![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-শাইখ ছাঈদ কোদালাভী
আসছে কোরবানী! বাড়ছে ফেরেশানী!
চলতি বছরে চট্টগ্রামের যেসব হতদারিদ্র পিতা মাতা তাদের আদরের মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন তাদের চোখে ঘুম নেই!
কোরবানীতে সামাজিক প্রথানুযায়ী মেয়ের শ্বশুড় বাড়ীতে গরু মহিশ বা ছাগল দিতে হবে সঙ্গে ময়মসল্লাও!
এদিকে বরপক্ষ আনন্দে আত্মহারা এবছর কোরবানীতে গরু কিনতে হবেনা বেয়াই বাড়ীর গরুতেই কাজ সেরে ফেলা যাবে!
যাদের অঢেল টাকা পয়সা আছে তাদের কষ্ট না হলেও গরীব ও মধ্যবিত্তদের এসব গরু ছাগল ও ময়মসল্লা যোগাড় করতে কতখানি কষ্ট হয় তা তারাই জানেন, কেউ জমি বা সোনা বন্ধক রাখেন আবার কেউ সুদি টাকা নিয়ে বেয়াই বাড়ীর সে খায়েশ পূর্ণ করেন।
তেমনি মেয়ের প্রথম সন্তান জন্ম হতেই আকিকার গরু ছাগল নিয়ে হাজির হওয়া লাগে বেয়াই বাড়ীতে।
শরীয়তে যেখানে আকীকা করা সন্তানের মা বাবার উপর কর্তব্য সেখানে তা চেপে দেয়া হয় নানা নানীর উপর।
এখন প্রশ্ন হলো ইসলামী শরীয়তে এ জাতীয় কোরবানী ও আকিকা কতটুকু বৈধ?
বিশ্বের বড় বড় মুফতিয়ানে কেরাম ও ইসলামীক স্কলারগন এসব উপঢৌকন কে ঘুশ ও যৌতুক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আর ঘুশ দ্বারা কোরবানী আকিকা কোনটাই বৈধ হবেনা।বরন ওসব গ্রহন করাকে হারাম ও জগন্য অপরাধ বলা হয়েছে।এখন কেউ যদি বলে আমি শ্বশুড় বাড়ী হতে এসব দাবি করিনা যদি ওরা হাদীয়া স্বরুপ প্রদান করে তাহলে তা গ্রহন করতে অসুবিধে কোথায়?আসলে হাদীয়া দেয়া ও নেয়া সুন্নাত তাতে মুহাব্বত বৃদ্ধি হয়, এখন আমাদের দেখতে হবে ওটা হাদীয়া নাকি দায়ে পড়ে সামাজিকতা রক্ষা?
তার জবাবে বলবো - আসলে তা হাদীয়া নয় বরন কনে পক্ষ কোরবানীতে বা আকিকায় গরু নাদিলে সারা জীবন বরপক্ষ কনেকে কথায় কথায় খোঠা দিবে, অমুকের শ্বশুড় বাড়ী থেকে গরু দিতে পারলে তোমার বাবা কেন পারবেনা এ জাতিয় অনেক নিম্নমানের কথা এখন সমাজে শুনা যায়।
আরেকটি কথা কোরবানীতে ছেলের শ্বশুড় বাড়ী হতে গরু ছাগল নেয়া যদি হাদীয়া হয় তাহলে কি হাদীয়া শুধু কনে পক্ষ হতে নেয়াটাই সুন্নাত?
কোন মেয়ের জামাই বা মেয়ের শ্বশুড় কে দেখেছেন কি কোন দিন তার শ্বশুড় বাড়ীতে বা বেয়াই বাড়ীতে গরু ছাগল হাদীয়া দিতে?
না দেখেননি, সব হাদীয়া শুধু মেয়ের মা বাবা হতেই উশুল করা হয়।
মেয়ে পেঠে ধরেছে সেটাই একমাত্র তাদের অপরাধ!
১৮/২০ বছর ধরে আদরের মেয়েটাকে লালন পালন করে পরের হাতে তুলে দিয়েই তারা ক্লাম্ত হয়নি বরন বিয়ের পর প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সহ পুরা একবছর ধরে সব কিছুই পাঠাতে হয় এটাই চট্টগ্রামের সামাজিক নিয়ম বা প্রথা। সুতারাং এসব উপঢৌকন হাদীয়া নয় বরন যৌতুক বা সামাজিক কূপ্রথা।
এসব কনে বাড়ী হতে দেয়ার পুর্বেই তাদের বারন করে দিতে হবে, যদি আপনি আল্লাহ কে ভয় করে থাকেন তাহলে শ্বশুড় বাড়ীর গরু ছাগল দিয়ে কোরবানী বা আকিকা করবেননা, তারা নিয়ে আসলেও ফেরৎ দিতে হবে। তাতে আপনার প্রতি তাদের ভক্তি ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
আমার অভিজ্ঞতা বলে এই ঘৃণিত প্রথা থেকে চট্টগ্রামের ধনী, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র কেউ বাদ নেই, সকলেই এসব উপঢৌকন সানন্দে গ্রহন করে কেউ এটাকে গোনাহ মনে করেনা সকলেই এটাকে তাদের সংস্কৃতি মনে করে। তাহলে কি এর থেকে বের হবার কোন উপায় নেই?অবশ্যই আছে। এজন্য প্রথমেই দরকার চট্টগ্রামের মানুষের মনের সংস্কার। যদি তারা মনে করে যে যৌতুক দেয়া এবং নেয়া উভয়ই অপরাধ, তাহলেই তারা এই কু-প্রথা/সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারবে।
এজন্য মসজিদের ইমাম, খতিব, মিডিয়া, সরকার, সুশীল সমাজ, এনজিও প্রতিনিধি সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
মিডিয়াগুলো চট্টগ্রামের এ কু-প্রথা নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে।সরকারিভাবেও চট্টগ্রামে যৌতুক প্রথা রোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও একটু সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। আমাদের সুশীল সমাজের ভূমিকাও কম নয়। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার করে তুলতে পারে। এ কু-প্রথা রোধে আলেম ওলামারা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যৌতুকের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিল, লেখালেখি ও জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে।আসলে এজন্য দরকার আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মিডিয়া, সরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজ, আলেম ওলামা সবাই মিলে এর বিরূদ্ধে কাজ করলে খুব বেশি দিন এই ঘৃণিত ও লজ্জাকর প্রথা চলতে পারবে না।পরিশেষে বলবো, চট্টগ্রাম আমার প্রিয় জন্মভূমী, এখানকার মানুষের মন সাগরের ন্যায় বিশাল, ধার্মিকতা, আচার আচরন, কৃষ্টি কালচার সবদিক দিয়ে এখানকার মানুষগুলো আমার নিকট প্রিয়, আমার এ প্রিয় মানুষগুলো কোন কু-প্রথাকে বুকে লালন করে রাখুক তা আমি চাই না, আমার প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে কেউ উপহাস করুক কিংবা লজ্জা দিক তা আমি চাই না। আমি চাই চট্টগ্রামের মানুষ সকল কু-প্রথা ও কূসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হোক।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন বা মন্তব্য লিখুন।
২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৪
ছাঈদ কোদালাভী বলেছেন: আমিন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫১
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট, মহাদরকারী পোষ্ট, আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাজা দান করুন, আমিন।