![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
গুরুর খুব মন খারাপ কারন তাঁর মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁর মা সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর থেকেই কঠিন এক রোগে আক্রান্ত। এই জন্য সে মাঠের এক কোনে বসে একান্ত মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রাথনা করতেছিল যেন তিনি তাঁর মাকে এবারের মত রেখে যান। কিন্তু সকল প্রার্থনার অবসান ঘটিয়ে তিনি অবশেষে চলে গেলেন পরপারে। তাঁর মায়ের সৎকারের পর সকলে মিলে তাঁদের সংসারের এখন কি হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে বসল। অনেকেই বাবাকে আবার বিয়ে করানো বাদে আর কোন সমাধান খুঁজে পেল না। এই সকল আলোচনা গুরুর ভালো লাগল না তাই সে উঠে চলে গেল মায়ের সমাধির কাছে। গুরু আপন মনে মায়ের সমাধি দেখছিল আর অনাগত দিন এই মাকে বাদে কীভাবে কাটাবে তা নিয়ে নানান চিন্তাতে শঙ্কিত হচ্ছিল। দেড় মাসের যেতে না যেতেই গুরুর বাবা এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করে তাঁর আবার গুরুর বয়সী একটি ছেলেও রয়েছে। এই ব্যাপারটি গুরুর ভালো না লাগলেও সে একজন খেলার সাথি পেয়েছে এবং একই সাথে মাঠের গরু ছাগল চড়ানোর একজন সাথি ও পেল এই ভেবে সে খুশী হল। কারন এই গরু ছাগল গুলোকে আদব কায়দা শিখানো এবং বশে আনা তাঁর একার পক্ষে যে অনেক কষ্টের।
পরদিন সকালে গুরু তাঁর এই নতুন ভাইকে বলল চল আমরা পশু গুলোকে চড়াতে নিয়ে যাই ওখানে আমরা খেলবো সারাদিন অনেক মজা হবে। বিধিবাম নতুন মা এই কথা শুনতেই বাজখাই গলাতে বলে উঠলেন আমার ছেলে কি রাখাল ও যাবে না তোমার সাথে ওর অনেক লেখাপড়া করতে হবে, তাছাড়া বিকালে না ঘুমালে ওর শরীর ভেঙ্গে যাবে। গুরু প্রমোদ গুনল এবং পশুগুলো নিয়ে একাই মাঠে গেল এবং এদের অনেক আদব কায়দা শিখাতে লাগল। সন্ধ্যাবেলা পরিশ্রান্ত দেহে গুরু যখন ফিরে আসল শুনল তাঁর নতুন মা বাবার সাথে কি নিয়ে যেন খুব চড়া গলাতে কথা বলছে এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হল যেই বাবার রাগের ভয়ে মা সারাদিন কুঁকড়ে থাকতো সেই বাবা আজ কিসের ভয়ে যেন গুরুর মায়ের মত কুঁকড়ে আছে। গুরু ঘরে এসে জানতে পারল ঘরে খাবার পানি বাড়ন্ত এবং এই পানি কেন গুরুর বাবা নিয়ে আসে নাই তাই গুরুর নতুন মায়ের এই রাগ। সাধারণত গুরুর মা ই পানি আনত আর গুরুর মা অসুস্থ থাকলে গুরুর বাবা এই কাজ করত। গুরু কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছিল না যে বাবা কে এত শাসানোর বা এত নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নতুন মা কোথা হতে পেল? পরিস্থিতি সামাল দিতে গুরু নিজেই পানি আনতে গেল।
এই সময় গুরুর ভাই এসে তার মাকে বলল মা বিকালে ঘুম হতে উঠে কিছু খাই নি খেতে দাও, গুরুর বাবা বললেন গুরু আসুক একত্রে খাও। সাথে সাথেই গুরুর মা বললেন না এখনই খেতে বস ঐ ছেলে পরে খাবে। তাঁদের খাওয়ার শেষ পর্যায়ে গুরু এসে বসল এবং তাঁদের খেয়ে যা বাকি থাকল তাই দিয়ে খেয়ে উদর পূর্তির একটি ভাব নিল কারন তা না হলে যে বাবা মনে কষ্ট পেতে পারে। গুরুর নতুন মা তার ছেলে কে খাওয়ার পড়ে দৈ দিয়েছিলেন তাই গুরু তাঁর নতুন মাকে বলল মা আমাকেও একটু দৈ দেও না। নতুন মা মুখ ভেংচি কেটে বললেন রাখালের আবার দৈ খাবার শখ এসব দৈ খেয়ে তুই কি করবি এগুলো আমার ছেলে খাবে ও অনেক পড়াশুনা করে, ওকে অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় তাই ওর এই সকল বাড়তি পুষ্টির দরকার আছে। গুরু নতুন মায়ের কথাতে কষ্ট পেলেও সামনে কিছু না বলে ঘরের বারান্দার এক কোনে বসে ভাবতে লাগল সে যদি রাখাল না হত তা হলে এই পশুগুলো কে চড়াত আর ভাইয়ের পুষ্টির উপাদান কোথা হতে আসত।
সম্প্রতি সরকার একটি নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের পথে আছে এই পে-স্কেল অনুসারে একজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক পদ হতে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলে তাঁর বেতন স্কেল ২৯০০০ টাকা বা গ্রেড-৩ হবে। পরবর্তীতে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার মাধ্যমে যথাক্রমে তা ২য় এবং ১ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান সচিব কমিটি যে পে স্কেলের সুপারিশ করেছে তাতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-১ উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এটা অবশ্যই নিন্দা জনক।
অধ্যাপকগণ না হয় এই টাকাতে মানিয়ে নিবেন কিন্তু প্রাথমিক, মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণের কি হবে? একজন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষক বর্তমানে যথাক্রমে ৫২০০, ৮০০০ এবং ১১০০০ টাকা বেতনে তাঁদের চাকুরী শুরু করেন এবং টাইম স্কেল পেলে তাঁদের বেতন যথাক্রমে ৬৪০০, ১১০০০ এবং ১৫০০০ টাকাতে উন্নীত হয় (মূল বেতন)। আর বর্তমান স্কেল অনুসারে এঁদের বেতন যথাক্রমে ১০,৫০০, ১৭০০০ এবং ২৫০০০ টাকা হবে। কিন্তু টাইম স্কেল বাদ দেয়াতে এই বেতন আর বাড়ার কথা ছিল না। যদিও শিক্ষকগণের আন্দোলনের কারনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বৈষম্য দূর করেছেন এজন্য উনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু লজ্জা জনক ব্যাপার হল এমন একটি বৈষম্য সৃষ্টি এবং সেই বৈষম্য দূরীকরণে সম্মানিত শিক্ষকগণের আবার আন্দলনে যোগ দিতে হল।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে পদোন্নতি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হলেও এই সকল প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি খুবই ধীর প্রক্রিয়া। তাহলে এই শিক্ষকগণ কি এই বেতনেই সন্তুষ্ট থাকবেন? থাকতে তো তাঁদের হবেই কারন তারা যে মহৎ পেশাতে এসেছেন।
এই শিক্ষকের ছেলে অর্থ ভাবে এইচ এস সি এর পরে ছোট কোন হিসেবে চাকুরী নিবেন এবং সেই অফিসেই বড় অফিসার পদে এই শিক্ষকের কোন ছাত্র থাকবেন। শিক্ষক ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে এই অফিসার স্যার কে শ্রদ্ধা করে তাঁর ছেলেকে দিয়ে চা আনিয়ে স্যারের সাথে খাবেন আর স্যার কে বলবেন স্যার আপনি আমাদের মত এত গরু-ছাগল কে লেখাপড়া শিখীয়ে এত বড় পদে চাকুরী পাবার যোগ্যতা গড়ে দিলেন আর আপনার ছেলেটা এই ছোট চাকুরী নিল? শিক্ষক হয়ত উদাস নয়নে বলবে ছোট ছেলে টা পড়ালেখাতে ভালো তো তাই ওকে পড়াইতেছি। এই ছেলেটা চাকরিতে না ঢুকলে যে ওর ভাইটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ দিতে পারতাম নারে বাবা। এই কথা বলতে বলতে শিক্ষকের দু-ফোঁটা অশ্রু চায়ের কাপে গড়িয়ে পরা দেখে ছাত্র বলে উঠবে একি স্যার আপনি কাঁদছেন? শিক্ষক চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিবে না রে বাবা চা খুব গরম তো তাই চোখে জল এসে গেল। বলেই শিক্ষক চা শেষ না করেই উঠে যাবেন কারন তিনি যে তাঁর ছাত্র কে শিখিয়েছিলেন ‘সদা সত্য কথা বলিবে’ সেই ছাত্রকেই তিনি এখন একটি মিথ্যা বললেন। এই মিথ্যা বলার যন্ত্রণা শিক্ষক কে আর এক মুহূর্ত ও এখানে বসতে দিবে না যদিও তাঁর ছাত্র তাঁকে আবার আসার অনুরোধ করবে।
এই শিক্ষকগণের মনের কষ্ট যে তাঁর ছাত্ররা বড় অফিসার হইতে হইতে বেমালুম ভুলে যায় এর অকাট্য প্রমাণ হল এই বেতন কাঠামো। আমার প্রাইমারীর এক শিক্ষক আমাদের বলতেন “শিক্ষকগণ হচ্ছে সকল সরকারের সৎ পুত্রের মত। এরাই সবচেয়ে বেশী অবদান রাখছে সংসারে কিন্তু খাওয়ার সময় এদের বাসী-এঁটো বাদে কিছু জোটে না”। আসলেই সত্যি কথা কারন বহুদিন যাবত শুনলাম শিক্ষকগণের জন্য আলাদা বেতন স্কেল করবে সরকার কিন্তু শেষ বেলাতে এসে এমন এক স্কেল করল যেন প্রথম গ্রেডে এই সকল ছাপোষা শিক্ষকগণ কখনোই পৌছাতে না পারে। যারা তাঁদের সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণের প্রতিই এই আচরণ করল তাঁদের কি তাঁর ছোট বেলার সেই মফাজ্জল মাস্টারের (প্রতীকী নাম) কথা মাথাতে থাকার কথা?
যেই মফাজ্জল মাস্টারেরা তাঁর মধ্যের পশুত্বকে সর্বপ্রথম দমন করা শুরু করেছিলেন এবং একদা সেই গুরুর মত দুধ টুকুন আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপি ব্যাকটেরিয়া দের নিকট পাঠিয়েছিলেন। এই ব্যাকটেরিয়া এর বদৌলতে এই দুধ যখন দৈ হল তখন সেই দৈ খাবার যোগ্যতা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণই যখন রাখেন না সেখানে মফাজ্জল মাল্টার দের যে গুরুর মত তা খাওয়ার আবদার করাও পাপ।
একটি জাতির মেরু দণ্ড গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক সমাজ আর এই সমাজই যদি তৃতীয় গ্রেডের উপরের গ্রেডে যাওয়ার যোগ্যতা না রাখেন তাহলে সেই মেরু দণ্ড কীভাবে বাকি দুই গ্রেডের ভার বহন করবে? কারন ঐ দুই শ্রেণীর মানুষ যে শিক্ষকগনের কল্পনার ও বাইরে হবেন। আর প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক পর্যায়ে যে বেতন দেয়া হবে তা দিয়ে যদি একজন শিক্ষকের সংসার না চলে তাহলে তিনি কি করবেন? তিনি তো অন্যদের মত টেবিলের নিচে দিয়ে কিছু নিয়ে সিস্টেমের দোষ দিয়ে এই টাকাকে হালাল বলে চালাতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে মেরু দণ্ডের মূল হাড় তৈরির সময় যে তা কখনোই একই আকৃতির হবে না সেই খেয়াল কি গ্রেড-১ বা গ্রেড-২ বেতন ভুক্ত সম্মানিত ব্যক্তি বর্গের আছে?
এই শিক্ষক সমাজের মঙ্গল মানে যে আপনারই মঙ্গল কারন আপনার সন্তান ও যে এমনি কোন শিক্ষকের হাতেই মেরু দণ্ডের ডিস্ক এর আকার লাভ করবে। আপনি হয়ত চিন্তা করতে পারেন আপনার সন্তান তো ইংলিশ মিডিয়াম বা নামকরা বেসরকারি স্কুল এ পড়াশুনা করে ওখানে তো অনেক ভালো শিক্ষক তাতে আমার ছেলে সঠিক আকারের ডিস্ক ই হবে। আপনি ঠিকই চিন্তা করছেন কিন্তু এই সঠিক আকৃতির ডিস্ক ই যে অনেকগুলো বেঠিক আকৃতির ডিস্কের মাঝে অচল সিকি হয়ে দাঁড়াবে! ফলশ্রুতিতে দেহ কাঠামো হবে ভারসাম্য হীন। আর ভারসাম্য হীন কাঠামোতে যত সুন্দর দেহ অবয়ব দেন না কেন তা ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
অবিলম্বে শিক্ষকগণের জন্য আলাদা বেতন স্কেল করা সহ মেধাবী এবং শিক্ষাদানের যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না আনলে দেহ রুপি দেশের পতন যে অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে। তাই শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ শিক্ষকগণের সাথে এই রূপ বিমাতা সুলভ আচরণ নিবৃত করন পূর্বক জাতির মেরুদণ্ডকে সঠিক ভাবে গঠন করার উদ্যোগ নিন। আর এটা যত দ্রুত করবেন তত দ্রুত আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একদল মেধাবী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক পাব একই সাথে বর্তমানে যে সকল শিক্ষকগণ কর্মরত আছেন তাঁরাও নির্ভাবনাতে জ্ঞান আহরণ এবং বিতরণ করে যেতে পারবেন। যার ফলে আমরা পাব নৈতিকতা সম্পন্ন এক ঝাঁক মানুষ যারা জাতীর মেরুদণ্ডকে অনমনীয় এবং শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে। একটি সত্যিকারের সুজলা, সুফলা, শশ্য শ্যামলা বাংলাদেশ গড়তে এমন ঝাঁক তরুণ যে আজ অপরিহার্য ভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।
পুনশ্চঃ আমার এই লেখাতে আমি সকল শিক্ষকগণকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ধরে বা আদর্শ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করেছি তাই বাস্তব শিক্ষকদের উদাহরণ টেনে এখানে জটিলতা না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করব। সিস্টেম ঠিক থাকলে এই বাস্তব শিক্ষক নামক কোন শব্দ বংলা শব্দভাণ্ডারেই থাকত না এখন যারা আছে তারা এই সিস্টেমের ফসল এবং তা দূর করাও অবশ্য করণীয় কাজের তালিকাতেই পড়ে। কারন আজ জাতির যে অবস্থা সেই অবস্থা হতে জাতিকে উদ্ধার করতে আদর্শ শিক্ষক গড়ে তোলা বাদে আর কোন রাস্তা খোলা আছে বলে আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে জানা নাই।
©somewhere in net ltd.