নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা

শুভ্র শৈশব

“জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।”

শুভ্র শৈশব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ রাত্রিসন্ধ্যায় একজন সোনালী আপু

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:০১

ইদানীং প্রযুক্তি, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের হাতের আঙুলে এমন এক চুলকানি রোগের উদ্রেক করেছে যে, যেখানেই থাকো, হয় পিসি’র কী বোর্ড চাপাচাপি করো নয়তো মোবাইলফোন-এর! এরই ধারাবাহিকতায় আমার হ্যান্ডসেটের টাচ বাটুনগুলো আঙুল দিয়ে গুঁতোগুঁতি করতে করতে ফোনবুক থেকে একটা নাম বের হলো- সোনালী আপু লেখা। এ নামে আমার কোন জানাশুনা আপু আছে বলে এই মুহূর্তে মনে করতে পারছিনা। খানিকক্ষণ মস্তিষ্কটাকে স্থির করে একটা সূক্ষ্ম সার্চ দিলাম। হুঁ, মনে পড়েছে।

আমার একটা বাইসাইকেল আছে, রেঞ্জার, গাঢ় নীল রঙ এটার। বিকেলের দিকে যখন ট্যিউশনিতে যাই, সাধারণত এটাতে ভর করেই যাই। সেদিন ক্যাম্পাসের বাসে গেছি। রাত সাড়ে আটটায় শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার শেষ বাস। এটাতে করেই ফিরার কথা। কিছুটা তফাতে থাকতেই দেখলাম বাসটা চলে গেল। “আমার বলার কিছু ছিলনা, না-গো আমার বলার কিছু ছিলনা, চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে!” অটোবাইকে সোয়ার হলাম। কাজলা গেটে নেমে বাম দিকে মসজিদ, ডানদিকে বড় একটা মাঠ- এর বুক চিরে পায়েহাঁটা পথ ধরে এগুতে লাগলাম। এই পায়েহাঁটা পথের বামহাতে জুবেরী ভবন ক্রস করতেই আম বাগান। ফার্স্ট ইয়ারের শুরুর দিকে ক্লাস করার সময় কিছু কিছু স্যার আমবাগানের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করে দিতেন। বুঝাতেন, এই আম্রকানন বেশ ভয়াবহ একটা ব্যাপার, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। কেন ভয়াবহ এটা বুঝেছি কিছুদিন পেরুতেই। এটা প্রেমিক-প্রেমিকাদের রৌম্যান্স উদ্যান। আসলে প্রায় সব ক্যাম্পাসে এরকম উদ্যানের খোঁজ পাওয়া যায়। যেমন, ঢাবি’র সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাবি’র বৃন্দাবন ইত্যাদি। যাহোক, আমবাগানে ঢুকতেই একটা নারী কণ্ঠের কান্নার স্বর শুনতে পেলাম। ক্রস করে চলেই যাচ্ছিলাম! হঠাৎ কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডাক দিল।
-হ্যালো ভাইয়া, শুনছেন!
দাঁড়ালাম। পেছন ফিরে একটু কাছে যেতেই আলো-আঁধারিতে আনুমানিক ২৫-৩০ বছরের একটা নারীমুখ আবিষ্কার করলাম। সাথে ছোট্ট একটা মেয়ে, সেও কাঁদছে আর বলছে, ‘‘মামাকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে। ওরা মামাকে মারবে। মামা আমাকে চিপস কিনে দিয়েছে। টাকা দিয়েছে।’’

গল্পটা হলঃ এই মহিলাটির নাম সোনালী। নিম্নবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে। বছর দশেক আগে প্রেমের সম্পর্ক করে এক কাঠমিস্ত্রির সাথে বিয়ে হয়। টিকে থাকা আট বছরের সংসারে দুটি মেয়ে আছে। এটা ছোট, এখনো স্কুলপাঠ শুরু হয়নি। আর বড় মেয়েটা ক্লাস ফোরে পড়ে। বছর দুয়েক আগে, কী জানি কারণে স্বামী ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। মহিলা সেলাই মেশিনের কাজ করে তিন সদস্যের সংসার চালান। সংসার কোনমতে চললেও দেহ তো চলেনা! মাঝে মাঝে মনের চেয়েও দেহ খুব অবাধ্য হয়ে ওঠে!

ছোট্ট মেয়েটি মামা মামা বলে যার জন্য কেঁদে চলেছে এই হল সোনালী’র বর্তমান প্রেমিক। এই আমবাগানেই ছেলেটি পুলিশের হাতে ধরাটা খেয়েছে। সাথে প্রেমিকের সঙ্গেথাকা বন্ধুটিও। এই আমবাগান বড়ই রৌমান্স উদ্যান! বহিরাগতরাও বেশ বুঝে গেছে। খুব সম্ভবত ছোট্ট মেয়েটির জন্য সোনালী’কে পুলিশ অ্যারেস্ট করেনি। আমি ওদেরকে কাজলা গেটে অটোবাইকে তুলে দিলাম। বললাম, বাসায় পৌঁছে ফোন দিয়েন।

বি. দ্র. গল্পস্থান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.