![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমাদের মাঝে একটা গল্প হয়ে বেঁচে থাকতে চাই
*একটি শিক্ষামূলক গল্প, ফেসবুকে রিলেশন করা আপুদের গল্পটা পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো*
.
জান অনেক দিন তো হলো আমাদের কথা বলা। এবার দেখা করা প্রয়োজন। তোমাকে আজকাল বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে। (ছেলে)
.
আমি তোমাকে আগেই বলেছি, আমি দেখতে ততটা সুন্দরী না। তাছারা ফেসবুকে তো অনেক গুলো পিকচার তোমাকে দিয়েছি। বাস্তবে না হয়, একবারে বিয়ে সময় মন ভরে দেখো। (মেয়ে)
.
আমি এত কিছু জানি না। আগামীকাল তুমি কলেজ যাবা না। আগামীকাল সারা দিন তুমি আমাকে দিবা। আমার ভালোবাসার কসম। কাল যদি দেখা না করো, তবে বুঝে নিবো, তুমি আমাকে লাভ করো না।
.
মেয়েটা সাতপাঁচ ভাবছে, কিন্তু কোনো উত্তর খুজে পাচ্ছে না। হাজার হলেও ভালোবাসার কসম দিয়েছে, তাই হ্যা সূচক কিছু বলবে। এমন সময় দেখে ওপাশের ছেলেটা তত সময়ে লাইন কেটে গেছে।
.
ইরা কল ব্যাক করলো, এত সময় কথা হচ্ছিলো রিহান ও ইরার মাঝে।
.
রিহান বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, ইরাও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ইরার সাথে রিহানের পরিচয় হয়, ফেসবুকের মাধ্যমে।
.
ইরার কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না। রিহান সুন্দর সুন্দর ছন্দ লিখতো। রিহানের সাথে সেই ছন্দের সূত্র ধরেই ইরার কথা বলা। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা খুব ঘনিষ্ঠ একটা বন্ধুত্তে রুপ নেয়।
.
কোনো জৈনিক কবি বলেছিলেন, একটা ছেলে ও একটা মেয়ে বন্ধু হতে পারে, তবে তারা অবশ্যই প্রেমে পড়বে, হয়তো সময়ে নয়তো অসময়ে। প্রেমে তারা পড়বেই।
.
রিহান ও ইরাও সেই সূত্রের বাহিরে নয়। তাদের মাঝে গড়ে উঠা সম্পর্ক একটা সময় এসে ভালোবাসায় রুপ নেয়, তার পর আজ এত দূর........!!
.
রিং হচ্ছে তো হচ্ছেই.......!
.
তিন বার রিং হবার পরে রিহান ফোন রিসিব করলো। রিহান ফোনের ওপাশে চুপটি করে আছে।
.
রিহান আমি তোমার কথায় রাজি। আগামীকাল দেখা হচ্ছে তোমার আমার। তুমি যেখানে বলবে আমি সেখানেই দেখা করতে প্রস্তুত। (ইরা)
.
আগামীকাল তুমি নাটোর বনপাড়া আসবে, সেখান থেকে তোমাকে পাবনা নিয়ে আসবো। পাবনাতে সারা দিন থেকে বিকালে তোমাকে আবার ব্যাকে পাঠিয়ে দিবো।
.
রিহানের বাসা ছিলো পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। ইরার বাসা ছিলো নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলায় ।
.
রিহান পরের দিন ইরাকে নাটোর বনপাড়া থেকে পাবনা সিএনজি মোর নিয়ে আসে। আজ দীর্ঘ ১ বছর কথা বলার পরে, 'দুজনের সামনাসামনি দেখা হলো। এক সাথে সিএনজি থেকে নামতেই রিহানে ফোন বেজে উঠলো।
--হ্যালো দোস্তো বল......(রিহান)
--দোস্তো আমার মা অনেক অসুস্ত, প্লিজ তুই একটু আমার বাসায় আয়।(রাসেল)
.
রিহান ইরাকে বিষয়টা বলে, অতঃপর দুজনেই সেখানে থেকে সরাসরি ভাঙ্গুড়া চলে আসে। রাসেল এর বাসায় আসতেই, ইরা দেখে পুরো বাসা ফাকা। মানুষ বলতে রিহান ও ইরা, এই দুজরেই বাসাতে বর্তমানে।
.
রিহান ইরাকে নানা রকম কথা বলে ফিজিক্যাল সম্পর্ক করতে রাজি করায়। ইরা এখানে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফিজিক্যাল সম্পর্ক করে। এভাবে রিহান ও ইরার মাঝে দীর্ঘ তিন মাস এই অবৈধ সম্পর্ক চলতে থাকে।
.
একদিন সকালে ইরার ঘুম ভাঙতেই কেমন যেনো বমি বমি অনুভব করে। সাতপাঁচ না ভেবে তখনি ইরা রিহানকে কল দেয়। রিহান আমি মনে হয় অন্তঃসত্ত্বা। এখন কি হবে.....!
.
কি আর হবে এ্যাবরেশন করাই নাও। টাকা যা লাগে আমি দিবো। (রিহান)
.
জান এটা তুমি কি বলছো, এ্যাবরেশন করাবো মানে কি। এটা আমাদের ভালোবাসার প্রথম ফল। তুমি এটা বলতে পারলে.... (ইরা)
.
ইরা আমার এত নেকামি ভালো লাগে না। আমি ফোন রাখছি। আমাকে আর কল দিয়ে বিরক্ত করো না।.....(রিহান)
.
আমি তোমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করি। এমন কথা তুমি বলতে পারলে। আজ তোমার সন্তান আমার গর্ভে, তবে কি এটাই আমার ভালোবাসার প্রতিদান। তবে কি এতদিন সব অভিনয় ছিলো। শুধুই আমাকে ব্যবহার করেছো ।..........(ইরা)
.
ইরা, কখনো ভ্রমর কে ফুলে বসা দেখেছো। ভ্রমর প্রতিটি ফুলের মধু খায়, মধু ফুরালেই ভ্রমর ফুরত করে উড়ে যায়। পুরোনো সেই মধু শেষ হওয়া ফুলের কথা আর মনে রাখে না ভ্রমর । আমি রিহান সেই ভ্রমরের ব্যতিক্রম নয়। সো সোজা সাপটা কথা, এখন থেকে তোমার রাস্তা তুমি মাপো ইরা, আমার টা আমি বুঝে নিবো,, বাই বাই টা টা.......!! (রিহান)
.
ইরা কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। এমন একটা সম্যসার কথা অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তিকে শেয়ার ও করতে পারছে না। ইরা সারা দিন নানা টেনশন করলো, কিন্তু কোনো উপায় খুজে পেলো না। রাতে ডিনার শেষে মাকে তার রুমে ডাকলো।
.
মা রুমে আসতেই, ইরা মায়ের পা জরিয়ে ধরলো। মা আমি জীবনে সব থেকে বড় ভুল করেছি। জানি না তুমি মাফ করবে কি না। সব ঘটনা ইরা মাকে খুলে বললো। মা রিহানের সাথে যোগাযোগ করার কথা বললো, কিন্তু রিহানের সাথে যোগাযোগ এর সব রাস্তা বন্ধ। অবশেষে ইরা এ্যাবরেশন করলো।
.
ইরা যদি সেদিন রাতে মায়ের সাথে বিষয়টা শেয়ার না করতো, তবে ইরা হয়তো সুইসাইটকে মুল রাস্তা হিসেবে বেছে নিতো। কিন্তু কোনো 'মা'ই চাইবে না। তার সন্তান সুইসাইট করুক। সন্তান যতই ভুল করুক, মা সব সময় সন্তানকে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করেন।
.
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু বাস্তব জীবন কোনো ছবির গল্প নয়। আপনি ইচ্ছে করলেই নিজের মতো করে গল্পের ফিনিসিং করবেন।
.
বাস্তবতা বড়ুই নিষ্ঠুর, বাস্তব জীবন তার নিজস্ব গতিতে পরিচালিত হয়ে থাকে।
.
এই ঘটনার পাঁচ বছর পরে।
.
ইরার ঘরে ফুটফুটে একটা মেয়ে। স্বামী বড় একটা কোম্পানিতে জব করে। মোটা অঙ্কের স্যালারি। সব মিলিয়ে অনেক সুখেই আছে ইরা। ইরার স্বামীকে তার অতীত জীবনের সব ঘটনা বাসর রাতেই বলেছে। সব মেনে নিয়েই শামীম ইরাকে কাছে টেনে নিয়েছে। শামীম ইরার স্বামী। ইরাও শামীমের এত বড় ত্যাগের মূল্য দিতে ভুল করেনি। স্বামীর সর্ব দিক থেকে সব চাওয়া পাওয়া পুরন করতে সব সময় প্রস্তুত থাকে ইরা । তাই তো তাদের জীবনে নেমে এসেছে সুখের পরম শিখা।
.
অন্য দিকে রিহানের বউ এর ব্লাড ক্যান্সার। দুইটা মেয়ে, দুটাই প্রতিবন্ধী। সারা দিন অফিস শেষে প্রতিবন্ধী দুটি মেয়েকে সামলাতে হয়। তার উপর মৃত্যু পথযাত্রী সালমার মৃত্যুর প্রহরের অপেক্ষা গুনতে হয় রিহানকে। সালমা রিহানের স্ত্রী। ডক্টর বলেছে যে কোনো সময় তার স্ত্রী মারা যেতে পারে। রিহান এখন বুঝতে পারে, হয়তো তার আগের পাপের সাজা এখন তাকে বহন করতে হচ্ছে প্রতি নিয়ত। জীবনের মানেটা যে খুব একটা সহজ নয়, রিহান আজ সেটা পদে পদে টের পাচ্ছে। বেঁচে থেকেও আজ নিজেকে মৃত্যু মনে হয় রিহানের।
.
ফেসবুক রিলেশন কিংবা বাস্তব রিলেশন যেটাই বলি না কেনো। কেউ আপনাকে প্রতি নিয়ত কেয়ার করে যাচ্ছে, আপনি হাজার বার ইগনোর করার পরেও, আপনে হাসি মুখে বুকে টানছে। তাই বলে ভাববেন না সেই মানুষটা বোকা। মানুষটা আপনাকে ভালোবাসে, হয়তো নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে , সে কারনেই হয় তো বার বার আপনার কাছে ছুটে আসে।
.
একটা সময় হয়তো কেয়ার করা মানুষটা আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। আর যাবেই না বা কেনো। ওরাও তো আপনার মতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। ধৈর্যের একটা লিমিট থাকে, কেউ যদি সেই লিমিট ক্রস করে তবে তার কাছ থেকে সবাই একটা সময় দূরে চলে যায়। ঠিক মুহূর্তে বুঝতে পারে, কেয়ার করা সেই মানুষটা তার জীবনে কত টুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, কিন্তু আফছোস তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।
.
রিলেশন খারাপ কিছু নয়, কিন্তু রিয়ের আগে এতটা কাছে আসবেন না, যেটা সমাজের চোখে বেমানান। ভালোবাসার অর্থ কেউ বুঝেন? ভালোবাসা মানে ত্যাগ। ভালোবাসার পরিপূর্ণতা বিরহে। ভালোবাসার মানুষটিকে এক পলক দেখলেই যার হৃদয় শীতল হয়ে যায়, ভালোবাসা সেখানে পরিপূর্ণ প্রতিফলিত মান।
.
পরিশেষে এতো টুকই বলতে চাই, জীবন একটাই। একদিন আপনাকে মরতে হবে। সময় থাকতে নিজের ভালোটা বুঝতে শিখুন, ভুল মানুষের সঙ্গদোষে নিজের মূল্যবান জীবনটা নষ্ট করেন না। ভবিষ্যৎতে এর মাশুল আপনাকে হারে হারে দিতে হবে।
.
লিখেছেন-- Sajol Al Sanvi (নিশ্চুপ কান্না)
©somewhere in net ltd.