নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে বরাত নিয়ে ঝগড়ার কিছু নেই : তা ইসলামী মূল্যবোধের একটি সংস্কৃতি মেনে নিতে হবে

০২ রা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

শবে বরাত নিয়ে ঝগড়ার কিছু নেই : তা ইসলামী মূল্যবোধের একটি সংস্কৃতি মেনে নিতে হবে

সৈয়দ মবনু

শবে বরাত নিয়ে এত ঝগড়ার কি আছে? এই ঝগড়াটা যারা শুরু করেছেন তারা বলছেন শবে বরাত সম্পর্কে কোন শুদ্ধ হাদিস নেই। আমি বলি, নাই থাকলো শুদ্ধ হাদিস, তাতে আমার কি? আমি যদি এই দিন ভাল কাজ করি তবে তো কমপক্ষে ভাল কাজের সোয়াব পাব। এটাই কম কিসে? আর তাও যদি না হয় তা হলে ভারতীয় মুসলমানদের সংস্কৃতি হিসেবেও তো আমরা পালন করতে পারি। যারা শবে বরাতকে বিদআত-বিদআত করেন তারা মূলত সামাজ বাস্তবতা এবং তাহজিব-তামাদ্দুন বুঝেন না। এমন কি তারা ইসলামকেও ভাল করে বুঝার মেধা লাভ করেছেন বলে মনে হয় না। আমরা যদি তাদের কথাকে সত্য মনে করি যে, হাদিসে শবে বরাতের বৈধতা নেই, অতঃপর যদি প্রশ্ন করি অবৈধতা কি আছে, তা হলে উত্তর কি হবে? কোরআন ও হাদিসে যা অবৈধ বলা হয়নি সেগুলোকে অবৈধ বলার অধিকার আপনাকে কে দিল? আপনাদের নীতি অনুযায়ি নতুন সবকিছুই যদি বিদআত হয় তবে ইসলাম হয়ে যাবে একটি বন্ধা প্রতিষ্ঠান। ইসলামকে আর জীবন ব্যবস্থা বলা যাবে না, কারণ জীবনটা চলমান। চলমান জীবনের সমাধান যে দর্শন দিতে পারবে না সে দর্শন জীবনদর্শন হতে পারে না। ইসলাম অবশ্যই চলমান একটি জীবনদর্শনের নাম। কোরআন-হাদিস-ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে এখানে নতুন নতুন অনেক কিছু আসবে, ক্ষতিকর এবং অপ্রয়োজনিয় অনেক কিছুকে বাদ দেওয়া হবে। ইসলামে তাহজিব ও তামাদ্দুনের গুরুত্ব রয়েছে বলেই হযরত নবী করিম (স.) মদিনায় গিয়ে দুই ঈদ এবং আশুরার স্বীকৃতি দিয়েছেন। শবে বরাত ফার্সি শব্দ, মূলত বিষয়টা হলো ‘নিসফে শা’বান’ অর্থাৎ শা’বানের মধ্যরাত। শা’বান মাস এবং মধ্য শা’বান নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে হাদিসের গ্রন্থসমূহে।

* শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিস :

হযরত নবী করিম (স.) বলেছেন : ‘শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তা’আলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ। কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে। ( মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ )

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত, শা’বান সম্পর্কে সবাই সচেতন হতে হবে এবং শা’বানকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্য হাদিসে হযরত নবী করিম (স.) বলেন :

‘শাবান মাসের রোজা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জেগে থাক এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে আসেন এবং তিনি ঘোষণা করেন-আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ-সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারি, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে। ( সুনানে ইবনে মাজাহ)

মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস
عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء [

হযরত নবী করিম (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

উপরোক্ত হাদিস অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবে নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তাঁর কিতাবুস সহীহ-এর ৫৬৬৫ নম্বারে এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান-এর ‘কিতাবুস সহীহ’, যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সকল মুহাদ্দিসের কাছে সমধিক প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকি (র.) ‘শুআবুল ঈমান’-এর (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী ‘আল-মুজামুল কাবীর’ ও ‘আল-মুজামুল আওসাত’ এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।

হাদিসটির সনদ সহীহ বলে সবাই স্বীকার করেছেন। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে ‘কিতাবুস সহীহ’-এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদিসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদিস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদিসেরই একটি প্রকার। ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, যুরকানি এবং অন্যান্য হাদিস বিশারদ এই হাদিসকে আমলযোগ্য বলেছেন। (আত-তারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১)।

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধএবং সালাফি মাযহাবের ইমাম শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানি (র.) ‘সিলসিলাতুল আহাদসিস্ সাহীহা’ ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরো আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন:
جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .
এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়। তারপরও কেউ কেউ বলেন কীভাবে শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নেই।

হযরত আলা ইবনে হারিস ( র.) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার হযরত রাসুল ( সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠেন এবং নামাজ শেষ করেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা বা ও হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশংকা হয়ছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা। নবীজী ( সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান আজ কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সা.) ভাল জানেন। রাসুল ( সা.) বললেন,

هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على
عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين
ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

এটা হল মধ্য শাবানের রাত (লাইলাতু নিসফে শা’বান)। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি এ রাত নজর দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারিদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (বায়হাকি, খ--৩, পৃষ্টা ৩৮২)।

‘বাবুল ইলম’ হযরত আলী ( রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস,

عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

হযরত রাসুল ( সা.) বলেছেন, পনেরো শাবানেরর রাত (লাইলাতু নিসফে শা’বান) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতে ইবাদতের মধ্যে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪, বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, হাদীস-৩৮২৩ )।

(হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিসের সনদকে অনেক মুহাদ্দিস জইফ বলে আবার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ফাযায়েলের ক্ষেত্রে জইফ হাদীস গ্রহণযোগ্য )।

হযরত আয়েশা (র.) থেকে বর্ণিত হাদিস হযরত নবী করিম ( সা.) বলেন, আমি এক রাতে নবী করিম ( সা.) -কে বিছানায় না পেয়ে অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করি। খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকির মধ্যে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা, আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আ.) এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শা’বান। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও। ( মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ )

জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়াকেই যদি সামনে রেখে নিছফে শা’বানকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বারাআত’, তবে কি ভুল হবে? তাছাড়া শাবান মাসে বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়ে সহীহ হাদিস রয়েছে। অতঃপর যদি কেউ হাদিস সমূহকে যঈফ বা দুর্বল বলে শবে বরাতকে বিদআত বলে থাকেন, তাদেরকে আমাদের বলার কিছু নেই, ওদের ফেতনা থেকে উম্মতে মুহাম্মদীকে সাবধান থাকার কথা বলা ছাড়া ।

* ফিকহের ইমামদের মতামত

ইমামুল ফিকহ হযরত আবু হানিফা (র.) সহ তাঁর অনুসারী ফকিহ ইমাম শামী, ইবনে নুজাইম, শায়েখ আব্দুল হক দেহলভী, শায়েখ আশরাফ আলী থানভী, শায়েখ আব্দুল হক লাখনভী, মুফতী মুহাম্মদ শফী (র.) প্রমূখের মত হলো, শবে বরাতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ি জেগে থাকা, একাকী ইবাদত করা। দলবদ্ধ হওয়া যাবে না। ( আদ-দুররুল মুখাতার, খন্ড-২, পৃষ্টা-২৪-২৫, আল বাহরুর রায়িক, খন্ড-২, পৃষ্টা-৫২, মা সাবাতা বিসসুন্নাহ, পৃষ্টা-৩৬, মারাকিল ফালাহ, পৃষ্টা-২১৯)

ইমাম শাফেয়ি ( র.) -এর মতে, শাবানের পনোরোতম রাতে অধিক অধিক দুয়া কবুল হয়। ( কিতাবুল উম্ম, খন্ড- ১, পৃষ্টা-২৩১ )। শায়েখ ইবনে মুফলী হাম্বলী (র.), শায়েখ মনসুর আল বাহুতী প্রমুখের মতে শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ( আল মাবদা, খন্ড-২, পৃষ্টা -২৭পৃ, কাশফুল কিনা, খন্ড-১, পৃষ্টা-৪৪৫)। ইবনে হাজ্ব মালেকি ( র.) বলেন, সালফে সালেহিনরা এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ( আল মাদখাল, খন্ড-১, পৃষ্টা-২৯২)। শায়েখ আব্দুল আব্বাস আহমেদ ইবনে তাইমিয়া ( র.) বলেন, পনেরো শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদিস ও আসারে সাহাবা বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সালফে সালেহিনদের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যতনবান ছিলেন। আর শাবানের রোযার ব্যাপারে তো সহীহ হাদীসসমূহ রয়েছে। ( ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম, খ--২, পৃষ্টা-৬৩১)।

শবে বরাতে আমল হবে একাকি : জামাআতবদ্ধ নয়, তা ইমাম আবু হানিফা (র.)-র মত। মসজিদে জামাআতে নামাজ তো প্রতিদিনই ওয়াজিব, তা শবে বরাতে পৃথক কোন ফজিলত নয়। তবে কোন ঘোষণা ও আহবান ছাড়া এমনিতেই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যান, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমল করবেন । একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হওয়া যাবে না। ইমাম আবু হানীফা ( র.)-র মতে, নফল ইবাদত এমনভাবে করতে হবে যে সেখানে শুধু তুমি আছ, আর আছেন আল্লাহ। তৃতীয় কেউ নেই।’ ( মুফতি তক্বি ওসমানী, ইসলাহী খুতুবাত, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্টা-২৬৮)।
শেষকথা : কেউ যদি এই হাদিসগুলো সনদের দিকে সহীহ বলে মানতে না পারেন তা হলেও তা ঝগড়ার কিছু নেই। আপনি এটাকে ইসলামী মূল্যবোধের সামাজিক সংস্কৃতি মনে করে পালন করুন, কিংবা বিরত থাকুন। ফেতনা সৃষ্টির কোন প্রয়োজন নেই। কমপক্ষে এদিন উপলক্ষে মানুষ যদি কিছু খারাপ কাজ থেকে বাঁচে, কিছু নেক কাজ করে, তাতে আপনার আপত্তি থাকার কথা নয়। ইসলামী মূল্যবোধের একটি দিন এত ব্যাপক সামাজিক রূপ পেয়েছে, তা বন্ধের জন্য কেউ কেউ কেন এত পাগল হয়ে উঠেন, তা আমাদের বুঝে আসে না। আমরা যদি এদিনকে গুরুত্ব দেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে কিংবা রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে, তবে সমস্যাটা কি? সমাজে তো প্রচুর হারাম ও খারাপ জিনিষ রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলুন, সেগুলো বন্ধের চেষ্টা করুন, এতে সমাজ-ধর্ম-মানুষ উপকৃত হবে। যারা শবে বরাতের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত তারা প্রতিষ্ঠিত ভাল জিনিষকে বন্ধ করে মানুষকে ভাল থেকে দুরে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ করুন। এতে মুসলিম উম্মাহের কল্যাণ হবে।

সৈয়দ মবনু

শবে বরাত নিয়ে এত ঝগড়ার কি আছে? এই ঝগড়াটা যারা শুরু করেছেন তারা বলছেন শবে বরাত সম্পর্কে কোন শুদ্ধ হাদিস নেই। আমি বলি, নাই থাকলো শুদ্ধ হাদিস, তাতে আমার কি? আমি যদি এই দিন ভাল কাজ করি তবে তো কমপক্ষে ভাল কাজের সোয়াব পাব। এটাই কম কিসে? আর তাও যদি না হয় তা হলে ভারতীয় মুসলমানদের সংস্কৃতি হিসেবেও তো আমরা পালন করতে পারি। যারা শবে বরাতকে বিদআত-বিদআত করেন তারা মূলত সামাজ বাস্তবতা এবং তাহজিব-তামাদ্দুন বুঝেন না। এমন কি তারা ইসলামকেও ভাল করে বুঝার মেধা লাভ করেছেন বলে মনে হয় না। আমরা যদি তাদের কথাকে সত্য মনে করি যে, হাদিসে শবে বরাতের বৈধতা নেই, অতঃপর যদি প্রশ্ন করি অবৈধতা কি আছে, তা হলে উত্তর কি হবে? কোরআন ও হাদিসে যা অবৈধ বলা হয়নি সেগুলোকে অবৈধ বলার অধিকার আপনাকে কে দিল? আপনাদের নীতি অনুযায়ি নতুন সবকিছুই যদি বিদআত হয় তবে ইসলাম হয়ে যাবে একটি বন্ধা প্রতিষ্ঠান। ইসলামকে আর জীবন ব্যবস্থা বলা যাবে না, কারণ জীবনটা চলমান। চলমান জীবনের সমাধান যে দর্শন দিতে পারবে না সে দর্শন জীবনদর্শন হতে পারে না। ইসলাম অবশ্যই চলমান একটি জীবনদর্শনের নাম। কোরআন-হাদিস-ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে এখানে নতুন নতুন অনেক কিছু আসবে, ক্ষতিকর এবং অপ্রয়োজনিয় অনেক কিছুকে বাদ দেওয়া হবে। ইসলামে তাহজিব ও তামাদ্দুনের গুরুত্ব রয়েছে বলেই হযরত নবী করিম (স.) মদিনায় গিয়ে দুই ঈদ এবং আশুরার স্বীকৃতি দিয়েছেন। শবে বরাত ফার্সি শব্দ, মূলত বিষয়টা হলো ‘নিসফে শা’বান’ অর্থাৎ শা’বানের মধ্যরাত। শা’বান মাস এবং মধ্য শা’বান নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে হাদিসের গ্রন্থসমূহে।

* শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিস :

হযরত নবী করিম (স.) বলেছেন : ‘শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তা’আলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ। কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে। ( মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ )

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত, শা’বান সম্পর্কে সবাই সচেতন হতে হবে এবং শা’বানকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্য হাদিসে হযরত নবী করিম (স.) বলেন :

‘শাবান মাসের রোজা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জেগে থাক এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে আসেন এবং তিনি ঘোষণা করেন-আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ-সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারি, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে। ( সুনানে ইবনে মাজাহ)

মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস
عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء [

হযরত নবী করিম (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

উপরোক্ত হাদিস অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবে নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তাঁর কিতাবুস সহীহ-এর ৫৬৬৫ নম্বারে এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান-এর ‘কিতাবুস সহীহ’, যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সকল মুহাদ্দিসের কাছে সমধিক প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকি (র.) ‘শুআবুল ঈমান’-এর (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী ‘আল-মুজামুল কাবীর’ ও ‘আল-মুজামুল আওসাত’ এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।

হাদিসটির সনদ সহীহ বলে সবাই স্বীকার করেছেন। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে ‘কিতাবুস সহীহ’-এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদিসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদিস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদিসেরই একটি প্রকার। ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, যুরকানি এবং অন্যান্য হাদিস বিশারদ এই হাদিসকে আমলযোগ্য বলেছেন। (আত-তারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১)।

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধএবং সালাফি মাযহাবের ইমাম শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানি (র.) ‘সিলসিলাতুল আহাদসিস্ সাহীহা’ ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরো আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন:
جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .
এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়। তারপরও কেউ কেউ বলেন কীভাবে শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নেই।

হযরত আলা ইবনে হারিস ( র.) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার হযরত রাসুল ( সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠেন এবং নামাজ শেষ করেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা বা ও হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশংকা হয়ছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা। নবীজী ( সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান আজ কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সা.) ভাল জানেন। রাসুল ( সা.) বললেন,

هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على
عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين
ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

এটা হল মধ্য শাবানের রাত (লাইলাতু নিসফে শা’বান)। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি এ রাত নজর দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারিদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (বায়হাকি, খ--৩, পৃষ্টা ৩৮২)।

‘বাবুল ইলম’ হযরত আলী ( রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস,

عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

হযরত রাসুল ( সা.) বলেছেন, পনেরো শাবানেরর রাত (লাইলাতু নিসফে শা’বান) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতে ইবাদতের মধ্যে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪, বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, হাদীস-৩৮২৩ )।

(হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিসের সনদকে অনেক মুহাদ্দিস জইফ বলে আবার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ফাযায়েলের ক্ষেত্রে জইফ হাদীস গ্রহণযোগ্য )।

হযরত আয়েশা (র.) থেকে বর্ণিত হাদিস হযরত নবী করিম ( সা.) বলেন, আমি এক রাতে নবী করিম ( সা.) -কে বিছানায় না পেয়ে অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করি। খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকির মধ্যে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা, আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আ.) এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শা’বান। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও। ( মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ )

জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়াকেই যদি সামনে রেখে নিছফে শা’বানকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বারাআত’, তবে কি ভুল হবে? তাছাড়া শাবান মাসে বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়ে সহীহ হাদিস রয়েছে। অতঃপর যদি কেউ হাদিস সমূহকে যঈফ বা দুর্বল বলে শবে বরাতকে বিদআত বলে থাকেন, তাদেরকে আমাদের বলার কিছু নেই, ওদের ফেতনা থেকে উম্মতে মুহাম্মদীকে সাবধান থাকার কথা বলা ছাড়া ।

* ফিকহের ইমামদের মতামত

ইমামুল ফিকহ হযরত আবু হানিফা (র.) সহ তাঁর অনুসারী ফকিহ ইমাম শামী, ইবনে নুজাইম, শায়েখ আব্দুল হক দেহলভী, শায়েখ আশরাফ আলী থানভী, শায়েখ আব্দুল হক লাখনভী, মুফতী মুহাম্মদ শফী (র.) প্রমূখের মত হলো, শবে বরাতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ি জেগে থাকা, একাকী ইবাদত করা। দলবদ্ধ হওয়া যাবে না। ( আদ-দুররুল মুখাতার, খন্ড-২, পৃষ্টা-২৪-২৫, আল বাহরুর রায়িক, খন্ড-২, পৃষ্টা-৫২, মা সাবাতা বিসসুন্নাহ, পৃষ্টা-৩৬, মারাকিল ফালাহ, পৃষ্টা-২১৯)

ইমাম শাফেয়ি ( র.) -এর মতে, শাবানের পনোরোতম রাতে অধিক অধিক দুয়া কবুল হয়। ( কিতাবুল উম্ম, খন্ড- ১, পৃষ্টা-২৩১ )। শায়েখ ইবনে মুফলী হাম্বলী (র.), শায়েখ মনসুর আল বাহুতী প্রমুখের মতে শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ( আল মাবদা, খন্ড-২, পৃষ্টা -২৭পৃ, কাশফুল কিনা, খন্ড-১, পৃষ্টা-৪৪৫)। ইবনে হাজ্ব মালেকি ( র.) বলেন, সালফে সালেহিনরা এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ( আল মাদখাল, খন্ড-১, পৃষ্টা-২৯২)। শায়েখ আব্দুল আব্বাস আহমেদ ইবনে তাইমিয়া ( র.) বলেন, পনেরো শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদিস ও আসারে সাহাবা বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সালফে সালেহিনদের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যতনবান ছিলেন। আর শাবানের রোযার ব্যাপারে তো সহীহ হাদীসসমূহ রয়েছে। ( ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম, খ--২, পৃষ্টা-৬৩১)।

শবে বরাতে আমল হবে একাকি : জামাআতবদ্ধ নয়, তা ইমাম আবু হানিফা (র.)-র মত। মসজিদে জামাআতে নামাজ তো প্রতিদিনই ওয়াজিব, তা শবে বরাতে পৃথক কোন ফজিলত নয়। তবে কোন ঘোষণা ও আহবান ছাড়া এমনিতেই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যান, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমল করবেন । একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হওয়া যাবে না। ইমাম আবু হানীফা ( র.)-র মতে, নফল ইবাদত এমনভাবে করতে হবে যে সেখানে শুধু তুমি আছ, আর আছেন আল্লাহ। তৃতীয় কেউ নেই।’ ( মুফতি তক্বি ওসমানী, ইসলাহী খুতুবাত, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্টা-২৬৮)।
শেষকথা : কেউ যদি এই হাদিসগুলো সনদের দিকে সহীহ বলে মানতে না পারেন তা হলেও তা ঝগড়ার কিছু নেই। আপনি এটাকে ইসলামী মূল্যবোধের সামাজিক সংস্কৃতি মনে করে পালন করুন, কিংবা বিরত থাকুন। ফেতনা সৃষ্টির কোন প্রয়োজন নেই। কমপক্ষে এদিন উপলক্ষে মানুষ যদি কিছু খারাপ কাজ থেকে বাঁচে, কিছু নেক কাজ করে, তাতে আপনার আপত্তি থাকার কথা নয়। ইসলামী মূল্যবোধের একটি দিন এত ব্যাপক সামাজিক রূপ পেয়েছে, তা বন্ধের জন্য কেউ কেউ কেন এত পাগল হয়ে উঠেন, তা আমাদের বুঝে আসে না। আমরা যদি এদিনকে গুরুত্ব দেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে কিংবা রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে, তবে সমস্যাটা কি? সমাজে তো প্রচুর হারাম ও খারাপ জিনিষ রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলুন, সেগুলো বন্ধের চেষ্টা করুন, এতে সমাজ-ধর্ম-মানুষ উপকৃত হবে। যারা শবে বরাতের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত তারা প্রতিষ্ঠিত ভাল জিনিষকে বন্ধ করে মানুষকে ভাল থেকে দুরে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ করুন। এতে মুসলিম উম্মাহের কল্যাণ হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে শবে-বরাত রাতের মহাত্য তুলে ধরে সুন্দর পোস্ট দেবার জন্য।
আল্লাহ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত করুন। আামিন.
"মহিমান্বিত মুক্তির পূণ্যময় রজনী ও দোয়া কবুলের রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শব-ই-বরাত আজ" শিরোণাামে" আমার লেখাটি পড়ার আমন্তণ আপনাকে।

২| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যারা শবে বরাতকে বিদআত-বিদআত করেন তারা মূলত সামাজ বাস্তবতা এবং তাহজিব-তামাদ্দুন বুঝেন না। এমন কি তারা ইসলামকেও ভাল করে বুঝার মেধা লাভ করেছেন বলে মনে হয় না। আমরা যদি তাদের কথাকে সত্য মনে করি যে, হাদিসে শবে বরাতের বৈধতা নেই, অতঃপর যদি প্রশ্ন করি অবৈধতা কি আছে, তা হলে উত্তর কি হবে? কোরআন ও হাদিসে যা অবৈধ বলা হয়নি সেগুলোকে অবৈধ বলার অধিকার আপনাকে কে দিল? আপনাদের নীতি অনুযায়ি নতুন সবকিছুই যদি বিদআত হয় তবে ইসলাম হয়ে যাবে একটি বন্ধা প্রতিষ্ঠান। ইসলামকে আর জীবন ব্যবস্থা বলা যাবে না, কারণ জীবনটা চলমান। চলমান জীবনের সমাধান যে দর্শন দিতে পারবে না সে দর্শন জীবনদর্শন হতে পারে না। ইসলাম অবশ্যই চলমান একটি জীবনদর্শনের নাম।

এই চরম বাস্তবাতাটা বোঝনা তারা! তাদের ভাস্যে মনে হয় এখণ মুসলমান হতে হলে ১৪০০ বছর আগের ষ্টাইলে উটের পিঠে চড়তে হবে। মরুভূমিতে বসবাস করতে হবে!!! তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা নিজের ক্ষেত্র হলে শুধূ সমস্যা ছিল- তা গণ পর্যায়ে এসে একটা ঝামেলা বা ফিতনা সৃষ্টি করছে কেবল!

শবে বরাতের উপলক্ষে জেগে উটুক মানবতা! জেগে উটুক শুভ কাজের প্রতিযোগীতা , েজগে উঠুক পূন্য কাজের প্রতিযোগীতা! জেগে উঠূক আল্লাহ রাসূল প্রেমের নদীতে জোয়াের...
++++++++++++=

৩| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

শবেবরাত পালন করা যতনা বারাবারি মনে হয় ইদানিং শবেবরাত বর্জনকে আরো অনেক বড় বারাবারি মনে হয়। আমি বুঝিনা যারা শবেবরাত বর্জন করতে বলেন তারা এত কনফিডেন্টলি কিভাবে এটাকে বর্জন করতে বলেন। বরং লাইলাতুল কদর বা ২৭ রমজানের রাতটাকে সবার উচিত শবেবরাতের মতই গুরুত্বদিয়ে বা তারচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত। শবেবরাতে কোন ঝামেলা দেখিনা। এই রাতে আমার দেশের মুসলিমরা শিরকি কিছু করেন বলে এখনো দেখি নাই। এগুলাকে বেদাতও মনে হয় না। একটা দিন কে টার্গেট করে মুসলামানরা সারারাত ইবাদত করলে ক্ষতির কিছু দেখিনা, না করারচেয়ে বরং করাই ভালো বলে মনে হয়।

তাছাড়া আপনার উল্লখিত ( হযরত আয়েশা (র.) থেকে বর্ণিত হাদিস হযরত নবী করিম ( সা.) বলেন, আমি এক রাতে নবী করিম ( সা.) -কে বিছানায় না পেয়ে অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করি। খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকির মধ্যে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা, আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আ.) এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শা’বান। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও। ) এই হাদিসটি যারা শবেবরাত পালন বিরোধী তারাও সত্য বলেই মানেন। তাহলে আর সমস্যা কোথায়?


হালুয়া রুটির ট্র্যাডিশনটাতেও তো ইসলামের দৃষ্টিতে কোন সমস্যা দেখি না। যারা লোক দেখানো অতিরিক্ত জাকজমক করেন এটা তাদের ব্যাক্তি গত সমস্যা। কিন্তু এই উসিলায় অনেক গরীবের পেটে ভালো খাবার জুটে। কি দরকার বন্ধ করার??? এই দিন কে কেন্দ্র করে বাচ্চাদের আগ্রহটাও দেখবার মত।

রমজান আগমনের আর ১৪/১৫ দিন বাকি থাকে এই আগ্রহটাও এই দিনে মানুষের মধ্যে দেখবার মত।

৪| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: মুদদাকির ভাই তো একই মন্তব্য করছেন!!
এমন হলে কিছুটা খাপছাড়া লাগতে পারে তাইনা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.