![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসুন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলি
গরীব মাইনষের পোলাতো! বার বার খানা পামু কই?------শাহজাহান পারভেজ।
অনেক সময় ধরে একটা ছেলে সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি খেয়াল করে দেখতে লাগলাম। ও তাকিয়ের আছে অপলক ঐ সাদা দালানের দিকে। উদোম গা, গাঁয়ের রঙটাও ময়লা। নাঙ্গা পায়ে ফুটপাতের উপর দাঁড়িয়ে দেখছে সংসদ ভবনটাকে।
”আহারে যদি ঐডার মইধ্যে যাইতে পারতাম, হুনছি হের ভিত্রে নাকি ঠান্ডা হওয়ার মিশিন আছে। গদি আলা সোফা তো আছেই! দামী জামা কাপড়, জুতা পিইন্দা ন্যাতারা নাকি দেশ চালায়! অর ভিতরে নাকি সরকার থাহে! আর দালানডাই বা কত্ত উচা। আমাগো ঘরডা যদি এইরাম করতে পারতাম! আহারে অগো কত মজা! চক চইক্কা গাড়ীতে চইড়া আহে আবার যায়গা। অরা কত ভাল ,কত ট্যাকা অগোর!”--মনে মনে ওর তাকিয়ে থাকা আর মনের ভাবনা গুলো সম্ভাব্য কি হতে পারে তা আ্ওড়াতে লাগলাম। ভাবলাম ওর সাথে একটু কথা বলি।
এগিয়ে গেলাম ছেলেটার দিকে।
এই পিচ্চি এইখানে কি করস?
- দেহি!
কি দেহস?দালান ডা কত উচা, ওর ভিতরে সরকার থাকে, নরম গদিতে বইয়া দেশ চালায়, এইসব?
-নাহ গো মামু!ঐসব না!
-তাহলে কি ? অগোর গাড়ীতে চড়তে তোর বুুঝি খুব ইচ্ছা? ঠান্ডা মেশিনের বাতাস খাউনের ইচ্ছা করে? আচ্ছা তোর বুুঝি সরকার হইতে ইচ্ছা করে!
- না গো মামুু! এই গুলান কুনডা-ই না।
-তাইলে তাকায়া কি ভাবোস!
- মামু ভাবতাছি, অরা কত্ত দামী দামী খাদ্য - খানা খায়। খায় অল্প, ফালায় বেশি। হদা হুদাই খাদ্য খাবার নষ্ট করে। ইস্ কত্ত দামী খাদ্য-খানা !
-তুই জানলি কি ভাবে?
- একদিন মা কইছে। মা কইছে হ্যারা ব্যাবাগতে সুংসদের দালানে যায়া ঝড়গা করে । আবার মিলমিশ হইয়া যায়। বড় লোকতো !
-খাদ্য-খানার কথা কি য্যান কইতাছিলি?
- কি আর কমু! রোজ একবার ঐ দালানের দিকে চাই আর ভাবি, অরা যত খানা ফালাইয়া-ফুলাইয়া নষ্ট করে, ভাগাড়ে ফালায়া দেয়, ওইগুলা যদি আমাগো দিত আমরা মাস ধইরা খাইতাম- ভাগাড় তোন ঐ গুলাই তো টুকায়া আনি! খালি খাইতাম আর ঘুমাইতাম।
বালের বস্তা টাইন্না বেড়াইতাম নাকি? খাইতাম আর ঘুমাইতাম। প্যাট ঠিক তো দুনিয়া ঠিক।
আমি খুব ছোট হয়ে গেলাম ঐ পিচ্চিটার কাছে। কি সাবলিল জবাব! ওর চাহিদার বহর কি এত বেশি? ওকে জিঞ্জাসা করলাম হ্যারে মামু তোর নাম কি ?
ফোকলা দাত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলল- বাদশাহ। আমি হইলাম টোকাই বাদশাহ!
আমি বাদশাহকে সাথে করে হাটতে হাটতে বেশ অনেকদুর এসে একটা চা-নাস্তার দোকানে ঢুকলাম । দোকান থেকে একটা ম্যাংগো জুস হাতে নিয়ে, ওর দিকে বাড়ালাম।
- মামু এইডা আমি তো খাইনা!
-ক্যান খাস না?
- আপনে না হয় আইজকা আদর কইরা দিলেন। রোজ তো আর দেবেন না!একদিন খাইয়া লোভ হইয়া গেলে বিপদ আছে। পয়সা পামু কই!
পঞ্চাশ / ষাইট ট্যাকা পায সাারা দিনে, মায়ের হাতে সব টাই দিয়া দেই।
- ও আচ্ছা! তাইলে এক প্যাকেট বিস্কুট ল। বিদেশী খায়া মজা পাবি ।
- নাহ ! ওতে প্যাট ভরে না। তার চাইতে একটা পাউরুটি দ্যান। পাউরুটির লগে দুই গ্লাস পানি ঝাইড়া দিমু । খেল খতম । প্যাটটা ভইরা উচা হয়া যাইবো! গরীব মাইনষের পোলাতো! বার বার খানা পামু কই?
------সেদিন আমি শিখেছিলাম ৮/৯ বছরের শিশু বাদশাহ’র কাছে, জীবন কাকে বলে । ওর সাথে আর কখনো-ই দেখা হয়নি আমাার । কিন্তু কথাগুলো এখন্ও কানে বাজে। এখনও আমি ওর মতো বাঁচতে চেষ্টা করি । বাদশাহ সব সময়ই বাদশাহ। বাদশাহ আমার চেতনার জায়গাটা অল্প হলেও দখল করে আছে। বাদশাহকে আমার লাল সালাম।
©somewhere in net ltd.