![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু নির্মূলের অভিযান শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গণকবর এবং জোর করে উচ্ছেদের প্রমাণের কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ২২শে এপ্রিল এ অভিযোগ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা রোহিঙ্গারা শহীদ করা, বিচারের সম্মুখীন করা, দেশত্যাগে বাধ্যকরাসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছেন। হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলছে, মিয়ানমারের কর্মকর্তা, এলাকার নেতৃবৃন্দ এবং সন্ত্রাসী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাতীয় নিরাপত্তার মদদে গত অক্টোবরে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে মুসলামানদের উপর হামলা চালাতে তরুণদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে এবং উদ্বুদ্ধ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছে, ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্মূলের অভিযান শুরু করেছিল। তাদের চলাচলের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ এবং ত্রাণ সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এখনও সেটা অব্যাহত রেখেছে।’ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করেছে, সংখ্যালঘুদের নির্মূলের বিষয়টি যেহেতু কোন আইনগতভাবে প্রচলিত শব্দ নয়। তাই নীতিগতভাবে যখন কোন এলাকার একটি জাতিগত গোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠী অন্য কোন গ্রুপকে বিশেষ কোন এলাকা থেকে সহিংসতা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে উচ্ছেদের চেষ্টা করে তখন সেটাকে জাতিগত নির্মূলের অভিযোন বলে বিবেচনা করা হয়।
মিয়ানমারে এর মধ্যেই সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান। দেশটিতে চলমান এ দাঙ্গার পেছনে কী কারণ?
দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করা মিয়ানমারে ধর্মীয় ও জাতিগত কারণে সন্ত্রাসী বৌদ্ধ ও মুসলমানদের দাঙ্গা চলছে, বিষয়টি এমন নয়। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাঙ্গার কারণ যত না ধর্মীয়, তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশটিতে মেইখতিলা প্রদেশে ও দেশটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থানকারী মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের চেয়ে ভালো। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা ৫ শতাংশের কম। মেইখতিলায় তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। মুসলমানদের হাতে আছে আবাসন ব্যবসা, ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসা, কাপড়ের দোকান, রেস্তোরাঁ ও মোটরসাইকেলের ডিলারশিপ। শহরটির সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের মোট আয়ের বহু গুণ আয় করে মুসলমানেরা। দেশটিতে সামরিক শাসনের অবসানের পর নতুন বাণিজ্য ও বাজার প্রসারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বিরাট এ বাজার হস্তগত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলতে থাকলে নতুন মিয়ানমারের অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবে ধনী মুসলমানেরা। তাই তাদের টিকে থাকার লড়াইও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করেই।
এছাড়াও মিয়ানমারে দাঙ্গার পেছনে সংস্কারকরা দায়ী এমন গুজবও আছে। অনেকেই বলছে, সাবেক সামরিক শাসকের ঘনিষ্ঠজনেরা দাঙ্গা বাধাচ্ছে। এত দিন তারা ছিল ক্ষমতায়, তাই বাণিজ্যের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি। এখন ক্ষমতা ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছে, তাই ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করার প্রয়োজন পড়ছে। তারা চাইছে, মুসলমান ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে দিতে।
‘বর্মি বিন লাদেন’ ও অভিনব আন্দোলন ৯৬৯ : ৯ বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছে নিজেকে ‘বর্মি বিন লাদেন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া উইরাথু।
সামরিক শাসন অবসানের পর যে কয়েকশ রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়, মৌলবাদী এ নেতা তাদের অন্যতম। ২০০৩ সালে মুসলমানবিরোধী দাঙ্গায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার কারাদ- হয়েছিল। উইরাথু মান্দালেইয়ের বিরাট মেসোইয়েন মঠে ৬০ জন ভিক্ষু ও আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে অবস্থান করে। এ মঠে বসেই তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘৯৬৯’ আন্দোলনের। মুসলমানদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক অবস্থানে আঘাত এ আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। প্রসঙ্গত ৯৬৯ সংখ্যাটি ৩টি বৌদ্ধ মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম ৯ দিয়ে বোঝানো হয় বুদ্ধের ৯টি বিশেষ ক্ষমতা, ৬ দিয়ে বোঝানো হয় বুদ্ধের ৬টি শিক্ষা এবং শেষ ৯ দিয়ে বোঝানো হয় সংঘ বা বৌদ্ধ মতবাদের ৯টি বিশেষ প্রতীক। আন্দোলনের নেতারা বলছে, তাদের লক্ষ্য হল মিয়ানমারে বৌদ্ধ আধিপত্য বজায় রাখা। ৯৬৯ সংখ্যাটি এখন মুসলমানবিরোধী জাতীয়তাবাদের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। উইরাথু বলে, ‘আমাদের একটি স্লোগান আছে : খেতে হলে ৯৬৯ খাও, যেতে হলে ৯৬৯-এ যাও, কিনতে হলে ৯৬৯-এ কেন।’
৪ মাস আগে উইরাথু তার ৯৬৯ মতবাদ ছড়াতে শুরু করেন। দেশটিতে এখন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা যত বাড়ছে ৯৬৯ প্রতীকের ব্যবহারও তত বাড়ছে। ইয়াঙ্গুনের বাগো এলাকায় ৯৬৯ দলের ভিক্ষুরা গণসংযোগ চালানোর পরপরই সেখানে মুসলমানবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়।
৯৬৯ লেখা স্টিকারে ছেয়ে যাচ্ছে দেশটির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, শুধু ধর্মীয় কারণেই নয়, দেশের অর্থনীতি কব্জা করার জন্যই স্থানীয় সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা সেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকান থেকে দাঙ্গা : ২০ মার্চ মেখতিলার নিউ উইন্ট সেইন এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকান থেকে দাঙ্গা শুরু হয়। মুসলমান ব্যবসায়ীর সঙ্গে ক্রেতা বৌদ্ধ দম্পতির কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়ে যায়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্বোধন করে প্রচার করা একটি লিফলেট মুসলিমবিরোধী ক্ষোভ উসকে দেয়। লিফলেটটি ছেড়েছিল ‘অসহায় বুদ্ধরা’ নামের একটি সংগঠন। সেটিতে যা লেখা ছিল তার মূল কথা হলো, মুসলমানেরা বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের অর্থ জোগাচ্ছে সউদী আরব এবং তারা মসজিদে মসজিদে গোপন সভা করছে।
ধর্ম, ভিক্ষু ও দাঙ্গা : মিয়ানমারে গণতন্ত্রের সংগ্রামে সন্ত্রাসী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মিকিতলা দাঙ্গায় ভিক্ষুরা যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তাতে তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থান এখন প্রশ্নের মুখোমুখি। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হামলার লক্ষ্যবস্তু মুসলমানরা। ওই এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে লেখা ছিল, ‘চাই মুসলমান নিধন’।
©somewhere in net ltd.