আমার আমি

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬

ব্লগে লেখার শুরুর সময়ে নিজেকে জানানো কর্তব্য মনে করি। আমি কেউকেটা কেউ নই যে আমাকে সবার চিনতে হবে। তবু নতুন কোন জায়গায় খাঁপ খাইয়ে নিতে গেলে চেনাজানার এই পর্বটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আর নিজেকে নিয়ে লেখার জন্যে প্রোফাইলের ঐ দুইটি বাক্স খুবই ছোট। সেই তাগিদ থেকেই এই লেখার মাধ্যমে পরিচিতির হাত বাড়িয়ে দেয়া।



শ্রাবনের কোন এক বর্ষনমুখর সন্ধ্যায় ছোট্ট এক মফস্বলে আমার জন্ম। নামকরনের অনুপ্রেরণা বোধ করি সেই মাসটির নাম থেকেই পাওয়া। ছোট থেকে বড় হওয়ার গল্পে ঘরের বাইরের জগতটা অনেক দুরেই ছিল। আমার ঘরই ছিল আমার পৃথিবী। যতদূর মনে করতে পারি খেলাধুলা করার প্রতি আগ্রহ আমার কোন কালেই ছিলনা। পরিবারে সঙ্গীতের চর্চা বেশ জোরেশোরেই চলতে দেখেছি। বাবা হাওয়াইয়ান গীটার বাজাতেন। মা গান গাইতেন। বাবার গীটারের সুর ঐ ছোট্ট মাথায় আঘাত করেছিল খুব অল্প বয়সেই। মা সন্ধ্যায় গান গাইতে বসতেন। মার পাশে গিয়ে বসে যেতাম ছোট্ট আমি। মার সাথে সাথে গাইতাম, " হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে " আর অযথা গানের খাতার পাতা উল্টাতাম।



আস্তে আস্তে নিজের মতো করে বড় হতে থাকি। স্কুলে ভর্তি হই। পাশাপাশি গান ও গাই। একদিন হঠাৎ আবিস্কার করি একগাদা বইয়ের চাপে পড়ে গান গলা থেকে হারিয়ে গেছে। হারমোনিয়াম চড়েছে আলমারির তাকে।



আমার বাবামায়ের আমাকে বইয়ের পোকা বানানোর চেষ্টা বরাবরই ব্যর্থ হয়। কোচিং পালিয়ে মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে না পারলেও বাথরুমে লুকিয়ে ভিডিও গেমস ঠিকই খেলতাম। পড়াশোনার জন্যে মার খাওয়া আমার প্রতিদিনকার ঘুমের ওষুধ ছিল। পড়া আমার কাছে রীতিমতো বাঘ মনে হলেও পরীক্ষাভীতি ছিলনা কখনোই । সবগুলো পরীক্ষাই বেশ ভালো ভাবে উতরে যাই।



এভাবেই ধীরে ধীরে শৈশব কৈশোরের গণ্ডি পার হই। ইন্টারমেডিয়েট পড়ার সময় ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী থেকে আনা ৩ টি বই পড়ার জন্যে বরাদ্দ থাকতো সপ্তাহে তিনদিন আর বাকি দিনগুলো পড়ার বইয়ের জন্যে। দেখা যেতো বাকি চারদিন আমি ঘুমিয়ে আর নতুন বই পাওয়ার অপেক্ষায় কাটাতাম। শেষ পর্যন্ত মোটামোটি মানের রেজাল্ট নিয়ে ইন্টার পাশ করে মফস্বলে আমার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটাই।



আপাতত ঢাকার আশেপাশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আলস্যের স্বভাবটা এখনো লালন করছি যত্ন করে। তাই তথ্য উপাত্ত কিছু মাথায় থাকেনা। মাঝেমাঝে হাবিজাবি কিছু কল্পনা করি আর খাতায় লিখে ফেলি। ব্লগে লেখার ইচ্ছাটা সেখান থেকেই আসা। আর কল্পনা করে আবোলতাবোল লিখতেই ভালোবাসি। কারণ জানার সীমানা এই মহাবিশ্ব, কল্পনার কোন গন্ডি নেই।



জীবনে আরও অনেক ঘটনাই সমানতালে এগিয়ে গেছে। সেসব আমার লেখক পরিচয়ের জন্যে অগুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো আর নাই বা বলি। থাকনা..।

২ টি +০/-০