নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইংল্যান্ডে আমার দিন কেমন যাচ্ছে

২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ২:২২

লিডসে

আমি সোমবারে বার্মিংহাম থেকে প্রথমে লিডস আসি। সেখানে আমি প্রথমে এসে মুর্শেদের ঘরে উঠি। প্রিয় পাঠক এখানে প্রথমে বলে রাখা ভালো-আমার নানা এবং দাদার বাড়ি একই গ্রামে। মুর্শেদ আমার সম্পর্কে চাচাতো ভাই এবং মামাতো ভাইও। তবে এ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছোটবেলা থেকেই তার সাথে আমার খুব প্রেম রয়েছে। এই প্রেম আজও ভাঙেনি। ছোটবেলার বন্ধুত্বে যে কি স্বাদ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মুর্শেদের স্ত্রী বুঝে আমার সাথে তার স্বামীর বন্ধুত্বের গাঢ়ত্ব, তাই আমি তাদের ঘরে গেলে সে আমাকে আপনজন হিসেবেই গ্রহণ করে। সে স্থানীয় একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে। মুর্শেদের ঘর থেকে যাই আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ট মঈনুলের টেকওয়েতে। সে একজন ভালো পাঠকও। মঈনুলের টেকওয়ে থেকে যাই জালাল চাচার ঘরে। জালাল চাচা আমার বাবার আপন খালাতো ভাই এবং আমার বয়স্য। নাইস ম্যান বলতে যা বুঝায়, জালাল চাচা তেমনি একজন মানুষ। চাচার উপর আমি খুব অধিকার খাটাতে পারি বলে তাকে খুব ভালো লাগে। আল্লাহ-রাসুলের জন্য পাগল আমার জালাল চাচা। জালাল চাচার ঘর থেকে চলে আসি মুর্শেদের ঘরে। পরদিন সকালে আমার চাচাতো ভাই সৈয়দ জয়নাল এসে আমায় নিয়ে যায় তার ঘরে। জয়নালের বাবা আমার বাবার আপন চাচাতো ভাই। জয়নালের স্ত্রী আত্মীয়তায় এক অসাধারণ মহিলা। সে সত্যিই নিজের বোনের মতো আমার উপর অধিকার খাটিয়ে কথা বলে। আমাদের পরিবারের সবাই তার খুব ভক্ত। সেও সবাইকে আদর করে। লিডসে মাওলানা ফয়েজের সাথে দেখা হয়। সে স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং আমার বাল্যবন্ধু।



ডালিংটনে

ডালিংটন হচ্ছে লিডস থেকে প্রায় ৪৫ মাইল দক্ষিণের একটি শহর। মুর্শেদ আমাকে নিয়ে এই শহরে আসে। এই শহরে আমার অনেক আত্মীয় থাকেন। আমরা প্রথমে এসে উঠি মুর্শেদের বড় চাচা ফয়জুল ইসলাম সাহেবের ঘরে। আমি থাকে চাচা ডাকবো, না মামা ডাকবো দন্দ্বে আটকে যাই। আমি আগেই বলেছি মুর্শেদের বাবা আমার চাচা এবং মামা। সম্পর্কের সূত্রটা এখানে একটু বলে রাখি- মুর্শেদের দাদা আমার দাদার আপন মামাতো ভাই আর আমার নানার চাচাতো ভাই। তাই আমি মুর্শেদের বাপ-চাচাকে কখনও মামা আর কখনও চাচা ডাকি। আমার মা-বাবা উভয়ের জন্যই তাদের সমান স্নেহ। ফয়জুল চাচা বা মামা দীর্ঘদিন থেকে কঠিন রোগে আছেন। আমি সর্বদাই তাঁর জন্য দোয়া করি। তাকে দেখে আমরা চলে যাই মুর্শেদের ছোটচাচার (বদরুল চাচার) ঘরে। চাচা খুব কট্টর আওয়ামীলীগের ভক্ত। সিলেট এমসি কলেজে থাকতে ছাত্রলীগ করতেন। বদরুল চাচার ঘর থেকে আমরা চলে যাই আমার মায়ের মামাতো বোন শাহনা খারার ঘরে, যার বিয়ে হয়েছে আমার সম্পর্কিত এক ভাতিজার সাথে। ভাতিজা বয়সে অনেক বড়। সেখান থেকে বেরিয়ে আমাদের বংশের এক চাচাতো ভাই সৈয়দ কয়েস সহ অনেক আত্মীয়-সজনের সাথে দেখা করে আবার লিডসে চলে যাই।



সান্ডারল্যান্ডে

লিডস থেকে ২৩ মে বোধবার দুপুরে সান্ডারল্যান্ডের দিকে যাত্রা শুরু করি। সান্ডারল্যান্ড মানে দ্বিতীয় সৈয়দপুর। সৈয়দপুর হলো আমাদের গ্রামের নাম। সৈয়দপুর হচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার একটি বিশাল বড় গ্রাম। এই গ্রামের প্রচুর মানুষের বসবাস ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে। তবে বেশিরভাগ মানুষ থাকেন সান্ডারল্যান্ডে। সান্ডাল্যান্ডে যে কয়েক হাজার বাঙালীর বসতি এর ৯৯ ভাগই সৈয়দপুরের। আর সৈয়দপুরের মানুষ মানে আমরা একে অন্যর আত্মীয়। সৈয়দপুর নিয়ে প্রবাদ চালু আছে_` সৈয়দপুরের আলাজালা একভাইয়ের মামা শশুড় আরেক ভাইয়ের শালা।' এইভাবে জুলাফির প‌্যাচের মতো এই গ্রামে আমরা একে অন্যের আত্মীয়।

সান্ডারল্যান্ডে যে দুটি বড় মসজিদ এবং একটি বিশাল কমিউনিটি সেন্টার এশিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তার মূল কর্ণধার সৈয়দপুরের কেউ কেউ হচ্ছেন বিগত কয়েক যুগ থেকে। বর্তমানে সান্ডারল্যান্ড জামে মসজিদের সভাপতি সৈয়দ আব্দুস সালাম রাজা মিয়া। তাঁর কথা পরে আসছে। সান্ডারল্যান্ডে আমি প্রথমে এসে উঠি আমার ফুফুতো ভাই সৈয়দ শহিরুল বারি জিয়াউলের ঘরে। জিয়া ভাই অত্যন্ত সমাজ সচেতন একজন কমিউনিটি নেতা। আর ভাবী আমাদের সবার প্রিয়। আসলে যদিও তিনি ফুফুতো ভাই কিন্তু চলায়-ফেরায় আপন ভাই ও ভাবির মতোই। এখানে খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাই হাজী সৈয়দ আব্দুস সালাম রাজা মিয়া সাহেবের ঘরে। রাজা ভাইয়ের কথা কি বলবো? যতো বলবো ততই কম হবে। বয়সে আমার বাপ-চাচার সাথের, কিন্তু মনের দিকে আজও তরুণ এবং আড্ডায় যার সাথে বসেন তারই বয়স্য। পুরাতন শিক্ষিত মানুষ। পাকিস্তান আমলে কিংবা বৃটিশ আমলে তাঁর বাবা সিলেট আলিয়া মাদরাসার অফিস সুপারেন্টেন ছিলেন (তাঁর কাছ থেকে জেনেছি)। তাঁর এক ভাই শিক্ষা অফিসার ছিলেন। রাজা ভাই বর্তমানে ফেনশনে আছেন। সান্ডাল্যান্ডে যেই আসেন তাঁকে নিয়ে ঘুরার দায়িত্ব রাজা ভাইয়ের। সর্বদাই হাসি-খুশি একজন মানুষ। নিয়মিত তবলিগ করেন। রাজা ভাইয়ের ঘর থেকে চলে আসি সান্ডারল্যান্ড মসজিদে। আসরের নামাজ পড়ি। বর্তমানে আসরের নামাজ হলো বিকাল সোয়া সাতে। আসরের নামাজ শেষে মাওলানা কামাল আহমদ তাঁর ঘরে । নিয়ে যান। মাওলানা কামালের বাড়ি সৈয়দপুরের পাশের গ্রাম লুদরপুরে। ছোটবেলা থেকেই থাকে জানি। তাঁকে আমি তখন কামাল মামু ডাকতাম, আজও ডাকি। কেনো ডাকি জানি না। তবে তাঁর সাথে তখন থেকেই খুব ঘণিষ্ট বন্ধুত্ব। কামাল মামুর ঘরে হেভী নাস্তা করি। রাত সাড়ে নয়টায় মাগরিব। আমরা মসজিদে নামাজে আসি। নামাজ পড়ে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা সৈয়দ ইমাম উদ্দিন সাহেবের ঘরে যাই। ইমাম সাহেব হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিত। ইমাম সাহেবের স্ত্রী সৈয়দা ফারসা বেগম আমার মায়ের বড় মামা ডাক্তার আব্দুল হক সাহেবের বড় মেয়ে। ইমাম সাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে আমি সাউথশীলের দিকে যাত্রা শুরু করি।



সাউথশীলে

নর্থ সীর ( দক্ষিনের সমুদ্র) এক প্রান্তে ইংল্যান্ডের সাউথশীল শহর অপর প্রান্তে নরওয়ে। আমি এখন আছি সাউথশীলে। এই শহরে এক সময় রোমান শাসকদের শক্তিশালী একটি দূর্গ ছিলো। তখন ইংল্যান্ড ছিলো রোমানদের দখলে। বৃটিশরা তাদের পরাধিনতা যুগের ঐতিহ্যকে স্মৃতিময় করে রাখতে এখানে আজও রোমান দূর্গকে সংরক্ষন করে রেখেছে। এখনে তারা বলেনি যে, রোমানদের সাথে আমাদের শত শত বছর যুদ্ধ হয়েছে, তাই এখানে রোমানদের কোন কিছু রাখবো না। এখানে আমাকে স্বীকার করতে হবে বৃটিশরা খুবই ঐতিহ্যিপ্রিয় জাতী। সাউথশীল এক সময় কয়লার জন্য খুব প্রিসদ্ধ ছিলো। আজকের পৃথিবীতে মানব জীবনে পেট্রোল-গ্যাস-বিদুতের যে গুরুত্ব রয়েছে, এক সময় এই গুরুত্ব ছিলো কয়লার। সেই সময় কয়লা নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আধিপত্যের যুদ্ধ হতো। কয়লাযুগে আজকের মতো এতো উন্নত রাস্তা ছিলো না। কয়লা বিভিন্ন শহরে আমদানী-রফতানী হতো নদী-নালা-সমুদ্র পথে। সাউথশীলের সমুদ্র সৈকতের সাথে টাইন এবং ওয়ার নামে দুটা নদী রয়েছে। সাউথশীলে আমি যখন প্রথম আমার মা-বাবার সাথে এসে ছিলাম তখন আমার বয়স উনিশ। এই শহরে থাকতেন আমার মায়ের মেঝ মামা সৈয়দ তোফায়লুল হক। হক সাহেব হিসেবে তিনি এই শহরের সকল বাঙালীর কাছে পরিচিত। অমায়িক এক অসাধারণ মানুষ। নেক মানুষ বলতে যা বুঝায় তিনি ছিলেন তা। নানা সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন। আমার মা যেহেতু তাঁদের সব বড়বোনের মেয়ে, তাই তাঁর জন্য স্নেহটাও ছিলো সবার বেশি। তা ছাড়া আমার নানাতো ছিলেন পীর সাহেব, বছরে ছ' মাস-ই থাকতেন সফরে এবং নানার কোন ভাইও ছিলো না, তাই মামার বাড়ি-ই ছিলো আমার মা'র প্রধান সম্বল। তাই আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমার মা যতটুকু তাঁর বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব তা থেকে বেশি চেষ্টা করতেন তাঁর নানা বাড়ি যেতে। আর তাঁর মামুরাও যেনো ভাগনী ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। আমার মায়ের নানা ছিলেন সৈয়দ মন্তেশর আলী জগন্নাথপুর থানার সৈয়দপুর গ্রামের একজন প্রতাপশালী গ্রাম-পাঞ্চায়েত। মায়ের বড় মামা ডা. আব্দুল হক। তিনি গ্রামে থেকে ডাক্তারী এবং বিচার-পাঞ্চায়েত করতেন। মেঝমামা সৈয়দ তোফায়তুলল হক থাকতেন ইংল্যান্ডে। ছোটমামা সৈয়দ এনামুল হক একজন মরমী সাধক ছিলেন।

আমি সাউথশীলে বর্তমানে আছি সৈয়দ তোফায়লুল হকের বড় ছেলে সৈয়দ জহিরুল হকের ঘরে। বয়সে মামা আমার বেশ ছোট। আমি তাকে মামা ডাকি, তিনিও আমাকে মামা ডাকেন। জহির মামারা তিন ভাই। তিনি সবার বড়। তাঁর দ্বিতীয় ভাই সৈয়দ জাবেদুল হক সাউথশীল কাউন্সিলের হেলথ অফিসার। তৃতীয়ভাই সৈয়দ মুহিতুল হক একজন আর্কিটেক্ট, কিন্তু তাঁর শহরে কাজ নেই, আর তিনি বাইরেও যাচ্ছেন না। মামারা সবাই আমার খুব প্রিয়। আর মামীদের কথা কি বলবো। বড় মামী আবার আমার ভাগনীও। দ্বিতীয় মামী ভাতিজী। আর ছোটমামী নতুন এসেছেন। এইবার তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা। অসাধারণ।

সাউথশীল শহর বিভিন্ন কারণে বৃটেনে গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এই শহরে আমার আরো অনেক আত্মীয় থাকেন। আমার মায়ের আপন এক খালা থাকেন। আছেন খালাতো ভাইয়েরা। খালাতো ভাই সৈয়দ জয়নাল আমার বয়স্য এবং ছোটবেলা থেকেই আমার অত্যন্ত ঘণিষ্টজন। তাদের শহরে আমি এসেছি শোনে ব্যস্ত হয়ে উঠেন আমাকে তাঁর ঘরে নিতে। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় তাঁর ঘরে যাই। জয়নাল মামার স্ত্রী আবার আবার আমার সম্পর্কে খালা। রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাদের ঘরে বসি এবং খাওয়া-দাওয়া করি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.