![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
[লেখাটি অনলাইন বাংলাতে ১৪ জুন-২০১৫ তারিখে প্রকাশিত]
ঘন চিনি এর নাম আমরা হয়ত অনেকেই শুনে থাকব। ঘনচিনির বানিজ্যিক নাম সোডিয়াম সাইক্লোমেট, তবে এটি স্যাকারিন নামে সর্বাপেক্ষা বেশি পরিচিত। ইউপ্যাক নাম হল সোডিয়াম এন সাইক্লো হেক্সাইল সালফামেট। চিনির চেয়ে ৩০-৫০ গুন মিষ্টি হওয়াতে খাদ্যে এর ব্যাবহার লাভজনক একটি কাজ এছাড়াও এটি ডায়াবেটিস রোগীদের বিকল্প চিনি হিসেবেও ব্যবহৃত। মিষ্টি, বেকারি আইটেম, বোতল জাত কোমল পানীয়, জুস, চকলেট এমন অনেক খাদ্যদ্রব্যেই এটির ব্যাবহার রয়েছে। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক হওয়াতে এটি বাংলাদেশে সরকার এই ঘন চিনি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আমরা যে অনেক মেধাবি জাতী। ভাল কাজে মেধা দেখানোর লোকের অভাব হলেও খারাপ কাজ কত কৌশলে করা যায় এই প্রতিযোগিতাতে আমাদের ব্যবসায়ী মহল কখনোই পিছিয়ে নেই। এ ব্যাপারে কোন তালিকা করা হলে আমাদের এই মেধাবীগণ নিশ্চিত প্রথম দশের মধ্যে থাকবেন এমনকি প্লেস করে বসলেও আশ্চর্যের কিছু নাই। সম্প্রতি যুগ্ম সচিব মাহাবুব কবির মিলন সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এমন এক মেধাবি চক্রের চক্রান্ত ফাঁশ করে দিয়েছে। ঘন চিনি আমদানি বন্ধ হওয়াতে ঘন চিনির মত দেখতে সাইট্রিক এসিড কিংবা সোডিয়াম সাইট্রেট নামে টনকে টন ঘন চিনি আমদানি করে যাচ্ছিলেন কিছু অসাধু মহল। আমদানি করে এই নিষিদ্ধ স্যাকারিন তারা ২২০ টাকা কেজি তে বিক্রয় করে যাচ্ছিলেন। আরেকটি মহল আবার এই ভেজাল চিনিতে আরেকটি ভেজাল ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (হেপ্টা হাইড্রেটেড যা ইপ্সম লবন নামে পরিচিত) মিশিয়ে তা ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রয় করে যাচ্ছিলেন। ভেজালের মাঝেও ভেজাল হিসেবে দেয়া এই ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হল সাঁর হিসেবে কারন উদ্ভিদের খাবার তৈরির জন্য যে ক্লোরোফিল প্রয়োজন এর অন্যতম একটি উপাদান হল ম্যাগনেসিয়াম। প্ল্যাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি, কস্মেটিক বা রাসায়নিক ইন্ডাস্ট্রি তেও এর ব্যাবহার রয়েছে।
এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের এক্লামসিয়া হলে তাদের ৪ গ্রাম ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন এর সাথে সাথে ১০ গ্রাম ইন্টারমাস্কুলার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ইনজেকশন দেয়া হয়। এর সাথে প্রয়োজন হলে ৫ গ্রাম ইন্টারমাস্কুলার ইনজেকশন প্রতি ৪ ঘণ্টা পরপর দেয়া হয়। এছাড়াও স্যালাইন কিংবা লাক্সেটিভ হিসেবে ও এর সামান্য ব্যাবহার রয়েছে। তবে একান্ত বাধ্য না হলে ডাক্তার গন এটা প্রেস্ক্রাইব করেন না কারন এই ম্যাগনেসিয়াম যদি ব্লাড প্রোটিনের সাথে পুরপুরি ভাবে সংযুক্ত না হয় তাহলে এটি মায়ের হার্ট এর সমস্যা, শ্বাসপ্রশ্বাস সমস্যা, দুর্বলতা, এমনকি কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের ও ক্ষতি করতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এই সমস্যা গুলোর সাথে সাথে এটি হাড়ে বা দাতে ক্যালসিয়াম এর ঘনত্ব কমিয়ে দেয় যার ফলে বাচ্চার বা যেকোনো বয়সের মানুষের হাড় দুর্বল হয়ে পরে। এই রাসায়নিকের আমাদের (এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে) শরীরে সহনীয় মাত্রা হল ১.৮-৩.০ মিলি মোল পার লিটার ব্লাড। অর্থাৎ আপনার শরীরে এক লিটার রক্তে ০.৪৫-১.২৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ম্যাগনেসিয়াম আয়ন থাকতে পারবে এর বেশি হলেই তা উপরের সমস্যা গুলো করবে।
এতো গেল ভেজালের প্রভাব এবার আসুন শুনি স্যাকারিন খেলে কি হতে পারে। স্যাকারিন ব্লাডার ক্যান্সারের জন্য অন্যতম দায়ী একটি উপাদান। এছাড়াও এটি পুরুষের শুক্রাণুর পরিপক্কতা প্রাপ্তিতে বাধা দাণ করে পুরুষের উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেয়। যার জন্য ইউকে ১৯৬০ সালে এটি নিষিদ্ধ করে। ইউ এস এ তেও এটি আজও নিষিদ্ধ। কিন্তু ইউকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির পরে তারা শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের খাদ্যে প্রতি কেজি বডি ওয়েট এর বিপরীতে মাত্র ০-৭ মিলিগ্রাম স্যাকারিন ব্যাবহারের অনুমতি দেয়।
অথচ আমাদের এই স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কত কৌশলে এই সকল বিষ বিভিন্ন নামে আমদের খাদ্যে অবিরাম মিশিয়ে যাচ্ছে। যারা বলেন সরকার কোন কাজ করে না তারা বলেন কিভাবে এই ১৬ কোটি মানুষকে এভাবে গবেষণা করে তাদের চুরি থেকে বিরত রাখবে? অর্থ লিপ্সা যে এদের অমানুষ করে দিয়েছে তাইতো তারা এত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্যেও কৌশলে এমন বিষ আমদানি করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
আসুন মানুষের স্বার্থে একটু মানুষ হই। এই কাজ করে আজ যে আপনি ১০০ টাকা আয় করছেন তা যদি ১০০ মানুষের জীবন নিয়ে নেয় তাহলে কি জবাব দিবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।
©somewhere in net ltd.