নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমালোচনা

জামিউল আলম

সমালোচনা

জামিউল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

উষ্ণতার একদিন

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৪

সময়টা জানুয়ারির শুরুর দিকে।বলতে গেলে সোয়েটারের শীত মূলত তখনই পরে।সোয়েটার নামক জিনিসটা আমি বড়জোর ২০-২৫ দিন ব্যাবহার করে।ডিসেম্বারের শেষের ১০ দিন আর জানুয়ারির শুরুর ১৫ দিন।এছাড়া শীতের বাকি দিনগুলো আমি আমার ফুল হাতা কালো শার্টেই কাটিয়ে দিতে পারি।কালো আমার প্রিয় রঙ।কালো সব ধরনের বিকিরন শোসন করতে পারে।তাই শীতের দিনে কালো পোশাক তুলনামুলকভাবে একটু আরামদায়ক।প্রিয় ঋতু শীতের সাথে এমনভাবে সমীকরণবদ্ধ বলেই হয়তো কালো আমার এতো প্রিয়।

ও আচ্ছা,যা বলছিলাম।জানুয়ারির শুরুর দিকে।এক সন্ধায়।সন্ধ্যা বললে অবশ্য ভুল হবে।রাতই বলা চলে।দীর্ঘ অনেকদিনের বিরতির পর এক মেয়েকে নিয়ে হেটে বাসায় যাচ্ছি।ফার্মগেইট থেকে শাহবাগ হয়ে মৎস্যভবন পর্যন্ত রাস্তাটায় শীত ভালোই পড়েছে।কালো শার্টে শীত মানছে না।রাতের বেলা কোন বিকিরন নাই।সেকারনে কালো শার্টের মূল সুবিধাটা ভোগ করা যাচ্ছে না।এই শীতের মধ্যে সোয়েটার ছাড়া একটা কালো শার্টে এসে এক রকম ভুলই করেছি বোধ হয়।

আশেপাশে একটা নজর বুলিয়ে দেখলাম সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত।এই বুঝি সুযোগ এলো।

আচ্ছা,একটু হাতটা ধরতে পারবো?

অনেকটা অবাক হয়েই নাবিলা "নাহ!!!!" বলে উঠলো।

-কেনো??



-লজ্জা লাগছে আমার।



-কি বলো!!লজ্জা-শরম তো আপেক্ষিক ব্যাপার।কেউ না দেখলে আবার কিসের লজ্জা!!



-তোমার হাত অনেক ঠান্ডা।তাই ধরতে ইচ্ছা হচ্ছে না।



মেয়েদের দেহের তাপমাত্রা আমাদের চেয়ে বেশী।একটা সুযোগ পেয়েছিলাম হাতটা উষ্ণ করার।হলো না মেয়েটার কারণে।বেশী ভদ্রতা দেখালো।আচ্ছা ভদ্র হলে কি আমার সাথে এভাবে হাটতো?না মনে হয়।তবে তার আচরণবিধি আমার চেয়ে একটু উপরে।এই কারনেই এতো আপত্তি।

রাস্তার অপর পাশে যেতে হবে।আমি ওভারব্রিজের উপর উঠতে পারবো না।এতো টাইম নেই আমার।হাতটা ধরতে পারলে নাহয় উপরে উঠার কথা ভেবে দেখতাম।



-চলো নিচ দিয়েই পার হই।



-আশ্চর্য!!আমি মেয়ে হয়ে কি তোমার মতো লাফিয়ে রাস্তা পার হবো নাকি!!



-সমস্যা নেই,বোরকাটা একটু উচিয়ে ধরো।ইনশাআল্লাহ্‌,পারতে তোমাকে হবেই।



-চুপ,একদম চুপ।ওভারব্রিজ কি তামাশা দেখার জন্য বানিয়েছে?হাদারাম কোথাকার!!উপরে উঠো।



ওভারব্রিজ অ্যাকচুয়ালি লেংরা প্রতিবন্ধিদের জন্য বানিয়েছে।যদিও সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার চেয়ে ওদের জন্য নিচ দিয়ে পার হওয়াটাই বেশী আরামদায়ক তবে ভিক্ষা করার জন্য উপরেই বেটার।



দেখতে দেখতে একেবারে বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি।আমার না,নাবিলার বাসা।এখান থেকে তাকালে বিকেল বেলা বারান্দায় ওর ঠোলা আব্বাজানকে দেখা যায়।ঠোলা বলতে আমি আসলে টাকলুদের বুঝাই।এটা ক্লাস সেভেনে থাকতে এক বন্ধু শিখিয়েছে।ও ঠোলা নিয়ে দারুন একটা গান বানিয়েছিলো।আমাদের এক টাকলু টিচারকে দেখলে প্রায়শই আস্তে আস্তে গানটা ধরতো।গানটার সুর ছিলো "হায়রে মানুষ,রঙিন ফানুশ" গানের কপি।লিরিক দিচ্ছি।একটু টান তুলে দেখেন-"হায়রে ঠোলা ****পোলা,চুতমারানির পুত।হায়রে ঠোলা......(দীর্ঘ টান হবে)......,****পোলা।"



বিদায়কালে নাবিলা বাসায় পৌঁছে কল দিতে বললো।কিন্তু হায়!

-আমার মুঠোফোন যে তস্করে নিয়েছে।



-ধাততরি,ইচ্ছা হচ্ছে মোবাইলের দোকানে গিয়ে দুইটা আইফোন চুরি করে নিয়ে আসি।



-দুইটা কেন?তোমার তো মোবাইল আছেই।



-এটা তো শীতে জমে গেছে।কয়েকদিন পরপর সার্ভিসিং করাতে হয়।নতুন একটা দরকার।



-ও আচ্ছা।মেয়েছেলে সব পারে কিন্তু মোবাইল চুরি করতে জানে না।



-কিছু বললা?



-নাহ,কিছু নাহ।রাত অনেক হয়েছে।যেতে হবে।



অনেক ঠান্ডা।সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছিলো।একটু বোধহয় মায়া হলো আমার কাঁপুনি দেখে।ভেবেছিলাম সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে একবারের জন্য হলেও তাপমাত্রাটা কমিয়ে দিবে।নাহ,এই যাত্রায় গায়ের চাদরটাই দিলো।

মেয়ে মানুষের চাদর গায়ে দিয়ে হাটতে হাটতে আজকের খুটিনাটি ব্যাপারগুলো নিয়ে গবেষণা করলাম কিছুক্ষণ।কিছু সিদ্ধান্তেও উপনীত হলাম।যেমন-

মেয়েছেলে সব পারে কিন্তু ঠান্ডা হাত সহ্য করতে পারে না।

মেয়েছেলে সব পারে কিন্তু আমাদের মতো লাফিয়ে রাস্তা পার হতে পারে না।

মেয়েছেলে সব পারলেও মোবাইল চুরি করতে পারে না।

এবং মেয়েছেলে কিছু না পারলেও শীতকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে এবং কখনও কখনও আমাদেরকেও।



/*ক্যাটাগরি-অ্যাটলিস্ট কারো কাহিনী না এটা।জাস্ট লেখনীটা যাচাই করলাম নিজের।*/

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.