নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওল্ডহামে কিছুক্ষণ
ওল্ডহাম হলো বৃহত্তর মানচেস্টারের মধ্যে সবচে বড় শহর।শহরটি ইয়র নদীর তীরে। আমার বন্ধু শেখ গয়াছ মিয়া ওল্ডহামের সোনালী ক্যাশেনকারির মালিক। ১৯৯১ কিংবা ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের দিকে বার্মিংহামের চটলী এলাকার আলমরক রোডে একটা ছোট দোকান ছিলো এই সোনালী ক্যাশেনকারি। পরে তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। অতপর তা মেগাসপ হয়ে যায় স্মলহীথের কভেন্ট্রি রোডে এসে। একইভাবে মেগাসপ আরেকটি তারা করে ওল্ডহামে। গয়াছের বাবা শেখ মনির মিয়া ছিলেন সিলেট টুলটিকর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ইংল্যান্ডে যেমন কাছাকাছি অসবস্থান, তেমনি সিলেটেও। তারা থাকে বালুচর আর আমরা শাহী ঈদগাহ। তা ছাড়া বিভিন্নভাবে তার আমার সম্পর্ক রয়েছে। গয়াছকে যদি আমি বলি শুধু ব্যবসায়ী তবে ভুল হবে। সে একজন ভালো পাঠকও। এক সময় সে বৃটিশ হোম অফিসে চাকুরী করতো। আমি সান্ডারল্যান্ড যাচ্ছি জেনে সে বললো-তা হলে ফিরার পথে ওল্ডাম এসে যেও, আমাদের নতুন দোকান দেখে যাবে। আমিও তাই করালম। ৩০ জুন আমি হাটলিপুল থেকে ফেরার পথে ওল্ডহামে চলে যাই। গয়াছের দোকান পেতে কোন সমস্যা হয়নিÑটমটম আছে সাথে। সেখানে দীর্ঘ সময় বসি। অনেক কথা হয় গয়াছের সাথে। সে তার দোকানের বিভিন্ন দিক দেখায়। দেখা হয় একজন মাওলানা সাহেবের সাথে, যিনি গহরপুর মাদরাসা থেকে টাইটেল দিয়ে এসে গয়াছের দোকানে কাজ করছেন। ভালো লাগলো একজন আলেমকে কাজে দেখে। তিনিও ইচ্ছে করলে এখানে এসে আমি আলেম-আমি হুজুর-আমি কাজ করবো কিভাবে? এই সব বলতে পারতেন। একটা ঘটনা না বললে না হয়। আমার এক বন্ধু আলেম, তিনি আমাকে তার অর্থ নৈতিক সংকটের কথা বললেন। আমি তাকে আমার এক বন্ধুর দোকানে কাজ দিতে বললে তিনি রেগে গিয়ে বললেনÑআমি একজন আলেম মানুষ, আর আপনি কি বলছেন! আমি বললামÑনিশ্চয় আপনি হযরত রাসুল (স.) কিংবা হযরত আলী (র.) থেকে বড় আলেম না ? তিনি বললেনÑতাতো না। আমি বললামÑতারা তো অন্যের ঘরে চাকুরী করেছেন। তিনি হে হে করে হাসতে থাকেন। আরেকবার দেশে আমার এক বাল্যবন্ধু এসে আমাকে বলতে থাকে তাকে যদি আল্লাহ কোন সুযোগ দিতেন তবে সে আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসতো না। সে এই রকম কথা প্রায়ই বলে সাহায্যের জন্য এলে। আমি তাকে বললাম-কাজ করো। সে বললো-কি কাজ? আমি বললামÑএসে যাও আমার সিটি অফসেট প্রেসে। শুরু করো বাইন্ডিং-এর হেলপার হিসেবে। সে রাগ করে বলে উঠেÑ তোমাকে আল্লাহ ধনি করেছে বলে কি আমার সাথে মজাক করছো? আমি বললামÑআসতাগফিরুল্লাহ। আমি তো তোমাকে সম্মানের পথ দেখালাম। হযরত নবী করিম (স.) বলেছেনÑআমার কাছে দুটা কাজ ঘৃণিতভাবে বৈধ-১) বিবি তালাক, ২) ভিক্ষা। তুমি যা করছো তা তো ভিক্ষা ছাড়া কিছু না। তা ছাড়া আমি তো ধনি না। ধনি হলেন আল্লাহ, আর আমরা সবাই ফকিরের দল। আমার বন্ধুটি রাগ করে চলে গেলো। আমি জানি সে আবার আসবে । এসেছেও। যা সে প্রসঙ্গ। আলেম মানে কাজকর্ম ছেড়ে ভিক্ষা করা না, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেমরা ইতোমধ্যে প্রমান দিয়েছেন। বাংলাদেশে শুধু আলেমদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা নয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও একটু শিক্ষিত হয়ে গেলেই এই হীনমন্যতা পেয়ে বসে। ফলে ১৬ কোটি মানুষের দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি। অথচ চিন্তে করলে আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা এমন থাকার কথা না। আমরা প্রকৃতিগতভাবে কৃষিজাত অঞ্চলের মানুষ। আমাদরে শিক্ষিতরা কৃষিকাজে যেতে চায় না। এই হীনমন্যতার পরিবর্তন হলে দেশ এবং মানুষের উন্নতি হতো। বেকার মানুষেরা যখন রাজনীতি করে তখনই সন্ত্রাস, হাইজ্যাক, খুনাখুনি বৃদ্ধি পায়। হতাশা থেকে বৃদ্ধি পায় নেশা।
ওল্ডহামে ছোটবেলা আমার আব্বা-আম্মার সাথে আমার আসা হয়েছে। এখানে আমার আব্বার এক মামা থাকতেন। আমরা তাঁকে আবু চান খা দাদা বলে জানতাম। তাঁর অন্যকোন নাম থাকলে জানি না। আমার দাদি নাকি খুব সুন্দরী এবং পর্দাশীলা ছিলেন। আমার আব্বার নানা ছিলেন একজন আলেম। দাদিও নাকি সেই সময় উর্দু বাংলা দুই ভাষাই জানতেন। তিনি উর্দুতে বেহেস্তি জেওর পড়ে মহিলাদেরকে মাসআলা-মাসায়েল বলে দিতেন। আমার বাবার বয়স যখন পাঁচ-ছয় তখন দাদি মারা যান। ফলে আমার বাপ-চাচারা মামুর বাড়িতে বড়ই আদরের ছিলেন। আমরাও বড় হয়ে দেখেছি আমার বাপ-চাচাদের শত অপরাধ মাফ তাদের নানাবাড়ি। আমার দাদির মাত্র একভাই ছিলেন। তাঁর নাম ছিলোÑমুহাম্মদ আব্দুল কাদির খান। বাকি সব হলেন দাদির চাচাতো ভাই। কিন্তু তাদের আদর ছিলো নিজের ভাইয়ের মতো। আবুচান খা দাদা ছিলেন আমার দাদির চাচাতো ভাই। তাঁর এক ছেলের নাম এই মূহুর্তে স্মরণ হচ্ছেÑফয়জুল খা। তিনিও ওল্ডহামে থাকেন। কিন্তু ঠিকানা জানা নেই। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গয়াছের দোকান থেকে বের হয়ে কার পার্কে যাওয়ার পথে দেখা হয় দুলনের সাথে। দুলন সম্পর্কে আমার ফুফুতো ভাই। সে নাকি বিয়ে করেছে আবুচান খা দাদার মেয়ে। একেই বলে সৈয়দপুরের আলাজালা একভাইয়ের মামু শশুড় আরেক ভাইয়ের শালা। দুলনের বাড়িও সৈয়দপুর। দুলনের অন্য এরেকটি নাম এই মূহুর্তে স্মরণ হচ্ছে না। তবে তাকে আমি ফুফু তো ভাই বলে নয়, আদর করি তার ভদ্রতা এবং জ্ঞান অর্জনের আগ্রহের জন্য। সে কওমী মাদরাসা, আলিয়া মাদরাসা, কলেজ এবং সবশেষে শাহজালাল বিশ্বদ্যিালয়ে পড়েছে। শাহজালালে তার বিষয় কি ছিলো এই মূহুর্তে আমার স্মরণ হচ্ছে না। আরো ভালো লাগলো দুলনকে ওল্ডহামে দেখে। না, সে ইংল্যান্ড এসে পোশাকের দিকে কোন পরিবর্তন আনেনি। সবদিকে লেখাপড়া করে মানুষ সাধারণত দ্বন্দ্বে আটকে যায়। সে কিন্তু এখনও কোন দ্বন্দ্বে নেই। মনের ভেতর তার উলামায়ে দেওবন্দের অনুসরণ অটুট। পোশাকেও তাই। দুলনকে আমার ফোন নম্বার দিয়ে আমি বিদায় নিয়ে বার্মিংহামের দিকে যাত্রা শুরু করি।
©somewhere in net ltd.