নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরাজিত মানুষ

সুকন্যা ইলোরা

জীবন যুদ্ধে পরাজিত যোদ্ধা

সুকন্যা ইলোরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিতু কথন পর্ব ২

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২০

একই সময় নিচের ফ্ল্যাটে চলছে চা চক্র । নিজহাতে চা বানিয়েছে সাদীর ভাবী শায়লা । সাদীর ভাই শহীদ, ভাবী শায়লা , শায়লার মা(মিনা বেগম), ভাই(শোয়েব),বোন(সাথী) আর সাথে ওদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ফজলু সবাই ব্যস্ত ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক
দিতে । আসলে সারা রাত ঘুম হয়নি কারো । এই ফ্ল্যাট টাও পেয়েছে সাদী ।এটাও ফুল ফারনিশড । এখানে থাকবে শহীদ আর তার পরিবার । ২৫০০ স্কয়ার ফুটের বিশাল একটি ফ্ল্যাট । উৎফুল্ল সবাই , হবেই ত, শহীদকে ২০ লক্ষ টাকা ক্যাশ উপহার দিয়েছে মাধুরীর বাবা ।
শায়লাঃ আমি কিন্তু মুম্বাই এ যেতে চাই এবার । শপিং এর জন্য আলাদা রাখো এক লাখ টাকা ।
মিনা বেগমঃ একা যাবি কেনো আমরা সবাই যাবো । যাই বল জামাই বাবাজি বিয়ের ঘটকালী ত আমিই করলাম ।
শোয়েবঃ আর মেয়ে কে দিল শুনি , আমি খুজে না দিলে এমন মেয়ে এত সহজে পাওয়া যেত??
সাথীঃ ২০ লাখ টাকা নিয়ে চুপ করে থাকলে হবে না । রিতুর মত একেও গোলাম বানাতে হবে । কুকুর বানাতে হবে মাধুরীকেও ।
শোয়েবঃ হ্যাঁ যা বলেছ আপা, আগের টারে ডাকতাম রিকুত্তা এটাকে কি ডাকবো ?? মধু কুত্তী ।
মিনা বেগমঃ এত সহজ হবে না । ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি এই মেয়ের নামে । বেশি দিন অপেক্ষা করলে এই মেয়ে সাদীকে হাতে নিয়ে নিতে পারে ।তার আগেই এই মেয়েকে বোঝাতে হবে তুই এই বাড়ির পোষা কুকুর, যাকে মন চাইলে লাথি দেবো, মন চাইলে রাখব, মন চাইলে বের করে দেবো । এই মেয়ের সব সম্পত্তি সাদীর নামে করাতে হবে । সাদীর সম্পত্তি মানে শহীদের সম্পত্তি ।
শহীদঃ শাশুড়ি আম্মা আপনি ত আগের কথা মনে করিয়ে দিলেন । মনে আছে ?? রিতু কে দিয়ে সবার পা ধরিয়েছিলাম , আমাকে বের করে দিবেন না বলে বলে সবার পা ধরছিল ।
শোয়েবঃ ভাইয়া আমি খুব মিস করেছি ।
সাথীঃ আগের মত করে না । এবার খেলার সিস্টেম বদলাতে হবে । ছলে বলে মাধুরীর সব সম্পত্তি লিখে নিতে হবে । সব ব্যাংক ব্যালান্স নিতে হবে । এই কাজ সাদী ভালো পারবে । কিন্তু খুব সতর্কতার সাথে আর ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে । রিতুর সবকিছু লুটে নিয়ে ওকে কুকুর বানাতে ৮ বছর লেগেছে ।এখানে ১৬ বছর ও লাগতে পারে । খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবে যাতে বাচ্চা না হয় । এই মেয়ে রিতুর মত হাবা না, সবাই মিলে ঠান্ডা মাথায় কাজ না করলে ধরা খাওয়ার চান্স আছে ।
শায়লাঃ আগের বার বাচ্চা হওয়া ঠেকানো গেলেও এবার কঠিন হবে । সাদী নিজেই বাচ্চা চায় । তাড়াহুড়া করবে ।
শহীদঃ ওইটা আমার উপর ছেড়ে দাও । বাচ্চা হতেই দেবো না এবারো । রিতুর কোন বড় প্রভাবশালী আত্মীয় ছিল না, কিন্তু এই পার্টির অনেক টাকা একটু সাবধানে থাকতে হবে ।
শায়লাঃ তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছ । তোমার কোম্পানীর এত বড় বড় ক্লায়েন্ট । এত সচিব, মন্ত্রী, জেনারেল তোমার নাম্বার দেখলেই কল রিসিভ করে ।কাউকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে একেও গোলাম বানাবো ।
শহীদঃ হুম তাই করতে হবে । রিতুকে কিভাবে ভয় দেখাতাম!!!!মনে হলেই মজা লাগে । ধর পায়ে নইলে তোর বাবার চাকরী খাবো, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমার ক্লায়েন্ট আছে , আমাদের সবার পা ধুয়ে পানি খা নইলে তোর ভাই যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে তার ভিসি আমার ক্লায়েন্ট তোর ভাই কে সাসপেন্ড করে দেবো , বাসা বের হ , নইলে তোর ছোট ভাইকে স্কুল থেকে বের করে দেবো , স্কুলের হেড মাস্টার আমার ক্লায়েন্ট, তোর বাবা মা কে আমাদের পা ধরতে বলবি নইলে ইনকামট্যাক্স এর কেসে ফাসিয়ে দেবো । রিতু আমার ভয়ে তটস্থ থাকতো । মেয়ের সংসার বাঁচাতে সব কিছু করেছে রিতুর বাবা মা । রিতুকে দিয়ে শায়লা, শ্বাশুরি আম্মা, এমনকি ফজলুর পা ধরিয়েছি, পা ধুইয়ে সেই পানি খাইয়েছি । মাঝরাতে রাস্তায় বের করে দিয়েছি্‌ , বুয়ার থালায় ভাত খাইয়েছি, কমোডের পানি খাইয়েছি । সব কিছু মাথা নিচু করে সহ্য করেছে রিতু । এই বিয়েতে ত এদের তেমন বড় আত্মীয় দেখলাম না । খোজ নিয়ে ভয় দেখানো শুরু করতে
হবে । আমার বস জানলে চাকরীটা যাবে আমার । বস এখনো যানেনা তার কোম্পানির ক্লায়েন্ট দের পুজি করে আমি কি গেম খেলেছি আমি ।কোনভাবে বসের কানে যেন না যায়, উনি এসব পছন্দ করেন না । রিতুও জানতো বস জানলে আমার ঝামেলা হতে পারে ।
রিতুকে আমরা এত অসহায় বানিয়েছিলাম যে আমার বস পর্যন্ত যাওয়ার চান্সই পায় নাই ।
ফজলুঃ সব ঠিক আছে কিন্তু আমি ত আমার কমিশন পেলাম না । আপনি দায়ীত্ব দিলেন সাদী ভাই এর কাছাকাছি থাকতে । সাদী ভাই আমাকে তার অফিসে তার পিয়নের চাকরীতে নিলেন । আপনাদের হুকুম মত আমি সারাদিন তার কাছে রিতুর বদনাম করলাম, তার
মনটাকে রিতুর বিরুদ্ধে নিয়ে গেলাম । রিতুর নাম্বার ভাইয়ার মোবাইলে ব্লক মোডে রাখতাম ৯-৫ টা । কোন কারণে অন্য নম্বর থেকে রিতু রিং করলে ও সাদী ভাইকে দিতাম না ।সাদী ভাইয়ের পাশে কাজের নামে সুন্দরী মেয়েদের রাখতাম । সাদী ভাই কোন মেয়ের সাথে প্রেম
না করলেও রিতুর উপর থেকে তার ভালোবাসা নস্ট করার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমিই করলাম । আপনারা এত কিছু পেলেন আমি কি পেলাম? ?
সাথীঃ শহীদ, ফজলুকে এই বাসার সারভেন্টস রুম দাও । আর খাওয়া দাওয়া ফ্রি । ফজলু তুমি আগে যা করতে এখনো তাই করবে । বিশ লাখ টাকার ৫০ হাজার তোমার । কি ? খুশি ত?
মিনা বেগমঃ আত্মহত্যার থিউরি টা এখানেও ব্যবহার করতে হবে । এইটাই সহজ রাস্তা । শহীদ তোমার কোন ডাক্তার ক্লায়েন্ট রেডি কর । উনি পাগলের সার্টিফিকেট দেবেন ।
শায়লাঃ শোন শহীদ আমার না একা একা লাগে ,আম্মা এখন থেকে এখানেই থাকবে ।সাথী আপার তিন বাচ্চাও এখানে থাকবে আর শোয়েব ও এখানে থেকেই চাকুরী খুঁজবে ।
শহীদ জানে ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির প্ল্যান মিনা বেগম ছাড়া হবে না । রিতুকে নিঃশেষ করে রাস্তার ভিখারিনী বানিয়ে তাড়ানোর প্ল্যানিং এর প্রতি ধাপ তারই রচনা করা । রিতুকে পাগল বানানো আর তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনার বুদ্ধিও তার । এমন শ্বাশুরিকে হারাতে চায় না শহীদ ।
ইবলিশ শয়তান এই বাসার অবস্থা দেখে আরো সন্তুষ্ট আর খুব খুশি । পাপের বেড়াজাল থেকে এরা কোন দিন বের হতে পারবেনা । এখন অন্য কোথাও যাবে ইবলিশ ।
প্রথম পর্বের লিংক - Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.