নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাইখ ছাঈদ কোদালাভী - ইমাম ও এ্যারাবিক ক্যালিওগ্রাফার সৌদী আরব।

ছাঈদ কোদালাভী

শাইখ ছাঈদ কোদালাভী

ছাঈদ কোদালাভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুদের মসজিদ বিমূখ করবেন না!

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫



শিশুদের মসজিদ বিমূখ করবেন না!
মসজিদে আসতে উৎসাহিত করুন!
আপনার পার্শ্বে দাড়াতে দিন!
ছোট একটি ছেলেকে তার মা খুব সুন্দর করে পোষাক পরিয়ে মসজিদে পাঠায়। সেও খুব আগ্রহ নিয়ে মসজিদে যায়। কিন্তু সেখানে যদি তার ভাগ্যে জোটে লাঞ্চনা তাহলে সেই আগ্রহ অতি সহজেই সে হাঁরিয়ে পেলে।

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যারা মসজিদে গেলে বাচ্চাদেরকে আপদ মনে করে। কোথাও বসলে পিছনে সরিয়ে দেয়। পিছনের জন তাকে আবার পিছনে পাঠায়। এভাবে পিছনে যেতে যেতে তাকে যেতে হয় সবচেয়ে পিছনের কাতারে। আর মসজিদে জায়গা না হলে হয়তো মসজিদে বাহিরে দাঁড়ানো ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকে না।

গত এপ্রিলে ছুঠিতে দেশে ছিলাম একদিন জুমা’র নামায পড়তে হয়েছিল পূর্ব কোদালা জয়নগরঘোনা জামে মসজিদে। আমার পাশে দুইটি ছোট ছোট ছেলে ছিল। সম্ভবত দুই ভাই। কারন পোষাক একই রকম এবং চেহারায়ও মনে হয় মিল ছিল। যাই হোক, তারা পাশাপাশি বসেছে এবং কোন প্রকার সাউন্ডও করছে না। একসময় এক লোক এসে তাদের একজনকে পিছনে সরিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় বসলেন। আমি লক্ষ্য করলাম, নিজ সাথীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ছেলে দুটির মধ্যে চরম অস্বস্তি কাজ করছে। বিষয়টি অনুভব করে আমি নিজে পিছনে সরে এলাম এবং যে ছেলেটিকে পিছনে সরানো হয়েছিল তাকে সামনে পাঠালাম। আমার এ কাজে ঐ লোকটি চরম লজ্জা পেলো বলে মনে হলো।

মহানবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছরে পৌঁছে, তখন তাদের নামাজ শিক্ষা দাও, যখন বয়স দশে পৌঁছে, তখন বাধ্যতামূলক ভাবে নামাজ পড়াও। যদি না পড়ে তাহলে মার-ধর করে পড়াও”।

হাদীসে যেখানে ছোটদেরকে নামায পড়ানোর জন্য কড়াকড়ি আরোপ করতে বলা হয়েছে সেখানে আমরা যারা নামায পড়তে যাচ্ছে তাদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করছি!!! যারা একাজ করছে তাদের যুক্তি হচ্ছে বাচ্চারা মসজিদে শোরগোল করবে। আরে এটাতো বাচ্চাদের কাজ। তারা তো এটা করবেই। তাই যতটা সম্ভব তাদেরকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতে হবে।

দয়ামায়ার সাথে কাউকে কিভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হয় তা আমাদের প্রিয় নেতা শিখিয়ে গেছেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর ছেলে হযরত হাসান (রাঃ) শিশু অবস্থায় সাদকার খেজুরের দিকে হাত বাড়িয়ে খেজুরটি মুখে তুলতে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় রাসুল (সাঃ) তার হাত থেকে তা নিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ তুমি কি জাননা যে আমরা সাদকার মালামাল খাই না? তিনি তাকে মারধর করেন নি বরং অত্যন্ত বিনম্র ভাবে তাকে একটি বিষয় শিখিয়ে দিলেন।

আমরা এটা না করে বাচ্চাদেরকে যদি পিছনে বা এক পাশে পাঠাতে থাকি, তাহলে সেখানে তো কয়েকজন পিচ্ছি একত্রিত হয়ে হাঁসাহাঁসি মারামারি করবেই।যার ফলে অন্যান্য মুসল্লীদের খুশুহুযু, হুজুরী ক্বলব, বা নামাজের ধ্যান নষ্ট হয়ে নামাজ পর্যন্ত ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর চেয়ে অবিভাবকের পাশে বাচ্চাদের দাড় করানোই ভালো নয় কি!!!

মাকরুহ!!!!
এক্ষেত্রে হয়তো আবার কেউ কেউ যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে যে বাচ্চা পাশে থাকলে অবিভাবকের নামায মাকরুহ হবে। মাকরুহ অর্থ হচ্ছে অপছন্দ, বড়দের সঙ্গে ছোঠদের দাড়ানো অপছন্দ হবে, এটা কোন কোরআন হাদীসের কথা নয় বরন রাসুল (সাঃ) ছোঠদের কে নিজের পার্শ্বে দাড় করাতেন এটাই হাদীস দ্বারা প্রমানীত।

বুখারী শরীফে এসেছে- রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামা বিনতে যায়নাব (রাঃ) কে বহন করে (কোলে কিংবা কাঁধে) নামাজ আদায় করেছেন।

যখন তিনি দন্ডায়মান হতেন তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন আর সিজদাহ করার সময় নামিয়ে রাখতেন।

আবু দাউদ শরীফে এসেছে- আমরা একদা যুহর কিংবা আসর নামাজের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বেলাল (রাঃ), রাসুল (সাঃ) কে নামাজের জন্য ডাকলেন।
রাসুল (সাঃ) তাঁর নাতনী হযরত উমামাহ (রাঃ) কে কাঁধে করে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন। রাসুল (সাঃ) ইমামতির জন্য নামাজের স্থানে দাড়ালেন আমরা তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম অথচ, সে (উমামাহ রা.) তার স্থানে তথা রাসুল (সাঃ) এর কাঁধেই আছে। রাসুল (সাঃ) নামাজের তাকবির দিলেন আমরাও তাকবীর দিলাম। রাসুল (সাঃ) রুকু করার সময় তাকে পাশে নামিয়ে রেখে রুকু ও সিজদাহ করলেন। সিজদাহ শেষে আবার দাঁড়ানোর সময় তাকে আগের স্থানে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে নামাজের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাকাতেই তিনি এমনটি করে যেতেন।

এ ছাড়াও রাসুল (সাঃ) এর খুতবা দেয়ার সময় তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আসলে তিনি খুতবা দেয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন চুম্বন করতেন আর বলতেন খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তাই, আমি খুতবা দেয়া বন্ধ করেই এদের কাছে চলে এসেছি। (নাসায়ী শরীফ)

রাসূল (সাঃ) ছোট বাচ্চাদের কাঁধে নিয়ে নামায পড়তে পারেন আর ছোট বাচ্চা আমাদের কারো কারো পার্শ্বে থাকলেও তার নামাযে ক্ষতি হয়!!!! আশ্চয্য কথা!!!!

এ বিষয়ে সৌদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডে প্রশ্ন করা হলে আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমিন (রহ) বলেনঃ "শিশুরাও বশর হাযর নয়" অর্থাৎ শিশুরাও মানুষ তারা পাথর নয় তারা বড়দের সাথে দাড়ালে কোন প্রকার মাকরুহ হবেনা, বরন মসজিদে পরে এসে তাদের কে সামনের কাতার থেকে হঠিয়ে ঐ জায়গা দখল করাটাই মাকরুহ।
https://youtu.be/wLfdHe3YJIo

প্রথম কাতার খালি রেখে শিশুদের পিছনে হঠানো বা যেকোন কাতার থেকে নামাজরত শিশুকে টেনে হেঁচড়ে পিছনে নিয়ে যাওয়া কোনটই উচিৎ নয়।
হ্যাঁ সাত বছরের নিছের বা একদম ছোট অবুঝ শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা ঠিক নয়।

বাচ্চাদেরকে যদি আমরা বড়দের মাঝে মাঝে ঢুকিয়ে দাঁড় করাই, তাহলে তারা হাঁসাহাসি করা থেকে অনেকটা বিরত থাকবে, অবিভাবকও অনেকটা নিশ্চিত থাকতে পারবেন এবং বাচ্চারাও খুশি হবে। তাদের মসজিদে যাবার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

কখনো কখনো এটাও দেখা যায় যে বাচ্চারা ইমামের সাথে নামাযে দাঁড়িয়েছে। নামায দুই-এক রাকায়াত হয়েও গেছে। এমন সময় সিনিয়র কেউ এসে নামাযরত অবস্থায়ই তাকে পাশে সরিয়ে সে সেখানে দাঁড়ায়। এতে বাচ্চার মনে ব্যপক আঘাত লাগার এবং মসজিদে আসার প্রতি অনীহা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এ লোকের প্রতি হয়তো তার মনে ব্যপক ক্ষোভও সৃষ্টি হয়।

বাচ্চাদের হয়তো নামাযের মাঝে মাঝে দাঁড় করালে সে কখনো কখনো একটু আধটু খেলা করবে, একটু আধটু মজার কথা বলবে। সে যা করে করুক। তাকে স্নেহ করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

রাসুল (সাঃ)বলেছেন: যে আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করতে জানে না সে আমার দলভুক্ত নয়। (আবু দাউদ, তিরমীজি, মুসনাদে আহমদ, ইবনে আবি শায়বা)

শুনলাম, তুরস্কে নাকি শিশুরা মসজিদে গেলে তাদের চকলেট দেয়া হয়। তাইতো ওসব দেশে শিশুরা আনন্দের সাথে মসজিদে ছুটে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে হয় তার উল্টো।

এমন ধমকের শিকার হলে হয়তো শিশুরা ভাবতে পারে মসজিদে গিয়ে ধমক খাওয়ার চাইতে বাসায় বসে কম্পিউটারে গেইমস খেলাই ভালো।
পরবর্তিতে তাকে মসজিদমূখী করতে তাবলীগ জামাআত বাড়ীতে গিয়ে তার হাতে পায়ে ধরা লাগে।

তাই আসুন, বাচ্চাদের স্নেহ করি এবং তাদেরকে মসজিদে যাবার ব্যপারে উৎসাহিত করে একজন দ্বীনদার মুত্তাকী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি।

লেখাটি ভালো লাগলে আপনার মন্তব্য লিখুন এবং দ্বীনের স্বার্থে শেয়ার করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.