![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মূল লেখকঃ Asif Shibgat Bhuiyan
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকাব নিষিদ্ধ করার যে ঘোষণা সেটিকে অনেকের বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হতে পারে। ঠিক কতগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটার পর ঘটনাগুলো নর্মে পরিণত হওয়া শুরু করে সেটি আমার জানা নেই। কিন্তু এই ঘটনাটিকে স্রেফ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করা অযৌক্তিক। এই একটি ঘটনার সামাজিক এবং রাজনৈতিক সিগন্যাল দেয়ার পটেনশিয়ালকে আমি ছোট করে দেখতে রাজি নই। আমার যুক্তিগুলো এখানে তুলে ধরছি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকাব ব্যান করার ঘটনাটি কার্যত সেক্যুলারিস্মের সাথে অর্থডক্স ইসলামের একটি মিনিয়েচার সংঘর্ষ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ব্র্যাকের সাথে যারা পরিচিত তারা নিশ্চয়ই একে একটি সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দেখবেন। বলা যেতে পারে ব্র্যাক বাংলাদেশের সেক্যুলার এক্সপ্রেশনের একটি বড় সিম্বল। অপরদিকে যে মেয়েরা একইসাথে নিকাব পরিধানের সাথে সাথে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে তাদের অর্থডক্স ইসলামের সেরা অ্যাডভার্টাইজমেন্ট মানতেও কারও সমস্যা হবার কথা না। সেক্যুলারিস্টদের বহু দিনের দাবী যে রাষ্ট্রযন্ত্র যখন তাদের অধীনে থাকবে তখন দুটি জিনিস হবে। এক, ধর্ম রাষ্ট্রীয় ভেদাভেদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। এবং দুই, সকল ব্যক্তিগত ধর্মীয় মূল্যবোধ সুষ্ঠু ভাবে বজায় থাকবে। আমার প্রপোজিশন হচ্ছে এই যে, ব্র্যাকের ঘটনাটি এই দুটি দাবীর ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় তৈরি করে।
আগেই বলেছি যে ব্র্যাক কেবল একটি যেনতেন সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান নয়। তারা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সেক্যুলার এনজিও যারা অন্তত সেক্যুলার মানবতাবাদের মূল এক্সিওমগুলো নিয়ে মাঠপর্যায়ে যথেষ্ট কাজ করেছে। কেউ যদি বাংলাদেশে সত্যিকার সেক্যুলার ভাবধারার ঝান্ডা তুলে ধরতে পারে তাহলে সেটি ব্র্যাকই হওয়ার কথা। সেই ব্র্যাকের একটি প্রতিষ্ঠান যখন নিকাব ব্যান করল তখন একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন শুধুমাত্র ব্র্যাকের দিকে নয় – পরিপ্রেক্ষিতে গোটা সেক্যুলার ইন্সটিটিউশনের দিকে ছুঁড়ে দেয়া যায় বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই প্রশ্নগুলো এরকম:
১. সেক্যুলারিস্টরা যে দাবী করে তারা প্রতিটি ধর্মের ব্যক্তিগত পর্যায়ের মূল্যবোধগুলোকে সম্মান করবে এর ভিত্তি কী? কতটুকু মূল্যবোধকে তারা সম্মান করবে? কোন পর্যায়ে চলে গেলে এরপর আর মূল্যবোধকে সমর্থন করার কাজটি তারা করবে না। নিকাব একটি উদাহরণ। ব্র্যাক তাদের প্রতিষ্ঠানে নিকাবকে অনুমোদন দেবে না। অথচ যে মেয়েরা নিকাব পড়ছে তারা বেশিরভাগই নিকাব পড়াকে তাদের ধর্মীয় আবশ্যিক দায়িত্ব মনে করে। ব্র্যাক সেটিকে সম্মান করতে পারছে না তাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে – যেটির নাম তারা দিয়েছে আইডেন্টিফিকেশন। এখন সেক্যুলারিস্টরা কি নীতিগতভাবে মুসলিমদের জানাবে যে কোথায় গিয়ে তারা ধর্মীয় স্বাধীনতার লাইন ড্র করবে এবং কোথায় গিয়ে সেক্যুলার মূল্যবোধ টেক ওভার করা শুরু করবে? এবং সেক্যুলারিস্ট্ররা কী যথেষ্ট সৎ এটি স্বীকার করে নেয়ার জন্য যে প্রথমত এই লাইন ড্র করার ক্ষমতা সেক্যুলারিস্টরা নিজেদের হাতেই রাখছে এবং দ্বিতীয়ত এই লাইন ড্রইং-এর সাথে ধর্মের স্ব-স্বাধীনতাবোধের বিরোধ যে অবশ্যম্ভাবী?
২. যদি ধর্মীয় স্বাধীনতার যে প্রিন্সিপ্লের কথা সেক্যুলারিস্ম বলে সেটিকে ধর্মপন্থিরা একটি insincere lip service মনে করে তবে কী ভুল হবে। প্রথম প্রশ্নের একটি মনঃপুত উত্তর সেক্যুলারিস্টরা যদি দাঁড় করাতেও পারে সেটিকে কেবল পলেমিকাল সফিস্ট্রি হিসেবে না ভাবার কি কোনও কারণ আছে? রাষ্ট্রযন্ত্র দখলে আসলে সেক্যুলাররা যে স্বেচ্ছাচারী হবে না এবং তাদের স্বেচ্ছাচারিতার মাশুল যে ধর্মীয় স্বাধীনতার তথাকথিত এক্সিওমকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না তার নিশ্চয়তা কী? ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, সর্বঅর্থেই একটি সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান, আজ কলমের খোঁচায় ইতিমধ্যে এনরোল্ড একটি ছাত্রীর ধর্মীয় স্বাধীনতা নাকচ করে দিলো। রাষ্ট্রযন্ত্র সেক্যুলারদের হাতে গেলে যে একই ব্যাপার হবে না তা ভাবার কোনও উপায় আছে কি? আজকের ইন্সটিটিউশনাল আইডেন্টিটিই কি কালকে ন্যাশনাল আইডেন্টিটির অজুহাত হিসেবে দেখানো যেতে পারে না? আজ ছাত্রীদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেক্যুলাররা পুরোপুরি রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতায় নিলে আমাদের কি হিজাব করতে আরেক দেশে যেতে হবে? আজকের বাংলাদেশই কী তাহলে কালকের ফ্রান্স?
৩. প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্র্যাক যা করছে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে সেক্যুলাররা করবে না সেরকম চিন্তাও কষ্টকর। অল্প ক্ষমতায় কলার চেপে ধরা মানুষ যে অতি ক্ষমতায় টুঁটি চেপে ধরবে না তা কোনও পাগলেও বিশ্বাস করবে না। এই আস্থাহীনতা আরও বেড়ে যাওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে। আইডিওলজি হিসেবে সেক্যুলারিস্ম খুবই ঠুনকো। আক্ষরিক অর্থেই। এর কোনও লিগ্যাল ইয়ার্ডস্টিক নেই। লিগ্যাল ইয়ার্ডস্টিক না থাকায় যে কোনও প্রশ্নে এই আইডিওলজি তার মূল্যবোধ পরিবর্তন করতে পারে। আজকে একটি ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রতিহত করা হচ্ছে আইডেন্টিটি সমস্যার মত হাস্যকর অজুহাত দেখিয়ে। এই অজুহাতের তো কোনও সেট প্যারামিটার নেই। এরকম নিত্যনতুন প্যারামিটার তৈরির রসদ কিন্তু সেক্যুলারিস্মের আইডিওলজিক্যাল প্যাটার্নেই জোগানো আছে।
৪. হাস্যকর ভাবে কেউ যদি বলেও বসেন যে এমন বিরাট কিছু তো নিষিদ্ধ করা হয়নি। এক টুকরো কাপড় মাত্র। সবাই সেটা পড়েও না। এমনকী সব হিজাবীরাও নয়। সমস্যা তো সেখানেই। আপনার কাছে যা এক টুকরো কাপড় মাত্র সেটিই একটি নিকাব পরিহিতা মেয়ের কাছে বিরাট ধর্মীয় স্টেটমেন্ট। আপনি যখন ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়ার দায়িত্ব নেবেন তখন সেটাকে অ্যাবসোলিউট করার দায়িত্ব আপনারই। এই স্বাধীনতা যদি একজন সেক্যুলারিস্টের ধর্মীয় স্ট্যান্ডার্ডকে মাথায় রেখে করা হয় তাহলে পরিশেষে সেটি কারও কারও স্ট্যান্ডার্ডে পরাধীনতাই হবে। এবং এখানেই সেক্যুলারিসমের ফ্যালাসি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা তাই শেষমেষ অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। একটি তথাকথিত “উওমেন এমপাওয়ারমেন্ট” চ্যাম্পিওন করা প্রতিষ্ঠান যে একদল নারীকে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার এমপাওয়ারমেন্ট দিতে অস্বীকার করে বসল এ থেকে দুটি জিনিস পরিষ্কার। সেক্যুলার মানবতাবাদের মূল্যবোধ অনেকাংশেই কিছু মোটা দাগের এনজিও সাফল্যে সীমাবদ্ধ, সত্যিকার অর্থে আইডিওলজিক্যাল হিউম্যানিস্মে তারা প্রায়োগিক অর্থে ব্যর্থ এবং মানসিকভাবে সংকীর্ণ। দ্বিতীয়ত, সেক্যুলারিস্ম শেষমেষ আরেকটি ধর্মই। যা অন্যান্য ধর্মীয় এক্সপ্রেশনকে সুযোগমত এবং খেয়ালমত দমন করবে। আইরনি হচ্ছে এই যে সেক্যুলারিস্ম যে আপাত সমস্যা নিরসনে নিজেদের সচেষ্ট বলে দাবী করে তারা সেই সমস্যারই আরেকটি নতুন সংযোজন মাত্র।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০৮
দ্বীন মুহাম্মদ সুমন বলেছেন: এই সব অপপ্রচার চালিয়ে কি লাভ আপনাদের? দয়াকরে এই লিঙ্কে ক্লিক করে যুম করে পোস্টটি পড়ুন।
Click This Link