নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সদা সত্য বলিব

আমি আমাকে ভালবাসি, আমার পছন্দ মতই চলি।

স্পাইক্র্যাফট

নিজে যারে বড় বলে বড় সে নয়,লোকে যারে বড় বলে বড় সে হয়।নিজের সম্পর্কে আলাদা করে তাই কিছুই বলব না, আমি কিরকম মানুষ তা আমার লেখা পড়েই বিবেচনা করতে পারবেন। তবে কিছু কথা না বললেই নয়, আমি খুবি শান্ত একজন মানুষ যে সবসময় একে থাকতে পছন্দ করি। লেখা-লেখি করার অভ্যাস খুব ছোট থেকেই ছিল, এখনো আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতেই আমি বিশি পছন্দ করি। মাঝে মাঝে ছোট খাটো কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আর কিছু মাথায় নেই, আশা করি ভবিৎষতে আরো কিছু অ্যাড করতে পারব :D

স্পাইক্র্যাফট › বিস্তারিত পোস্টঃ

শশীলাল চর্মকার

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

১২-১৩ বছরের বাবরি চুলওয়ালা কিশোর শশীলাল চর্মকার। বাবার সাথে সারাদিন সৈয়দপুরের রাস্তায় ঘুরে মানুষের পুরান জুতা সেলাই করা ছিল তার কাজ। বড় বোন শ্যামাপ্রিয়া নবম শ্রেণীতে পড়ে, ভাল ছাত্রী হিসেবে এলাকায় খুব নাম ডাক। বাবা, মা ও দিদিকে নিয়ে ছিল তার ছোট সাজানো সুখের সংসার।



কিন্তু এই সাজানো সুখের সংসারে মহাপ্রলই নেমে এল ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ! স্থানীয় বিহারিদের মদদপুষ্ট হয়ে পাকিসেনারা আক্রমন করে বসে হিন্দুদের বাড়িঘরে। হাতের কাছে যাকে পেয়েছে, তাকেই হত্যা করেছে। শশীলালদের বাড়িতেও আক্রমন হল, তার বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা করা হল! অপহরন করে নিয়ে গেল দিদি শ্যামাপ্রিয়াকে এবং গভীররাতে সৈয়দপুর রেলকারখানার উত্তরে নিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হল তাকে। ভাগ্যক্রমে শশীলাল সেদিন বাড়ি ছিল না, তাই বেচে গেলেও একই সাথে পরিবারের সকলকে হারিয়ে হয়ে পড়েছিল নির্বাক, দুই চোখে জ্বলে উঠেছিল প্রতিশোধের আগুন...



প্রায় তিন মাস পর, অর্থাৎ জুনের শেষ সপ্তাহে ২০ জনের একটা মুক্তিবাহিনীর দল সৈয়দপুরে গিয়েছে গেরিলা অপারেশনের জন্যে। তারা আশ্রয় নিয়েছে শশীলারের বাবার বন্ধু যতীনের বাড়িতে। শশীলালের বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এই যতীনই তাকে আশ্রই দিয়েছিল। যায় হোক, রাতে শশীলাল জানতে পারল মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশনের কথা। তাদের প্ল্যান ছিল ব্রিজের কাছে পাকিবাহিনীর অবস্থানে মাইন লাগানো ও আলবদর কমান্ডার আলতাফের বাড়ি আক্রমন করা। ইতিমধ্যেই শশীলাল খোজ নিয়ে জেনেছে তার বাবা-মাকে আলতাফ বিহারিই হত্যা করেছে। তাই আলতাফের নাম শোনা মাত্রই তার বুকে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। সেও এই অপারেশনের সাথে যুক্ত হতে চাইল, মুক্তুযুদ্ধারা প্রথমে ইতিস্তত করলেও পরে তাকে দলে নিয়ে নেয়। শুরু হল শশীলালের প্রতিশোধ নেবার পালা......



দুইদিন পর এক ঝরের সন্ধায় শুরু হল মুক্তিবাহিনীর অপারেশন। পায়ে হেটে রওয়ানা হল প্রথম টার্গেট সৈয়দপুর ব্রিজের দিকে। প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে হাটতে হচ্ছিল তাদের। প্রায় ঘন্টাখানেক হাটার পর অবশেষে এসে পৌছল ব্রিজের নিচে। বৃষ্টি থাকায় ব্রিজের উপর কোন পাহারা ছিল না। এই তো সুযোগ! পূর্ব পরিকল্পনামাফিক মুক্তিযুদ্ধা মাজেদ ও রাজ্জাক ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল ব্রিজের দিকে, সাথে আছে কিশোর শশীলাল। ওদের সাথে আছে মাটি খুড়বার খুন্তি, এন্টি ট্যাংক ও এন্টি পারসোনাল মাইন। পাকিশিবির থেকে কোন সাড়াশব্দ আসছে না। ওরা অবশ্য দিনে যতই হালুম-হুলুম করোক না কেন, রাতে ইদুরের মত গর্তে ঢুকে বসে থাকে। এখানেও একি অবস্থা, তবে আজ আবহাওয়া তাদের অনুকূলে না। ১৫ মিনিটের মাঝেই ব্রিজের আশেপাশে গর্ত খুড়ে মাইন ও ছোট ছোট অনেকগুলো এন্টি পারসোনাল মাইন বেধে ফিরে এল শশীলালের দল, নির্বিঘ্নে শেষ হল প্রথম অপারেশন। এবার দ্বিতীয় অপারেশনের পালা......



রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে ভুরা ভাসিয়ে নদীতে নামল মুক্তিবাহিনীরা। বড় বড় কলার গাছ কেটে বানানো ভেলাকে আঞ্চলিক ভাষায় ভুলা বলা হয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা বিহারি পাড়ায় পৌছে গেল। ভুলা থেকে নেমে তারা আলতাফ কমান্ডারের বাড়ির পেছনের প্রাচীরে অস্ত্রসহ অবস্থান নিল। প্রাচীর খুব একটা উচু না, শশীলাল মাজেদের কাধে ভর দিয়ে বাড়ির ভেতরটা দেখে নিল। বিহারিরা কখনো চিন্তা করে নি যে মুক্তিবাহিনী খোদ সৈয়দপুরে হামলা করে বসবে, তাও আলতাফ কমান্ডারের বাড়িতে। তাই নিরাপত্তার দিক দিয়ে তারা শিথিল ছিল। প্রাচীরের উপর উঠে মাজেদকে টেনে তুলে নিল শশীলাল, এরপর দুজনে মিলে ভেতরে ঢুকে বাড়ির সদরদরজা খুলে দিল অন্যদের জন্যে। বাইরে অপেক্ষারত সকলে নিঃশব্ধে ভেতরে ঢুকে গেল। বিহারিদের আজম্ম অভ্যাস সদর দরজায় ছালা ঝুলানো, এখানেও এর ব্যাতিক্রম হয় নি। শশীলাল নিজের ছুরি দিয়ে ছালাটা কেটে দিল যেন কিছু হলে বিনা বাধায় সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। চুপি চুপি একজন গিয়ে দেখে আসল আলতাফ কোন রুমে ঘুমিয়ে আছে। দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকা সম্ভব না, সকলেই জেগে উঠবে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল খোলা জানালা দিয়ে মাজেদ ঘরের ভেতর গ্রেনেড ছুড়ে মেরে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে যাবে, অন্যরা তার আগেই বাইরে চলে যাবে। একটা গ্রেনেড হাতে নিয়ে মাজেদ ইশারা করল সকলকে বের হয়ে যেতে। নির্দেশমাফিক সবাই বের হবার পর মাজেদ পিন খুলে গ্রেনেডটা জানালা দিয়ে আলতাফের রুমে ছুড়ে দিয়ে দ্রুত এক লাফে সদর দরজা পেরিয়ে বাইরে এল। চার সেকেন্ডের মাথায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হল গ্রেনেডটি। একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সবাই, পরক্ষনেই উঠে আবার দৌড় ছিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘাটে পৌছে গেল দলটি। ভুরাই উঠে ভুরাটিকে ভাসিয়ে দিল স্রোতের অনুকূলে...



প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ গ্রেনেড ফাটার বিকট শব্দে বিহারীরা হতভম্ব হয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পরেই দূর থেকে শোনা গেল তাদের আর্তচিৎকার, সাথে শত শত টর্চ লাইটের আলোর নাচানাচি। ততক্ষনে মুক্তিযুদ্ধার দলটি নিরাপদ দূরত্বে পৌছে গেছে। কিশোর শশীলার মুখে তৃপ্তির হাসি, দুচোখ বেয়ে ঝরছে অশ্রু! সে প্রতিশোধ নিতে পেরেছে...







তথ্যসূত্র ঃ মেজর হামিদুল হোসেন তারেক (বীরবিক্রম)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০

ব্লগার পথিক বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৬

লিট্রিমিসটিক বলেছেন: একাত্তরের সাথে আবার মিলতে পেরে ভাল লাগল।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩০

অক্টোপাস পল বলেছেন: চমৎকার

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৬

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: শশীলালের মতো অনেক খুদে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। শশীলালকে স্যালুট জানাই।
এটা কী কোন সত্যি ঘটনা? যদি তাই হয়, তবে তথ্যঋণ স্বীকার করা উচিৎ। আর যদি না হয়, তবে বলবো মুক্তিযুদ্ধের উপর কোন কাল্পনিক লেখা ঠিক নয়। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৪

স্পাইক্র্যাফট বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন কাল্পনিক কোন লেখার পক্ষপাতি আমি না। মেজর হামিদুল হোসেন তারেক বীরবিক্রমের লেখা বইতে পেয়েছি আমি শশীলালকে।

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৬

স্পাইক্র্যাফট বলেছেন: ধন্যবাদ সকলকে!

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: তথ্যঋণ পোস্টের নিচেই স্বীকার করা উচিৎ ছিল। এডিট করে এখনো আপনি দিয়ে দিতে পারেন, যা আমার আগের মন্তব্যের উত্তরে দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০

স্পাইক্র্যাফট বলেছেন: ঠিক আছে, আবারও ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.