোগের প্রধান কারণ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু ভিটামিন-এ ঘাটতির দরুন অন্ধত্ব বরণ করে।
ভিটামিন-এ ঘাটতি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে ফলে শিশুদের সংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ভিটামিন-এ ঘাটতিজনিত কারণে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার শিশু মারা যায়।
গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে নারীদের পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়, এ সময়ই তাদের ভিটামিন-এ ঘাটতি প্রকটভাবে দেখা দেয়। ফলে রাতকানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার এবং গর্ভকালিন বা প্রসবোত্তর মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের বহু মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ বা বিটা-ক্যারোটিন পায় না, ফলে ভিটামিন-এ ঘাটতিজনিত অপুষ্টি একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
যেসব দেশে মানুষ প্রধানত কম পুষ্টিমানের খাদ্য গ্রহণ করে এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যের প্রাপ্যতা কম বা ব্যয়বহুল সেসব দেশেই ভিটামিন-এ এর ঘাটতিজনিত অপুষ্টির সমস্যা প্রকট। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। এটি সহজলভ্য ও ক্ষুধা নিবারক জনপ্রিয় খাদ্য; কিন্তু এতে ভিটামিন-এ নেই।
গোল্ডেন রাইস
গোল্ডেন রাইস হলো বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ অনন্য এক ধরনের ধান। এ ধানের চাল সোনালি বর্ণের। বিটা-ক্যারোটিন মানুষের শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন-এ-তে রূপান্তরিত হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভুট্টা থেকে এ সংশ্লিষ্ট জিন সনি্নবেশ করে এ ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভিটামিন-এ এর ঘাটতিজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলার মহৎ উদ্দেশ্যে উদ্ভাবকরা এশিয়ার দরিদ্র ও সম্পদবঞ্চিত কৃষকদের স্বত্ববিহীন উপহার হিসেবে গোল্ডেন রাইস দান করেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এককাপ গোল্ডেন রাইসের ভাত একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ভিটামিন-এ চাহিদার অর্ধেক পূরণ করতে সক্ষম।
গোল্ডেন রাইস প্রকল্প
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (ইরি) নেতৃত্বে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় গোল্ডেন রাইসের জাত উদ্ভাবন এবং মূল্যায়নের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এসব দেশের জনপ্রিয় ধানের জাতের গোল্ডেন রাইস সংস্করণ উদ্ভাবন ও মূল্যায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। ইরি তার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সহায়তায় গোল্ডেন রাইসের নিরাপদ খাদ্যমান নিশ্চিতকরণের গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছে। এ গবেষণালব্ধ ফলাফল গোল্ডেন রাইস প্রকল্পভুক্ত দেশগুলোয় ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়া এশিয়ার বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও চীনের বিজ্ঞানীরাও স্বউদ্যোগে তাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী পুষ্টিসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবনের গবেষণায় নিয়োজিত আছেন।
বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইসের গবেষণার অগ্রগতি
কৃষি ও পুষ্টি গবেষণায় স্বনামধন্য কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) গোল্ডেন রাইসের উন্নয়ন ও মূল্যায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলছে। ব্রির বিজ্ঞানীরা ফলন ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী গোল্ডেন রাইসের জাত উদ্ভাবনে নিয়োজিত আছেন। তারা ইতোমধ্যে মলিকুলার মার্কার নির্ভর পশ্চাৎ সংকরায়নের (গড়ষবপঁষধৎ গধৎশবৎ অংংরংঃবফ ইধপশবৎড়ংংরহম) মাধ্যমে বিটা-ক্যারোটিন সংশ্লিষ্ট জিন জেপনিকা (ঔধঢ়ড়হরপধ) জাতের কেবনেট (কবুনড়হহবঃ) গোল্ডেন রাইস থেকে বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় বোরো ধানের জাত ব্রি ধান২৯-এ সফলভাবে সনি্নবেশ করেছেন।
এভাবে উৎপন্ন ব্রি ধান২৯ গোল্ডেন রাইসের কিছু কৌলিক সারি সরকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশে এনে ২০১২ সালে ব্রির ট্রান্সজেনিক গ্লাসহাউস এবং স্ক্রিনহাউসে বায়োসেফটি গাইডলাইনস অনুসরণপূর্বক প্রাথমিক ফলনশীলতা যাচাই করা হয়েছে। এ পরীক্ষার ফলাফলের বিচারে বাছাই করা কৌলিক সারিগুলো নিয়ে নিয়ন্ত্রিত-মাঠ-পরীক্ষা চালানোর জন্য সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অনুমতি প্রদান করেছেন। এ পরীক্ষা চলাকালে ব্রি ধান২৯ গোল্ডেন রাইসের মূল্যায়নের পাশাপাশি অন্যান্য জনপ্রিয় ধানের জাতের গোল্ডেন রাইস সংস্করণ উদ্ভাবনের গবেষণাও এগিয়ে চলছে।
গোল্ডেন রাইস ও নিরাপত্তা
পরিবেশগত নিরাপত্তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী গোল্ডেন রাইসের নিয়ন্ত্রিত-মাঠ-মূল্যায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা স্থলের পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অনুঘটকের ওপর গোল্ডেন রাইসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যমান নিশ্চিতকরণের পরীক্ষাও করা হবে। এ কাজে ইরি ও তার কিছু আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্রি-কে সহায়তা করবে। কৃষক ও ভোক্তাপর্যায়ে প্রাপ্যতা অনুমোদনের জন্য ব্রি গোল্ডেন রাইসের খাদ্যমান এবং পরিবেশগত নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য ও উপাত্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। এ তথ্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের পরই কেবল তারা কৃষক ও ভোক্তার কাছে গোল্ডেন রাইসের প্রাপ্যতা অনুমোদন করবেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক গোল্ডেন রাইস পরিবেশের জন্য এবং খাদ্য হিসেবে নিরাপদ বলে প্রত্যায়ন পেলেই কেবল কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য জাত হিসেবে ছাড়করণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ব্রি গ্রহণ করবে।
গোল্ডেন রাইস নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকারের বিধিবদ্ধ সংস্থা কর্তৃক গোল্ডেন রাইস অনুমোদিত হলে এবং মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে প্রতীয়মান হলে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি লাঘবে গোল্ডেন রাইসের কার্যকারিতা মূল্যায়ন একটি সমীক্ষা চালানো হবে। নিয়মিত গোল্ডেন রাইস গ্রহণে মানবদেহে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পূরণ প্রকৃতপক্ষে কীরূপ হয় তা জানার জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ সমীক্ষা পরিচালনা করা হবে।
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যাদের কাছে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ অন্যান্য খাদ্য সহজলভ্য নয় কিংবা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে তাদের মধ্যে গোল্ডেন রাইস সহজেই জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা যায়। গোল্ডেন রাইস ইনব্রেড বা স্বপরাগায়িত জাত বিধায় কৃষক নিজেই নিজের উৎপাদিত বীজ পরবর্তী ফসল চাষে ব্যবহার করতে পারবে, অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে না; ফলে এর বাজারমূল্যও অন্যান্য উচ্চফলনশীল ধানের মতো হবে আশা করা যায়। নিরাপদ খাদ্য এবং ভিটামিন-এ এর অভাব পূরণে কার্যকর (বভভরপধপরড়ঁং) বলে প্রমাণিত হলে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি লাঘবে প্রচলিত অন্যান্য কার্যক্রম যেমন, ৬ মাস থেকে তিন বছরের শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো, ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যগ্রহণে উৎসাহ দান এবং শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর ব্যাপারে উদ্ভুদ্ধকরণের পাশাপাশি সহযোগী কার্যক্রম হিসেবে গোল্ডেন রাইস ব্যবহৃত হতে পারে।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
এস এম মোমিন বলেছেন: তাপে ভিটামিন নষ্ট হয় এই ধারনা ভুল, সেটা যদি হতো আমাদের রান্না করা কোন খাবার থেকেই ভিটামিন পেতাম না
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০৫
সজল৯৫ বলেছেন: আপনার প্রায় পোষ্টই বৃহত্তর জনগনের জন্য তথ্যবহুল, তাই অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কারণ অাপনার পোষ্ট থেকে অনেক সুবিদা ভোগী তৈরি হবে।
৪| ২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫
এস এম মোমিন বলেছেন: ধন্যবাদ সজল ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
নতুন বলেছেন: রান্না করার পরে চালে কতটা ভিটামিন থাকে? যেই তাপে ভাত রান্না করা হয় তাতে ভিটামিন থাকবে নাকি নস্ট হয়ে যাবে?