![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
উম্মে কুলসুমের মন খুব আজ উৎফুল্ল কারন আজ তাঁর ষষ্ঠ শ্রেণীর প্রথম ক্লাস।
স্কুলে ক্লাসে তাদের ক্লাস টিচার বলল সপ্তাহে একদিন (বৃহস্পতি বার) তারা ড্রেস বাদে অর্থাৎ অন্য জামা কাপড় পরে স্কুলে আসতে পারবে। এতে সকলেই খুব খুশি হল। কুলসুমদের ক্লাসে ফাতেমা নামে একটি মেয়ে পরে। ও অনেক অহংকারী ওর বাবা অনেক বড় চাকুরি করে তাই ক্লাসের তেমন কেউ ওর সাথে মিশে না। ফাতেমা দাড়িয়ে মিস কে বলল মিস আমি বুধবারেও সাধারণ কাপড় পড়তে চাই। মিস কিছুক্ষন চিন্তা করে বললেন ঠিক আছে তবে এটা শুধু ফাতেমার জন্য প্রযোজ্য।
এমনি ভাবে ক্লাসে সবাই বৃহস্পতি বারে স্কুল ড্রেস বাদে অন্য ড্রেস পরে আসতে থাকল। দেখা গেল ফাতেমা দুইদিন অন্য ড্রেস পরলেও কোন সপ্তাহেই এমন কি কোন দিনেও একই ড্রেস পরে না। অন্যদিকে ক্লাসের অন্য মেয়েরা এক বা দুই সেঁটের বেশি ড্রেস নাথাকাতে দুই এক সপ্তাহ পর পরই একই ড্রেস পরেই স্কুলে আসছে। এতে অবশ্য তাদের কোন মাথা ব্যাথা নাই তারা স্কুল ড্রেসের পরিবর্তে অন্য ড্রেস পড়তে পারছে এতেই খুব খুশি।
ফাতেমা ব্যাপারটা প্রথম সকলের নজরে আনল। সে কুলসুম সহ অন্যান্যদের ডেকে বলল আমার বাবা অনেক বড় চাকুরি করে এবং আমাকে অনেক আদর করে। বাবা প্রায় প্রতিদিনই বেতন পায় এবং আমার জন্য নতুন জামা কিনে দেয়। দেখনা তোমরা একই জামা কিছুদিন পরপর পরে আসো কিন্তু আমি এক জামা এক দিনের বেশি পরি না। কুলসুম জিজ্ঞেস করল তোমার বাবা কিসে চাকুরি করে? ফাতেমা বলল আমার আব্বু টি এন ও। অনেক বড় চাকুরি। তোমার বাবা কি করে? কুলসুম বলল বাবা ব্যাংক মানেজার। ফাতেমা বলল তাহলে তো তোমার বাবা ও তোমাকে অনেক জামা কিনে দিতে পারে। তোমার বাবা আসলে তোমাকে আমার বাবা আমাকে যেমন ভালোবাসে তেমন ভালো বাসে না। কুলসুম কিছু না বলে আলচনা স্থল ত্যাগ করল।
কিছুটা মনখারাপ করেই আজ সে বাড়ি ফিরল। রাতে বাবা ফিরার পরে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা বাবা টি এন ও রা কি দৈনিক বেতন পায়? আর তুমি কেন টি এন ও হলে না? বাবা হেসে বলল নারে পাগলী টি এন ও আর আমি প্রায় সমান বেতনই পাই। আর টি এন ও হতে হলে আরেকটা পরীক্ষা দেয়া লাগে এবং একটা নিদ্রিস্ট বয়স এর মধ্যেই তা দিতে হয়। আর যে যেই চাকুরি ই করুক না কেন মাসে এক বাড়েই বেতন পায়। তবে কেউ যদি ঘুষ খায় তা অন্য কথা। আমি তো মা এই হারাম ঘুষ খাই না তাই মাসে একবারেই বেতন পাই। বলেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন। কুলসুম বলল এমনি বাবা।
পরদিন ফাতেমা টিফিন এর সময় আবার একই ভাবে তাদের বৃত্ত বৈভব নিয়ে আলাপ করতেছিল। তাঁর মায়ের শাড়ি গহনা, নিজের জুতা জামা এগুলো নিয়ে অনেক অহংকার করে কথা বলতেছিল। এমন সময় কুলসুম বলল আর অহংকার করিস না, তোর আর আমার বাবা প্রায় সমান বেতন ই পায়। আর তোর বাবা আমার বাবার মতই মাসে একবার বেতন পায়। আর যে বললি প্রতিদিন বেতন পায় ওইটা আসলে ঘুষ। তুই ঘুষ খোরের মেয়ে। ঘুষের টাকাতে কেনা জামা নিয়ে বড়াই করতে তোর লজ্জা করে না!! এই কথা শুনে ফাতেমা কান্না কাটি শুরু করল। পরে মিস এসে ফাতেমা কে রিক্সা করে বাড়ি পাঠীয়ে দিল।
কুলসুমের বাবা অফিসে এসে বসতে বসতেই তাঁর টেলিফোন বেজে উঠলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একজন বলল ম্যানেজার সাহেব?
(সালাম বিনিমএর পর)
কুলসুমের বাবাঃ হ্যা বলুন।
অপর প্রান্তঃ আমি টি এন ও "ক" বলছিলাম।
কুলসুমের বাবাঃ ওহ কেমন আছেন টি এন ও সাহেব?
টি এন ওঃ আছি ভালই। ভাই আপনাকে একটা দাওয়াত দিতে ফোন করেছি। আর তা হল আজ রাতে আমার বাসাতে আপনার মেয়ে কুলসুম কে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করবেন।
কুলসুমের বাবাঃ কি ব্যাপারে হঠাৎ দাওয়াত দিচ্ছেন যে।
টি এন ওঃ আরে আসেন বাসাতে আগে আপনার ভাবি সহ একটু আলাপ ছিল। ও ভাবিকেও নিয়ে আসলে ভালো হয়।
কুলসুমের বাবাঃ আচ্ছা আমি কুলসুম কে নিয়ে আসব। আপনার ভাবি আবার অপরিচিত কারো বাসা অর্থাৎ অনাত্মীয় কারো বাসাতে যান না।
এর পর বিদায় নিয়ে দু জনেই নিজেদের কাজে মন দিল।
বাসাতে ফিরার পথে কুলসুমের বাবার মনে হল দুদিন আগে কুলসুম টি এন ও দের বেতন নিয়ে কি যেন বলছিল আজ আবার উনি কুলসুম কে নিয়ে ওনার বাসাতে খেতে বললেন। কোন সমস্যা করল না তো মেয়েটা?
টি এন ও সাহেবের বাসাতে ঢুকতেই ফাতেমা কুলসুম কে দেখে ড্রয়িং রুম থেকে চলে গেল। তেমন কিছুই না বলে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে করতে ম্যানেজার সাহেব এবং টি এন ও সাহেব তাদের খাওয়া দাওয়া সারলেন। এর পর টি এন ও সাহেব কুলসুমকে কোলে নিয়ে ম্যানেজার সাহেব কে নিয়ে ফাতেমার রুমে গেলেন। ফাতেমা সেখানে মুখ হাড়ি বানিয়ে চিন্তা করতেছিল এই মেয়ে বাবাকে কত খারাপ একটা গালি দিয়েছে বাবা আবার ওর বাবাকে সহ দাওয়াত করেছে। এখন আবার এই মেয়ে কে কোলে ও নিচ্ছে। টি এন ও সাহেব কুলসুম কে কোলে নিয়েই ফাতেমার আম্মাকেও ডাকল। উনি আসার পরে টি এন ও সাহেব বলল মা তুই যে আমাকে ঘুষখোর বলেছিলি না আমি আসলেই ঘুষখোর। আর আমি কি জন্য ঘুষ খাই জানিস মা, আমি ঘুষ খাই আমার মেয়ের একেক সপ্তাহে একেক রকম জামার আবদার মিটাতে, আমি ঘুষ খাই তোর কাকির প্রতি মাসে নতুন শাড়ি কিনতে, আমি ঘুষ খাই তোর কাকির আর তোর বান্ধবির প্রতি দু মাস অন্তর নতুন নতুন ডিজাইনের গহনা গড়ে দিতে।
তোর বাবা বড়ই ভাগ্যবান যে তোর মত মেয়ে আর তোর মায়ের মত বউ পেয়েছে। যেই মেয়ে দু সেট কাপড়েই সন্তুষ্ট। যেই কারনে তোর বাবার ঘুষ খাওয়া লাগে না। তবে আজ তোকে আমি কথা দিচ্ছি এদের আর কোন চাহিদা পুরনের জন্য আমি ঘুষ খাব না।
ম্যানেজার সাহেব কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তিনি বলে উঠলেন ভাই বাচ্চা মেয়ে হয়ত খেলারছলে বলেছিল আপনারা কিছু মনে করবেন না। টি এন ও সাহেব ম্যানেজার সাহেব কে থামিয়ে দিয়ে বললেন "নাহ ম্যানেজার সাহেব আমি কিছু মনে করি নি, এমন একটা কথা যে আমার শুনার বড়ই দরকার ছিল। আপনার মেয়ে আমার মায়ের মত আমাকে শুধরে দিল।'
এর পর অন্যান্য কথার পরে ম্যানেজার সাহেব কন্যা কুলসুমকে নিয়ে বিদায় নিয়ে চলে এলেন নিজের বাসাতে।
যারা তাদের বাবা/ স্বামী কে এমন দৈনিক বেতন তুলতে বাধ্য করছেন তারা একটু ভেবে দেখুন না আপনাদের একটু হিসেব করে চলাই হয়ত একজন ব্যাক্তিকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে পারে। তবে কেউ যদি নিজে ইচ্ছা থেকেই দুর্নীতি করে তাঁর জন্য এই সুত্র প্রযোজ্য নহে।
বিদ্রঃ এটা সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা এবং উম্মে কুলসুম আমার বড় বোন।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মে, ২০১৫ ভোর ৬:৫৯
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: আসলে এই ঘটনা টি ২৬-২৭ বছর পূর্বের তখন বেশীরভাগ বাঙ্গালীর ই লজ্জা ছিল। আর ঘুষ, সুদ, মিথ্যা বলা এগুলো খুব লজ্জা জনক কাজ ছিল। আজ তো এমন এক সময় এসেছে যখন মিথ্যা বলা বা অভিনয় করে চলাটাকে ক্রেডিট মনে করা হয়। ঘুষ খাওয়া টাকে চেয়ারের অলঙ্কার ভাবা হয়। তাঁর পরেও আমার মনে হইল এই ঘটনা হইতে হয়ত কেউ কিছু শিখতে পারে বা নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে তাই দিলাম। জানি না আসলে কত জন তোর মত করে এই ঘটনাটিকে শিক্ষণীয় মনে করবে।