নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোলা পাতা...

সাফকাত আজিজ

বাংলাদেশের মানুষের জন্য

সাফকাত আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুন্দরবনের রাজা

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৪

সুন্দরবনে ঘুরতে গেলে ট্যুর গাইডরা সবসময় পই পই করে সবাইকে বুঝিয়ে বলে যে সবসময় একসাথে থাকতে। এই বনের সব জায়গায় বাঘ এবং বিষাক্ত প্রানী আছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে থাকলে যেকোন মুহুর্তে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কিন্তু সবজায়গাতে কিছু জ্ঞানী মানুষ থাকে। এক শ্রেনী বলে- ধুর সুন্দরবনে বাঘই নেই। সব চোরা কারবারীরে মেরে ফেলছে। আমাদের ভয় দেখায়। হে হে।
আরেক শ্রেনী বলে, চৌধুরী সাহেব। আমরা বাংগালী। সাহসী জাতি। আমাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখাও? এই বাঘটাঘ আমাদের দেখলে লেজ তুলে পালাবে। হু হা হা
আর গ্রুপে যদি ২/১ জন সুন্দরী থাকে তবে অজানা কারনে এই জ্ঞ্যানীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। একাধিক বার সুন্দরবনের প্লেজার ট্যুরে ঘুরতে যাওয়ার কারনে অনেক মজার আবার দুঃজনক ঘটনা শুনেছি এবং সাক্ষী হয়েছি। আজ তার মধ্য থেকে একটা বলি।

সুন্দরবনের সবচাইতে পুরনো বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট হচ্ছে হিরন পয়েন্ট। অনেক আগে থেকে জংগলের ভেতরে একটা উচু ওয়াচ টাওয়ার, বাধানো রাস্তা আর হ্যালিপ্যাড থাকার কারনে ট্যুরিষ্টদের কাছে জায়গাটা হট কেক ছিলো। যদিও এখন ঠিক তার উল্টো। একাধিক নিরাপত্তা বাহিনীর অফিস হবার কারনে বলা চলে এটা এখন সুন্দরবনের গুলিস্থান। তবে ঘটনাটা সেখানেই ঘটেছিলো।
বিঃ দ্রঃ আমরা সুন্দরবনে যেখানেই যাই না কেনো বন বিভাগের অনুমতি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়েই যাই। এবং অপচনশীল প্রতিটা বস্তু নিজেদের ব্যাগে করে শহরে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।


২০১৭ এর জানুয়ারিতে এক ট্যুরিস্ট জাহাজ ৬০ জন ট্যুরিষ্ট নিয়ে পুরো সুন্দরবনের বুক চিরে প্রথমদিন কটকা ঘুরে ২য় দিন জামতলা হয়ে হয়ে কুংগা নদী পাড়ি দিয়ে হিরন পয়েন্টে পৌছালো ঠিক দুপুর ১২টায়। দুইটা স্পট ঘুরে, মজার মজার খাবার খেয়ে আর অজস্র হরিণ, শূকর এবং বানর দেখে তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে বেশ সাহস যুগিয়ে ফেলেছেন। তবে সাহস জিনিস এমন একটা গুন যা চেপে রাখা যায় না। আবার ইহা অন্যদের না দেখানো পর্যন্ত শরীরের মধ্যে চিড়বিড় চিড়বিড় করে।
কুংগা নদীতে জাহাজ রেখে সবাইকে নৌকায় নিয়ে পুরো দল নামলো মারমেইড রেস্টহাউজ পল্টনে। সেখান থেকে সবাই লাইন ধরে মংলা বন্দরের রেস্টহাউজ এর সামনে দিয়ে ওয়াচ টাওয়ারের দিকে চলতে লাগলো। সবার সামনে একজন বনরক্ষী আর পেছনে আরেকজন পুরো লাইনটিনে স্কট দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। এই পথটা সিমেন্ট দিয়ে বাধানো। আর আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিং আর সেখানকার লোকজন থাকার কারনে বনের চাইতে মফস্বলের কোন সরকারী কলোনির ভাবই বেশি। সাহসী টুরিস্টরা ভাবলো তাদের সাহস দেখানোর সুযোগ চলে যাচ্ছে। তেমনি তিনজন অকুতোভয় বীর বাঙ্গালী। অন্যদের একটু দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগে রাস্তা ধরে ছন বনে নেমে পড়লো। এরপর বাকিদের থেকে মোটামুটি ৩০০ ফিট দুরত্ব রেখে সামনে সামনে চলছিলো। পেছন থেকে তাদের বারবার পিছিয়ে আসতে বলার পরেও তাদের উৎসাহে সামান্য ছেদ ফেলতে পারলো না। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সবাই ডাকাডাকি বন্ধ করে দিলো।

ছনের মাঠ যেখানে শেষ সেখান থেকে ঘন গেওয়ার বন শুরু। আর তার মাঝ থেকে লম্বা সোজা সরু রাস্তা। আমাদের সাহসী তিন তরুন সেই পথ ধরে পিছিয়ে পরা অসহায় বাঙ্গালীদের পথ দেখিয়ে আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছে। পথে একটা জোলার উপরে ছোট্ট কাল্ভার্ট আছে। ওই তিনজন যখন সেটা পার হয়ে ওপারে পা রাখলো। ঠিক তখনই কাল্ভার্টের এপাড়ে বাম পাশের গেওয়া বনের মধ্য থেকে এক বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগার বের হয়ে পথের উপর এসে দাঁড়ালো। ঘটনাটা এরকম, পুরো টিমের মাত্র ১৫০ ফিট সামনে বাঘটা পথের মাঝখানে দাঁড়ানো আর বাঘের ১৫০ ফিট সামনে সেই তিনজন। দুই দলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাঘটা বড় দলটার দিকে কটকটিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকলো। এই দলের সাথে দুইটা রাইফেল আছে। কিন্তু তিনজন খালি হাতে। তাদের সতর্ক করতে বাকিরা চিৎকার শুরু করে দিলো।
চিৎকারের শব্দে পেছনে তাকিয়ে বাঘ দেখে একমুহুর্ত সময় নষ্ট না করে একজন সংজ্ঞা হারিয়ে ধুপ করে মাটিতে পরে গেলো। আর বাকি দুইজন বাঘ, সংজ্ঞা হারানো সঙ্গী আর বাকিদের চিৎকারে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে একজায়গাতেই দাড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ১০ সেকেন্ডের মত বড় দলকে পর্যবেক্ষন করে বাঘটা এবার মাথা অন্যদিক ঘুরিয়ে ওই তিনজনকে(পড়ুন আড়াই জনকে) দেখলো। কিন্তু সম্ভবত তিনজনের একজনকে মাটিতে শোয়া দেখে ভালোমতো বুঝতে না পেরে মাথাটা কয়েকবার উচু/কাত করে দেখছিলো। অন্যদিক থেকে চিৎকার দিয়ে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছিলো। কেউ বলছে দৌড় দেন, কেউ বলছে গাছে উঠে পড়েন, কেউ বলছে শুয়ে পড়েন আর বনরক্ষীরা বলছে একচুল নড়বেন না। দুইজনের একজন তখন লাফ দিয়ে অন্যজনের পিঠে উঠে জড়িয়ে ধরলো। বাঘটা তার সমগ্র ব্যাঘ্র জীবনে এমন কান্ড আগে কখনো দেখনি। বাঘটা খুবই বিস্মিত হলো। বিস্ময়ের কারনে সে লেজ উঠিয়ে দৌড়ে পালানোর কথাও ভুলেই গেলো।

জঙ্গলের ওই মুহুর্তে ২০ সেকেন্ড অনেক অনেক সময়। বাঘটা একবার ডান দিকে তাকায় আরেকবার বাম দিকে তাকায়। কিন্তু বান্দা রাস্তা ছেড়ে নড়েও না বা আক্রমনও করেনা। দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ দেয়া যাবে না দেখেই বন রক্ষীরা এবার ব্ল্যাংক ফায়ার করলো। সাধারনত রাইফেলের এই বিকট শব্দে বাঘেরা দৌড়ে পালায়। কিন্তু এ নড়েনা। বরং এবার সেই আড়াই জনের দিকে হালকা একটু ঘুরে দাড়ালো। এদের কর্মকান্ড তার খুব পছন্দ হয়েছে মনে হলো। মুগ্ধ হয়ে সে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। রক্ষীরা একের পর এক ব্ল্যাংক ফায়ার করেই যাচ্ছে অথচ বাঘটার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। মাথার উপর দিয়ে ৭ রাউন্ড গুলি চালানোর মাঝে বাঘটা একবার শুধু বড় দলের দিকে চেয়ে আবার সেই আগের দিকে তাকিয়ে রইলো। এতোক্ষনে সেই দুই জন মাটিতে বসে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিয়েছে। বাঘের সামনে বসে পড়াটাই হচ্ছে সবচাইতে বড় বোকামি। বাঘ ছোট সাইজ দেখলে কম শক্তির শিকার মনে করে আক্রমন করতে উৎসাহিত হয়।

এতোক্ষনে প্রায় একমিনিট পার হয়ে গেছে। আতঙ্কে বড় দলের মধ্য থেকেও ইতিমধ্যে তিন জন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। অন্যরা মরা কান্না শুরু করে দিয়েছে। বনরক্ষীদের বয়স্কজন কি মনে করে তরুন রক্ষীকে বললো বাঘের সামনে মাটিতে গুলি করতে। তরুন রক্ষীটি এবার বাঘের সামনের মাটিতে গুলি করলো। মাড়িতে গুলি লাগার সাথে সাথে কাদা ছিটকে বাঘের গায়ে লাগলো। আর সাথে সাথে “ঘ্যাও” করে বিরাট একটা ডাক দিয়ে বাঘটা একলাফে সামনের গেওয়া বনে পালিয়ে গেলো।

এরপর আক্ষরিক অর্থেই সবাই মিলে ধরা ধরি করে সেই সাহসীদের ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলো। সেখানে তাদের পর্যাপ্ত পানি ছিটা দিয়ে অজ্ঞ্যান থেকে স্বজ্ঞ্যানে ফেরত আনা হয়েছিলো।

কিন্তু বাঘের এমন অস্বাভাবিক আচরনের কারন কি? সেখানকার বনকর্মীদের সাথে পুরো ঘটনা শেয়ার করার পর তারা ব্যাপারটার একটা ব্যাখ্যা দাড় করলেন। তাদের মতে। এই এলাকায় মোট তিনটি বাঘ দেখা যায়। যার একটা হচ্ছে বুড়ো ছেলে বাঘ। কোন কারনে এই বাঘটা বয়রা (কানে শোনে না)। এবং তারা ঠিক সেই বাঘটার সামনেই পড়েছে।
আর আক্রমন না করার পেছনের ব্যাখ্যা হচ্ছে। পর্যটন এলাকা হওয়াতে এই এলাকার বাঘেরা জন্মের পর থেকেই মানুষ দেখে অভ্যস্ত। এরা মানুষকে শিকার বা হুমকি হিসেবে দেখেনা। তাই আক্রমন না করে এড়িয়ে যায়।
যারা সাহসীদের কোলে করে তুলে এনেছিলেন তাদের একজন অধৈর্য হয়ে বললেন “ভাই, তাড়াতাড়ি জাহাজে চলেন, গোছল করতে হবে। সারা গা থেকে পেচ্ছাপের গন্ধ আসতেছে”। সাথে সাথে ঘরে একসাথে অনেকগুলো গন্ধ শোকার ছোক ছোক শব্দ শোনা গেলো। সবার দৃষ্টি চলে গেলো বিছানার উপর বসা যুদ্ধজয়ী সেই তিনজন অকুতোভয় বীর বাঙ্গালীর দিকে। তারা তখন মেঝের দিকে চোখ রেখে মুখে ম্লান হাসি ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সেই তিনজনের পরিচয় আর রাখা হয়নি। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি তাদের চিনে থাকেন তবে কমেন্টে একটু মেনশন করবেন। তাদের কাছ থেকে আরো কিছু জানার বাকি আছে।

ব্লগটি ফেইসবুকের ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশ এর তালাশ শাহনেওয়াজ এর পোস্ট থেকে নেওয়া।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০০

মেঘশুভ্রনীল বলেছেন: বাঘের গল্পটি সত্যি নয়, গল্প বানানোর জন্যে রঙ মেখে বলা। উনি বাঘ দেখে থাকলে বর্ণনা অন্যরকম হতো। ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: চার বার গিয়েছি সুন্দরবন কিন্তু কখনও বাঘ দেখার সৌভাগ্য হয় নি।

আপনার পোষ্টে বাঘের অংশটুকু কত টূকু সত্য?

২৩ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:৩১

সাফকাত আজিজ বলেছেন: দাদা আমি শুধু ওনার পোস্টটি আমার পছন্দ হয়েছে বলে শেয়ার করলাম। সত্য মিথ্যে আপনাদের হাতে।

ভাল লাগলো যে আপনার চোখে আমার ব্লগ এড়ায়নি, ধন্যবাদ।

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বাঘ দেখা মেলা বিরল ঘটনা ।

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৩৭

মা.হাসান বলেছেন: প্রচুর হাসলাম। মূল লেখককে এবং শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ঐ এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ প্রচুর দেখেছি। যারা হিরন পয়েন্ট পর্যন্ত গেছেন অনেকেই দেখেছেন। তবে বাঘ দেখিনি। কিন্তু পায়ের ছাপ যেহেতু আছে, বাঘ অবশ্যই আছে।

মানুষ বাঘকে যত ভয় পায়, বাঘ মানুষকে তার চেয়ে কম ভয় পায় না। আগ বাড়িয়ে বাঘের মানুষকে আক্রমন করার ঘটনা বিরল।

৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: ভেবেছিলাম আপনার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। মজার লেখা ভাল লাগল- শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৫

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: দারুণ একটি মজার লেখা। খুব ভালো লাগলো, শুভেচ্ছা জানবেন।

৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আপনাকে অনুরোধ করবো- নিয়মিত পোষ্ট দিবেন।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০০

সাফকাত আজিজ বলেছেন: @রাজীব নুর দাদা আপনাদের মত এত সিনিয়র লেখকদের যখন অনুপ্রেরণা পাই তখন নিজের কাছে সত্যি লজ্জা লাগে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.