নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাণ হরিয়ে তৃষা হরিয়ে আরো আরো চায় প্রাণ

১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:২০




দ্বিতীয় পর্ব

হীরেন্ভীন স্টেশনে ট্রেন মোটামুটি যাত্রী শূন্য হয়ে গেল। পাশের যাত্রী নামার আগে, বলে দিয়েছে হীরেন্ভীনের পরের স্টেশনটা আমার আর শেষ গন্তব্য ট্রেনের। যন্ত্র দেখে যদিও জানছি তবু ওর বলায় একটু বেশি নিশ্চিন্ত হয়ে স্টেশনে পৌঁছার আগেই দোতলা থেকে নিচে নেমে এলাম। এখন শিখে গেছি বাটন চেপে দরজা খোলা। ট্রেন থামতেই ঝুটপট নেমে পরলাম। সবার আগে থেকেও দেখলাম, একদল লোক পেছন থেকে এসে আমাকে পেরিয়ে যেতেই থাকল দ্রুত। সেই মানুষের স্রোতের সাথে মিশে আমিও এগুচ্ছি আমার গতিতে।
স্টেশনের দরজা পেরিয়ে বেরুনোর সাথেই দেখা হয়ে গেল মানুষটির সাথে। তিনিও গাড়ি থেকে নেমে তখনই এসে দাঁড়িয়েছেন।
কথাবার্তা আগে থেকেই হচ্ছিল প্রাথমিক দেখার সৌজল্যতা শেষ করেই আমরা ছুটলাম গাড়ির দিকে। উনার স্ত্রী গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন রাস্তায়। বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাবে না সেখানে।
গাড়িতে বসে কথাবার্তা শুরু হলো আমাদের ভালো করে। প্রাথমিক পরিচয় পর্ব উনার স্ত্রী সাথে হলো। যাকে চোখে দেখিনি কেবল ছবি দেখেছি আগে।
নিখাদ ডাচ মহিলা। দারুণ হাসি খুশি। একজন বাংলাদেশি পুরুষ একজন ডাচ মহিলা এবং তাদের যৌথ উৎপাদন একমাত্র কন্যা সন্তান এই নিয়ে সাজানো সুখের সংসার।
তাদের বাড়িতে তখন বেড়াতে এসেছেন। রোমানিয়ার মহিলা এবং তার স্বামী। কন্যাটি তাদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করছে। সে যত ফ্লুয়েন্ট ডাচ ভাষায় তত ইংরেজি পারে না শিক্ষা নবিস তবে ভালো বলছে। দু চারটা বাংলা শব্দ কিন্তু বাবার সাথে ডাচে কথা বলতেই সাচ্ছন্দ বোধ করে। মায়ের সাথে ইংলিশ প্রেকটিস করে।
স্কুল ছুটির দিনগুলো ব্যাস্ত ঘোড়ায় চড়া, সাঁতার নিয়ে। মা সারা দিন একজন মায়ের ভালোবাসায় সকল দায়িত্ব নিয়ে ছুটছেন মেয়ের ক্লাসের সময় গুনে। মেয়ের স্বাস্থ, মানসিক ডেভলাপমেন্ট, হাসি, আনন্দ, বন্ধুর সাথে সময় কাটানোর জন্য সময় ভাগ করে সব বিষয়ে পাশে থেকে নির্ভরতা দিচ্ছেন মেয়েকে। আন্তরিকতার ছোঁয়া চারপাশে। সাজানো বাড়িটি যেন মায়ায় জড়িয়ে রাখছে সব কিছু ভালোবেসে।
আঠারো উনিশ বছর বয়সে জীবন খুঁজতে বেড়িয়ে পরা মানুষটি অনেক দেশ ঘুরে অনেক বাউন্ডেলে জীবন কাটিয়ে লণ্ডনের প্রায় সাজানো অবস্থা থেকে বেড়াতে এলেন নেদারল্যন্ডের লিউয়ার্ডেনে আর ভাগ্য সেখানেই উনার জন্য জায়গা করে দিল, সুখ খুঁজে দিল। স্বস্থির আশ্রয় গড়ার ইচ্ছা জাগিয়ে দিল।
প্রিয় মানুষটির সাথে দেখা হয়ে গেল এখানেই। আগের সব ছেড়ে ছূঁড়ে দিয়ে নতুন করে সাজিয়ে নিলেন জীবন সোহাগের হাত ধরে। বিয়ে মানে নানা যন্ত্রনা বউ মানে এক দুঃসহ বিষয় চারপাশের প্রচলিত কথাগুলো ম্লান হয়ে, বিয়ে ভালোবাসার সত্যিকারের উপমা এই সংসারে বিরাজ করে। নির্ভরতার হাত ধরে পাশাপাশি শক্তি এবং ভালোবাসায় জড়িয়ে আছেন দুজন মানুষ, একজন আরেকজনের পরিপূরক হয়ে। এই দেখাটা খুব ভালোলাগল আমার।
সংস্কৃতি এবং ধর্ম ও জাতিয়তা দিয়ে আসলে মানুষের মন বাঁধা যায় না। মানুষের মন বিশেষ করে বিবাহিত জীবন সুখের হয় পারস্পরিক সমঝোতা এবং ভালোবাসার বিনিমনের মাধ্যমে। যারা যতটা দৃঢ়ভাবে এই ভালোলাগার বন্ধন ধরে রাখতে পারেন তারা তত সুখি হন।
লিভিংরুমে কিছু ছবি তার ভিতর থেকে হাতে আঁকা, পেন্সিলের একটি স্কেচ এনে,আমাকে দেখালেন। দেখ তো চিনতে পারো কিনা?
আমাদের বাসা থেকে পাশের বাসার একটা অংশ যেখানে, এই মানুষটি তরুণ বয়সে আড্ডা দিতেন বন্ধুরা মিলে।
উনার জার্মান গার্লফ্রেণ্ডকে নিয়ে একবার দেশে গিয়েছিলেন। সে মেয়েটিও ভালো ছিল। আমার বাসায় সে সময় দেখা হয়েছিল ওর সাথে।
সে মেয়েটির সাথে ঘর করা হয়নি উনার পরে। হারিয়ে গিয়েছিল জীবন থেকে। কিন্তু কিছুদিন আগে উনাকে খুঁজে বের করেছে মেয়েটির বাবা মা, মেয়েটির আঁকা ছবি উনাকে দিয়েছে। মেয়েটি ক্যানসারে মারা গেছে কয়েক বছর আগে। মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো বড় অদ্ভুত।
ডাচ ডিনার তৈরি করেছে উনার বউ। আমরা সবাই মিলে হাসি গল্পে খাওয়া শেষ করলাম। সারা সপ্তাহ ব্যস্ততার, এই একটা দিন উনি পরিবারের সাথে কাটান। বাকি ছয়দিন নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন। দুপুর থেকে দুপুর রাত পর্যন্ত। কথা বলতে বলতে জানালেন কে জানত জীবনে ভাত বেঁচে খেতে হবে।কত কিছু করতে গেলাম। শেষে এই ভাত বেচাই রয়ে গেল। খুব ভালো আছি শুধু বাবা মাকে দেখাতে পারলাম না কিছু এই দুঃখটা কখনো যায় না মন থেকে।
দেশের বাড়িতে এখন তেমন কেউ নেই। বাবা মা গত হয়েছেন অনেক দিন। উনার বিয়ের দিনটি খুব উল্লেখযোগ্য আমার কাছে। উনার বউয়ের পরিবারের সবাইকে দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার বাবা উনার বিয়েতে শেষ আনন্দ করে ছিলেন দিনের বেলা। আর রাতে চলে গেলেন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে একদম আকস্মিক ভাবে।
মাঝে মাঝে বাউন্ডলে হয়ে যান। একদিন পরিচিত এক বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়ে খুব আনন্দে আছেন আমর্স্টাডেমে। ঘুরছেন সারাদিন। যেন কোন পিছুটান নেই মহা আনন্দ। আগের সব গল্প বন্ধুদের কথা ঠিক যেন জীবনের সেই সময় ফিরে এসেছে। কথা ঘোরা ফেরা আনন্দ করছেন। কিচ্ছু মনে নেই এ সময়ের। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। ডিনার করে রাতের শহর ঘুরতে যাবেন। এমন সময় বউয়ের ফোন জরুরী একটা বিষয় জানার জন্য। বাস! ফিরে আসা বা কোথায় আছেন কখন ফিরবেন কিছুই জানতে চায়নি । অথচ উনি ফিরে এলেন বাস্তবে। উনার আর আনন্দ লাগছে না কিছুতেই। উনার কেবল বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছে তখন। কোন রকমে ডিনার শেষ করেই উঠে পরলেন ফেরার জন্য ফিরতেও সময় লাগবে সেটুকু আর সহ্য হচ্ছে না। উড়াল দিয়ে চলে আসার ইচ্ছা জেগেছে। এই একটা দিনই তো এই অণ্প সময় এখনের কাছের মানুষের জন্য। বাস্তবতা এই জীবন। অতিত ঘাটায় নয়।
খুব ভালোলাগল শুনে আমিও এমনই ভাবি। বর্তমান সময় আনন্দময় করা অতিত সে তো সাথে আছে। সুখ দুঃখ যা পাওয়া হয়েছে তা আনন্দের অভিজ্ঞতার। সে অভিজ্ঞতার আলোকে সাজিয়ে নিতে হবে জীবন প্রতিদিন চলার পথে।
ঐ একদিনের পর উনার সাথে আর দেখা হওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু প্রতিদিন সারাদিনের ঘোরাফেরা সেরে আমাকে যেতে হতো উনার রেস্টুরেন্টে। নিজের হাতে প্রতিদিন আমার জন্য নতুন একটা ডিস করতেন। কি যে মজার খাবার। ব্যাস্ত রেস্টুরেন্ট বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত। তারপর সব গুছিয়ে পরের দিনের আয়োজন করে বাড়ি ফেরা।
আমার ঘোরাফেরার জন্য রেস্টুরেন্টের একজনকে আমার সাথে গাইড হিসাবে দিয়ে দিতেন। আমার আসা যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি চলে আসত প্রতিদিন। কোথাও একটি পেনিও খরচ করার সুযোগ নেই আমার। গাইড বলত সেফ, রাগ হবে। সেফ আমার কাছে টাকা দিয়ে রেখেছে তোমাকে নিয়ে ঘোরার জন্য।
আমরা ঘুরি, হাঁটি চলি, দেখি দূরে চলে যাই তারপর ফিরে এসে রেস্টুরেন্টে মজার খাবার খাই। ডেজার্ট খাই। সারাক্ষণ এ ও জিজ্ঞাস করছে কি দিব তোমাকে তারপর ট্যাক্সি আসে আমি বাড়ি যাই। ট্যাক্সিওলা মরোক্কার লোক একটি পয়সাও নিবে না। না না সেফ রাগ করবে। তুমি তার বোন।
জানো তোমার ভাইয়ের গোল্ডনে হ্যান্ড। যেখানে হাত দেয় সোনা ফলে। খুব ভালোলাগল একজন অন্য মানুষের কাছে তার প্রশংসা শুনতে যা ছিল খুব আন্তরিক। মানুষকে ভালোবাসার এবং মানুষের সাথে সহজাত মিশে, আন্তরিকতায় কাছে টেনে নেয়ার প্রবনতা আছে উনার মধ্যে। আসলে আগে ভাইয়ের বন্ধু হিসাবে চিনলেও একজন পরিপূর্ণ মানুষকে কাছে থেকে ভালো করে চিনলাম। যা অনেক ভালো চেনা হলো অন্য কারো কাজ থেকে শোনার চেয়ে। আবিস্কার করলাম একজন মানুষের ভিতর কত সুন্দর সুন্দর গুণ থাকে যা আমরা কখনো জানতে চাই না জানতে পারিও না অনেক সময় খুব কাছে থেকেও।
সময়ের আগে চলা জায়গায় আমার ঘুম আসে না রাতে। যখন মাঝ রাত সেখানে, আমার তখন সন্ধ্যা কেবল। সময়ের হিসাবে মাঝ রাত হয়ে গেলেও আমার চোখে ঘুম নেই। মা মেয়ে ঘুমিয়ে পরলে আমি বসে টিভি দেখি, ওদের বেরিয়ে পরতে হবে সকালে। উনি বাড়ি ফিরলে আমরা গল্প করি অনেকক্ষণ। জানি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। বিভিন্ন পরিবেশের বৈরি বাস্তবতা। সফলতা এবং ব্যর্থতার কথা।
লন্ডনে যখন বেশ গুছিয়ে বসেছেন। তখন বেরাতে আসা এই শহরে। চলে যাওয়ার ঠিক আগের দিন দেখা হয় দুটো মেয়ের সাথে। সুন্দর অনেক আকর্ষনিয় মেয়েটা থেকে ওনার চোখ বারবার চলে যায় হাসিখুশি মোটাসোটা মেয়েটির উপর। ভিতর থেকে কি যেন কথা বলে; এই তো ঠিকানা । এবং জীবনের পথ বদলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। শূন্য থেকে সাজানো শুরু হয় জীবন আবার। সুখ খুঁজে পাওয়ার গল্প। ঐশ্বর্য, সমৃদ্ধি যা একটু একটু করে কষ্টের সঞ্চয়ে পেয়েছেন সব পাওয়ার মাঝে সবচেয়ে বড় যা অর্জন ভীনদেশী মানুষের ভালোবাসা পাওয়া। অনেকের কাছে উনি যেন একজন এঞ্জেলের মতন। এই বিষয়টি সবাই গড়ে তুলতে পারে না।
দেশী বিদেশি মানুষের সাথে অমায়িক ব্যবহারে তাদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া । বিভিন্ন দেশের ছাত্র পড়তে আসে লিউয়ার্ডেন ইউনিভার্সিটিতে। পড়ার ফাঁকে কাজ খুঁজে পায় সেফের কাছে। আন্তরিক ভালোবাসার আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের সাথে। চলে যাওয়ার পরও বিভিন্ন বড় পোষ্টে এক একজন প্রতিষ্টিত হওয়ার পরেও ফিরে আসা উনাকে দেখার জন্য আন্তরের টানে। যেমন রোমানিয়ার মেয়েটি এসেছে আন্তরিক টান থেকে।
প্রতিদিন সকালে বিনয়ের অবতার হয়ে আমাকে বলা হয় কিচ্ছু করতে পারলাম না। তোমার জন্য। সময় দিতে পারলাম না ঘুরাতে পারলাম না। ছুটির সময়টায় আসলে ভালো হতো। আমার শুধু দু সপ্তাহ ছুটি থাকে, সে সময়ে আসলে ভালো হতো। আমি বলি, আমি তো আছি প্রিন্সেসের মতন। খাচ্ছি দাচ্ছি ,ঘুমাচ্ছি, ঘুরছি, আনন্দের সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
যে আন্তরিকতার হিসাব হয় না। শুধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। কিছু করার নেই শুধু বলে আসলাম বেড়াতে আসতে কানাডা। সব ঘুরে চষে ফেলা মানুষটার এখন শুধু ইণ্ডিয়ায় বেড়ানোর ইচ্ছা আছে। ইউরোপ, মিডিল ইষ্ট, আমেরিকা, লণ্ডনে অনেক দিন বাস করা হয়েছে নতুন কিছু দেখার নেই।
চলবে..

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১২

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: সুন্দর ভালো গুছিয়ে লেখা।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মনোযোগী পাঠক আব্দুল্লাহ্ আল মামুন
শুভেচ্ছা রইল

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: আগামী বইমেলাতে কি আপনার কোনো বই আসবে?

১১ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রকাশক করতে চাইলে হবে

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: আগামী বইমেলাতে কি আপনার কোনো বই আসবে?

৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০২

রোকসানা লেইস বলেছেন: আসছে না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.