নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির প্রবেশ, দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশে পঠন পাঠনের ঘোর অবনতিই সূচীত করে! জীবনের সমগ্র পরিসরে শিক্ষার্জনের সময়সীমা খুবই সীমিত! সেই সীমিত কালসীমায় যে বিদ্যার্জন এবং মেধার বিকাশ সাধন হয়, তার উপরেই সাধারণত বাকি জীবনের সুখ শান্তি কর্ম ও পরিতৃপ্তি নির্ভর করে! নির্ভর করে একটি জাতি, একটি দেশের উন্নতিও! রাজনীতির অঙ্গনে, সে নিজের ব্যক্তিগত আখের গোছানোর দূর্নীতিই হোক কিংবা সুনাগরিকের দেশপ্রেমে অভিষ্ট দেশসেবা ও দেশের উন্নয়ণ প্রক্রিয়ায় সদর্থক ভূমিকা রাখাই হোক; কর্মমুখর হয়ে ওঠার জন্যে সারা জীবন পাওয়া যাবে! কিন্তু শিক্ষার্জনের জন্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনই জীবনে পাওয়া যায়!
জীবনের সেই স্বল্প কয়টি দিন, যা কার্যকরি শিক্ষার্জনের জন্যেই নির্দিষ্ট তা কখনই রাজনীতিচর্চার ক্ষেত্র হতে পারে না! শিক্ষার্জনের এই পর্বটি ছাত্রছাত্রীর মৌলিক মেধা বিকাশের প্রস্তুতি পর্ব! তারা এই কালসীমায় শিক্ষা আহরণ করবে, আত্তীকরণ করবে! সেই অধীত বিদ্যায় তাদের মেধা পুষ্ট হতে থাকবে! বিকশিত হয়ে ওঠার পথে দ্রুত গতিশীল থাকবে! এবং পর্বে পর্বে তাদের মৌলিক চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটবে! পারদর্শী হয়ে উঠবে কোনো না কোনো কার্যকরী বিদ্যায়! যে পারদর্শিতায় তারা তাদের কর্মজীবনে ক্রিয়াশীল থাকবে জীবনের মূলপর্বে! তাই সমগ্র জীবনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাজীবনের এই মূল্যবাণ পর্বটি জীবন গড়ার জন্যেই নির্দিষ্ট থাকা উচিত!
কিন্তু! দুই বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্র আজ ছাত্ররাজনীতির অভিশাপের করাল গ্রাসে! কেন এমন হলো? সেটা বুঝতে গেলে একটু ফিরতে হবে ইতিহাসে! বৃটিশ এসে শাসনকার্য পরিচালনা এবং শোষণকার্য চালু রাখার জন্য বশংবদ রাজভক্ত কর্মচারী তৈরীর কারখানা স্বরূপ পত্তন করল আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা! যে শিক্ষাব্যবস্থা সমাজদেহের অন্তর থেকে গড়ে উঠল না! বিদেশী শোষক চাপিয়ে দিলো বাইরে থেকে! ফলে দেশের নাড়ির স্পন্দন থেকে বিচ্যুত, জাতির ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সাথে সম্পর্কহীন, স্বদেশের প্রাণের সাথে শিকড়হীন এমন এক শিক্ষা পদ্ধতি চালু হল, যা মেরুদণ্ডহীন অনুকরণ প্রিয় নকলনবীশ মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী ডিগ্রী সর্বস্ব চাকুরী প্রার্থী তৈরী করে!
ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ালো চাকুরী সন্ধান! মৌলিক মেধা বিকশের জন্যে সমগ্র জীবনের উদ্বোধন নয়! সুচতুর বৃটিশ বুঝেছিল শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমেই যদি জাতির মেরুদণ্ডটি ভেঙ্গে দেওয়া যায়, তবে সেই জাতিকে শতাব্দীব্যাপি বশংবদ করে রেখে শোষণ প্রক্রিয়াকে সুনিশ্চিত করা যায়! আর স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষে বৃটিশের তাঁবেদারদের হাতে শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমতা হস্তান্ততরের পর, স্বদেশী শোষককুল সেই একই শোষণ ব্যবস্থা জারি রাখার উদ্দেশ্য বৃটিশ প্রবর্তীত শিক্ষাব্যবস্থাকেই বজায় রাখল! আগে যেখানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারখানায় বৃটিশভক্ত রাজকর্মচারী তৈরী হতো; এখন সেখানেই রাজনৈতিক দলীয় কর্মী তৈরীর ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল!
স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল রাখার উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ নেতাকর্মীর নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের প্রবাহ বজায় রাখার জন্যে শিক্ষাক্ষেত্রকেও রাজনীতির পরিমণ্ডলে নিয়ে আসা হল ছাত্ররাজনীতির নাম করে! ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করল! আর ছাত্ররাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকল রাজনৈতিক দলগুলির হাতে! ছাত্ররা ব্যবহৃত হতে থাকল দলীয় রাজনীতির স্বার্থে! শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য গৌন থেকে গৌনতর হতে থাকল! কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজনৈতিক দলেগুলির আখড়ায় পরিণত হল! শিক্ষাক্ষেত্রও হয়ে উঠল রাজনৈতিক দলগুলির অঞ্চল দখলের লড়াইয়ের ময়দান! নষ্ট হয়ে গেল স্কুলকলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পরিবেশ! ছাত্র শিক্ষক সুসম্পর্ক!
শিক্ষাক্ষেত্রে এরফলে নেমে এসেছে এক চরম নৈরাজ্য! এবং সেটা কাঁটাতারের উভয় পাড়েই সত্য হয়ে উঠেছে! পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সরকারী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পরস্পরের রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইয়ের একটা বড়ো ময়দান হয়ে উঠেছে শিক্ষাক্ষেত্রগুলি! শিক্ষাঙ্গনের ছাত্ররাজনীতিতে তারই স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে! আর পড়েছে বলেই বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে মুক্ত চিন্তাশক্তি ও মৌলিক মেধা বিকাশের পথটি! ছাত্ররা হাফপ্যাণ্ট পড়া থেকেই দেশের বা রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির দলদাসে পরিণত হয়ে পড়ছে! তথাকথিত ছাত্ররাজনীতি ছাত্রছাত্রীদেরেই স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে! যেহেতু সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিরই স্বার্থ এক তাই এই অভিশাপ চলবে!
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের চৌঁত্রিশ বছরের শাসন আমলে ছাত্ররাজনীতিকে ক্যাডার তৈরীর প্রক্রিয়া হিসেবে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়ছিল! এবং সাংগঠনিক দৃঢ়তায় ছাত্ররাজনীতিকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে, বামফ্রন্টের একছত্র আধিপত্য রাজ্যে এক বিরোধীশূন্য গণতান্ত্রিক পরিসরের সংস্কৃতির পত্তন করেছিল! ছাত্র থেকে শিক্ষক, পঠনপাঠন থেকে কর্মসংস্কৃতি সর্বত্র বামরাজনীতির ছাত্রসংগঠনটি নিঃশ্ছিদ্র আধিপত্ত বিস্তার করেছিল! তাতে শিক্ষাবিস্তার হোক না হোক, রাজনৈতিক আধিপত্ত বিস্তারের কাজটি হয়ে ছিল নিখুঁত! পরিবর্ত্তনের কাণ্ডারীরা এইখান থেকেই ক্ষমতা দখলের সূত্রটি গ্রহণ করে!
পরিবর্ত্তনের কাণ্ডারীরা ক্ষমতায় এসেই রাতারাতি বাম আমলের চৌঁত্রিশ বছর ধরে গড়ে তোলা আধিপত্ত, দুদিনের মধ্যেই কায়েম করতে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সরাসরি পেশিশক্তির আস্ফালনের উপর নির্ভর করতে শুরু করল! যার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা দিতে থাকল বিভিন্ন কলেজে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে! অধ্যাপক অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই যে শিক্ষাক্ষেত্রের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর জন্যে বর্তমান সরকারি দলের প্রত্যক্ষ মদত নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না! এবং এই প্রবণতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক কলেজ থেকে আর এক কলেজে! এক অঞ্চল থেকে আর এক অঞ্চলে!
এবং রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইয়ে ব্যবহৃত পেশিশক্তিই সরাসরি ছাত্ররাজনীতির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারী দলের তাঁবেতে নিয়ে আসতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পরিবেশ! সমস্ত রাজ্য জুড়ে এই যে পেশিশক্তির দাপটের আস্ফালন আছড়ে পড়ছে শিক্ষাঙ্গনের চত্বরে, অবশ্যই এর পেছনে সরকারী দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে! তারা ভাবছেন, বাম আমলের সাড়ে তিনদশকের রাজত্বের অন্যতম স্তম্ভ এই ছাত্ররাজনীতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে তাদেরও দীর্ঘমেয়াদী সময়সীমায় শাসন ক্ষমতা দখলে রাখা সহজ সাধ্য হবে! তাই গণতন্ত্রের পরিসরে স্বৈরতন্ত্রের অভিলাষ চরিতার্থের এই প্রয়াস চলছে!
এই যে ক্ষমতা দখলের রাজনীতির অভিশপ্ত নাগপাশ গ্রাস করে ফেলেছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে, এখানেই কপাল পুড়েছে বাংলা ও বাঙালির! পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ জুড়ে চিত্রটা মূলত একই রকম! এর পরিণতি ভবিষ্যতে যে ভয়াবহ সে কথা সহজেই অনুমেয়! যে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড স্বরূপ সেই শিক্ষাব্যবস্থার আগাগোড়া ঘূণে ধরে গেলে সে জাতির উন্নতি কোনোদিনও সম্ভব নয়! নয় বলেই উন্নত বিশ্বের জাতিগুলির শিক্ষাব্যবস্থা এই ঘূণ থেকে মুক্ত! সেসব দেশে শিক্ষাক্ষেত্র রাজনৈতিক কলুষতা মুক্ত! শিক্ষাক্ষেত্র সেখানে জাতির ভবিষ্যত সুনাগরিক গড়ে তোলার অঙ্গন! মৌলিক মেধা বিকাশের সুবিস্তৃত মুক্ত পরিসর! জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার পীঠস্থান!
সুচতুর বৃটিশের প্রবর্তীত শিক্ষাব্যবস্থা, ও তাদের তৈরী করে দেওয়া ভোট সর্বস্ব ক্ষমতালোভী গণতন্ত্রের যুগলবন্দীর ফল ফলেছে আজ কাঁটাতারের উভয় পাড়ের বাংলায়! সেই ফলেরই অভিশপ্ত ফসল এই ছাত্ররাজনীতি! সারা বাংলা জুড়ে আজ তাণ্ডব চালাচ্ছে! কিন্তু এই অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গেলে সমাজ বিপ্লব ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই! যে রোগ সমাজদেহের ভিতরে শিকড় ছড়িয়েছে; সমাজদেহের গভীর থেকে তার মূলোৎপাটন করতে গেলে সমাজ সংস্কার করতে হবে আগাগোড়া! আর সেই সমাজসংস্কার সম্ভব একমাত্র সমাজ বিপ্লবের পথ ধরেই! এই অভিশপ্ত ছাত্ররাজনীতির কবল থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে না পারলে বাংলা ও বাঙালির ভবিষ্যত যে অন্ধকার সে কথা বিতর্কের উর্দ্ধেই!
------শ্রীশুভ্র
২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৩৯
মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: এই অভিশপ্ত ছাত্ররাজনীতির কবল থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে না পারলে বাংলা ও বাঙালির ভবিষ্যত যে অন্ধকার সে কথা বিতর্কের উর্দ্ধেই!
অন্ধকার তো শুরু হয়েই গেছে। এই বিপুল ছাত্র দেশের বোঝা হয়ে যাবে হয়ত সামনে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হবে বলে মনে হয়? সেরকম ডেডিকেটেড লোক আছে সরকারে?
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০০
শ্রীশুভ্র বলেছেন: ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা গোড়ে ওঠার পরিসর অবশ্যই থাকা দরকার। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির ভোট মেশিনারীর নাট বল্টু হয়ে ওঠার এই যে অভিশপ্ত ধারাবাহিকতা, এর অবসান ঘটানো দরকার। বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসা দরকার প্রকৃত জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্যে।
৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩৭
আমার আব্বা বলেছেন: Good
৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:২০
আবদুল মমিন বলেছেন:
আচ্ছা যে সকল দেশ গন তন্ত্রের চর্চায় উন্নত সে সকল দেশে কি ছাত্র রাজনীতি আছে ?
৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৮
কালীদাস বলেছেন: পলিটিকাল পার্টিগুলো নিজের স্বার্থেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করবে না। এরকম নিশ্চিত আয়ের সোর্স বন্ধ করবে কন দুঃখে? ইলিগাল ক্রাইম বলেন আর লিগাল খোলসে করা টেন্ডারবাজিই বলেন- এরকম ইনকামের সোর্স থাকলে কেউই এই জিনিষ উঠিয়ে রাখবেনা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
৪৭ বছরে বংলাদেশ যেখানে এসেছে, ছাত্র রাজনীতি না থাকলে, ১০ বছরেই এখানে আসতো।
ছাত্র রাজনীতিবিদরা বয়সের কারণে বিপ্লবী, এদের থামাতে যুদ্ধের দরকার হবে।