নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীর্ঘদিন থেকে মাটির পিঞ্জিরায় তোমাকে রেখে যে স্বপ্ন লালন করছিলাম, তুমি সবগুলো উড়িয়ে দিলে আবেগের তহমতে। বাহঃ দারুণ একখানা কাজ করলে তুমি। আমি আপাদমস্তক আবেগি, কথাটা কি সর্বাংশে সত্য? তোমার সাথে প্রেমটা কি শুধু আবেগ? যে প্রেমকে আমি আজীবন লালন করেছি বাড়িতে ময়না পাখি লালনের মতো, তা যদি হয় নিচক আবেগ তবে তুমিও প্রচণ্ড আবেগি এই কথা অস্বীকার করা যাবে না। আজ নিজে বুকে হাত রেখে বলো-তুমি কি এই প্রেমশূন্যতায় অঘুমা থাকনি বহু রাত? আজও কি এই প্রেমের অভাবে তোমার চোখের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসছে না অন্তরে সিদ্ধ হওয়া উষ্ণ জল? এ সবই কি আবেগ? না, নিজেরটা কেউ দেখে না। অন্যের উপর চড়ি ঘুরাতে সবারই ভালো লাগে। দেখ, সেদিন তুমি আমাকে বলছিলে চট্টগ্রামের আল্লামা আহমদ শফি নাকি দেশকে শুধু শুধু অশান্ত করছেন এবং রাজাকারদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমি তোমাকে বলেছিলাম- শাহবাগে যখন রাজাকারদের বিচারের দাবীতে কিছু ব্লগার সমবেত হয়েছিলো তখন তাদেরকে সবাই সমর্থন দিয়েছিলো এবং আহমদ শফি বা বাংলার ইসলাম প্রিয় মুসলমান কিছুই বলে নাই। কিন্তু যখন এই ব্লগাররা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করলো তখন আহমদ শফিরা মাঠে আসেন এবং আন্দোলন শুরু করেন। এই ব্লগাররা কারা? তুমি কি জানো, শাহবাগি কিংবা ঘাদানিক বেশির ভাগ ব্লগারের বাপ-দাদা রাজাকার কিংবা রাজাকারের সহযোগি ছিলেন? একাত্তরের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন নতুন স্বাধীন দেশকে নতুন করে সাজাতে যাবেন তখন-ই তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে আসে সিরাজ শিকদারের নের্তৃত্বে চীনপন্থী কমিউনিষ্টরা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর নেতৃত্বে রাশিয়াপন্থীরা। জাসদের পর্দার আড়ালে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, যিনি আমেরিকান গোয়েন্দার খাস মানুষ বলে সবাই জানে। ওরা উভয়গ্র“পের কিছু মানুষ ছিলো বঙ্গবন্ধুর আশপাশে আর কিছু মানুষ মাঠকে উত্তপ্ত করতে লাগলো। তারা বঙ্গবন্ধুকে সবচাইতে অসুবিধায় ফেলে দিলো রাজাকার প্রসঙ্গ টেনে ইসলামের বিরোধীতা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তারাই বঙ্গবন্ধুকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেলো। সেই ঘটনা আবার ঘটলো যখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্থী হয়ে তাঁর দলের লোককে উপেক্ষা করে বাম নির্ভরশীল হলেন। শাহবাগের আন্দোলন ওদেরই তৈরি করা একটি জাতীয় সমস্যা। একাত্তরের পর যে বামরা বঙ্গবন্ধুকে এই বাংলাদেশকে সোনার দেশ হিসেবে গড়তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এই বামরাই আজ দেশকে অশান্ত করে দিয়েছে। রাজাকারদের বিচার হবে এবং হচ্ছে। দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এর পক্ষেই ছিলেন এবং আছেন। বামরা ভাবলো এই যায় ইসলাম ধ্বংস করার সময়। কারণ ইসলাম ধ্বংসের কর্মসূচী হাতে নিলে অমুসলিম বিভিন্ন দেশ-সংস্থা-গোষ্ঠির কাছ থেকে টাকা মিলে। আর যদি হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগানো যায় তবে তো সোনায় সোহাগ। ভারতে গিয়ে বলা যায়-দেখলে তো বাংলাদেশে হিন্দুদেরকে মুসলমানরা আক্রমণ করেছিলো আমি স্বজাতির বিরুদ্ধে গিয়ে হিন্দুদেরকে রক্ষা করেছি। তখন তারা বাহঃ বাহঃ সহ আরো কতো কিছু দেন। কিন্তু এই জন্মান্ধ বামরা কি জানেন না এখন ডিজিটাল যুগ। এখন আর এসব বলে মানুষকে ধোকা দেওয়া যায় না। তারা এবার প্রথমে চীনপন্থীরা চেষ্টা করেছেন বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে চীন থেকে ফায়দা লুঠতে। কিন্তু বিফল হয়েছেন। পরে তারা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন যখন ইসলামপন্থীরা ঘোষণা দিলো-এখন থেকে আমাদের কর্মীরা হিন্দুদের মন্দির পাহড়া দেবে। এই পাহড়ায় যে দু-চারজনকে পাওয়া গেলো তারা বাম-আওয়ামী কর্মী।
তুমি যখন প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে আমাকে জিজ্ঞাস করলে-আপনি কি বিশ্বাস করেন সাঈদিকে চাঁদে দেখা গেছে? আমি সহজ করে বললাম- কোন মিথলজী নিয়েই আমার মাথা ব্যাথা নেই। তুমি-ই তো একদিন বলেছিলে কৃষ্ণকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাস করেছিলামÑতুমি কি দেখেছো? তুমি তোমার সন্যাসী দাদা আর গানের শিক্ষকের কথা বলেছিলে। তারা তোমার সামনেই ছিলেন। তাদের দিকে আমি চোখ ফিরাতেই তারা এমনভাবে হাসলেন-যেনো তুমি যা বলছো সবই সত্য। আমি সেদিন কৃষ্ণকে চাঁদে দেখাকে যেমন বিশ্বাস করিনি, আজও সাঈদির বিষয়টি বিশ্বাস করছি না। তা ছাড়া তোমার জানা উচিৎ ইসলামে এসবের গুরুত্বও তেমন নেই।
সেদিন তুমি যখন একটা ছদ্মনামে আমাকে এসে বললে ভাইয়া লেখাটা পড়লাম। তখন আমি জানতে চাইলাম- কেমন হলো? তুমি বললে-ভালো, তবে কিছু দ্বিমত আছে। আমি বললাম-দ্বিমত থাকা ভালো। অতঃপর তোমার প্রশ্ন-শুক্রবারে যে মসজিদে হামলা করা হল, মসজিদের কার্পেট পুড়ানো হল, এমামের মাইক কেরে নেওয়া হল তাদের কে কি আপনি নবী প্রেমিক বলবেন? আমি বললাম-সরকার সমর্থিত মিডিয়া ছাড়া আর কোথাও মসজিদে হামলার এই খবরটি আসেনি। কার্পেট পুরানোটা যুদ্ধের কৌশল। ইমাম যদি দালাল হয় তবে তার হাতের মাইক কেড়ে নিয়ে তাকে বের করে দেওয়ার মধ্যে অবশ্যই নবী প্রেম লুকিয়ে রয়েছে। তুমি বললে-আবার শহীদ মিনার ভাঙ্গা হল পতাকা পুরান হল এরা কি নবী প্রেমিক? কোন ধর্মে তো বলা হয়নি যে দেশপ্রেম নাস্তিকতা। আমি বললাম-শহীদ মিনার যারা ভেঙেছে আমরা তাদেরও বিচার চাই। তারা কেনো শহিদ মিনার ভাঙবে? নবীপ্রেমিকদের গণমিছিলকে জামায়াতি বলে চিন্তিত করলে এদেশে কিছু রাজাকারের বিচার করা সম্ভব হলেও জামায়াতকে নির্মোল করা প্রায় অসম্ভব। সবার স্মরণ রাখা প্রয়োজন, মানুষ যখন কোন বিষয়কে সামনে রেখে রক্ত দিয়ে ফেলে তখন সে আর পিছু যেতে পারে না। এই বিষয়ের প্রতি তার মায়া হয়ে যায়। এটা মানুষের জাতীয় রোগ।
তুমি সেদিন আমার কাছে জানতে চাইলে-এই সব কাজ কারা করছে বলে আপনি মনে করেন? আমার সহজ উত্তর ছিলো-আমি জানি না। তবে যারা করছে তারা খারাপ লোক, আবার নাস্তিকেরাও খারাপ। তুমি স্পষ্ট বলেছিলে-এটা করছে সমমনা ইসলামী দলগুলো। আর তাতে জামায়াতের হাত না থাকলে সম্ভব হতো না। আর কথা হলো রক্তের? রক্ত তো শাহবাগেও গিয়েছে? আমি তোমার শাহবাগি আবেগকে সম্মান জানিয়ে বলেছিলাম-এটা তোমার প্রমাণ ছাড়া ধারণা। তবে হলে হতেও পারে। এখানে আমার কোন বক্তব্য নেই। আমার এই মুহুর্তে বক্তব্য হলো নাস্তিকদের নিয়ে। আমি মনে করি নাস্তিক আর খুনিদের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। নাস্তিকরা সকল সমাজ এবং ধর্মের জন্য ক্ষতিকর। আমি জীবনে অনেক ছোট-বড় নাস্তিকের সাথে চলেছি। আর শাহবাগে যারা আন্দোলনে আছে তাদের অনেক আমাদের পূর্ব পরিচিত। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট কেন্দ্রিক এই ছেলেগুলোর মূল আড্ডা। আমিও সেখানে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি এবং ব্লগে তো আছি প্রায় চার-পাঁচ বছর থেকে। তুমি তখন বলেছিলে-নাস্তিক খারাপ তা ঠিক আছে আবার ধর্মকে পুঁজি করে যে যা করবে তাও খারাপ দেশ ও দশের জন্য। নাস্তিক খারাপ সবার জন্য। আমি তখন তোমাকে বলেছিলাম-আমি খুব বেশি রাজনৈতিক আলোচনায় এই মূহুর্তে যেতে চাই না। আমার বক্তব্য যারা আমার রাসুলকে গালি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দেখ, আজ যদি কেউ তোমার রামকে, কৃষ্ণকে গালি দেয় তুমি কি বলবে? বিষয়টা নিজের উপরে বিবেচনা করবে। স্বাধিনতার নামে ধর্মের উপর আঘাত কি তুমি সহ্য করতে পারবে? তুমি তখন স্পষ্ট করে বলেছিলে-আমি ত এতে কিছু বলছি না। অবশ্যই ধর্ম আগে। কিন্তু এখানে এই সব কথা আসছে কেনো? দেশকে রক্ষা করাও আমাদের ধর্ম যার যার অবস্থান থেকে। তবে কেনো গুটিকতক মানুষ একে ধর্মের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে? আমি বলেছিলামÑ আমার কথা এখানেই। দেশ ও ধর্ম দুটাকে রক্ষা করাই আমাদের কাজ। তুমি এসো আমরা দুজনে মিলে রাষ্ট্রদ্রোহী. ধর্মদ্রোহী, সমাজদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি। সাক্ষাতে এবিষয়ে কথা হবে। তুমি বলেছিলে-আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে সেই সব মানুষের বিরুদ্ধে যারা ধর্মকে পঁজি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। আমি বলেছিলাম-অবশ্যই। তবে শুধু ধর্মের কথা বলছো কেনো? যারা মুক্তিযোদ্ধের কথা বলে দেশকে লুটেছে, কোটি কোটি টাকা ঘুষ আর সুদ খেয়ে দেশের বারোটা বাজিয়েছে, ব্যাংক লুঠেছে, তাদের কথা তুমি বলছো না কেনো? বলছো না কেনো সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। তুমি তখন বলেছিলে-তারা তো দেশের কুসন্তান। তাদের জন্য আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্থ আর পঁজিবাদি ধর্মের জন্য আমরাও ক্ষতিগ্রস্থ। আমি আবার তোমায় বলেছিলাম-তুমি বলছো না কেনো যারা বিশ্বজিৎ কে দিনদুপুরে অসংখ্য মানুষ এবং আওয়ামীলীগ সরকারের পুলিশের সামনে হত্যা করেছে তাদের কথা, যারা একাত্তরের সরকারে গিয়ে এদেশকে লুঠে ফকির বানিয়েছে তাদের কথা? বলো রাধা, বলো সাখি- তুমি সকল অসুরের বিরুদ্ধে বলো।
তুমি বলেছিলে-আবার মা দুর্গাকে আসতে হবে অসুর দমন করতে। আমি বলেছিলাম-তাকে নিয়ে এসো। ধর্মের উপর আঘাতটা খুব সহজ, তাই না? কারণ ধর্মের তো হাত পা নেই। আজ যদি আওয়ামীলীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে বলো তবে খবর হয়ে যাবে। তাই বলতে সাহস হয় না। অথচ ওরাই ধর্মকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। যেমন শাহবাগের তরুণদেরকে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ব্যবহার করছে তাদের শাসনামলের ব্যর্থতাকে লুকাতে। তুমি এড়িয়ে গিয়ে বলেছিলে-আমরা জনতা চাই যারা ধর্মের নামে অপকর্ম করে তাদের শাস্তি আর দেশের মুক্তি। তবে এই জীবনে হয়তো তা হবার নয়। জনগণ শুধু গর্জেই যাবে। আমি জানতে চেয়েছিলাম-কে শাহবাগের শ্লোগানকন্যা লাকিকে মেরে রক্তাক্ত করেছে? তুমি উত্তর না দিয়ে চালাকি করে পাল্টা প্রশ্ন করলে-কারা বলেন? কারা রাজিবকে মেরেছে?
আমিও আবার প্রশ্ন করলাম-তুমি বলো কারা? তুমি আবার পাশ কটিয়ে গেলে-সরকারই বলতে পারে না, করতে পারে না, আর আমি তো আম জনতা।
থাক সেই সব কথা। আবার ফিরে আসি মূল কথায়। আজকাল তুমি অনেক কথা বলতে শিখে গেছো। এতে আমি নারাজ না। বরং আজ আমার আনন্দের সীমা নাই। তুমি একদিন এভাবে কথা বলবে সেই স্বপ্ন-ই তো বিগত দিনে আমি লালন করে আসছি মনে। তোমার কাছে আমার এই স্বপ্ন আবেগ হলেও আমার কাছে তা ময়না পালনের মতোই ছিলো আনন্দ। পৃথিবীতে হাজারো প্রাণী থাকতে ময়না কেনো এখানে উপমা হয়ে এলো? কারণ, মানুষ ময়না পালে কথা শোনার জন্য। তুমি আমার ময়না। এই ময়নাকে এতোদিন আমি একটা আবেগ নিয়ে লালন-পালন করেছি সত্যি। কিন্তু এই আবেগ শুধু আবেগ নয়, এখানে আছে অনেকগুলো বাস্তবতা, যা তুমি ময়না কোনদিন বুঝতে পারো নি তোমার চোখে বস্তুবাদের চশমায় আটকে থাকায়। আজও না। আমি চেষ্টা করেছি তোমার চোখ থেকে এই চশমা খুলে তোমাকে একটা প্রশান্তির জীবন দিতে। মানুষ বড়ই বেকুফ, সে ইতিহাস পড়ে-ইতিহাসের উপাদানগুলো দেখে-নিজেও কিছু কিছু ইতিহাসের কারণ হয় কিন্তু ইতিহাস থেকে শিখে আগামীতে সতর্ক হয় না। তোমার পূর্ব প্রজন্মের বস্তুবাদি মানসিকতা তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছে, তুমি এজন্য তাদের উপর যে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছো এতোদিন, আজ তুমি আবার নিজ স্বার্থ চারিতার্থ করতে সেই বস্তুবাদের কাছে মাথা নত করে আমার যে প্রেম তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে ছোট করে দিতে বলছো-এসব আবেগ! কিন্তু তুমি কি একবার বিবেচনা করে দেখেছো তোমার আগামী প্রজন্মের মনোকষ্টেগুলো? তুমি ভুলে গিয়েছো আজ সত্যই তোমাকে। তুমি যখন মেয়ে ছিলে তখন তোমার মায়ের যে কর্মগুলো তোমাকে প্রচন্ড কষ্ট দিতো আজ যখন তুমি সেই কর্ম করতে যাও তার আগে কি একবার তোমার মা এবং তোমার মায়ের পাশাপাশি তুমি এবং তোমার মেয়ের মন নিয়ে ভাবা উচিৎ নয়? মেয়ের পরে তুমি বউ হয়েছো, অতঃপর হবে শাশুড়ি, প্রত্যেক স্থানে দাঁড়িয়ে কি তোমার আগ-পিছ ভাবা উচিৎ নয়? আর এই ভাবনা তৈরির চেষ্টার নাম যদি আবেগ হয় তবে আমি আবেগি, তাতে কোন আপত্তি নেই।
তুমি আবেগে আর নেই, এই তো তোমার কথা? কিন্তু এই বক্তব্য দেওয়ার সময় কি তুমি আয়নায় দেখেছো তোমার চেহরা? তখন তুমি যে কত প্রচণ্ড আবেগে ছিলে তা তো আমি নিগূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে দেখেছি। কার্ল মার্কসকে বলা হয় অর্থনৈতিক বস্তুবাদের জনক। আবেগের বিরুদ্ধে নাকি তিনি ছিলেন সর্বদা। অথচ আমি যখন তাঁর ‘ডাস ক্যাপিটাল’ কিংবা ‘জর্মান ভাবাদর্শ’ পড়ছিলাম তখন তাতে ভাব আর আবেগ ছাড়া বাস্তবতা খুবই কম দেখেছি। কমিউনিজমের চিন্তাটাই অযৌক্তিক ভাববাদি একটা কথা। তিনি বস্তুবাদী বলে নিজকে দাবী করে ভাববাদকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন। কিন্তু একবারও ভাবলেন না যে মানুষ পূর্ণাঙ্গ হয় দেহ আর মনের সমন্বয়ে। দেহ তো বস্তু কিন্তু মন? তিনি যে দিনের পর দিন বউ-বাচ্চাকে ফেলে লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ে বই লিখলেন, তা কি ভাবের উপর ভিত্তি করে নয়? মার্কস চিন্তার পূর্বপুরুষ বিবর্তনবাদি ডারউইন কিংবা অর্থনীতিবিদ ‘টমাস ম্যালথাস’ সম্পর্কেও আমি এ কথা বলবো। ওরা সবাই এতই আবেগি ছিলেন যে, বাস্তবতা অনুভবই করতে পারেন নি। বিস্তারিত পড়ে নিবে আমার ‘দয়াদর্শন’ গ্রন্থে।
আমি সম্পূর্ণ একজন আবেগি মানুষ, কারণ আমি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান চিন্তার সা¤প্রদায়িকতার উর্ধে গিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। আমি স্পষ্ট করে বলেছি-‘হিন্দু-মুসলিম জাতির বিভেদ আমি এসব মানি না/ আমার কাছে মানুষ সবাই মানুষ আমার বন্ধনা।’ (জালালের তরী)। প্রকৃত অর্থে আমি একথাটা শিখেছি ইসলাম থেকে-রাসুল হযরত মুহাম্মদ (স.) থেকে। তুমি আমার মুখের উপর বলে দিলে-আমি পূর্ণাঙ্গ একজন আবেগি মানুষ। যে মানুষ এমন কথা আমার মুখের উপর বলতে পারলো, তাকে আমি ছোট করে দেখবো না। কিন্তু বলবো, সে কি জানে মানুষের জীবনের বিরাট একটা অংশে আবেগের একক আধিপত্য চলে। সে কি জানে একজন মানুষ ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গল্লি’ ঘুরার অভিজ্ঞতা নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিচক বস্তুর পিছন ছেড়ে বস্তুর সাথে কেনো আবেগকে ধারণ করতে বাধ্য হয়? সে কি জানে মহামতি কার্ল মার্কস কেনো বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক হয়েও শেষ পর্যন্ত বিফল হলেন? সে কি জানে আমরা কেনো জ্ঞান-বুদ্ধি- কর্মের সাথে প্রেমকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছি? সে কি জানে প্রেম ছাড়া যে মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়? সে জানে না। জানলে আমার প্রেমকে সে আবেগ বলে উড়িয়ে দিতো না। সে যদি বস্তুবাদি না হয়ে বাস্তববাদি হওয়ার চেষ্টা করতো তবে দেখতো আমার প্রেম নিচক আবেগ নয়, এখানে আছে জ্ঞানের কথা, বুদ্ধির কথা, কর্মের কথা। সে যখন গ্যাসের বেলুনের মতো লাফ দেয় আকাশের দিকে তখন কি আমি তাকে প্রেমের ডিকদারা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করিনি?
তুমি স্মরণ করে দেখো, আমি সর্বদাই হিন্দু-মুসলিমের উর্ধে গিয়ে তোমাকে প্রেম দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করেছি। হয়তো তুমি বুঝনি কিংবা আজও বুঝছো না-এই প্রেম-ই যে তোমাকে দাঁড়াতে সাহিয্য করেছে বা করছে। এই জন্যই বলতে পারছো আমি প্রচণ্ড আবেগি। হ্যাঁ আমি প্রেমাবেগি। তোমার মাঝে এই আবেগ নেই। এটা তোমার দোষ না। দোষ হচ্ছে তোমার অশান্ত তারুণ্যের। দোষ হচ্ছে তোমার অবাস্তব শিক্ষা ব্যবস্থার। আমাদের প্রচলিত বস্তুবাদি শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে দিনদিনে অন্ধ করে দিচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে। আজ শিক্ষিতরা অভিজ্ঞতার অভাবে, অবাস্তব চাঞ্চল্যে, অপরিষ্কার সামনের দিকে হাটতে গিয়ে রাস্তা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছে বার বার নিজের উপর, সমাজের উপর, রাষ্ট্রের উপর। তারা বিদ্রোহ করছে সত্য, কিন্তু তবু সমাধানে পৌঁছতে পারছে না অভিজ্ঞতার অভাবে। পরিকল্পনার অভাবে। জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হতে অভিজ্ঞাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কার্ল মার্কসের সমাজ-রাষ্ট্র এবং মানুষ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিলো না বলেই জীবনে স্ত্রী-পুত্রের অর্থনৈতিক সংকটই সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাষ্ট্র তো এখানে প্রশ্নই আসে না।
তোমাকে আমি বার বার বলেছিÑ নিচক আবেগ দিয়ে যেমন কিছু চলে না, তেমনি আবেগশূন্যও কিছু চলে না। জীবনে আবেগ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জ্ঞান-বুদ্ধি-কর্মের পর চতুর্থ স্থানে প্রেম। আর এই প্রেমে আবেগ-ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি বাকী তিনটি অনুপস্থিত থাকে তবে এই আবেগ ধ্বংসাত্মক হয়ে যায়। যেমন শাহবাগি ব্লগারদের আন্দোলন। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি আমাদের একটা আবেগ আছে। থাকবে। এই আবেগে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে, আছে রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা। কিন্তু যে বাস্তবতার কারণে বাংলার স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর রাজাকারদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন সেই বাস্তবতা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কিংবা তাঁর মানসপুত্র-পত্রীরা বুঝতে ব্যর্থ বলেই তারা দেশকে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথে না নিয়ে সংঘাতের দিকে বার বার নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু নেতা ছিলেন। অভিভাবক ছিলেন। অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছেন একদিকে যেমন শেরে বাংলা, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আতহার আলী, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী প্রমূখের মতো নেতাদের সংস্পর্শে থেকে, অন্যদিকে গ্রামে-গঞ্জে-রাজপথে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে। হঠাৎ করে এসির গর্ত থেকে বেরিয়ে তিনি নেতা হন নি। ভুল আছে তাঁর জীবনেও। বিশেষ করে তাঁর প্রধান ভুল ছিলো আশপাশে সুবিধাবাদি বামপন্থীদেরকে আশ্রয় দেওয়া।
দেখ, কোন জাতির কাছে যদি প্রেম ছাড়া জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এই তিনটা থাকে তবু তাকে পূর্ণাঙ্গ বলা যাবে না। অথচ বামদের ধারণা তারা জ্ঞান-বুদ্ধি-কর্ম দিয়ে সফল হয়ে যাবে। না কখনও হবে না। অতীতেও হয়নি। যে কোন কাজের সফলতার জন্য প্রেমটা জরুরী। তবে বাকীগুলোকে বাদ দিয়ে শুধু প্রেম দিয়েও চলবে না। আমি আবেগি সত্য। তবে তুমি স্বীকার করবে আমার আবেগে পরিকল্পনা আছে। কারণ আমি হলাম বস্তববাদি আবেগি। আর বস্তুবাদি আবেগিরা থাকে ফ্যান্টাসিতে। কারণ, বাম নেতারা চায় না তাদের কর্মীরা সচেতন হয়ে উঠুক। তারা অত্যন্ত কট্টর গোড়া প্রকৃতির মানুষ। ওরা তাদের বই ছাড়া অন্য বই কর্মীদেরকে পড়তে নিষেধ করে। কিন্তু এখন ডিজিটেল যুগ। এখন আর ধোকা দেওয়া সম্ভব নয়। সবাই এখন নেট ব্যবহার জানে। নেটের মাধ্যমে মানুষ অনেক কিছুই জেনে যায়।
আজ বিদায়ের একটি সত্য স্বীকার করতে চাই-তোমাকে ভালোবাসি বলে অনেক বাস্তবতাকে আমি আবেগের আড়ালে লুকিয়ে তোমাকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছি। না, এখানে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন স্বার্থ নেই। আমি আমাকে ভালোবাসি বলে তোমাকে ভালোবাসি। আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি বলে তোমাকে ভালোবাসি। আমি এই দেশকে ভালোবাসি বলে তোমাকে ভালোবাসি। আমি মানুষকে ভালোবাসি বলে তোমাকে ভালোবাসি। স্মরণ রাখবে আত্মাশূন্য কোন কাজই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আর আত্মায় আত্মা চায়, আত্মা পাথর চায় না। আমি চাই তোমার আত্মাও আমার আত্মার মতো জেগে গিয়ে বলুক-এদেশ আমাদের। এদেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবই আমাদের।
তুমি কি পারবে এই কথা বলতে? তুমি কি পারবে অন্ধ আবেগ বাদ দিয়ে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের চিন্তা-চেতনাকে অনুভবে ধারণ করতে? তুমি কি পারবে একবার বলতে-আমরা তন্ত্র-মন্ত্র বুঝি না, আমরা সত্য-ন্যায়ের পক্ষে? বাংলাদেশে একজন হিন্দু মরলেও আমার-একজন মুসলমান মরলেও আমার, পারবে এই কথা বলতে? তুমি কি পারবে সাহস করে বলতে-সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে মুসলিম বাদ দিয়ে কিসের এবং কার স্বার্থে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান পরিষদ? এই পরিষদে মুসলমান কেনো নেওয়া হচ্ছে না? তুমি বলতে যদি পারো তবে বুঝা যাবে-তোমার আবেগ কিছুটা বাস্তবতায় এসেছে।
১ থেকে দশ পর্যন্ত প্রেমপত্র পড়তে হলে ঘুরে আসুন_ ( http://www.syedmobnu.com)
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:১৯
অনার্য পথিক বলেছেন: হাসনাত আবদুল হাই'র গল্পটা কী আপনি পাঠ করেছেন?