নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
১.
অংক কষা ফেলেই ছুটলাম বাগানের ছেলেগুলোর কাছে। ছুটছি, দেখি সামনে মাস্টার মশাই।
বললেন , ' কি করছিস ? বাতাসের সাথে পাল্লা দিচ্ছিস ?"
' না এমনি আর কি , বাগানে যাচ্ছি '
ওঁর পাশাপাশি চলছি আর ভাবছি , এইবার নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবেন অঙ্কটার কথা।
কি বলবো ? এখনতো কষা হয়নি!
উনি কিন্তু বললেন :
'দিব্যি আবহাওয়া ...'
বললাম , ' দিনটা ভালোই ', আর মনে মনে ভয় : হটাৎ যদি অঙ্কটার কথা তোলেন।
বললেন , ' নাকটা যে তোর লাল হয়ে গেছে। ' বলে হাসলেন।
'নাকটা আমার এমনই , চিরকালই লাল।'
'তাহলে লাল নাক নিয়ে দিন কাটাবি ?
ভয় পেয়ে গেলাম :
'কিন্তু কি করবো?'
'বিক্রি করে নতুন একটা নাক কিনে না।'
'আপনি ঠাট্টা করছেন। '
আবার হাসলেন উনি।
আমি কিন্তু ভাবছি কখন অংকের কথাটা ওঠাবেন। কিন্তু না , অঙ্কের কথা জিজ্ঞাসায় করলেন না। ভুলে গেছেন নিশ্চয়।
পরের দিন ডেকে পাঠালেন :
'কই , দেখি কি কষেছিস। '
ভোলেন নি তাহলে !
২.
মাস্টার মশাই বোর্ডের দিকে ফিরতেই আমায় টুক করে ডেস্কের নিচে। যখন দেখবেন আমি নেই , তখন নিশ্চয় ভয়ঙ্কর অবাক হবেন।
সত্যি, কি ভাববেন তখন ? সবাইকে জিজ্ঞেস করবেন কোথায় আমি --- ওহ , কি হাসির ব্যাপারই না হবে! কিন্তু আধা ঘন্টা কেটে গেলো , ডেস্কের নিচে সেই বসে আছি তো আছিই। কখন ওর চোখে পড়বে যে আমি নেই? এদিকে ডেস্কের নিচে বসে থাকাও সহজ নয়। দ্যাখো না চেষ্টা করে। পিঠ টন টন করছে। কাশলাম একবার , কিন্তু কেউ নজর দিলো না। না, আর পারিনা। সেরিওজা-টা আবার কেবলই পা দিয়ে গুঁতিয়ে চলেছে। সত্যিই পারলাম না। ক্লাস শেষ হবার আগেই উঠে পড়লাম। বললাম :
'মাফ করবেন পিওতর প্রত্রভিচ...'
মাস্টার মশাই বললেন :
' কেন ? কি ব্যাপার ? বোর্ডে আসতে চাস ?'
'না , মাফ করবেন মানে, আমি ডেস্কের নিচে বসেছিলাম...'
'তা কেমন লাগলো সেখানে ? আরামে বসা যায় বুঝি ? আজ দেখলাম তুই এতটুকু গোলমাল করিস নি ক্লাসে। বরাবর এমনি চুপচাপ থাকলে মন্দ হয় না।'
৩.
ঘন্টা পড়তেই বেরিয়ে এলাম স্কুলের আঙিনায়। চমৎকার দিন। ঝড় নেই। বৃষ্টি নেই। বরফ নেই। কেবলই ঝলমলে রোদ।
হঠাৎ দেখি বেড়াল ওঁৎ পাতছে। ভাবলাম , কোথায় ওঁৎ পাতছে বেড়ালটা দেখি তো।
চুপি চুপি পিছু নিলাম বেড়ালটার। হঠাৎ লাফ দিলে বেড়ালটা। দেখি কি, দাঁতে তার একটা পাখি --- চড়ুইছানা! বেড়ালটার লেজ টেনে ধরলাম:
' দে এক্ষুনি, দে বলছি পাখিটা। '
পাখিটা ফেলে দিয়ে পালালো বেড়াল।
ক্লাসে নিয়ে এলাম পাখিটাকে।
লেজের খানিকটা ছিঁড়ে গেছে।
সবাই ঘিরে ধরলো আমায়, চ্যাঁচাতে লাগলো :
' আরে দ্যাখ দ্যাখ পাখি ! জ্যান্ত পাখি !'
মাস্টার মশাই বললেন :
'বেড়ালে পাখি ধরে গলায় কামড়ে। তোর পাখিটার ভাগ্যি ভালো। কেবল লেজের উপর দিয়ে গেছে। '
সবাই পাখিটাকে ধরে দেখতে চায়। কিন্তু কাউকে দিলাম না আমি। ওটা পাখিরা পছন্দ করে না।
পাখিটাকে গিয়ে রাখলাম জানালার বাজুতে। ঘুরতেই দেখি , পাখি আর নেই !
'ওরে ধর, ধরে ' বলে চেঁচিয়ে উঠলো ছেলেরা। পাখি কিন্তু উড়েই গেলো।
তবে আমার কোনো দুঃখ হলো না। আমিই যে ওকে বাঁচিয়েছি। সেটাই তো বড় কথা।
-----------------------------------------
বৃষ্টি আর নক্ষত্র - নামের শৈশবের একটা রাশিয়ান বইয়ের খানিকটা অংশ ! মাঝে মাঝে শৈশবের সেই রাশিয়ান বইগুলো বুকের মাঝখান থেকে আচমকা বের হয়ে আসতে চায় লেখায়। খুব ছোটবেলায় যখন আব্বা আমাকে বই পড়ে শোনাতেন , যখন আমি বানান করেও পড়তে পারতাম না , যখন আমি স্কুলেও যেতাম না -- তখন থেকেই রাশিয়ান বইগুলো আবার সাথেই আছে। তাই সেই 'ছোটমানুষের ' বইগুলোকে মাঝে মাঝে আমি শৈশবের স্কুল বলে ডাকি !
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:২৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ঠিক ধরেছেন। মিশকার রান্নাবান্না -- এই বইয়ের প্রথম গল্প ! সাদার মাঝে অনেক গুলো রঙিন ফুল ! ছবি আপলোড করতে পারছি না।
শৈশবের সেই বইগুলো খুব টানে। বেশ কিচু বই এখনো আগলে রেখেছি। অনেক বই হারিয়ে ফেলেছি। পুরাতন বইয়ের দোকানে মাঝে মাঝে খুঁজি। বেশ কয়েক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া 'জাদু তীর ' পায়ে গেলাম মিরপুর ১০ এর পাশে।
ভালো থাকবেন আপনি।
২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: 'শৈশবের স্কুল' চমৎকার নাম দিয়েছেন। আমার ছোটবেলাও কেটেছে রাশান প্রগতি প্রকাশনের বই পড়ে। উভচর মানব, মালাকাইটের ঝাপি......আরও কতো বই, কয়টার নামই বা মনে আছে এখন।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৩৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: রূপের ডালি খেলা , পেন্সিল আর সর্বকর্মার এডভেঞ্চার , কাশতানকা , জাদুতীর ----- কত নামের বই ! কি সুন্দর সুন্দর মলাট। ছোটবেলায় পাতা উল্টায় আর ছবি দেখি। কি রঙিন শৈশব। কত কিছু শেখার।
ভালো থাকবেন আপনি।
আরো কিছু রাশিয়ান শৈশব দেখতে পারেন :
সাত বন্ধু ইয়ুসিকের
৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১২
আনু মোল্লাহ বলেছেন: বেশ উপভোগ করলাম।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৪০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
শৈশব থেকে আগলে রাখা অনেকগুলো রাশিয়ান বইয়ের মাঝ থেকে খানিকটা অংশ শেয়ার করলাম।
ভালো থাকবেন আপনি।
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৫৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বেশ লাগলো আপনার ফেলে আসা দিনগুলি । সুন্দর অনুভূতি।
শুভকামনা জানবেন।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৪২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ফেলে আশা শৈশব মানেই আমার রাশিয়ান বই।
শৈশবের বিশাল একটা অংশ ওরাই।
অনেক ভালো থাকবেন আপনি।
৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:০৭
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারণ।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৪৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
শৈশব থেকে আগলে রাখা অনেকগুলো রাশিয়ান বইয়ের মাঝ থেকে খানিকটা অংশ শেয়ার করলাম।ফেলে আশা শৈশব মানেই আমার রাশিয়ান বই।
শৈশবের বিশাল একটা অংশ ওরাই।
ভালো থাকবেন আপনি।
৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:১০
আহমেদ জী এস বলেছেন: স্বপ্নবাজ সৌরভ,
এক সময় ঢাকা স্টেডিয়ামের প্রগতি প্রকাশনী থেকে প্রচুর রাশিয়ান বইয়ের অনুবাদ বের হতো। রাশান রূপকথার গল্প থাকতো অনেক। খুব লোভ হতো সব বই কিনে ফেলি কিন্তু রেস্তর জোর না থাকায় লোভটা মিইয়ে যেতো।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৪৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: প্রগতি প্রকাশনী বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে। ছোট বেলায় বই গুলো কিনে এনে দিতেন আব্বা। এখন আর পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে নীলক্ষেত আর পুরাতন বইয়ের দোকান খুঁজে ফিরি।
ভালো থাকবেন আপনি। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন। রাশিয়ান শৈশবের শুভেচ্ছা আপনার জন্য :
রূপের ডালি খেলা - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:০৭
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো লেগেছে।
শুভকামনা রইলো।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৫১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক ভালো থাকবেন। রাশিয়ান শৈশবের শুভেচ্ছা রইলো।
৮| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:২৯
জুন বলেছেন: সোভিয়েত শিশু সাহিত্য রূপকথা ঊপকথা থেকে শুরু করে তাদের বিশাল সাহিত্য সম্ভারের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা সেই পিচ্চি কাল থেকে। খালাতো বোনের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম বই "রূপালী খুর"। তারপর শুধু পথ চলা বিশেষ করে ননী ভৌমিকের হাত ধরে। রাশিয়ার প্রগতি প্রকাশনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ বিশাল এক সাহিত্যের দিগন্ত খুলে দেয়ার জন্য।
আপনার পোস্টে ভালোলাগা রইলো।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:১১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ননী ভৌমিক আর রাশিয়ান বইয়ের কাছে আমার শৈশব কৃতজ্ঞ!
একটু যখন বড় হলাম তখন পেলাম ইশকুল , ইস্পাত !
আরো কিছু রাশিয়ান শৈশব পাবেন আমার আগের লেখায়।
আশাকরি আরো পোস্ট দেব ধীরে ধীরে।
ভালো থাকবেন জুন আপু।
আপনার জন্য :
রূপের ডালি খেলা
৯| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: নিজের ছোটবেলায় ফিরে গেলাম ।
৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৫৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: শৈশব ফিরে আসুক সবার। ভালো থাকবেন রাজীব ভাই। রাশিয়ান শৈশবের শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৭
করুণাধারা বলেছেন: আমি বড় বেলায় পড়েছি এই বই। খুব ভালো লেগেছিল। আজ পড়তে আবারো খুব ভালো লাগলো। মলাটটা ছিল সাদার মধ্যে কয়েকটা রং.......এই বইয়েই কি ছিল মিসকার রান্নাবান্না?