নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেখেছি তার; কালো অপরূপ রূপ

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৬

ক”দিন আগে সাবওয়ে চেপে যাচ্ছিলাম, শহরের পশ্চিম থেকে পূব প্রান্তে। সময়টা ছিল অফিসগামী লোকের ব্যাস্ততার। প্রথম স্টেশনের খালি কামড়াগুলো ধীরে ধীরে ভরে উঠতে লাগল, প্রতিটি স্টেশনে। বেশীর ভাগ মানুষ সারাদিন অফিসে কাটানোর প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়েছে। আমি দেখছি, কত রকমের সাজ পোষাক আর কত রকমের মানুষ। আজকাল মানুষ দেখতে আর এক একজন মানুষকে ঘিরে এক একটা গল্প বানাতে আমার খুব ভালোলাগে।
দিন রাতের বিভিন্ন সময় পাবলিক গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ালে। সময়ের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের মানুষের চলাফেরার সঙ্গী হওয়া যায়। কেউ গাড়িতে উঠেই চোখ বন্ধ করে আরো খানিক ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে। এদের রাতগুলো খুব ছুটো বুঝা যায়। বাড়ি ফিরে অথবা না ফিরে এরা হয়ত আরো কিছু কাজ সেরে ঘুমাতে যায় গভীর রাতে। চাকচিক্য আর জৌলুস যেমনই থাক শরীরের ক্লান্তি অন্য কথা বলে।
আজকাল বিভিন্ন বয়সের মানুষ চোখ রাখে হাতের মুঠোবন্দি ফোনে। এক ধরনের রঙ মিলানোর খেলায় মাততে দেখি প্রায় সকলকে। অনেকে পড়েন যত্ন করে চামড়ায় মোড়ানো ব্যাগ খুলে ট্যাবলেট, নোটবুক খুলে। কেউ বা এখনও বই বের করেন ব্যাগের গভীর থেকে। চিহ্ন আঁকা পাতা খুলে মেলে দেন চোখ এবং মন। অনেকের হাতে থাকে ফ্রি সকালের পত্রিকা। খেলা বা বিজ্ঞাপন বা ভোটের খবরে চোখ রাখেন যে যার ইচ্ছে মতন। মনে পড়ে গেলো অনেক বছর আগে ভোরে এবং বিকালে একজন যাত্রীর সাথে প্রায় প্রতিদিন দেখা হতো বাসের মধ্যে। গাড়িতে উঠেই সে বই খুলে পড়ত, বসার জায়গা পাক বা দাঁড়িয়ে থাক। বই পড়তে পড়তে ফিক ফিক করে হেসে যেতো। মাঝে মাঝে খুকখুক শব্দও করে ফেলত হাসি দমাতে না পেরে। সে যে হিউমারাস বইয়ের মহাভক্ত। তার সাথে কথা না বলেও জেনে গেছি। একদিন পাশাপাশি সিটে বসেছিলাম। অনেকটা পথ চলতে ঘিয়ে আড় চোখে তাকিয়ে তার বইয়ের পাতা আমিও অনেকটা পড়ে নিজের মনেই হেসেছিলাম, শব্দ লুকিয়ে যেন সে ধরতে না পারে তার বই আমিও পড়েছি। বাংলায় হিউমারাস লেখা বড় কম। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লোটাকম্বল বইটা পড়ে, অনেকদিন পর একা একা হেসেছিলাম।
পাতালরেল যত এগিয়ে যায় তত বাড়ে মানুষের সংখ্যা। যারা পরে উঠে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, বসার জায়গা না পেয়ে।
সেদিন সকালে পেলাম, বেশীর ভাগ নারী যাত্রী। তাদের পোষাক বলে দেয় অফিস কর্মি তারা। বেশ খানিক সময় নিজের মুঠোফোনে চোখ রেখে সামনে তাকালাম। নতুন একটি স্টেশনে থেমেছে রেল। দরজা বন্ধ হওয়ার মূহুর্তে একটি মেয়ে ঢুকল। গভীর মিশমিশে কালো তার গায়ের রঙ। মুখের দিকে তাকালে মনে হয় চোখের দুটো অংশ সাদা সরোবর, জ্বলজ্বল করে জ্বলছে অন্ধকারে। কিন্তু কী ভায়াবহ আকর্ষন তার কালো কুচকুচে মুখে। এমন নিটোল নারী ভাস্কর্য আমি বহুদিন দেখিনি। এই রমণী একাই একটি গল্প হয়ে উঠল।
শুধু মুখ নয় তার সমস্ত অবয়ব নিপুন কারিগরের খোদাই করা এক অপরূপ চিত্রকলা। এই রেলের কামড়ার, চারপাশের নানা বর্ণের নারীদের দিকে চোখ রেখে আমি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলাম, কাকে সব চেয়ে সুন্দরী বলা যায়। অল্প বয়সি থেকে মাঝ বয়সের অনেক বর্ণের সুন্দরী রমণী দেখলাম। কিন্তু কালো মেয়েটির কাছাকাছি আর কাউকে পেলাম না। আমার চোখে সেই মূহুর্তের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী এই কৃষ্ণকলি।
আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতন তাকে দেখলাম। আর মনে হলো এমন কালো মেয়ের কী কোন যোগ্যতা আছে বাংলাদেশের বউ হওয়ার। যেখানে অধিকাংশ পুরুষ কালো তারা ফর্সা রমণী খোঁজে বিবাহের জন্য। ব্লিচ, হারবাল, নানা রকম ক্রিম মেখে মেয়েরা নিজেদের কেঁচে ফর্সা করায় ব্যাস্ত থাকে কারো বউ হওয়ার জন্য। অথচ পৃথিবীর এক বিশাল অংশ জুড়ে বাস করে এই কালো নারী। তারা ঘর করছে লেখা পড়া করছে। অনেকে পৃথিবীর স্রেষ্ট অবস্থানে জীবন যাপন করছে তাদের কালো রঙ নিয়ে। যে অবস্থানে অনেক পুরুষ পৌঁছাতে পারে না।
হঠাৎ মনে পরে গেলো কলেজে মেয়েদের দেখতাম রাতে লাগানো হলুদের প্রলেপে, হলুদ ছোঁপ ছোঁপ চেহারা নিয়ে ক্লাসে হাজির হতো। অতি সম্প্রতি জাপানের এক মেয়ে নিজের চেহারা এবং শরীর, বারবি ডলের মতন করেছে, প্লাস্টিক সার্জারি করে করে। মানুষের কত অফূরান পয়সা নিজেেকে বদলে ফেলার এবং কী অদম্য ভালোলাগা বারে বারে ডাক্তারের ছুড়ি কাঁচির নীচে যাওয়ার সুস্থ থেকেও নিজেকে বদলে ফেলার জন্য!
আমি যেমন; তেমন না থেকে, কেন যে অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয় নারীরা! কার জন্য নিজেকে পাল্টে ফেলার অভিপ্রায় তাদের। বুঝি না তবে এটুকু বুঝি এই বৈষয়িক জগত ভীষন ভাবে দখল করে আছে তাদের মানসিকতা। চারপাশ বলছে তুমি সুন্দর হও। অথচ সুন্দরের সঠিক সংগা কোন ব্যাখ্যা তাদের দেয়া হচ্ছে না।
মনের মাঝে গেঁথে দেয়া বিজ্ঞাপনের আর্কষণিয় আবেদন এবং সমাজের নানা কুসংস্কার মানুষের চেহারা যাচাই করার। সত্যিকারের মানুষ না হয়ে কৃত্তিম সৌন্দর্য়ের প্রতি ধাবিত করে তাদের। নানান রকম ভালোলাগার মিশ্রনে মেয়েরা চুল থেকে পায়ের নখ সাজাতে ব্যস্ত থাকে। বদলে ফেলতে চায় নিজের চেহারা, শরীর নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ.চেহারা আর এই অনুভবকে মূলধন করে আধুনিক বিশ্ব ব্যবসা করে যায় চুটিয়ে নারীর শরীর মূলধন করে।
অনেক সময় বিয়ে বাড়িতে বউ দেখে পরে দেখা হলে তাদের আমি আর চিনতে পারি না। কালো মেয়েটি পুরোই ধবধবে ফর্সা। অথবা তাদের চোখ নাক ভ্রু ভঙ্গি পুরাই বদলে যায় মেকআপের তুলির টানে। এই মেয়েগুলোর নিজের বিয়ের ছবি দেখে কখনও কি মনে হয় না তারা অন্য কারো ছবি দেখছে, খুব জানতে ইচ্ছে করে।
অতি সম্প্রতি, দুটো ঘটনা ঘটেছে, চীন এবং আফ্রিকায় দুজন স্বামী তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কারণ সুন্দরী বউ বিয়ে করেছে অথচ তাদের সন্তান হয়েছে কুৎসিত। এবং পাওয়া গেছে সুন্দরী স্ত্রীরা আসল চেহারা সুন্দর নয়। ডাক্তারের ছুড়িতে প্লাস্টিক সার্জারি করা নকল সুন্দরী! তৈরী করা। এই সৌন্দর্য ধারন করতে পারেনি গর্ভের সন্তান! প্রকৃতি প্রকৃতিকেই ধারন করেছে প্রকৃতি নকলকে ধারন করতে পারে নাই।

একটি মেয়েকে চিনতাম। মায়াময় মুখের এক জাপানি কিশোরি। বাবা মার অঢেল টাকা পয়সার ব্যয় শুরু হলো নানা রকম দামী পোষাক প্রসাধনি, আনুসাঙ্গিক সমস্ত সাজ সরঞ্জামে ব্যয় করে। যুবতি হয়ে উঠার সাথে সাথে সে তার শরীর বদলাতে শুরু করল। মুখ চোখ, ঠোঁট, নাক, স্তন, কোমর আরো কোথায় কোথায় সেই জানে আমি জিজ্ঞেস করে জানতে চাইনি আর। একদিন তাকে দেখে চিনতে পারলাম না আর। সে নিজের আদল বদলে মিষ্টি চেহারার মিউকি থেকে এখন এক কটকটে চেহারার অচেনা মানবী আমার কাছে।
ওকে আর আমার ভালোলাগে না। যেমন ভালোলাগছে এই আদি অকৃত্রিম কৃষ্ণসুন্দরীকে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৩

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: সবকিছুতেই আসলে সৌন্দর্য্য আছে। দেখবার ব্যাপার। সাদারা যখন আফ্রিকায় যায়, কালোরা নাকি দেখে ভেবেছিলো ওদের চামড়ায় অসুখ হয়েছে। আমি আপনি একটা বাঙ্গালী শ্যামলা মেয়ের রুপ যেভাবে উপভোগ করি, বুঝি সেটা অন্য সাদা চামড়ার মানুষ নাও বুঝতে পারে। চেহারার এই প্যাটার্নটা তাদের কাছে খানিক অচেনা লাওতে পারে। এটা আবার আনেক দেশে কম দেখবেন যেখানে মিশ্র বর্নের মানুষ থাকে। একটা মানুষের সৌন্দর্য্য তার মনেই, কেবল সেটা দেখা যায়না দেখে আমরা আপাত দৃস্টীতে দেখতে পারা শারিরীক সৌন্দর্য্যের দিকে দৌড়াই।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: মৌলিক বিষয় রেখে কৃত্তিম চারপাশ থেকে ছেকে ধরছে মানুষের ভাবনা চিন্তা। চকচক করিলেই সোনা হয় না এ বিষয়টা মনেই থাকে না।
শুভ কামনা শতদ্রু একটি নদী

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৬

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
মিছে মরিচিকার পেছনে ছুটছে নারীরা। :)

আজকাল পুরুষগুলোও গুণের কদর না বুঝেই রূপের পেছনে ছুটছে।

ভাল লাগা আপনার লেখায়।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়
পুরুষ আজকাল নয় বরাবর ছিল কিন্তিু আমার প্রশ্ন মেয়েরা পুরুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য ছুটছে কেন?

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর পর্যবেক্ষণ। +++

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব।
চেষ্টা করি। এখানে আরো একটা ঘটনা দিলে ভুলে গেছি। অতি সম্প্রতি, দুটো ঘটনা ঘটেছে, চীন এবং আফ্রিকায় দুজন স্বামী তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কারণ তাদের সন্তান হয়েছে কুৎসিত। এবং পাওয়া গেছে সুন্দরী স্ত্রীরা আসল নয় নকল সুন্দরী! তৈরী করা।
প্রকৃতি নকলকে ধারন করতে পারি না।।

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

মনমঞ্চ বলেছেন: আপনার প্রতিটি ঘটনা বর্ণনা করার ধারা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে । ভালো থাকুন, আপনার জন্য শুভকামনা রইল ।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪১

রোকসানা লেইস বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালোলাগল।
শুভকামনা মনমঞ্চ

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

হামীম বলেছেন: কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি সে যতই কালো হোক।

৮| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: জ্ঞানের উন্মেস ঘটুক দিকে দিকে।
শুভ কামনা হামীম

৯| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৯

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১০| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৪৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রামানিক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.