![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধ্বংসের মুখে বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু!!!
বাংলাদেশ হিন্দু শূন্যতার দিকে এগিয়ে চলেছে। কেউ নেই তাদের রক্ষা করার। প্রায় এক দুঃসহ অবস্থা সংখ্যালঘু খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, আদিবাসী, আহমেদিয়া ও শিয়া মুসলিম, নাস্তিক, ইসলামী সন্ত্রাস বিরোধী সুন্নি মুসলমান, বামপন্থী ও কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য, গণতন্ত্রী প্রগতিশীল মানুষ, লোকসঙ্গীত, রবীন্দ্র নজরুল সঙ্গীত শিল্পীগণ, স্বাধীন মনস্ক কবি, গল্পকার, চিত্রশিল্পী ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজনের। সব চেয়ে বেশি মাত্রায় ইসলামী আক্রমণের শিকার হচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়। মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে হিন্দু পাড়া আক্রমণ করা হচ্ছে, দিবালোকে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে দরিদ্র হিন্দু দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষের অরক্ষিত বাসস্থান। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত করে তোলা হচ্ছে নিম্ন বর্গীয় হিন্দু পরিবারদের। হুলিয়া জারি করে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এলাকা থেকে। বলা হচ্ছে তোদের ‘রেণ্ডিয়া’ (ইন্ডিয়া) চলে যা মালাউনের দল। ওরা হিন্দু নাম মুখে আনে না ঘৃণায়, ডাকে মালু বা মালাউন নামক এক গালি দিয়ে।
ইসলামী মাদ্রাসাজাত ছাত্র আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে তফাৎ করা দুষ্কর। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে শাসক দল বা প্রধান বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের পার্থক্য করা যায় না। শাসক দলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ ও মন্ত্রী বনে যাওয়া অনেক মুসলিমদের সাথে কুখ্যাত জামায়তি ইসলাম প্রভাবিত সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের আলাদা করা যায় না। বেশ কিছু অর্থ ও মুল্যবান সম্পত্তির অধিকারী হিন্দুদের জলের দামে কিছু প্রভাবশালী মুসলমান নেতা সাংসদ মন্ত্রীদের নিজ অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে যার ভুরিভুরি প্রমাণ বর্তমান। বেঁচে থাকা প্রাণ হাতে করে সর্বস্ব ফেলে রেখে ভারত সীমান্তে পাড়ি দিচ্ছে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষজন।
১৯৪৭ শালে যে হিন্দু জনসংখ্যা ২৯ শতাংশ ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের শাসনে কমে গিয়ে ১৯৭১এ কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১২ শতাংশে আর বর্তমানে আরও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া হিন্দুদের অধিকাংশ এখনো ভারতে শরণার্থীর দুঃসহ জীবন যাপন করে চলেছে। বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু আছে আর মাত্র ১ কোটি ১০ লক্ষ। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন ৬০০ উপর হিন্দু শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। আর এই ভাবে চলতে থাকলে আর বছর কয়েকের মধ্যে বাংলাদেশ অবধারিত হিন্দুশুন্য হতে চলেছে। এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে বর্তমান ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল এক অধ্যাদেশ বলে হিন্দু শরণার্থীদের দ্রুত নাগরিকত্ব, দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা, আধার কার্ড, রেশন কার্ড বা অন্যান্য ভারতীয় নাগরিক সুবিধা প্রদান করার চেষ্টা করেছে। যদিও এই প্রদেয় সুবিধাগুলি পাকিস্তান সহ পৃথিবীর অন্য সব দেশ থেকে আগত হিন্দু শরণার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তথাপি সহানুভূতিশীল কিছু মানুষ মনে করেন যে ভারতের এই ঘোষণা ইসলামী বাংলা সহ অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে হিন্দু বিতরণে ইসলামী দাঙ্গাবাজদের আরও বেশি উৎসাহিত করতে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশে বংশানুক্রমিক ভাবে বসবাসরত হিন্দু মানুষজনের স্বাধীন ধর্মাচরণ আজ চূড়ান্ত বাঁধার সম্মুখীন। কোন ধর্মীয় উস্কানি ছাড়াই হিন্দু সনাতন ধর্মের দেবদেবী মূর্তি, মন্দির ভাঙ্গার প্রায় নিয়মিত ছবিসহ খবর দিচ্ছে স্থানীয় গণতান্ত্রিক চেতনায় সমৃদ্ধ অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম। নিষ্প্রাণ দেবদেবী মূর্তি ভূপতিত করা ছাড়াও প্রতিনিয়ত চলছে মাতৃ জাতির অসম্মান। কখনো স্কুল কলেজের ছাত্রীদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত করে ধর্ষণ করে গর্ভে সন্তান জন্ম দেয়া চলছে। যৌন অত্যাচারের হাত থেকে হিন্দু বিবাহিতা মা জননীদেরও নিষ্কৃতি দেয়া হচ্ছে না এই অভিশপ্ত দেশটিতে। বহু পরিবার প্রাণনাশের ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করে চলেছে এই নারকীয় অত্যাচার।
কিন্তু কেন এই সংগঠিত নির্যাতন। বহু ইসলামী জলসা, ওয়াজ, ধর্ম সভায় সনাতন হিন্দুদের নাম করে নির্যাতনে প্ররোচনা দেয়া চলছে। কারণ যত কাফের, বিধর্মী, ইসলামে অবিশ্বাসী মানুষদের নির্যাতন ও হত্যা করা চলবে, যত ‘কয়েদী’ হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করে উপভোগ করা যাবে ততই আক্রমণকারী অত্যাচারী ইসলামী ‘বীরপুরুষদের’ মৃত্যুর পর জান্নাতে ৭০টি ভার্জিন সুন্দরীর সাথে যৌন আনন্দ করার সুযোগ পাবে। সে কারণেই কোরান হাদিসের বিধানে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হত্যা লুণ্ঠন ধর্ষণকে জায়েজ বলা হয়েছে। আদেশ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে দ্রুত হিন্দুশুন্য করতে হবে।
এই কট্টর ইসলামী ধর্মমতের প্রচারক বাংলাদেশে জামায়তি ইসলাম ও তার প্রভাবিত জেহাদিদের অঙ্গ সংগঠনগুলি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সমাজের দরিদ্র কৃষক, শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার, দাবী দাওয়া নিয়ে তাদের নেই কোন মাথা ব্যথা। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে শরীয়ত আইনের শাসন বলবত করে ইসলামী খিলাফতের প্রতিষ্ঠা করা। যে তালেবানি শাসনে এমনকি মুসলমান নারীর আর কোন অধিকার থাকবে না। থাকবে না তাদের শিক্ষা গ্রহণের, হিজাব বোরখা ছাড়া পোশাক পরিধানের। তাদের কাজ থাকবে পুরুষের খিদমৎ করা ও তাদের দাসীবৃত্তি করা। শরীয়তী আইন অনুযায়ী এই তালেবানি শাসন ব্যবস্থায় একমাত্র ইসলামী ধর্মচর্চা ছাড়া সব ধরনের সঙ্গীত চর্চা, কাব্য সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান চর্চা অবৈধ হবে। এই ইসলামী সন্ত্রাস বিরোধী আলোকিত মুসলিম, হিন্দু মুসলিম ব্লগার, ফেসবুকার, পুস্তক প্রকাশক, স্বাধীন বুদ্ধিজীবীর রক্তে বাংলাদেশের মাটি বারংবার রক্তাক্ত হয়েছে এবং আজো হয়ে চলেছে নিয়মিত।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যাচারী শেষ কথা বলেনি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর কোন অন্যথা হবে না। সম্প্রতিকালে প্রায় লক্ষাধিক মুসলমান ইমাম, মাওলানা ও ধর্মীয় প্রধানেরা লিখিত ফতোয়া দিয়েছেন এই বলে যে ইসলাম কখনো নাস্তিক ও পরধর্মাচারীদের নির্যাতন ও হত্যার আদেশ দেয়নি। ফলে ইসলামের দোহাই দিয়ে যে হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু, নাস্তিক ও অসাম্প্রদায়িক মুসলমান অত্যাচার ও হত্যা চলছে তা একেবারেই ইসলাম বিরোধী। তারা সরকারের কাছে এই হত্যাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে বিধান দিয়েছেন। যদিও এই ফতোয়াবাজদের মধ্যে অনেকে ওই সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে বাস করছেন। তথাপি জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। চলছে ধারাবাহিক ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মানব বন্ধন, মিছিল, সমাবেশ দেশের সর্বত্র। ঢাকা শহরে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের শাসক-জোট, জোট বহির্ভূত বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি সমূহ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন।
সব চেয়ে উল্লেখ যোগ্য হিজবুত তাওহীদ নামে এক শান্তিকামী ইসলাম ধর্মীয় সংগঠন যারা জঙ্গি ইসলামের বিরুদ্ধে এক আদর্শিক সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে মানুষের মধ্যে প্রচার করে চলেছেন যে এই অধুনা আরব্য বর্বরতা বয়ে নিয়ে আসা আই এস আই আস বা আল কায়েদা আদর্শে প্রভাবিত উগ্র ইসলাম প্রকৃত শান্তির ইসলাম ধর্মের শত্রু। তারা ইসলামের প্রামাণ্য ও গ্রহণীয় ধর্মমতের আলোকে এই উগ্র ইসলামকে সমগ্র মানব জাতির অভিশাপ বলে প্রতিপন্ন করেছেন। যদিও এই শান্তির প্রচারকেরাও জামায়তি ইসলামী ও উগ্র ইসলামের আদর্শে উল্লসিত সমর্থকদের সংগঠিত নির্যাতনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। পায়নি স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে কোন নিরাপত্তা ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
অনস্বীকার্য, বর্তমান শ্রীমতী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে ও ইতিমধ্যে প্রায় পনেরো হাজার দাগি ও সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছে। হাসিনার আদেশে হিন্দু জনবসতিতে গিয়ে তাদের হাতে আত্ম-রক্ষার্থে লাঠি তুলে দিয়েছে পুলিশ বাহিনী। ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশ এই সরকারী তৎপরতাকে সমর্থন জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সর্বস্তরে সরকারী সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। আজ ঢাকা কল্যাণপুরে এক পাঁচ তোলা ব্যাচেলরদের মেসে পুলিশি অভিযানে ইসলামী সন্ত্রাসীরা বোমা ও গুলি ছুড়ে পাল্টা আক্রমণ করে। পুলিশের গুলিতে ৯ জন সন্ত্রাসী খতম হয় ও এক জন ধরা পড়ে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
কিন্তু বড় দেরি হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দীর্ঘকাল সরকারী নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে ইসলামী সন্ত্রাসীরা তাদের শিকড় বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে বেশ কিছু বাংলাদেশী ইসলামী সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশকারী যারা ইদানীং সচেষ্ট হয়েছে ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে। এখন পর্যন্ত ধরা না পড়া বহু বাংলাদেশী ইসলামী সন্ত্রাসী কলকাতা সহ পশ্চিম বঙ্গের অনেক মুসলিম প্রধান অঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে অন্যত্র হিন্দু এলাকায় খুন ডাকাতি করার প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে যখন রাজ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বেশি দাবী করে।
পরিশেষে উল্লেখ্য যে দুধ কলা দিয়ে ঘরের ভিতর বিষাক্ত সাপ পুষলে, কোন এক অসাবধান মুহূর্তে সেই সাপ ছোবল মারবে। মৌলবাদীদের দাবীর কাছে মাথা নত করে, উগ্র ইসলাম শিক্ষা কেন্দ্র মাদ্রাসাগুলিকে চালু রেখে, ঘৃণা বিদ্বেষ প্রকাশ্য প্রচারের জায়গা করে দিয়ে, ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে রাষ্ট্র থেকে ইসলামী উগ্র মৌলবাদ নিঃশেষ হবে – যা সোনার পাথর বাটির সমতুল্য এবং যা কোন দিন বাস্তবে সম্ভব নয়। যদি সরকারী শাসক দলকে সর্বধর্ম, বর্ণ, মানবতার স্বার্থে তার রাষ্ট্রধর্ম পালন করতে হয়, তাহলে নেপালের পথ ধরে অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করে কোন বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম মান্যতা সর্বাংশে বর্জন করতে হবে। জনগণের মৌলিক অধিকারগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের প্রতি সরকারকে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সব বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি সমূহকে নিয়ে যৌথ সংগ্রামে অবতীর্ণ না হলে বাংলাদেশ থেকে এই অমানবিক উগ্র ইসলাম ধ্বংস হবে না। ধ্বংস হবে না হেরে যাওয়া পাকিস্তানের বাংলাদেশ ও ভারত বিরোধী চক্রান্ত।
ক্যাটেগরি: ধর্ম
©somewhere in net ltd.