নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ ও এইচ এম কামারুজ্জামানকে যখন হত্যা করার আয়োজন চলছিল ঠিক তখনই ঢাকা সেনানিবাসে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ- কর্নেল শাফায়াত জামিল ক্যু করে বসেন।
জেলখানায় ৫ জন নেতাকে হত্যা করার জন্য গিয়েছিল ঘাতকরা। ৪ জন শহীদ হন। একজন বিস্ময়করভাবে বেঁচে যান। তিনি হচ্ছেন আবদুস সামাদ আজাদ।
অনেকের ধারণা খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে এই ক্যু করেন। এটা কোনভাবেই সত্য না।
বরং এসব ক্যু-পাল্টা ক্যু ছিল জেনারেলদের ক্ষমতালোভের কারণে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক ছিলেন খালেদ মোশাররফের দুঃসম্পর্কের ভাগ্নে। ফারুক এর আগেও সেনাবাহিনীতে ক্যু করার চেষ্টা করেছিলেন।
মেজর নাসির উদ্দিন তাঁর বইতে ( গণতন্ত্রের বিপন্নধারায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী) লিখেছেন,
১৯৭৫ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ের কথা। গোটা ছয়েক ট্যাংক গোলাসহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে যাবে জীবন্ত গোলা বর্ষণের মহড়ায়। মেজর ফারুকের দায়িত্ব এই ট্যাংকগুলোকে গোলাসহ কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষমান বিশেষ ট্রেনে তুলে দেয়া। তারপর এই ট্রেনে চেপে চট্টগ্রাম পৌঁছে আবার সেগুলোকে নামিয়ে হাটহাজারী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।
রাত তখন প্রায় বারোটা। কলিং বেলের শব্দে উঠে দড়জা খুলে ফারুককে দেখলাম দোরগোড়ায়। অনেকটা বেসামাল।
ভেতরে এসে বসলেন। নিজেই ফ্রিজ খুলে বোতলের ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিলেন গলায়। তারপর যা বললেন, তা শুনে আমিও এক গ্লাসের মতো ঠাণ্ডা পানি খেয়ে নিজেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম। ফারুক বলেই চললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ট্যাংক ট্রেনে তুলবো না। আমি আজ রাতেই অভ্যুত্থান ঘটাতে যাচ্ছি। তুমি যদি রাজী থাকো তবে আসো এখনই পরিকল্পনা সেরে ফেলি। তারপর পরবর্তী দুঘন্টায় অন্যান্য
সবাইকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যাবে।
আমি বললাম, আমিতো এখন লান্সারের কেউ নই। আমাকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা কেনো? ফারুক বললো, বিষয়টি খুবই সোজা। লান্সারে চারশোর মতো মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক
আছে। তারা তোমার আদেশ মেনে নেবে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই।
আমি বললাম, এ রকম মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে'চেইন অব কমাণ্ড' ছাড়া সৈনিকরা আমার কথা এখন মেনে নেবে না। তাছাড়া মানসিকভাবে আমি এই বিষয়টির সঙ্গে একাত্ম নই। আর তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আপনি বহুবার এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। আমি প্রতিবারই তা সযত্নে পরিহার করার জন্য একইভাবে সচেষ্ট থেকেছি। মুক্তিযুদ্ধে কন্দী অবস্থায় আমি বহু লাঞ্ছনা সয়েছি। অত্যাচারিত হয়েছি। আমি সে রকম কোনো দুঃস্বপ্নে আর ফিরে যেতে চাই না।
মধ্যরাতে ব্রিগেডিয়ার খালেদের ঘুম ভাঙ্গালাম। আমি ফোনে তাকে জানালাম সব। তিনি ফারুকের সঙ্গে কথা বললেন পাঁচ মিনিট ধরে। মনে হলো ফারুক নিবৃত্ত হয়েছে। তারপর ফারুক ফোনের রিসিভার আমাকে ধরিয়ে দিলেন। খালেদ তখন উত্তেজিত। তিনি বললেন, হি ইজ ক্রেজি। হি ইজ এ মেন্টাল পেসেন্ট। নাও লিসেন টু মি কেয়ারফুল্লি। গো টু দা রেইল স্টেশন। বি উইথ হিম। মেইক সিওর ট্যাংকস আর লোডেড। ইফ ইউ সি এনিথিং আদারওয়াইজ, লেট মি নো। আই উইল সেন্ড মিলিটারী পুলিশ টু সর্ট হিম আউট।
সারারাত ফারুকের সাথে কমলাপুর রেলস্টেশনে কাটালাম। ভোরের প্রথম আলোতে ট্যাংক ট্রেনে তোলার কাজ শুরু হলো। ট্রেন ছাড়লো সকাল দশটায়। বাসায় ফিরে এসে সিজিএস'কে জানালাম, ট্যাংকসহ ট্রেন চলে গেছে। (পৃষ্ঠা- ৫৮/৫৯)
অথচ ঐ সময় ফারুকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের নিরাপদে দেশ ছাড়তে সহায়তা করেন খালেদ মোশাররফ আর জেনারেল ওসমানী। সবাই ব্যাঙ্ককে চলে যেতে রাজি হয় কিন্তু একজন যাননি। সেই খুনী হচ্ছে আর্টিলারির অফিসার মেজর মহিউদ্দিন যে কিনা ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবন লক্ষ্য করে ফায়ার করেছিল। এতে বেশ কয়েকজন বেসামরিক মানুষ মারা যায়।
অবশ্য কর্নেল শাফায়াত জামিল লিখেছেন, কৌশলগত কারণে খুনী মহিউদ্দিনকে দেশে রেখে যাওয়া হয়।
আর সেই মহিউদ্দিনই ৭ নভেম্বর সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে খালেদ মোশাররফের পতন ঘটান।
জেলখানা হত্যাকান্ডের কথা নাকি জানতেন না খালেদ মোশাররফ- শাফায়াত জামিল। জেনারেল ওসমানী- জেনারেল খলিলুর রহমান নাকি এটা তাদের কাছে গোপন করেছেন।
জেনারেল খলিলুর রহমান ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সময় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
কর্নেল শাফায়াত জামিল তাঁর বইতে( একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর) লিখেছেন,
৩ নভেম্বর ভোর থেকে শুরু হয় ১৫ আগস্টের হত্যাকারী বিদ্রোহী অফিসার তথা ক্ষমতা দখলকারীদের সঙ্গে টেলিফোনে আমাদের বাক-যুদ্ধ। আমাদের দিকে খালেদ মোশাররফ এবং ওদিকে পর্যায়ক্রমে রশিদ, জেনারেল ওসমানী, সর্বোপরি, খন্দকার মোশতাক। দুপুরের পর আমাদের পক্ষ থেকে একটি negotiation team পাঠানো হয় বঙ্গভবনে ৩/৪ জন অফিসারের সমন্বয়ে। খুনিরা আমাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তারা সংঘাতের পথ বেছে নেয়। প্রথমে তারা গরম গরম কথা বললেও সারা দিন হেলিকপ্টার ও মিগের মহড়া দেখে ক্রমশ বিচলিত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার দিকে প্রেসিডেন্ট
মোশতাক কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ওসমানী বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশত্যাগের জন্য সেফ প্যাসেজের অঙ্গীকার দাবি করলেন। সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ, রক্তক্ষয় ও বেসামরিক নাগরিকের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের দেশত্যাগের সেফ প্যাসেজ দিতে রাজি হলাম আমরা। সে-সময় এটা আমাদের মনে ছিল যে, বিদেশে চলে গেলেও প্রয়োজনে পরে ইন্টারপোলের সাহায্যে তাদের ধরে আনা যাবে। ঠিক হলো, ফারুক-রশিদ গংকে ব্যাঙ্কক পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে বিমানবাহিনী প্রধান এম.জি. তাওয়াব।
ক্ষমতা দখলকারীদের সঙ্গে আমাদের টেলিফোনে যখন বাকযুদ্ধ চলছিল, তখন ঘুণাক্ষরেও আমরা জানতে পারি নি জেলে চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের কথা। অথচ আগের রাতেই সংঘটিত হয়েছিল ঐ বর্বর হত্যাকাণ্ড। ওসমানী ও খলিলুর রহমান ঐ ঘটনার কথা তখন জানতেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানান নি। জানালে এভাবে ১৫ আগস্টের খুনিদের নিরাপদে চলে যেতে দেয়া হতো না। আমাদের নেগেসিয়েশন টিমকেও এ বিষয়ে কেউ কিছু আভাস দেয় নি।
৩ নভেম্বর রাত এগারোটায় খুনিচক্র ব্যাঙ্কক অভিমুখে রওনা হয়।
ইতিমধ্যে দুপুর দুটোর দিকে জিয়া তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি আমাকে একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠান; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য সেটা হতো কিছুটা বিব্রতকর। জিয়ার সঙ্গে আমার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। একাত্তরে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি আমরা। সব মিলিয়ে আমি একটা বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম বলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই নি। তবে জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ভার আমার ওপর ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নিজেদের ক্ষমতা সংহত করার পর জিয়াকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি করে পাঠিয়ে দেবো।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৫
ডার্ক ম্যান বলেছেন: ভাল বলেছেন
২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: আার আমরা ইতিহাস কি ভাবে নগ্ন করি সুন্দর দেশটাকে হিংসার আগুনে পুড়াই
গায়ের জোড় এতটাই বেশি হলে যা তাই হয় এটার জন্য দায় কাকে করা যায়
ভাবতেই ঘ্রানা লাগে---------------------
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৭
ডার্ক ম্যান বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
কোনো বই থেকে তুলে দিছেন?
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮
ডার্ক ম্যান বলেছেন: কোন বই থেকে কতটুকু তুলে দিয়েছি সেটা তো পোস্টেই উল্লেখ আছে
৪| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:১০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
প্রথম আলোতে বিশ্লেষক মহিউদ্দিন সাহেব দায়সারা গোছের একটি লেখা লিখেছেন।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬
ডার্ক ম্যান বলেছেন: দেখেছি। আগে বঙ্গবন্ধু লিখতেন এখন লিখেন না
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বড় অদ্ভুত একটা দেশ।
এখানে ক্ষমতার কামড়াকামড়িটা বড় নগ্ন।
দেখতে খুবই খারাপ লাগে।