নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোয়ান সী’তে একদনি মাছ শকিারে

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭

সোয়ান সী’তে বরসি বাওয়া



ইংলান্ড, ওয়ালস, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এই চার প্রদেশ নিয়ে গ্রেট বৃটেন। ওয়ালসের রাজধানী কার্ডিফ। কার্ডিফ থেকে প্রায় ৪৪ মাইল দূরে সমুদ্র তীরের একটি শহর সোয়ানসী। বার্মিংহাম থেকে প্রায় ১৯০ মাইল দূরে এই শহর। গত ৬ জুলাই আমরা কিছু বন্ধু বার্মিংহাম থেকে মাছ শিকারে গিয়েছিলাম (ংধিহংবধ) সোয়ানসিতে। ঊসপধৎঃধ উরপঃরড়হধৎু: ঊহমষরংয (ঁ.শ) তে ংধিহ শব্দের অর্থ বলা হয়েছেÑ খধৎমব ষড়হম-হবপশবফ ধিঃবৎ নরৎফ. আমরা যে পাখিকে ‘রাজহাস’ বলি তাকে ইংরেজিতে ংধিহ বলে। ‘সোয়ান’ হলো স্পানিশ শব্দ, যার অর্থ রাজহাস। সোয়ান সী’ বাংলা করলে বলতে হয় রাজহাস সমুদ্র, কিংবা ‘দরিয়া-এ-রাজহাস’। এই সমুদ্রের নাম রাজহাস কেনো? তা আমার এই মুহুর্তে জানা নেই। সোয়ান সীর নামে শহরের নামও সোয়ানসী। সোয়ানসী শহরে গত তিন বছর আগে আমার প্রথম যাওয়া হয়েছিলো মিলু ভাইয়ের বোনের বিয়েতে। মিলু ভাইয়ের আরেক বোন বিয়ে করেছে শাহেদ। শাহেদ হলো আমার বন্ধু জিলু মিয়া সোহেলের ছোট ভাই। সোহেল ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে আমি যখন বামিংহামে রেডিও মিনারে বাংলা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম, তখন। তাদের পরিবার এই অনুষ্ঠানের নিয়মিত ¯্রােতা ছিলেন। তিনি তখন নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্র জীবন শেষে তিনি লয়েড টিএবি ব্যাংকের একাউন্টেন্সী বিভাগে বেশ কিছু দিন চাকুরী করে বর্তমানে রাওলী লারনিং ক্যাম্পাসের জুনিয়র ম্যানাজারের দায়িত্বে আছেন। সোহেল ভাইয়ের সূত্রে তার পরিবারের সবার সাথে বেশ ঘণিষ্ট সম্পর্ক হয়ে যায়। এই সম্পর্কের সূত্রে শাহেদের শালির বিয়েতে বার্মিংহাম থেকে সোহেল ভাই, রোহুল সহ অনেকই গিয়েছিলেন। আমি গিয়ে ছিলাম লন্ডন থেকে মিলু ভাইয়ের সন্দিক আলী আহমদ ভাইয়ের সাথে।

কি ভাবে যে মাছ শিকারের পরিকল্পনা হলো তা আমার জানা নেই। পরিকল্পনা করলো ইকবাল, রুহুল, শাহেদ আর সাথে মোস্তাফা ভাই শরিক হলেন। সবাই শাহেদের শশুড় বাড়ি দাওয়াত খাবে। সাথে আমাকে নিবে। আমি যাবো কি না তা আগের দিনও জানি না। ৫ জুলাই আমি ছিলাম নিটিংহামে। ইচ্ছে ছিলো লন্ডন যাবো নানিকে দেখতে। কিন্তু মাছ শিকারিরা আমাকে নির্দেশ দিলো সোজা বার্মিংহামে আসতে। তাদের সাথে সোয়ানসিতে যেতে হবে। অবশেষে আমি নিটিংহাম থেকে বার্মিংহামে চলে আসি। তারা ৬ তারিখ সকাল ৫ টায় যাত্রা শুরু করবে। রুহুল আর ইকবাল গেলো ইকবালের গাড়িতে। শাহেদ আগের রাতেই চলে গেলো তার মেয়েকে নিয়ে। আর আমি, মোস্তাফা ভাই, ফয়জুল্লাহ ভাই, মীর আসগর, মোস্তফা ভাইয়ের ছোট ভাই হারুন, হারুনের ছেলে আব্দুল ওয়াহাব গেলাম মীর আসগরের গাড়ীতে। আটটার আগে যে কোনভাবে সোয়ানসীতে গিয়ে পৌঁছতে হবে। সাড়ে আটটায় মাছ শিকারে যাওয়ার বোট জল গেইটের বাইরে যেতে হবে। আমার আর রাতে ঘুমই হলো না। সকাল পাঁচটায় আমরা গাড়িতে উঠি। এম ৪ দিয়ে কার্ডিফ কিংবা সোয়ানসীতে যেতে হয়। আমাদের গাড়ি চলছে। বৃটেনের সবচাইতে লম্বা নদী সের্ভান। সের্ভান নদী কিডিমিনিস্টারের স্টার্ডফুট, উস্টার ইত্যাদি হয়ে কার্ডিফ শহরের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে শেষ হয়েছে। এম ৪ দিয়ে যেতে হলে সের্ভান নদী আতিক্রম করতে হয়। বৃটেনের সবচাইতে লম্বা ব্রিজ হলো এই সের্ভান নদীর উপর। ব্রীজের নামও সের্ভান। সের্ভান শব্দকে অনেকে ভুল করে সেভেন বলে থাকেন। প্রাচীন সময়ের ইংরেজদের এক দেবীর নাম ছিলোÑসের্ভান। এখনও উস্টারে নদীর তীরে সের্ভান দেবীর মূর্তি রয়েছে।

আমরা সাড়ে আটটার আগেই সোয়ান সীতে গিয়ে পৌঁছি। আমরা সময় মতো বোটে উঠি। আমাদের বোটে আমরা ছাড়াও আছে একজন ফিলিপাইনি মহিলা এবং তার ইংরেজ স্বামী। আছে একজন বরসি ওয়ালা এবং বোটের কেপ্ট্যান জ্যাকসন। আমাদের বোটের নাম-ঝধৎধয ষড়ঁরংব। নদী থেকে সমুদ্রে যেতে জরাবৎ ঞধবি ইৎৎধমব -নামক সুইচ গেইট অতিক্রম করতে হয়। টিপাইমুখের বাধ কেমন হবে তা সরাসরি আমার জানা নেই, তবে এই সুইচ গেইট দেখে কিছুটা অনুমান করতে পারলাম সুইচ গেইট দিয়ে কেমনে পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা সমুদ্রে যাচ্ছি। আজ সমুদ্র একেবারে শান্ত। সকালের দিকে বাতাসে কিছুটা শীত থাকলেও দুপুরের দিকে প্রচ- রোদের তেজে আমাদের শরীর ঘামতে থাকে। আজ আমরা প্রথম যেখানে থামলাম কেপ্ট্যানের মতে এখানে ম্যাকরল মাছ বেশি থাকে। ম্যারল মাছের প্রতি আমাদের সবার লোভ আছে। ম্যাকরলের চাটনি খুবই স্বাদের। প্রথমে দুইটা ম্যাকরল হারুনের বরসিতে ধরলেও সারাক্ষণ আর কোন মাছ ধরেনি। কেপ্ট্যান আমাদেরকে বললো আজ এখানে মাছ নেই। চলো সামনে। আমরা বরসি উঠিয়ে নিলে সে বোট চালু করে সামনে যেতে থাকে। এক স্থানে থামিয়ে সে বললো-এখানে প্রচুর মাছ হয়। আমরা আবার বরসি পানিতে দেই। কিন্তু মাছের কোন খবর নেই। ফয়জুল্লাহ বললোÑমাছরা হয়তো এখনও ঘুম থেকে উঠেনি। ঘুম থেকে উঠে তারা ব্রেকফাস্ট করতে আসলে আটকা পড়বে। শাহেদ বললো-আজকে তারা ব্রেকফাস্ট করতে আসবে না, আজ তারা সবাই রোজা রাখবে। সত্যই যেনো আজ সব মাছ রোজা। একটা মাছও ধরলো না। কেপ্ট্যান বললো-এখানেতো প্রচুর ম্যাকরল মাছ থাকে, আজ তারা কোথায়? আচ্ছা চলো সামনে যাই। সামনে বড় মাছ আছে। বরসি ম্যান আমাদের বরসি পাল্টে বড় মাছের বরসি আর মাছের খাদ্য মাছ লাগিয়ে দিলো। শাহেদ কিন্তু ম্যাকরলের বরসিই রাখলো। তার বরসিতে একটা মাছ ধরলো। বরসি ম্যান বললোÑএটা ছোট মাছ, তা নিতে পারবে না। ছেড়ে দাও। আমরা ছেড়ে দিলাম। এভাবে শাহেদ দশ-বারোটা মাছ মারলো, কিন্তু সবগুলো ছেড়ে দিতে হলো ছোট বলে। আমার বরসিতে বিরাট একটি মাছ ধরলো। আমরা অনেক কষ্ট করে তাকে হাতের কাছে আনলাম। আমার বরসিতে যে মাছ তার নাম (ৎধু ভরংয) রায় ফিস। আমাদের বরসিম্যান বললো এটা বাচ্চা তাই ছেড়ে দিতে হবে। খুব কষ্ট লাগলোÑএত বড় একটা মাছকে সে বলছে ছোট। সবাই বললো- ছেড়ে যখন দিতে হবে তবে এটা ছবি উঠিয়ে রাখ। আমরা তাই করলাম। এরপর আমার বরসিতে আর কোন মাছ ধরেনি। বাকিরা কিছু ডগ ফিস (কুত্তা মাছ) মেরেছে। এই মাছের নাম কুত্তা মাছ কেনো তা আমার জানা নেই। হয়তো তার চামরা কুকুরের চামড়ার মতো খসখসে বলে। এখানে আমাদের সাথীরা কিছু মাছ ধরলো। আমাদের সাথে প্রচুর খাবার ছিলো। যার যখন যা ইচ্ছে খাচ্ছে। এভাবে আমাদের বেলা শেষ হয়ে আসে। শেষ বেলায় চার দিকে বড় বড় জাহাজ চলতে শুরু হলে সমুদ্রে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়ে যায়। দূরের ছোট ছোট বোট উত্তাল তরঙ্গে উলট-পালট হচ্ছে। চিৎকার হচ্ছে চারদিক থেকে। আমাদের কেপ্ট্যান বললো-সময় শেষ। এখন চলে যেতে হবে। আমরা বরসি উঠিয়ে নিলাম এবং যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকলাম। আমরা যখন সুইচ গেইটে আসি তখনও গেইট খুলেনি। এখানে প্রচুর বোট সারিবদ্ধভাবে জ্যামে আটকে আছে। সুইচ গেইট খুললে একের পর এক বোট ঘাটের দিকে যেতে থাকে। ঘাটে বোট থামলে আমরা সবাই নেমে মিলু ভাইয়ের বাসার দিকে চলতে থাকি। সেখানে আমাদের সবার দাওয়াত। মিলু ভাইয়ের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে আমরা বার্মিংহামের দিকে যাত্রা শুরু করি। রাত সাড়ে নয়টায় এসে বার্মিংহামে পৌঁছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.