নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাণ হরিয়ে তৃষা হরিয়ে আরো আরো চায় প্রাণ

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩১

চতুর্থ পর্ব
ভ্রমণ


মিউজিয়ামে যাওয়া হলো। ফেস্টিভেল দেখা হলো। সাগরপাড়ে যাওয়া হলো। শুধু দেখা হলো না অনেক দেখার ইচ্ছার টিউলিপ ক্ষেত। আমি আসার আগের সপ্তাহে কাটা হয়েছে ফুল। ফুলের উৎসব শেষ হয়েছে। যদিও এখানে ওখানে অনেক টিউলিপ, এখনো ছড়ানো। তবে মূল আকর্ষনটা পেলাম না।
চারদিকে ঘিরে আছে রাস্তা। সব রাস্তা ঘিরে জমজমাট আধুনিক এবং ঐতিহাসিক দালান, ব্যবসা কেন্দ্র। রাস্তা এবং নদী পথ। বজরা চলছে নৌযান নিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে সেখানে। চারপাশের খাবার দোকান গুলো জমজমাট । রাস্তার উপর প্যাটিও পাতা। ফুলের সমারোহ। আর মানুষের খাদ্যবিলাশ। খাবারের সুবাস আর সঙ্গীত কথাবার্তায় ব্যাস্ততা, আনন্দ পর্যটক এবং স্থানীয়দের ভীড়।
ফ্রাইসযাদুঘর আধুনিক ঘটনাস্থল এবং স্থানীয় ইতিহাস সংগ্রহ করার জাদুঘর। অত্যাধুনিক কাঁচের ঘরটি সামনে বিশাল খোলা ময়দান।
ফ্রেইসল্যান্ডের ১১ টি শহর ও লোকেদের সাথে সম্পর্কিত জিনিস কর্মযজ্ঞ, সাময়িক প্রদর্শনির এবং স্থায়ী সংগ্রহ। টিকেট কেটে ঢুকতে গেলাম কিন্তু বলা হলো এখন ঢুকা যাবে না। ঘন্টা দুই পরে আসতে হবে। নদীরপাড়ে বসে সকালের ব্রেকফাস্ট করে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। যারা আগে এসেছে ঢুকে পরেছে ভিতরে। ধারন ক্ষমতার বেশি লোক ঢুকতে দিবে না। অতঃপর পনের মিনিট দূরে জেলখানা দেখতে চলে গেলাম। নাম জেলখানা কিন্তু এখানে হচ্ছে নাটক থিয়েটার। সঙ্গীত। কার্টুন। কমিক।



বড় একটি অনুষ্ঠান হবে তার জন্য সাজানো হচ্ছিল । অন্য দিকে খোলা মাঠে কমিক নাটক চলছে। হাস্যরসের মাধ্যমে বাস্তবতার কথা বলা। জেলখানায় এখন কোন কয়েদি নেই। নেদারল্যন্ডে জেলখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বোঝা যায় দেশটিতে দোষ করার মতন কোন মানুষ নেই। শাস্তি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না কেউ। কী অদ্ভুত! এটা কী এই পৃথিবীর দেশ নাকি স্বর্গ। আহা পৃথিবীর সব দেশে যদি এমন জেলখানা বন্ধ হয়ে যেত কী ভালো হতো। কোথাও কোন অপরাধী থাকত না। ডাচরা যদি পারে তবে অন্যরা কেন পারবে না। জেলখানা ঘুরে নদী পথে ঘন্টা খানিক ঘুরে বেড়ালাম লিউয়ার্ডেন শহর।
মিনিট দশের মধ্যে উঠে বসলাম বজরায় আরো অনেক যাত্রীর সাথে। বজরা ভর্তি মানুষ বিভিন্ন দেশের। হাতে হাতে দেয়া হলো গাইড। যে পথে যাচ্ছি তার বিবরন আছে। কোন সালে কোন দালানটি তৈরি হয়েছে এবং কি কাজে ব্যবহৃত হতো তখন এবং এখন কি হচ্ছে সেখানে। কোন বিখ্যাত মানুষ, থাকতেন সেই সব দালান কোঠায়। সেই সময়ের বিবরন যেমন গাইড বইয়ে লেখা আছে, তেমনি মুখে বর্ননা দিয়ে যাচ্ছে গাইড।
রাস্তা দিয়ে চলার সময় যে দৃশ্য সেই একই দৃশ্য নদীতে নৌকায় বসে দেখলে অনেক অন্য রকম লাগে। রাস্তায় চলা আর নদী পথে চলার মাঝে বিশাল ফারাক। একই দালান গুলো অন্য রকম দেখাচ্ছে।




নৌকা চলছে, গাইড বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছি, মানুষের তৈরি করা নদী পথে এঁকে বেঁকে ঘিরে আছে শহর। কালর্ভাটের নিচ দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে নৌকা, আর উপর দিয়ে পার হচ্ছে মানুষ।
রাস্তা পারাপারের ব্রীজের নিচে যখন নৌকা ঢুকে যাচ্ছে মনে হয় এত ছোট আটকে যাবে বুঝি, কিন্তু না। সুন্দর বাঁক ঘুরে অন্য পথে চলে যাচ্ছে বজরা। কোথাও বড় কোথাও ছোট চিকন নদী পথ। তার পাশে সাজানো শহর। বসন্তের সময়টা খুব উপভোগ্য সেদিন ছিল রৌদ্রজ্জ্বল দিন। ঝকঝকে পরিস্কার আকাশ । মনোহর উত্তাপ।
জেলখানা থেকে ঘুরে, নৌকা ভ্রমন সেরে আবার আসা হলো মিউজিয়ামে।
সামনে বিশাল জায়গা নিয়ে কাঁচের দেয়াল দেয়া নতুন ধরনের স্থাপত্যশিল্পের ভবন। ফ্রেইস মিউজিয়াম দশ লক্ষ বস্তু ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন। বর্তমানে ১২০০ শতাব্দি থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শিল্প, কারুশিল্প এবং ইতিহাসের চার হাজার ঐতিহাসিক বস্তু সংরক্ষনে আছে। এক একটি ভাগে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে সময়।
ঘন্টা দুই মিউজিয়াম দেখে আবার হাঁটতে বেরুলাম। পাশে একটি সবুজে ছাওয়া উদ্যান, চেরি ফুলের সমাহারে আলো হয়ে আছে। সাথে আছে ম্যাগনোলিয়া, কাটা গোলাপ রেডোরেনড্রেন, সাথে আরো যে কত ফুল ফুটেছে শুধুই ভালোলাগা দিতে আমাকে। এবং অবশ্যই তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শান্ত নদীটি। এই পার্কটিতে আসার মূল কারণ হলো এখানে "মেম" নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে যারা কাজ করে তারা সবাই প্রতিবন্ধী মানুষ। তারা কেউ কথা বলতে পারে না। এখানে গেলে ইশারায় কথা বলতে হয়।
অসাধারন এই বিষয়টি সম্পর্কে শোনার পর থেকেই বুকের ভিতর কেমন একটা অনুভুতি জাগছিল, সেই মানুষগুলোর পাশে যাওয়ার জন্য। মানুষ প্রতিবন্ধী হলে তাদের অবহেলা করা, তাদের নিয়ে মজা করা,এক ধরনের প্রবনতা সুস্থ সবলদের। কানাডার একটি টিমহার্টনে, সব প্রতিবন্ধী মানুষদের চাকরি দেয়া হয়। এবং সেই মালিক বলেন, ওরা অনেক বেশি নিষ্ঠাবান এবং মনোযোগী কাজে। ওদের চাকরি দেয়ার পর উনার আয় বেড়ে গেছে। কাজের অনেক ঝামেলা মিটি গেছে।
নিরব সবুজ পার্কের একপাশে কাঠের ঘর। কাঠের আসবাবের সাথে অদ্ভুত সাধারন কিছু জিনিস যেমন হুইলব্যারল, ঠেলাগাড়ি, গাছের গুড়ির তৈরি আসন, পুরানো কাঠের আসবাব । যারা কাজ করেন, তাদের সাথে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলতে হবে খাবার ওর্ডার বা যে কোন বিষয় জানতে হলে। ইশারায় কফি দিতে বলে বাইরের রোদে পাতা ঠেলাগাড়িতে বসলাম। খুব মজার কফি শেষ করে । গল্পে কাটালাম অনেকটা সময়।




পাশের নদীতে বজরায় বসে আছেন কেউ একজন। কিছু তরুণ তরুণি শুয়ে আছে ঘাসের উপর। একজন ছবি আঁকছেন আপন মনে, একজন বই পড়ছেন গাছের ছায়ায় বসে। শুয়ে আছেন রোদের তাপে ঘাসের গালিচায় গা এলিয়ে অনেকে। সব মিলিয়ে জায়গাটা ছেড়ে উঠে আসতে ইচ্ছা করছিল না। অনেক মানুষের মাঝেও, খুবই শান্ত আরাম দায়ক পরিবেশ।
কিন্তু আমাদের যেতে হবে দূরে আরো দূরে সময় কম। তাই উঠে পরতে হলো।
আমরা রেল স্টেশনে চলে গেলোম সময় আছে কয়েক ঘন্টা হাতে তাই ঘুরতে গেলাম কিছুটা দূরের ছোট শহর হার্লিনেন। পয়ত্রিশ মিনিট মতন লাগল যেতে ট্রেনে করে। পথের পুরো সময় চোখের সামনে থাকল গ্রাম। বিস্তির্ণ ফসলের ক্ষেত। সাজানো খামার বাড়ি, গরু ছাগল ঘোড়া, মোরগের খামার। সবটাই যেন সাজানো ছবির মতন। কোথাও কিছু এলোমেলো নেই।





উত্তর নেদারল্যান্ডসে ছোট একটি পৌর শহর, ফ্রেডল্যান্ড প্রদেশে ওয়াডেন সাগর উপকূলে হার্লিনেন। মাছ ধরার এবং শিপিং এর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এ শহরের।
সেদিন ছিল চার মে। পরের দিন পাঁচ মে, নেদারল্যান্ডসের স্বাধীনতা দিবস।
সাগরপাড়ে, দেশ স্বাধীনের জন্য আত্ম ত্যাগকারী সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রতিটি দেশের মানুষদের বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা একই রকম অনুভব করলাম। কিছুটা একাত্মও বোধ করলাম। আমার নতুন আবাসিক দেশ কানাডার সৈনিকদের অবদান ছিল নেদারল্যান্ডসের সৈনিকদের সাথে মিলে যুদ্ধ করে মুক্তি আনার। তাদের প্রতিও সম্মান জানানো হলো দেশের নাম ধরে, সে দেশের পতাকা উড়িয়ে। অনেক বৃদ্ধ মানুষ জড়ো হয়েছেন অনুষ্ঠানে। যারা হয় তো যুদ্ধ করেছেন অথবা দেখেছেন যুদ্ধের বিভীষিকা। যাদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন যুদ্ধ সময়ের অভিযাত্রী। অনেক নতুন প্রজন্মও আছেন যুবা, তরুণ, কিশোর এবং শিশু।
কোরাস দেশাত্ববোধক সঙ্গীত, মিউজিক, বিউগলের পর নিরবে সবাই চললেন, ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানাতে। কি শান্ত , পবিত্র ভাব গাম্ভীর্যের একটি স্মরণ সভা হলো খোলা সমুদ্র পাড়ে। সবাই যেন একই মনোভাবে নিমজ্জিত। কোন অস্থিরতা, হুড়োহুড়ি, পারাপারি নেই।কোন বিরোধ নেই দেশ মাতৃকার ভালোবাসায়, সবাই নিবেদিত প্রাণ যেন। ভালোলাগল এই অনুষ্ঠানটি দেখতে পেয়ে। আমিও অনুভব করলাম প্রতিটি মানুষের স্বাধীধনতার স্বাধ একই রকম।



অনুষ্ঠান দেখে আমরা ঘুরে বেড়ালাম সমুদ্রপাড়ের বাতাসে।
এ সময় একটা ব্রীজ পাড় হতে গিয়ে দেখলাম রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে ব্রীজটি দুই পাশে সরে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। খোলা একটি নদী সামনে, পেরিয়ে গেল জাহাজ কয়েকটি । তারপর ব্রীজ আবার আগের মতন সেঁটে গেল এপাড়ের সাথে ওপাড়ের সেতু বন্ধন হয়ে। আমরাও পেরিয়ে এলাম অন্যপাড়ে।



হু হু সমুদ্রপাড়ের বাতাসে মন উড়ছে। নামতে ইচ্ছে করছে জলের গভীরে। কিন্তু প্রস্তুত হয়ে আসিনি। আর সময়ও কম। সাজানো অনেক গুলো রেস্তুরা দেখে বসে পরলাম পছন্দসই একটায় খেতে। বাইরে রোদের আলো আর সমুদ্রের হাওয়া মেখে খাওয়া শেষে ফিরে চললাম আবার লিউয়ার্ডেন।
আমার গাইড মেয়েটি কাজে যোগ দিবে ফিরে গিয়ে।
চলবে.....

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৭

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী আপু।

সত্যি, সমুদ্রের বাতাস শুধু সমুদ্রের সাথে মিলনেই টানে না, দিয়ে যায় প্রশান্তি।

আর হ্যা, রেস্তুরায় শুধু একা একা খেলেন! আমাদের কথা ভুলে গেলেন?


ছবিগুলোতে প্লাস++

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: ভ্রমণ বর্ণনা ভালোলেগেছে জেনে ভালোলাগল সৈয়দ তাজুল ইসলাম।
শুভেচ্ছা রইল
কি আর করা আপনি যে সাথে ছিলেন না।তাই একাই খেতে হলো

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৪০

ইসিয়াক বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী ।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪২

রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা রইল ইসিয়াক

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভালো লাগলো।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা দেশ প্রেমিক বাঙালী

৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: বহু দিন পর সামুতে আপনার পোষ্ট পেলাম।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৩৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: লেখাটা আনেক দিন লেখা ছিল। কিন্তু পোষ্ট দেয়ার মন ছিল না। তুমি তো জানো .....মন ভালো না।
ভালো থেকো

৫| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনি সব সময় ই দারুণ করে আমাদের সাথে নিয়ে ভ্রমণ করেন।
অনেক ভালোলাগা।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক শুভেচ্ছা রইল। সাথে নিতে পারলাম জেনে ভালোলাগছে

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:০৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আর আমাদের দেশে জেলখানা উপচে পড়ছে মানুষের সমাগমে। মিথ্যে মামলায় প্রহসনে।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:২৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: আমাদের দেশে ঐ অবস্থানে যেতে আরো নিদেন পক্ষে দুই তিন প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে। যাবতীয় খারাপ কর্মকান্ড করার মানসিকতা যখন আর থাকবে না মানুষের মধ্যে তখন ভাবা যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.