নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

পথিক সৌরভ

এখনও নিজেকে জানার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়নি.......

পথিক সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শনি গ্রহের উল্কা!!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৮


সৌরজগৎ এর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনি এর চারপাশ ঘিরে ঘুরতে থাকা ৬২টা(এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত) উপগ্রহ আর পাথর-বরফের তৈরী বলয়সমূহ নিয়ে সৌরজগৎ এর ভেতর যেন আরেক সৌরজগৎ। শনির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের নয়গুণ হলেও এই গ্যসদানব এর ভর মাত্র পৃথিবীর ৯৫ গুণ, গড় ঘনত্ব পানির চেয়েও কম। সূর্য থেকে প্রায় ৯৫ কোটি মাইল দূরে শনি গ্রহের এক বছর মানে পৃথিবীর ৩০ বছর, অর্থাৎ আমার জন্মের পর থেকে শনিগ্রহ কে কক্ষপথের একই বিন্দু তে দুইবার দেখা যায়নি।

শনির আবিষ্কার নিয়ে যখন Search দিলাম তখন দেখা গেলো এর কোনো আবিষ্কারক নাই , এটা খালি চোখেই দেখা যায়। এমনকি শক্তিশালী দূরপর্যবেক্ষণযন্ত্র(Telescope) আবিষ্কার এর আগে শনি কেই একসময় সৌরজগৎ এর শেষ সীমা বলে মনে করা হত।
আর এই শনিগ্রহেই ১৫ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে উল্কাপাত, এই উল্কা আবার সাধারণ পাথুরে উল্কা না বরং আরেক গ্রহের প্রাণীদের তৈরী করা যান্ত্রিক উল্কা। হ্যা পৃথিবীর কথাই বলছি। আর উল্কাটার নাম Cassini-Huygens Spacecraft।

Cassini-Huygens পৃথিবী ছেড়ে যাত্রা শুরু করে ১৯৯৭ সালের ১৫ই অক্টোবর। বুধগ্রহ ঘুরে পৃথিবীর পাশ দিয়ে সবশেষে বৃহস্পতি গ্রহ Cassini কে ছুড়ে মারে শনিগ্রহের দিকে। প্রায় ৭ বছর পরে ২০০৪ সালের ১ জুলাই Cassini শনি গ্রহে গিয়ে পৌছায়।
Cassini-Huygens spacecraft এর মূল লক্ষ্য ছিলো শনি গ্রহের আবহাওয়া, বলয় আর উপগ্রহগুলোর সৌন্দর্য আর গঠন আর কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা। এর আগে Pioneer 11, Voyager 1 and Voyager 2 শনি গ্রহের কাছ দিয়ে চলে গেলেও Cassini ই প্রথম যেটা শনি গ্রহকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো আরো কাছ থেকে নজরদারির জন্যে।প্রাথমিকভাবে Cassini Mission এর Deadline ২০০৮ এ ধরা হলেও পরবর্তীতে তা দুই দফায় বাড়িয়ে ২০১৭ পর্যন্ত করা হয়।

Cassini স্পেসক্রাফট এর মূল প্রাপ্তিসমূহঃ
Cassini-Huygens spacecraft এর দুইটি অংশ। Cassini Orbiter আর Huygens Lander। Cassini কে ডিজাইন করা হয়েছে শনির চারপাশে আবর্তনের জন্যে আর এর একমাত্র যাত্রী Huygens ছোট একটা Robotic Laboratory, যেটা Land করবে শনির সবথেকে বড় উপগ্রহ Titan এ, সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যেখানে বায়ুমন্ডল রয়েছে আর রয়েছে পাহাড়, হাইড্রোকার্বন লেক। Huygens কে Titan এর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয় ২০০৪ এর ২৫ শে ডিসেম্বর আর সেটা Titan এ গিয়ে পৌছায় ১৪ জানুয়ারী, ২০০৫ আর সম্পন্ন হয় পৃথিবী থেকে সবথেকে দূরবর্তী Robotic Landing।

Huygens এর পাঠানো Titan এর ভূপৃষ্ঠের ছবি

শনির আরেক উপগ্রহ Encleadus এ Cassini আবিষ্কার করে বরফের স্তরের নিচে থাকা গোপন লোনা পানির সমুদ্র। তিমি মাছের মতন Encleadus বিভিন্ন ফাটল দিয়ে বরফ আর গ্যাসীয় পদার্থ ছুড়ে মারে মহাশুন্যে আর সেই পদার্থগুলোই পরবর্তীতে মিশে যায় শনির বলয় এ।

Encleadus এর বরফ ভূপৃষ্ঠ

Encleadus এর বিভিন্ন ফাটল দিয়ে মহাশূন্যে বরফ ও গ্যাস নিঃসরিত হয়

বিজ্ঞানীরা এখন ধারণা করেন সৌরজগতে পৃথিবীর পরে Encleadus আর Titan এই প্রাণ থাকার সম্ভাবনা সবথেকে বেশী।


শনি গ্রহ পর্যবেক্ষণের এক ছবিতে দেখা যায় পৃথিবী(pointer দিয়ে দেখানো) আর চাঁদ কে। ছবিটি নেওয়া হয়ছে জুলাই ১৯, ২০১৩ সালে। শনি গ্রহ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মাইল। Carl Sagan এর সেই “pale blue dot”।

Cassini র বদৌলতে নতুন ৭টি উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। শনির উত্তর মেরুর রহস্যময় ষড়ভূজাকারে ঘুরতে থাকা বায়ুর রঙ পরিবর্তন, শনি গ্রহের সাদা ঝড় সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ Cassini spacecraft এর মূল প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর অসংখ্যা ছবি ও তথ্য সংগ্রহ-সরবরাহ তো আছেই।

যা যা হতে পারতঃ
শনিগ্রহের দূরত্বে সূর্য রশ্মির তীব্রতা কম হওয়াতে Cassini তে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে তেজস্ক্রীয় প্লুটোনিয়াম। ১৮ আগস্ট ১৯৯৯ এ পৃথিবী হতে ১১৭১ কি.মি. উপর দিয়ে Cassini উড়ে চলে যায়। NASA র বিজ্ঞানীরা অংক কষে দেখেন যদি ভুলে কোনোভাবে এটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে চলে আসত তাহলে পৃথিবীর অন্তত ৫ বিলিয়ন লোক মারা যেত যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা সেসময় ছিলো ৬ বিলিয়ন!! কিন্তু এর সম্ভাবনা 0.001 এর থেকেও কম ছিলো বলেই এই মিশন টা শুরু করার সাহস করা হয়।
আরো হতে পারত Cassini শনি তে পৌছানোর আগে বিকল হয়ে গেলো , সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। শনি তে পৌছে কোনো আকস্মিক বিপদ হলেও করার কিছু ছিলোনা কারণ সেই তথ্য আলোর বেগে আদান-প্রদানেই লাগত অন্তত ২ ঘন্টার মত সময়।
এই হতে পারত গুলো হয়নি আর এজন্যেই এখন পৃথিবী থেকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে শনি গ্রহ কে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে মানব সৃষ্ট এক নভোযান।

Cassini:Grand Finale

Cassini র জ্বালানি যখন শেষ হওয়ার পথে তখন এর নিয়ন্ত্রণে থাকা বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নিলেন একে শনি গ্রহের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার যাতে শনি গ্রহের প্রাণ সম্ভাব্য উপগ্রহ গুলো কোনোভাবে দূষিত না হয় আর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যতটা সম্ভব নতুন তথ্য সংগ্রহ করতে থাকার, এটাই হলো Cassini: Grand Finale. ২০১৭ এর এপ্রিলে শুরু হয় Cassini : Grand Finale যেখানে এটি শনি আর শনির বলয়ের মাঝ দিয়ে শনি কে ঘিরে দুঃসাহসী ২২ বার আবর্তন করবে আর শেষে গতিপথ বদলে ছুটে যাবে শনির দিকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে

ছবিতে Cassini:Grand Finale
১৭ টি দেশের ২৬০ জন এর ও বেশী বিজ্ঞানী আর অসংখ্যা মানুষের শ্রম, স্বপ্ন আর কল্পনার ফসল এই Cassini Huygens Probe. Cassini র সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে রহস্যময় আর একই সাথে অপূর্ব সুন্দর শনি গ্রহ কে ঘিরে মানবসভ্যতার এক সফল মহাকাশ অভিযান।
১৯৯৭-২০১৭, ২০ বছর ধরে মহাশূন্যে পাড়ি দিয়ে আমাদের জ্ঞান এবং চিন্তা চেতনা কে সমৃদ্ধ করে এই নভোযান এখন ঠিক এই মুহুর্তে ছুটে যাচ্ছে তার সমাপ্তির দিকে। ১৩ বছরে Cassini শনিকে মোট ২৯৪ বার আবর্তন করেছে আর এই শনি গ্রহেই হতে যাচ্ছে Cassini Spacecraft এর শেষ সমাধি। বিজ্ঞানীদের মতে ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৫টা বেজে ৫৫ মিনিটে Cassini থেকে শেষ সঙ্কেত আসবে পৃথিবীতে। শেষ সংকেতে থাকবে শনির বায়ুমন্ডলের গঠন বৈশিষ্ট্য আর বিদায়ধবনি। কিন্তু যতক্ষণে তা পৃথিবীতে এসে পৌছাবে তার ৮৩ মিনিট আগেই Cassini টুকরো টুকরো হয়ে মিশে যেতে থাকবে শনির হাইড্রোজেন-হিলিয়াম বায়ুমন্ডলে।




You must see this video!

References:
1. https://en.wikipedia.org/wiki/Cassini–Huygens
2. https://en.wikipedia.org/wiki/Saturn
4. https://saturn.jpl.nasa.gov/
5. https://saturn.jpl.nasa.gov/resources/
6. https://saturn.jpl.nasa.gov/the-journey/timeline/
7. https://saturn.jpl.nasa.gov/mission/grand-finale/cassini-quick-facts/
8. https://saturn.jpl.nasa.gov/mission/grand-finale/why-cassini-matters/
9. https://saturn.jpl.nasa.gov/mission/grand-finale/cassini-end-of-mission-timeline/




মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৩

কুঁড়ের_বাদশা বলেছেন: নাসা নাকি বলেছেন,শনি গ্রহের চাঁদে এলিয়েনের অস্তিত্ব! :P

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৫

পথিক সৌরভ বলেছেন: হতেও তো পারে শনির চাদে আছে এলিয়েন অণুজীব!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.