নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শেকড়ের সন্ধ্যানে অভিযাত্রা এবং প্রাসঙ্গিক কথা-২ সৈয়দ মবনু

১০ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শেকড়ের সন্ধ্যানে অভিযাত্রা এবং প্রাসঙ্গিক কথা-২

সৈয়দ মবনু



মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী সিংকাপনীর বাড়িতে



ছোটবেলা সৈয়দপুরে আমার নানাবাড়িতে সিংকাপনের আবু তাহের চৌধুরীর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। তিনি এখানে থেকে লেখাপড়া করতেন কী না তা আমার স্মরণ নেই। তবে আমার মেঝমামা আহমদ কুতুবের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিলো বলে আমরা জানতাম। আবু তাহের সিংকাপনী বলে তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর পরিচয়ই আমাকে জানিয়ে দিয়েছিলো একজন সিংকাপনি বিপ্লবী আলেমের কথা। সেই আলেম অনেক বড় কেউ ছিলেন তা তখন অনুভব করতাম, তবে বুঝতাম না কেন এবং কীভাবে তিনি বড় ছিলেন। পরে অবশ্য বিভিন্ন ঐতিহাসিক বইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি-

মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনীর জন্ম ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজারের ইটা পরগনার সিংকাপন গ্রামে। তিনি গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশ শহরের ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হনব। পরে কোলকাতায় গিয়ে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে টাইটেল পাশ করেন। কোলকাতা থেকে বাড়ি ফিরার পথে তিনি দেখা করেন তৎকালিন ঢাকার নবাব পরিবারের কর্তা নবাব সলিমুল্লাহের সাথে। তখন মুসলমানদের অধিকার বিষয়ে নবাবের সাথে তাঁর দীর্ঘ মতবিনিময় হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের নবাব সলিমুল্লাহের নেতৃত্বে ঢাকায় যে শিক্ষা কনফারেন্স হয় এতে অংশ নিয়েছিলেন খিলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মাহমুদাবাদের রাজা সাহেব ভিকার-উল-মুলুক, মাওলানা আকরম খাঁ, মনীরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমূখ অনেক। এদিনের কনফারেন্সই মূলত মুসলিম লীগের জন্ম হয়। সেদিনের কনফারেন্সে মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনীও ছিলেন। এই সূত্রেই তিনি সর্বভারতীয় মুসলিম জননেতাদের সংস্পর্শ লাভ করে রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর ভারতের নাগ পুরের রাজা গোপাল আচারিয়ার সভাপতিত্বে কংগ্রেস ও খিলাফত আন্দোলনের সমন্বয়ে যে অধিবেশন হয় এতে মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী আসামের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিমলীগের যে বার্ষিক অধিবেশনে শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয় সেই অধিবেশনে আসাম প্রদেশের মুসলিমলীগের প্রতিনিধি হিসাবে মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী উপস্থিত ছিলেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতার মুহাম্মদ আলী পার্কে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় উলামা সম্মেলন থেকে মাওলানা শিব্বির আহমদ ওসমানীকে সভাপতি করে যখন ওলইন্ডিয়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠিত হয় তখন সেই কমিটিতে মাওলানা সিংকাপনীকে নির্বাহি সদস্য নির্বাচিত করা হয়। পাকিস্তান হওয়ার পর গঠিত নেজামে ইসলাম গঠনেও মাওলানা সিংকাপনীর অগ্রণী ভূমিকা ছিলো। মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী ছিলেন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল থেকে মুসলিম সম্পাদিত প্রথম সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ‘আল-জালাল’ এর সম্পাদক। এছাড়া তিনি প্রাচীন সাপ্তাহিক যুগভেরী, আল-বালাগ, আল-আমান ও সাপ্তাহিক ইলেকশন সমাচার পত্রিকা সমূহেও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মিত লিখতেন মাসিক মুহাম্মদী, দি কমরেড এবং আল-ইসলাহে। এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি অনেক জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন কৃষক শ্রমিক আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন এবং সিলেট রেফারেন্ডাম আন্দোলনের সাথে। তাঁর ভাই মাওলানা হাফিজ আব্দুল কাদির চৌধুরী সিংকাপনী (আবু তাহের চৌধুরীর বাবা), মাওলানা আব্দুল খালিক সিংকাপনী, মাওলানা আব্দুল আজিজ সিংকাপনীরও এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। মাওলানা হাফিজ আব্দুল কাদির চৌধুরী সিংকাপনী কর্তৃক পাকিস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্রের খসড়া তৈরীর কথাও ইতিহাসে পাওয়া যায়।

আমরা শাহ সৈয়দ রুকুন উদ্দিন (র.)-এর মাজার থেকে বেরিয়ে যাত্রা শুরু করি মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। পথে কিছু সময় থামতে হলো কুসাইর সিংকাপনে এডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে। সৈয়দ জয়নাল আবেদিন যদিও মাওলানা আব্দুর আব্দুর রহমান সিংকাপনীর বংশীয় উত্তরসূরী নয়, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা থেকেও বেশি। বিশেষ করে আবু তাহের চৌধুরী আর তিনি একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়ায় সম্পর্কের গভীরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সৈয়দ জয়নাল আবেদিনের বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মায়ের বিয়ে হয় আবু তাহের চৌধুরীর বাবা হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির সিংকাপনীর সাথে। সৈয়দ জয়নাল আবেদিন তাঁর বাড়িতে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করেন। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সেলিম আউয়ালের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেনÑএডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিন, কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ মানিক, এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, উদ্ভীদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আজিজুর রহমান লস্কর, কবি কালাম আজাদ, ভাষা সৈনিক ড. জাসিম উদ্দিন, জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন, ব্লাস্ট সিলেটের সমন্বয়কারী এডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, সিরাজ উদ্দিন বাদশা প্রমূখ। আলোচনা সভা শেষে এডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিন অভিযাত্রীদের সবার মধ্যে বেশ উন্নতমানের নাস্তা সরবরাহ করেন। আমরা জোহরের নামাজ আদায় করি এই বাড়িতে। অতঃপর যাত্রা শুরু করি মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনী কবর জিয়ারতে।

এডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিনের মেহমানদারীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলতে হবে, আমার কেনো মনে হয়েছে মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনীর বাড়ির কেউ জানেন না আমাদের এই অভিযাত্রার কথা। এই জানানোর দায়িত্বটা মূলত ছিলো এডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিনের, কিন্তু তিনি এখানে বেশ ঘাটতি করেছেন। তিনি তাঁর বাড়িতে যে অনুষ্ঠান করেছেন তা মূলত হওয়ার কথা ছিলো আব্দুর রহমান সিংকাপনীর বাড়িতে। কিন্তু সেখানে না করে তিনি আয়োজন করেছেন নিজ বাড়িতে, যা অনেকের কাছেই ভালো লাগেনি। তবু আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.