নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট্ট শহরের সাধারণ ছেলে । পড়তে ভালোবাসি, নতুন কে ভালোবাসি আর ভালোবাসি জ্ঞানচর্চা ।

মোঃ মেহেদী হাসান সজীব

1 2 3 Start

মোঃ মেহেদী হাসান সজীব › বিস্তারিত পোস্টঃ

তালিবান দ্যাশে এতো সুখ....

২১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:১৪

ছোট বেলায় কখনো আকাশে প্লেন দেখে কল্পনা করেছেন যে, প্লেনের চাকায় বসে অথবা প্লেনের ছাদে বসে বিদেশ চলে যাবেন? আমি করেছি...। কিন্তু তখন তো ছোট ছিলাম। এখন বড় হয়েছি, বুঝতে শিখেছি। এখন জানি যে এটা মুভি নয় যে টম ক্রুজের মতো প্লেনের ডান ধরে উড়ে চলে যাবো। ধরুন... কোন ভাবে আপনি যদি প্লেনের সাথে লেগে উড়েও যান তাহলে সনিক ওয়েভ, ভাইব্রেশন এবং প্রচণ্ড শব্দে আপনার শরীরের হাড় গোড় ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যাবে। আপনার শরীরের চামড়া ছিঁড়ে যাবে। আপনি উপর আকাশে গিয়ে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে মারা যাবেন।

তো... এখন আর ওরকম হাস্যকর কাজ করার কথা চিন্তাও করি না। কিন্তু একবার ভাবুন তো... একজন সাবালক, জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ঠিক কোন পরিস্থিতিতে পড়লে এমনটা চিন্তা করতে পারে যে প্লেনের চাকা চেপে ধরে অথবা ডানায় বসে অথবা ছাদে বসে এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো? কতোটা বীভৎস পরিস্থিতিতে পড়লে অথবা কাদের থেকে বাচতে মানুষ এমন চিন্তা করতে পারে যে এদের আন্ডারে থাকার চাইতে প্লেনের চাকা ধরে ঝুলে অন্য দেশে চলে যাওয়াই ভালো হবে?

আমি জীবনে কল্পনাও করিনি যে স্বাভাবিক সাবালক মানুষদের এমনটা করতে দেখবো যেমনটা আফিগানিস্থানের কাবুলে হয়েছে। তালিবান সৈন্যরা আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। অন্যানো দেশ গুলো তাদের জনগণ আফগান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আফগানের সাথে বাইরের দেশের সকল যোগাযোগ বন্ধ। কাবুল কে তালিবানরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। কাবুল এয়ারপোর্টে মানুষ দেশটি ছেড়ে পালানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কয়েকদিন আগে কাবুল এয়ারপোর্টে এতো ভিড় বাধে যে শেষমেশ সেখানে গান ফায়ারিং করা লাগে। ৫জন মানুষ মারা গেছে প্লেনে উঠতে গিয়ে। তারপর সকল এয়ারপোর্ট, ও যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন অবস্থায়... US আর্মির ফেরত আসা প্লেনটিই ছিলো একমাত্র পথ আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর। যার কারণে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও প্লেনের চাকায় বসে দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এখন... আমাদের দেশের তালিবান প্রেমীদের জন্য আফগান তালিবান হলো সুখের জায়গা। সেখানে এতো সুখ...এতো শান্তি যে কি আর বলবো। সুখের নমুনা দেখলাম যে...... ঐ সুখ করার চাইতে মানুষ প্লেনের চাকায় বসে মরতে মরতে ঐ দেশ ছেড়ে পালানো কে শ্রেয় মনে করছে। কেনো মনে করছে জানেন? কারণ এই আফগানের জনগণ এর আগে তালিবান শাসন আর তালিবান কি সুখ নিয়ে আসে মানুষের জন্য তা দেখেছে। আমার দেশের তালিবান প্রেমীরা মনে মনে কল্পনা করেন তালিবানের সুখের কথা। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে তালিবান ক্ষমতায় বসেছিলো। তখন তালিবান যে কি সুখ শান্তি এনেছিল তা আফগানের জনগণ নিজ চোখে দেখেছে। সেই ২০ বছর আগের দেখা সুখ শান্তির ভয় তাদের মনে আজো কাটেনি। তাই ঐ সুখ করার চাইতে তারা প্লেনের চাকায় বসে মরা কে শ্রেয় মনে করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র আফগান থেকে পালিয়ে আসা এইসব রিফিউজিদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। দেশের আপামর মুসলিম জনতাকে খুশী করতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা রিফিউজিদের একটা ঢেঁকি গিলেছে। এবার যদি আফগানি রিফিউজিদের ঢেঁকি গেলে, তাইলে যে কি হবে....

তো... তালিবান প্রেমীদের মন মানেনা যে তালিবান খারাপ। তাই তারা আরেক মজার যুক্তি বের করেছে। যুক্তি বের করেছে যে তালিবান যদি খারাপ হয় তাহলে তালিবান এতো সহজে কিভাবে ক্ষমতায় বসে গেলো। নিশ্চয় আফগানের জনগণ তালিবানদের ভালোবাসে তাই হাসি খুশি মনে তারা তালিবানের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে।

তালিবান কিভাবে এতো সহজে ক্ষমতা পেলো সেটা বোঝার আগে আফগানিস্তানের সুরক্ষা এবং সরকার ব্যবস্থার অবনতি বুঝতে হবে। আফগান আর্মি পৃথিবীর সবচাইতে দুর্বল সেনাবাহিনী দলের মধ্যে একটি। এদের না আছে আধুনিক অস্ত্র, আধুনিক প্রশিক্ষণ আর না আছে কোন স্টেবল কমান্ডিং ব্যবস্থা বা লিডার। এতদিন এরা আমেরিকার সৈন্যদের ভরসায় চলছিলো। কিন্তু... আমেরিকার সৈন্যরা যখন আফগান ছেড়ে চলে গেলো তখন আফগান আর্মি মেরুদণ্ড হীন হয়ে গেলো। তার উপরে আফগান আর্মিকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার মতো কোন লিডারও ছিলো না।

অন্যদিকে তালিবান পৃথিবীর সবচাইতে ওয়েল ট্রেইন্ড, অত্যাধুনিক অস্ত্র সম্পন্ন এবং সৌদি এবং পাকিস্তানের মতো দেশ গুলোর অর্থ সহায়তা পুষ্ট পৃথিবীর সবচাইতে ধনী সন্ত্রাসী সংগঠন।

তো... এই দুই দল যখন পরস্পরের সাথে যুদ্ধে নামবে তখন কি হবে? যা হবার তাই হয়েছে। আফগান আর্মির তালিবানদের সাথে না এর বরাবর যুদ্ধ হয়েছে। আর... তালিবান এ ক্ষেত্রে খুবই বুদ্ধিদীপ্ত সাইকোলজিক্যাল গেম খেলেছে যার ফলে তারা কোন করম যুদ্ধ ছাড়াই ক্ষমতা পেয়ে গেছে। তালিবান... যুদ্ধের আগে থেকেই আফগান আর্মিদের চিঠির মাধ্যমে ডেথ থ্রেড দিয়ে আসছে। তারা বার বার চিঠিতে আফগান আর্মি সদস্যদের জানায় যে তারা জেনো তালিবানদের সাথে যুদ্ধ না করে। যুদ্ধ করলে তাদেরকে ইসলামের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তালিবান ক্ষমতায় গেলে তাদের সবাইকে মেরে ফেলা হবে এবং তাদের পরিবার কে বন্দি করা হবে। একজন মানুষ যতো বড় বীরই হোক। নিজের পরিবারের জীবনের ভয় সবার থাকে। তার উপর... আফগান আর্মির সেরকম কোন লিডারও নেই যে আর্মি ফোর্স কে লিড করবে। আফগান আর্মি বিশ্বাসই করেনি যে তারা তালিবানের সাথে যুদ্ধ করে জিততে পারবে, এজন্য তারা যুদ্ধই করেনি। মোট কথা যে যেমন পেরেছে পালিয়েছে। আর সবচাইতে বড় কথা যুদ্ধ করবে কার জন্য? সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে দেশের সরকারের জন্য, দেশের সার্বভৌম এর জন্য। কিন্তু... আমরা সবাই দেখেছি যে যুদ্ধ শুরু হতেই আফগানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলো। তো... যে দেশের প্রধানমন্ত্রীই দেশ ছেড়ে জান বাঁচিয়ে পালিয়ে যায় সেই দেশের আর্মি কার জন্য বা কিসের জন্য আর লড়াই করবে? এজন্য তারা লড়াইই করেনি।

তো... তালিবান প্রেমীরা তালিবানের এই জয় কে আফগান জনগণের তালিবানের প্রতি ভালোবাসা হিসেবে দাড় করাতে চেষ্টা করছেন।

এবার আসি একটা সিরিয়াস প্রশ্নে... "আমি তালিবান কেনো ঘৃণা করি"
এখানে মজার বিষয় হলো যে আমি একটা সন্ত্রাসী সংগঠন কে কেনো ঘৃণা করি, আমাকে সেটা এক্সপ্লেইন করতে হচ্ছে। কিন্তু তালিবান প্রেমীরা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন কে কেনো জানের থেকেও বেশী ভালোবাসে তার এক্সপ্লেনেশন তাদের করা লাগে না। যাইহোক... এখন তালিবান কি করছে, কেনো আমি তালিবান ঘৃণ্য করি এর লিস্ট দিতে গেলে আস্ত একটা বই হয়ে যাবে... তাই ছোট করে কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা বলি।

কয়েকদিন আগে তালিবানরা "কাশা জাওয়ান" নামে একজন কৌতুক অভিনেতাকে খুন করেছে যেটা পরে তালিবান স্বীকার করেছে। খুন করার আগে তাকে হাত পিছনে বেধে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে একটি গাড়িতে বসিয়ে ব্যাপক লাঞ্ছনা, অপমান ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাকে লাঞ্ছিত করা ও শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে যায়। আপনারা Google এ Khasha Jawan লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন ভিডিও। ভিডিওটি খুবই মর্মান্তিক এবং একজন মাঝ বয়সী চিকন হ্যাঙ্গলা পাতলা মানুষ কে সবাই মিলে মারছে, অপমান করছে এটা খুবই অস্বস্তিকর ছিলো দেখা। যাইহোক... তাকে এভাবে অপমান, লাঞ্ছনা ও নির্যাতন করার পর তাকে গাছের সাথে বেশে তার কলা কেটে দেওয়া হয় এবং ঐ ভাবেই তার মৃত্যু হয়।

প্রশ্ন আসে. একজন কমেডিয়ান কে কেনো মারা হলো?
কাশা জাওয়ান মজার মজার ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতো। সে টিকটকে ফানি ভিডিও বানাতো। তার কিছু ভিডিওতে সে তালিবান কে নিয়ে মজা করেছিলো। সোশ্যাল মিডিয়াতে কাশা জাওয়ান কে শারীরিক নির্যাতন করার ভিডিওতেও দেখা যায় যে সে এক জায়গায় বলছে "তালিবানের নামের মধ্যেই ব্যান শব্দ আছে। ব্যান না বলে তালিব্যান বলা যায় না।" এটা বলার সাথে সাথেই তার পাশে বসে থাকা তালিবান সৈন্য তাকে চড় মেরে দেন। এভাবেই নির্যাতন করার পর, তালিবানের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে হত্যা করা হয়।

আবারো যাইহোক... অনেক কথা বললাম। তালিবানের অপমান কে তালিবান তো বটেই আমাদের দেশের তালিবান প্রেমীরাও ইসলামের অপমান হিসেবে দেখছেন (এটলিস তাদের বিহেভিয়ার সেটাই বোঝায়)। তারা তালিবান কে ইসলাম ধর্মের চেহারা হিসেবে নির্বাচন করেছে। কিন্তু... বিশ্বাস করেন, তালিবান ইসলামের জন্য খুব সুন্দর কোন চেহারা হবে না, সেটা সময়ই বলে দেবে।

তালিবানের অপকর্ম, মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের কোন শেষ নেই। তারা একের পর এক ঘৃণ্য কাজ করেছিলো, সামনেও করবে। আপনি তালিবান প্রেমী হয়ে কয়টা ডিফেন্স করবেন?

আমি তালিবান কে ঘৃণা করি কারণ আমি গুহায় বসবাসকারী যাযাবর, মানবতা বিরোধী হিংস্র জানোয়ারদের আমার আইডল হিসেবে দেখি না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৩৭

নতুন বলেছেন: অজ্ঞতা সবচেয়ে বড় অভিসাপ। এই সব তালেবান বা আমাদের দেশের মানুষ যারা এই রকমের দলকে সমর্থন করে তারা বিশ্ব সম্পর্ক কিছুই জানেনা। তারা জানতেও চায় না আসলে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.