আলোর পথের যাত্রী দাদা অভিজিত রায়।।॥

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী।

তুমি ছিলে মাথার উপর মহীরুহের মতোই,
তোমাকে আমরা ধরে রাখতে পারলামনা।

মাত্র দুশো গজের মধ্যে ঘাতকের নির্মম
চাপাতি আঘাতে তুমি খুন হলে, অথচ সংবাদ
নিশ্চিত হলাম ২৪ঘন্টা পরে, সেই
অপরাধবোধ এখনও কাঁদায়, তোমার আগে
কেন আমি জীবন দিলামনা, আমার জীবনের
বিনিময়ে হলেও কেন তোমাকে বাঁচাতে
পারলামনা?

তোমার হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত
প্রতিবাদী সমাবেশে অঝোরধারায় কেঁদেছি,
নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি, অথচ স্বঘোষিত নাস্তিক ভবঘুরে যার
জন্মদাতার মৃত্যুতেও যথেষ্ট সংযতই ছিলাম।

তুমি মুক্তচিন্তা মুক্তমনা আন্দোলনের
দিকপাল, তুমি সৃষ্টি করেছো আরও সহস্র
মুক্তমনা, তোমার সৃষ্টিগুলো আরও
মুক্তমন মুক্তপথের দিশারীদের পথ দেখাবে
আবহমানকাল। বিজ্ঞান ও যুক্তির শাণিত
ধারে, সাম্প্রদায়িক বিষে জর্জরিত বিশ্বকে
অভিন্ন মানবতার বন্ধনে আগলে রাখতে,
মুক্তচিন্তার কলমসৈনিকেরা নিরন্তর
লড়াই করে যাবে, অন্ধকারের বিরুদ্ধে
আলোর, পুরাণের বিরুদ্ধে নতুনের,
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের,
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির এ লড়াইয়ে
আলো আসবেই, বিশ্বকে আলোকিত করার সে রসদ তোমার লেখনির পরতে পরতে।

আমিতো সেখানে এক তুচ্ছ অধম নাখান্দা,
তোমার দেখানো পথে হেঁটে হেঁটেই আমি।

তোমার সৃষ্টিশীলতার পরশ না পেলে
নিজেই হয়তো এতোদিনে এঁদোডোবা
কানাগলিতেই মুখথুবরে পড়ে থাকতো বা
কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতো।

দাদা, তুমি নেই কিন্তু তোমার সৃষ্টিগুলো
আমাদের মাঝে এখনও দ্যুতি ছড়ায়, তোমার
সৃষ্ট "মুক্তমনা" এখনও দ্রোহের কথা
বলে।সেই সৃষ্টির সাথে পরিচিত হয়েই নতুন
প্রজন্ম তোমায় খুঁজে পাবে, তোমার
লেখনির মাঝেই তুমি অমর হয়ে রবে প্রজন্ম
থেকে প্রজন্মান্তরে, কাল থেকে
কালান্তরে

ক্ষণজন্মা নক্ষত্র, জৈব চিকিৎসা
বিজ্ঞানে ডক্টরেট বহুমুখী প্রতিভাধর
অভিজিৎ রায় ইন্টারনেট, ম্যাগাজিন এবং
দৈনিক পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।

নাস্তিকতাবাদ, বাস্তববাদ, সন্দেহবাদ ও
যৌক্তিকতার ওপর ভিত্তি করে রচিত
অবিশ্বাসের দর্শন এবং বিশ্বাসের ভাইরাস
নামক তাঁর দুটি বাংলা বই পাঠক মহলে
বহুমুখী সমালোচনা ও জনপ্রিয়তা লাভ
করে। লেখার বিষয় ছিলো আধুনিক
বিজ্ঞান, নাস্তিকতা, সমকামিতা এবং
দর্শন। মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত তার
বইগুলো হলো-
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের
যাত্রী’ (২০০৫)
মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে
(২০০৭)
স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির
মুক্তি (২০০৮)
সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-
মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০)
অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১)
বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২)
ভালবাসা কারে কয় (২০১২)
শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪)
বিশ্বাসের ভাইরাস (২০১৫)
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-
বিদেশিনীর খোঁজে (২০১৫)

দাদা, আজ তোমার জন্মদিন।
জন্মদিনে আজ আর শুভেচ্ছা নয়, আমার
বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো তোমার প্রতি,
তোমার সৃষ্টির প্রতি, মুক্তমনার প্রতি।

বিনম্র শ্রদ্ধাবনত শিরঃ সব্যসাচী

০ টি +০/-০