নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাটলিপুলে দু’রাত
২৮ মে ২০১৩ সাউথশীল থেকে বিদায়ের ঘন্টা বাজতে থাকে। পৃথিবীর সব মানুষ আর মাটি যেনো আমার আপন। আর আমার মায়ের মামুর বাড়ি তো আমার জন্য এক মায়ার সাগর। আর মামির হাতের দুধভাত খেতে বড় মজা। আমি জহির মামার ঘর থেকে তার ছোটভাই সৈয়দ যাবেদুল হকের ঘরে যাই। মামি আমাকে পেয়ে নানাজাতের পিঠা তৈরি করেন। দুপুরে তাদের ঘর থেকে সান্ডারল্যান্ডে আসি জিয়াউল ভাইয়ের ঘরে আসি। কিছুক্ষণ সেখানে বসি। ভাবি বারবার খাওয়ার জন্য বললেও আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে দেই। জিয়াউল ভাই অন্য ঘর থেকে ফিরে আমাকে আবার খাওয়ার জন্য বললে আমি বলি-ভাবি তো বলছেনই, আমি খাবো না। ভাবি সাথে সাথে বলে উঠেন-তোমার ভাইয়ের ধারণা আমি তোমাদেরকে মায়া করি না। প্রকৃত অর্থে জিয়াউল ভাই, সামাদ ভাই, খালিক ভাই, দিলু (ছড়াকার দিলু নাসের) ভাই প্রমূখরা আমার বাবা-চাচার বড় মায়ার ভাগিনা। আমার বাপ-চাচার আপন কোন বোন না থাকলেও আমরা তাঁর চাচাতো-খালাতো বোনদের কাছে কোনদিন ফুফুর অভাব অনুভব করিনি। জিয়া ভাই ও ভবির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজা ভাইয়ের (সৈয়দ আব্দুল সালাম রাজা মিয়া) ঘরে আসি। জিয়া ভাইতাঁর গাড়ি নিয়ে আমার সাথে রাজা ভাইয়ের ঘর পর্যন্ত আসেন। চা খাই, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন তর্কবিতর্ক হয়। ৬ টার দিকে বিদায় নিয়ে হাটলিপুলের দিকে যাত্রা শুরু করি। হাটলিপুল সান্ডারল্যান্ড থেকে ১৫ মাইল উত্তরে নর্থ সীর তীরের ছোট একটি শহর। এই শহরের বেশির ভাগ এলাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে সমুদ্রের তীরকে ভরাট করে। এখানে আমাদের অনেক আত্মীয় থাকেন। হাটলিপুলে আমার প্রথম যাওয়া হয়েছিলো ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন আমার জানা ছিলো না বার্মিংহাম থেকে হাটলিপুল কত দূরে। আবুল হাসান বর্তমান সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। হাসানের মা আমার নানির আপন খালাতো বোন। এই হিসেবে সে আমার মামা। তবে তার সাথে মামা-ভাগিনার সম্পর্কের উর্ধ্বে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। হাসানের মামা হাফিজ সৈয়দ মুকাররাবিনও আমার ছোটবেলার বন্ধু। হাসানের মামার বাড়ি আমাদের পাশের উত্তরের বাড়ি। ছোটবেলা গ্রামে গেলে আমি প্রায় হাসানের নানার ঘরে, পরে সেখান থেকে তার মামা হাফিজ মুকাররাবিনকে নিয়ে তাদের বাড়ি যেতাম। হাসানরা ইংল্যান্ড আসে আমাদের তিন-চার বছর আগে। ইংল্যান্ড এসে হাসানের সাথে ফোনে আলাপ হয়। সে আমাকে হাটলিপুল যাওয়ার দাওয়াত করে। আমি তো সারা জীবনই ভবঘুরে মানুষ। তাকে বললাম, কেমনে আসবো? সে আমাকে এমন সহজভাবে ট্রেনের রাস্তা বললে-মনে হয় এইতো পাশের বাড়ি। আমি ইতোমধ্যে একাকি লন্ডন শহরে গেলেও অন্য কোথাও যাইনি। আল্লার নাম নিয়ে বার্মিংহাম নিউ স্ট্রিট ট্রেন স্টেশনে গিয়ে হাটলিপুলের জন্য টিকেট করি। প্লাট ফরমে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন হাটলিপুলে কোন ট্রেন সরাসরি নেই। পথে পথে ট্রেন পরিবর্তন করতে হবে। সময়টা ছিলো ডিসেম্বরের ২২ কিংবা ২৩ তারিখ। কিসমাসের সময়। তখনও মোবাইলের যোগ আসেনি। আমি টেলিফোন বক্স থেকে হাসানকে ফোন দিলাম। সে বললো নিউ ক্যাসেলের ট্রেন ধরতে। আমি নিউ ক্যাসেলের ট্রেনে উঠি। নিউ ক্যাসল কতো দূর, পথ তো শেষ হয় না। শিতের দিন তিনটায় সারা পৃথিবী অন্ধকার। অবশেষে আমার নিউ ক্যাসল আসা হলো। ট্রেন থেকে নেমে হাটলিপুলের ট্রেনে উঠি। দশ বা পনেরো মিনিটে হাটলিপুল চলে আসি। ষ্টেশনের পাশে-ই হাসানের বাবার রেষ্টুরেন্ট। সে এগিয়ে এসে আমায় নিয়ে যায়। তখনও হাসানের দাদি আছেন, আছেন তার বাবাও। সেই সময় হাসানের দাদি ছিলেন হাসপাতালে। আমি বেশ ক’বার হাসপাতালে গিয়ে তার দাদিকে দেখেছি।
অতঃপর হাটলিপুল জীবনে অনেক আসা হয়েছে। বর্তমানে হাটলিপুলে থাকেন হাসানের ছোট মামা অর্থাৎ আমার নানির খালাতো ভাই সৈয়দ মুকরাবিন, হাসানের ভগ্নিপতি গীতিকার সৈয়দ দুলাল, হাসানের ভগ্নিপতি এক সময়ের সিলেটের কৃতি ফুটবলার মল্লিক মাকু প্রমুখ। ওরা সবাই আমার এবং হাসানের ছোটবেলার বন্ধু। হাটলিফুলে আমি প্রথমে দুলালের রেষ্ট্ররেন্টে যাই। সেখানে দীর্ঘক্ষন বসি। এই রেস্টুরেন্টর সেফ তারই ভগ্নিপতি। সে চিকিন আর মিট টিক্কার মিক্স ফ্রাই আর নানরুটি তৈরি করে দিলো। খুব-ই সুস্বাদু খাবার। রাত ১২টায় সেখান থেকে প্রথমে দুলালের বোনের ঘরে, পরে তার আরেক বোনের ঘরে, অতঃপর তার ছোটভাই ছড়াকার সৈয়দ হিলাল সাইফ-এর ঘরে আসি। হিলাল হলো আমার ছোট মামা লিটলম্যাগ ভূমিজের সম্পাদক, কবি, গল্পকার আহমদ ময়েজের ছোট ভায়রা। আর শুধু ভায়রা নয়, হিলালরা মামানির মামাতো ভাইও। হিলালকে দেখলেই তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের কথা স্মরণ হয়ে যায়। একদিন আমি আর দুলাল সৈয়দপুর মাগুরা নদীর তীর দিয়ে হেটে কোথায় জানি যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি কিছু ছেলে নদীর পেটনায় মাটি খুঁড়ছে। দুলাল সেই বাচ্চাদের মধ্য থেকে একজনকে ডেকে ধমক দিয়ে বাড়ি যেতে বলে। তখনই আমার জানা হলো এই বাচ্চা দুলালের ছোট ভাই হিলাল। তখন হিলাল ছিলো বেশ পুতুলের মতো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে হেলালের ঘর থেকে মুকরামিন নানার ঘরে যাই। নানাতো বয়সে আমার ছোটই হবেন। ইয়ং নানি পরোটা আর চিকিন কারি এনে দিলেন খাওয়ার জন্য। বৃটেন এসে খুব চেষ্টা করছি খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিতে। কিন্তু পারছি না। নানার ঘর থেকে দুলালের ঘরে যাই। সেখান থেকে বিকালে মাকুর রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে বেশ কিছু সময় বসি। মাকু নিজে পাক করে কিংপুরন সাগওয়ালা, চিকিন ও মিট টিক্কা, শিশ কাবাব, তান্দুরী চিকিন, গ্রীণ সালাত, তান্দুরী রুটি। খেতে খেতে আমরা নিজেদের ছোটবেলার বেশ স্মৃতিচারণ করে নিলাম। মাকু খুব অনুরোধ করলো তার ঘরে রাত থাকতে। কিন্তু তা সম্ভব নয় বলে দুঃখ প্রকাশ করলাম। মাকুর রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসি আবুল এহসানের ঘরে। আবুল এহসান হলেন আবুল হাসানের ছোট ভাই। অর্থাৎ সম্পর্কে আমার মামা। তিনি ইটালী সফরে ছিলেন। এই মাত্র ফিরেছেন। সেখানে দেখা হয় ছানার সাথে। সে নিউক্যাসল থেকে এসেছে এহসান মামার সাথে দেখা করতে। এহসান মামার ঘর থেকে বেরিয়ে মুকরাবিন নানার ঘরে এসে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাই। ঘুম থেকে উঠে সকালে ওল্ডহামের দিকে যাত্রা শুরু করি।
©somewhere in net ltd.