![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
ফেনীর আরাফাত শাওনের মৃত্যু নিয়ে আমরা অনেকেই শোকাহত। সে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত এস এস সি পরীক্ষাতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছিল। কিন্তু আমাদের সমাজের ঘুণে ধরা মানসিকতা তাকে বেঁচে থাকতে দেয় নি। তার মৃত্যুর জন্য তার পিতা মাতা কিংবা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অভিবাবকগণ কত টুকুন দায়ী তা নিয়ে একটি মতামত প্রকাশ করেছিলাম।
এই মৃত্যুর জন্য আপনি আমি কি দায়ী নই? এই প্রশ্নের জবাব অনেক কঠিন এবং ধারাবাহিক ভাবে দেয়ার চেষ্টা করি।
১. গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় ২০০১ সালের এস এস সি পরীক্ষা হতে। ঐ বছরের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার দিন জানতে পারি আমাদের ফলাফল এই পদ্ধতিতে হবে। এই জানা শুধু নাম সর্বশ জানা। ঐ বছর ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে শিক্ষকগণও হিমশিম খেয়েছিলেন কারন তাঁরাও জানতেন না এই পদ্ধতি কীভাবে নির্ধারিত। সেই বছর সারা দেশে ৭৬ জন জিপিএ ৫ পায়। এই সকল শিক্ষার্থীগণ যখন এইচ এস সি পরীক্ষাতে ২০০৩ সালে অংশ নেন তখন সারা দেশে ২০ জন জিপিএ ৫ পায়। এ বছর বরিশাল, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত কোন শিক্ষার্থী ছিল না। এই ফলাফল বিপর্যয় দেখে বা অন্য কোন কারনে তখন হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে চতুর্থ বিষয় বা ঐচ্ছিক বিষয়ের কিছু পয়েন্ট মূল ফলাফলের সাথে যুক্ত করা হবে। এর পরেই প্রতি বছর বিদ্যুৎ গতিতে এই জি পি এ ৫ বাড়তে থাকে। যা নিচের ছক হতে স্পষ্ট হবে-
পরীক্ষার সন জি পি এ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা
-------- এস এস সি ----------- এইচ এস সি
২০০১ ---- ৭৬ জন
২০০২ ---- ৩২৭ জন
২০০৩ ---- ১৩৮৯ জন ---- ২০ জন
২০০৪ ---- ৮৫১৭ জন ---- ৩০৩৬ জন
২০০৫ ---- ১৫৬৩১ জন ---- ৫৫০৯ জন
২০০৬ ---- ২৪৩৮৪ জন ---- ৯৪৫০ জন
২০০৭ ---- ২৫৭৩২ জন ---- ১১১৪০ জন
২০০৮ ---- ৪১৯১৭ জন ---- ১৯১০৮ জন
২০০৯ ---- ৪৫৯৩৪ জন ---- ১৮২২২ জন
২০১০ ---- ৬২১৩৪ জন ---- ২৫৫১২ জন
২০১১ ---- ৬২২৮৮ জন ---- ৩৪৩৮৫ জন
২০১২ ---- ৮২২১২ জন ---- ৬১১৬২ জন
২০১৩ ---- ৯১২৬৬ জন ----- ৫৮১৯৭ জন
২০১৪ ---- ১৪২২৭৬ জন ---- ৭০৬০২ জন
২০১৫ ---- ১১১৯০১ জন
সুত্রঃ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম।
ছকের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ২০০৭-০৯ সালের মধ্যে জিপিএ ৫ এর হার ২০০৩ সালের তুলনাতে এইচ এস সি তে যথাক্রমে ৫৫৭, ৯৫৫ ও ৯১১গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এ পড়ানোর কারনে এদের এক অংশের সাথে রসায়ন ক্লাসে আমার সাথে দেখা হয়েছিল। এক দিন এক ক্লাসে এক জিপিএ ৫ (এস এস সি এবং এইচ এস সি) পাওয়া ছাত্র কে আয়নীকরণ শক্তির সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে সে এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল যেন আমি তাকে শ্রডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণ ব্যখ্যা করতে বলেছি। হ্যাঁ এর মধ্যে সকলেই যে এমন তা আমি বলছি না আবার এই মানের শিক্ষার্থীর পরিমাণ যে নগন্য তাও কিন্তু নয়। আমাদের দেশে এক সাল হতে আরেক সালে এই সর্বোচ্চ ফলাফল হাজার গুন বাড়ানোর প্রক্রিয়া তে যে গলদ রয়েছে তা এমন কিছু শিক্ষার্থীর উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট। এর পরে ২০১০ সাল হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতার কারনে ঢাকা শহরের নামকরা প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। এদের মেধা দেখে আমার এমন কখনো মনে হয়নি যে ২০০১ থেকে ২০১১ সাল এই দশ বছরে এস এস সি পরীক্ষার্থী গণ ৮১৯ গুন মেধাবী হয়ে গেছেন। আমার শিক্ষকতা কালিন সময়ে আমার এক ছাত্র এস এস সি তে তথা কথিত গোল্ডেন এ+ মিস করেছিল ও যখন আমার কাছে মন খারাপ করে এসে কারন হিসেবে জানাল ওর পাশে বসা ছেলেটি ওর খাতা দেখে একটি প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলাতে সেই প্রশ্ন সে উত্তর না করে অন্য প্রশ্নের উত্তর দিতে যাওয়ার ফলে সে সম্পূর্ণ উত্তর করতে পারে নি এবং এর ফলেই এই ফলাফল বিপর্যয়। তখন আমি ওকে বলেছিলাম চিন্তা করিও না তুমি এই নৈতিকতা টুকুন তোমার মধ্যে ধরে রাখ এবং দেখবে তুমি জীবনে এমন কিছু গোল্ডেন এ+ প্রাপ্ত দের চেয়ে অনেক বড় হতে পারবে। আমার সেই ছাত্র এখন দেশের নাম করা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে এমন এক বছর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেল যে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই এ+ প্রাপ্ত দের ভর্তি পরীক্ষাতে ফেল করার মহামারী লেগে গিয়ে ছিল। রহস্যজনক ভাবে এই ফলাফল ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা না করে আমরা এই ভর্তি পরীক্ষাতে ফেলের জন্য উল্টা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে দায়ী করা শুরু করলাম এবং ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের জন্য লেখালেখি শুরু করলাম। অথচ ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হবে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি আত্মঘাতী মূলক সিদ্ধান্ত। এই যে জ্যামিতিক হারের ও বেশি হারে জিপিএ ৫ বাড়াচ্ছেন তা কি এমন লজ্জাজনক ভাবে ভর্তি পরীক্ষাতে ফেল করার কারন নয়?
সর্বোচ্চ ফলাফল এত সহজলভ্য হয়ে যাবার ফলে এই সকল শিক্ষার্থীগণ উচ্চাবিলাসি হয়ে পড়ছে। যার ফলাফল পিতামাতার উপরেও পড়ছে। তাঁরা মনে করছেন এই জিপিএ ৫ না পেলেই হয়ত তার সন্তান এর জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার যারা এই জিপিএ ৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে পাশ করতেই পারছে না তারাও হতাশ হয়ে যাচ্ছে। একটি জাতির ধংসের জন্য এমন একদল হতাশ যুবক যুবতি সৃষ্টির বিকল্প কিছু আছে বলে আমার জানা নাই। এই হতাশা কাঁটিয়ে উঠার মত মানসিক শক্তির অভাবে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। তাহলে এই সকল মৃত্যুর জন্য আমাদের এই ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল ব্যাবস্থাপনা কি দায়ী নয়? এর সাথে সংশ্লিষ্টগণ কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারেন?
২. প্রতিটি দেশের কারিকুলাম নির্ধারণের সময় যে শ্রেণীর কারিকুলাম সেই শ্রেণীর শিক্ষকগণের মতামত কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে বছর বছর কারিকুলাম পরিবর্তন হলেও সেখানে শিক্ষকগণের সরাসরি অংশগ্রহণ খুবই নগন্য। কারিকুলাম কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি থাকলেও সিংহভাগ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ থাকেন। সেখানে এই ছাপোষা শিক্ষকের মতামত যে কত টুকুন গ্রহণ যোগ্য তা যারা ঐ কমিটিতে উপস্থিত থাকেন তাঁদের সাথে সাথে আমরা যারা ঐ বই গুলো পড়িয়েছি তাঁরা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ নবম দশম শ্রেণীর রসায়ন বইটি হাতে নিয়ে পূর্বের বইয়ের সাথে মিলিয়ে দেখুন। আর আপনি যদি রসায়নের ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে এর মাঝে কত ভুল আছে তা খুঁজলেই বুঝবেন কত যত্ন সহকারে এই বইটি লেখা বা ছাপানো হয়েছে। এর কনটেন্ট যদি বিবেচনা করেন তাহলে দেখবেন আগের বইয়ে এমন কিছু ছিল যার দরকার নেই আর এই বইয়ে এমন কিছু আছে যা পড়ানোর যোগ্যতা স্কুল পর্যায়ে কত জন শিক্ষকের আছে তা আমার বোধগম্য নয়। একই সুত্র এইচ এস সি এর সিলেবাস বা বইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর এই বইগুলো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়। যে শিক্ষক এই বইয়ের ভুল ধরতে না পারেন তিনি তো এই ভুলই পড়াবেন। এবং শিক্ষার্থীগণও ভুল শিখবে। এই যে আমাদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত এই সকল ভুল হতে শিক্ষার্থীগণ ভুল কিছু শিখছে এর দায় কে নিবে? এর পরে আসে নীতিনির্ধারণী বিষয় গুলো সেখানেও শিক্ষক প্রতিনিধি থাকলেও তাঁদের মতামত দান বা এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকেরই। এই যে দেশের পাবলিক পরীক্ষার কারিকুলাম বা পরীক্ষা পদ্ধতি কিংবা ফলাফল মূল্যায়নের ব্যাপারে একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তা কি এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না?
প্রতি বছর শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পরিবর্তন তাঁদের ভীত করে তুলছে। তাঁদের এবং তাঁদের অভিবাবকদের মধ্যে এক আতংক সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে এই সকল পরিবর্তন। তাহলে কেউ যদি বলে শাওনের মৃত্যুর জন্য আমাদের এই অপরিকল্পিত পরিবর্তনগুলো দায়ী তাহলে কি খুব বেশি বলা হবে?
পরিশেষে বলব মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণের সমন্বয়ে এবং তাঁদের কার্যকর অংশগ্রহণের ভিত্তিতে এই সকল কারিকুলাম, ফলাফল কিংবা শিক্ষার নীতিনির্ধারণ না করা হলে এই হাহাকার কখনোই প্রশমিত হবে না। যার ফলে প্রতি বছর এমন ভালো ফলাফল করেও অনেক শিক্ষার্থীর জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। এই শাওন যে আতিউর রহমান হত না সেই নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবেন? পারবেন না তাই এই সকল পদ্ধতিগত জঞ্জাল পরিষ্কার করার উদ্যোগ যত দ্রুত কার্যকর করা হবে তত বেশী শাওনদের আমরা বাঁচাতে পারব।
পুনশ্চঃ সকল শিক্ষার্থীদের বলব এই ফলাফল কখনোই তোমার সাফল্য নির্ধারণ করবে না। সাফল্য নির্ধারিত হয় একজন মানুষ কত টুকুন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে পারে তার উপর। আর তোমার জীবনের মূল্য এই জিপিএ ৫ এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তাই কারো উপর অভিমান করে নিজের জীবন দিয়ে দেয়া কোন ভালো কাজ নয়। উপরন্তু এটা করে তুমি এদেরকেই জয়ী করে দিলে। এই অন্যায়ের মাঝে বেঁচে থেকে লড়াই করতে হবে। মারা গেলে যে তোমার মত একজন যোগ্য সৈনিক আমরা হারাব কারন শাওনের মত বয়সে ওর মত করে খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীই ভাবতে পারে। তাই মৃত্যুর নয় জীবনের মিছিলে যোগ দেয়াই হোক তোমার প্রথম প্রতিবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: দুঃখিত কোন কথা ছাড়া আপনার লিঙ্ক টি হয়ত অনেক কে বিরক্ত করতে পারে।
এই জন্য আমি তা ডিলিট করে দিয়েছি।