![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"তোরে দিয়া জীবনে কিচ্ছু হবে না"-
একজন ছাত্র এবং সন্তান হিসেবে এই কথা শুনেনি এমন ভাগ্যবান মানুষের সংখ্যা নগণ্য। আমাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকেরা এই কথাটা বলাকে অনেক সময় দায়িত্ব মনে করেন।
কিন্তু এই বাক্যখানার অধিক ব্যবহার কতটা ক্ষতিকর সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?
.
বাচ্চা এবং টিনএজ বয়স মানুষের মানসিক বিকাশের সব চেয়ে বড় চ্যাপ্টার। এই সময় একটা ছেলে বা একটা মেয়ের মাথায় যেটা ঢুকিয়ে দেয়া হয় সেটা পার্মানেটলি ঢুকে পড়ে। কারো মাথার কাছে যদি অনবরত রেকর্ডার বাজানো হয় "তোরে দিয়া কিচ্ছু হবে না"
তবে একজন শিশু- কিশোর খুব সহজেই বিশ্বাস করে বসে সত্যি সত্যিই তাকে দিয়ে কিছু হবে না।
.
চাইন্ড সাইকোলজি বলে বাচ্চারা গুরুজনদের সব কথাই চেতন বা অবচেতন ভাবে বিশ্বাস করে। আপনি একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রকে ধমক দিয়ে বললেন, তুই একটা গরু। তোকে দিয়ে কিছু আশা করা যায় না।
ছাত্র প্রথম দিন জেদের কারণে হয়তো কিছু লেখাপড়া করবে। পরের দিন, তার পরের দিন এবং বারবার আপনি যখন এক কথা বারবার রিপিট করবেন তখন আর তার ভেতর কোন জেদ কাজ করবে না। তার মনে দমে যাবে, সব আত্মবিশ্বাস নিঃশেষ হয়ে যাবে, মন থাকেই একটা সিল নিজেই মেরে দেবে- আমাকে দিয়ে আসলেই কিছু হবে না। বিশ্বাস করুন এই কথা সে যখনই ভেবে বসবে তখনই সে শেষ হয়ে যাবে।
.
.
একজন বাবা হিসেবে আপনি সন্তানকে ধমকের উপর রাখেন। সন্তান আপনার সামনে আসলে ভয়ে কুঁকড়ে যায়, আপনি মনে মনে আনন্দ পান- যাক বাচ্চা লাইনে আছে, আমাকে সমীহ করে। ধমকের সাথে সাথে আপনি একটা কথা প্রায়ই বলেন, তোমারে দিয়া আমি কিছু আশা করি না। তুমি অংকে মাত্র ৮২ পাও আর পাশের বাসার অমুক পায় ৯৯! তোমাকে দিয়ে কি আশা করতে পারি?
.
এখানেও একি কথা, আপনার কথায় একদিন বা দুই দিন ছেলে মেয়ে পড়ালেখা করবে। কিন্তু এক কথা বার বার শুনলে সে ঝিমিয়ে যাবে। আপনি জানেন না আপনি তার বিশ্বাসকে আপনার অজান্তেই হত্যা করে ফেলছেন।
.
.
আমার লিস্ট এবং যারা এই লেখা পড়ছেন সেই সম্মানিত অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের জ্ঞান দান করার সাহস আমার নেই। আমাদের মনের কথা গুলোই আপনাদের শুনাতে চাই।
.
বর্তমান প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় সবাই ফার্স্ট চাইলেও হতে পারবে না। চাইলেও সব সময় ভালো করা সম্ভব হয়ে উঠে না। একবার খারাপ করার কারণেই আপনি "তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না" বলে কাউকে বাতিল করবেন না প্লিজ...
জীবন কেবল লেখাপড়া কিংবা একটা পরীক্ষাতেই শেষ না। সৃষ্টিকর্তা সবার ভেতরেই কোন না কোন সম্ভবনা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠান। জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে তার সেই সম্ভবনা প্রস্ফুটিত হবেই।
.
বার বার এই কথা বলার কারণে আসলেই কি কোন লাভ হয়? লাভের মধ্যে লাভ হয় একটা ছেলে বা মেয়ে তার জীবনে সব চেষ্টা থামিয়ে দেয়। জীবনের কোন পর্যায়ে "আমি কিছু পারিনা " এই গণ্ডির বাইরে সে বের হতে পারবেনা। সব সময় নিজেকে ছোট মনে করতে থাকবে। নিজেকে ছোট ভাবার চেয়ে বড় কোন মানসিক অসুখ নেই।
.
.
.
আমি বলছি না ছাত্র বা সন্তানকে ধমক দেয়া বন্ধ করা হোক। ধমক চলুক, গালি গালাজের ফোয়ারা ছুটুক, প্রয়োজনে কঠিন মাইর দেয়া হোক, ভাত বন্ধ করা হোক...
তারপরও রেগে কি বার বার "কিচ্ছু হবে না" বলবেন না প্লিজ।
আর যদি এক বার বলেনও, তারপরই তাকে সম্ভবনার কথা বলুন। সে কি করতে পারে, তাকে দিয়ে কি হতে পারে সেটা বুঝিয়ে বলুন। তাকে উৎসাহ দিন, তার চোখে স্বপ্ন ঢেলে দিন।
আপনি স্বপ্ন ঢেলে দেয়ার কারণে সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ক্লাসে ফার্স্ট হবেই এমন কোন কথা নেই, তবে তার ভেতর থেকে সম্ভবনার মৃত্যু হবে না। . তার মাঝে গান থাকলে সে একদিন গানের মানুষ হবে, একদিন লেখার মানুষ হবে, একদিন ছবির মানুষ হবে। দোহাই কারো ভেতরের মানুষটাকে মারবেন না।
স্বপ্নের মৃত্যু বাস্তব মৃত্যুর চেয়েও মাঝে মাঝে কষ্টের।
.
.
স্বপ্ন বেঁচে থাকুক, বেঁচে থাকুক সম্ভবনা.
Dedicate : Piashi
©somewhere in net ltd.