নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট্ট শহরের সাধারণ ছেলে । পড়তে ভালোবাসি, নতুন কে ভালোবাসি আর ভালোবাসি জ্ঞানচর্চা ।

মোঃ মেহেদী হাসান সজীব

1 2 3 Start

মোঃ মেহেদী হাসান সজীব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালাল মিথ্যাচার

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৫৭


সালেহ আহমেদ তাকরীম কে তা নিশ্চয় আর বলা লাগবে না। আপনারা এক নামে সবাই তাকে চেনেন এখন। কিন্তু আপনারা কি জানেন এ বছর তাকরীম সৌদি আরব থেকে হিফজুল কোরানে তৃতীয় হয়েছে সেই তাকরীমই এই একই বছরে মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে ৩৮তম ইরান আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ।

কিন্তু ২০/২২ তারিখের আগে কেউ কি চিনতেন এই তকরীম কে? একটা মানুষও তার নাম জানতো না। কেনো বলেন তো? কেনো তাকে সে যখন প্রথম স্থান অর্জন করেছিলো তখন তাকে কেউ চিনতো না? কারণ, তখন বাংলাদেশের মিথ্যাবাদী মোল্লা মুমিন সমাজের তাকে কোনো প্রয়োজন ছিলো না। তাই কেউ তার খবর রাখেনি।

তাহলে এখন কিসের এতো প্রয়োজন পড়লো?
হ্যাঁ... বাংলাদেশের ঐ ১১ মেয়ে যখনি দেশে পুরুষকার নিয়ে আসলো তখনি এই দেশের হুজুর মোল্লার দল রাগে, ক্ষোভে, হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হতে লাগলো। আর এই হিংসার জ্বালা থেকে বাচতেই এই মিথ্যাবাদী মোল্লারা দেশে নারী ফুটবলারদের নামে কুৎসা রটানো, তাদের গালী দেওয়া, ন্যাংটা মেয়েছেলে ইত্যাদি বলতে শুরু করলো ও তাদের হেনস্থা ও অপমান করলো। কিন্তু এতেও তাদের হচ্ছিলো না। তাই প্রয়োজন পড়লো তাকরীমের মতো একজন কে।

তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু প্রশ্ন আসে যে আমি এই মোল্লাদের মিথ্যাবাদী কেনো বলছি বার বার? বলছি....

যেদিন থেকে তাকরীমের নাম শুনেছেন আপনারা, সেদিন থেকে কি শুনে আসছেন? আব্বাসী হুজুর থেকে শুরু করে আহমাদুল্লাহ হুজুর... বাশেরকেল্লার মতো পেজ থেকে শুরু করে প্রতিটা মুমিনের প্রোফাইলে... কি শুনে আসছেন আপনারা? আমরা সবাই শুনছি... সালেহ আহমেদ তাকরীম ১১১ টি দেশের ১৫৩ টি হাফেজের সাথে প্রতিযোগিতা করে ৩য় হয়েছেন। কিন্তু আসলে কি বিষয়টি তাই? এটা আমার দেখা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ও বৃহৎ পরিসরে বলা একটি মুসলিম মিথ্যাচার।
বিষয়টি খুলে বলি আপনাদের।

৪২তম বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে। এখানে ১১১ টি দেশের ১৫৩ জন হাফিজ সর্বমোট ৫টি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতি দেশ থেকে সর্বোচ্চ দুইজন করে অংশ নিতে পারে এবং একজন প্রতিযোগী মাত্র একটি ক্যাটাগরিতেই প্রতিযোগিতা করতে পারবে। কেউ একাধিক গ্রুপে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। আর এই ৫টি গ্রুপ ছিলো...

গ্রুপ-১: ভালো উচ্চারণ সহ সম্পূর্ণ কোরান মুখস্থ বলা ও তাফসির করা।
গ্রুপ-২: সম্পূর্ণ কোরান মুখস্থ বলা ও শব্দের অর্থ বলা।
গ্রুপ-৩: সম্পূর্ণ কোরান মুখস্থ বলা।
গ্রুপ-৪: ধারাবাহিক ১৫ পারা মুখস্থ বলা।
গ্রুপ-৫: ধারাবাহিক ৫ পারা মুখস্থ বলা।

প্রতিটি গ্রুপেই ১ম, ২য় ও ৩য় আছে। এভাবে মোট ৫x৩=১৫ জন বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে তাকরীম ৪র্থ গ্রুপ থেকে অর্থাৎ ১৫ পারা মুখস্থ বলায় ৩য় হয়েছে। এখানে যেহেতু একজন প্রতিযোগী একের বেশী গ্রুপে অংশ নিতে পারবে না তাই গড়ে ধরা যেতে পারে প্রতি গ্রুপে ১৫৩÷৫= কমবেশি ৩০ জন করে প্রতিযোগী ছিলো। আবার ১১১ টি দেশের সবাই যে সমান সমান ভাবে সবগুলো গ্রুপে অংশ নেবে তাও না কারণ গ্রুপ-১ এর পুরুষকারের টাকার পরিমাণ ও সম্মাননা সবচাইতে বেশী এবং গ্রুপ ৫ এর সবচাইতে কম। তাই কোনো গ্রুপে বেশী প্রতিযোগী বা কোনো গ্রুপে কম প্রতিযোগী হতেই পারে। আমি বহু সার্চ করেও তাকরীমের গ্রুপে কয়টি দেশ ছিলো বা কতজন প্রতিযোগী ছিলো তা জানতে পারিনি। তবে... তাকরিম যে ১১১টি দেশের ১৫৩ জনের সাথে প্রতিযোগিতা করে ৩য় হয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা যা আপনার আমার সাথে দেশের লক্ষ লক্ষ মোল্লা মুসলমান, হাজার হাজার আলেম ওলামা ও বড় বড় ওয়াজি হুজুর হাজার হাজার মানুষের সামনে অথবা তাদের ফেসবুক পেজে বলেছে তাকরীম কে মেয়েদের সাথে একটা প্রতিযোগিতা মূলক দেখিয়ে তাকে মেয়েদের থেকে বেশী যোগ্য দেখানোর জন্য।

[নিচে সৌদি আরবের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া আছে। সেখানে প্রতিযোগিতার নিয়ম ও পদ্ধতি বিস্তারিত দেওয়া আছে। সাথে তাদের অফিশিয়াল Twitter একাউন্টও দেওয়া আছে যেখানে কয়েকটি পোস্ট পরেই ৫টি গ্রুপের বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পোস্ট আছে।দয়া করে নিজেরা চেক করে নিবেন... মিথ্যাবাদী হুজুর আর ওয়াজি মোল্লাদের কথা শোনার আগে]

দেখেন... আমি কিন্তু এখানে কোনো ভাবেই তাকরীমের এই অর্জনটাকেও ছোট বলছি না। তাকরীম হয়তো নিজেও জানেনা যে দেশের হুজুররা তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে বা এরকম একটা প্রতিযোগিতা মূলক পলিটিক্স খেলছে। বেশী না হোক... ৫টি দেশের ৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যেও প্রতিযোগিতা করে ৩য় হয়ে আসাটাও সম্মানের এবং মর্যাদার বিষয়। মুসলিমরা চাইলে এই সত্যটাই গর্বের সাথে প্রচার করতে পারতো এবং সেটাও একটা গর্বের বিষয় হতো। কেউ বিপদের বা ঠেকায় পড়ে মিথ্যা বললে সেটাও মেনে নেওয়া যায়।

কিন্তু... এরা মিথ্যাবাদী মোল্লার দল। হাটে, বাজারে, ঘাটে মুখ বিক্রি করে এদের পেট চলে। এরা কি আর অল্পতে ঠাণ্ডা থাকে? নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে আজান শুনে মুসলমান হয়ে গেছে, আবার সাঈদী কে চাঁদে দেখা গেছে এইসব মিথ্যা কথা না বললে কি এদের পেটের ভাত হজম হবে? অন্যদিকে যেসব মেয়েদের বাইরে বেরোনো যাবেনা, কাজ করা যাবেনা বলে ঘরে আটকে রাখতে চেয়েছিলো সেই মেয়েরাই ফুটবল দিয়ে এদের বীচিতে লাথি মেরে কাপ নিয়ে এসেছে আবার ছাদ খোলা বাসে ঘুরেছে। এই দেখে তো হুজুরের তো মাথায় পড়েছে ঠাডা আর গায়ে ধরেছে আগুন... এতো বড় অপমানের প্রতিশোধ না নিয়ে হুজুরের দল ঠাণ্ডা হবে? তাই বেহায়া নির্লজ্জের মতো সারাদেশ জুড়ে শুরু করলো মিথ্যা বলা।



তথ্যসূত্র সমূহঃ
(১) http://www.alquran.gov.sa/?page_id=109 ওয়েবসাইটটি আরবিতে আছে তবে আপনি যেকোনো ট্রান্সলেটর Add-On ইউজ করে এক ক্লিকেই পুরো সাইটটি ইংরেজি করে ফেলতে পারবেন।
(২) https://www.twitter.com/Saudi_Moia
(৩) Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.