![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শারদীয় দুর্গাপূজা এবং দেশের সাম্প্রদায়িক মাদ্রাসাশিক্ষা ও তার পাতিহুজুরগণ
বাংলাদেশের সর্বস্তরের ও সর্বপ্রকারের মাদ্রাসাগুলো ১৯৫২ সালে আমাদের মহান ভাষাআন্দোলনে মাতৃভাষা-বাংলার বিরোধিতা করেছিলো। আমাদের দেশের কওমী-খারিজী ও আলিয়া—এই দুই ধারার মাদ্রাসাই সেই সময় মাতৃভাষা-বাংলার বিপক্ষে অবস্থানগ্রহণ করেছিলো। এখানকার হুজুর, পাতিহুজুর, তথা সর্বস্তরের কাটমোল্লা-নরপশুরা তখন ইসলামের দোহাই দিয়ে বিজাতীয় ও জারজ উর্দুভাষার পক্ষে যারপরনাই দালালি ও উকালতি করেছিলো—আর তারা উর্দুকে বঙ্গীয় মুসলমানের ভাষা বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। আর এই মাদ্রাসাগুলোই ১৯৭১ সালেও ইসলামের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে আর পাকিস্তানীদের মূত্র খেতে-খেতে তাদের গোলামি করেছিলো। সেসব ইতিহাস জাতির জানা আছে। আজ আর এসব বলতে চাচ্ছি না। মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামীশিক্ষার নামে এরা যে কতবড় সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ আর পরধর্মে অসহিষ্ণু-নরপশু—আজ শুধু সংক্ষেপে তা-ই বলতে চাচ্ছি।
আমাদের দেশে এখন শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজাউৎসব। আর প্রতিবছর এটি সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে। আমরা সেই শৈশব থেকে শুনে আসছি ও দেখছি—এটি সার্বজনীন দুর্গাপূজা। এটি শুধু হিন্দুর ধর্মপ্রথা নয়—বাঙালির সম্প্রীতির উৎসবও বটে। আর জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সর্বস্তরের বাঙালি এতে অংশগ্রহণ করে থাকে। আমাদের দেশে অতিপ্রাচীনকাল থেকে একটি কথা প্রচলিত ছিল আর এখনও আছে: ধর্ম যার-যার—আর উৎসব সবার। কথাটি চিরসত্য আর এটি বাঙালির ইতিহাসের একটি অংশ। একসময় বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হতো। আর সাম্প্রতিককালে নানাকারণে সাম্প্রদায়িক-নরপশুদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও এটি আজও সার্বজনীন থাকলেও সেভাবে আর স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদযাপিত হচ্ছে না। বাংলাদেশে আগের মতো সার্বজনীন দূর্গাপূজা আর নাই। এজন্য দায়ী দেশের শাসকবর্গ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের দেশবিরোধী-কাটমোল্লাশ্রেণী। এই নরপশুরাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশে সর্বপ্রকারের সাম্প্রদায়িকতার মূলে দেশের অধিকাংশ মাদ্রাসাই দায়ী। এইসব মাদ্রাসার পাতিহুজুরগুলো চরম সাম্প্রদায়িক আর ধর্মান্ধ।
শারদীয় দুর্গাপূজাউপলক্ষে দেশের সর্বস্তরের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১০-১২ দিনের ছুটি চলছে। আর কোনো-কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই উপলক্ষে আরও বেশি ছুটি দেওয়া হয়েছে। এদিকে দুর্গাপূজাউপলক্ষে সারাদেশের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য সরকারি-ছুটি মাত্র ১ দিন! তাও হয়তো দয়া করে দেওয়া হয়েছে। দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্গাপূজাউপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও একই সরকারের অধীনে পরিচালিত দেশের আলিয়া-মাদ্রাসাগুলোতে এর কোনো চিহ্ন নাই। আর তাই, দেশের আলিয়া-মাদ্রাসাগুলোতে দুর্গাপূজাউপলক্ষে সরকারঘোষিত মাত্র ১ দিনের ছুটি দেওয়া হয়। শুধু সরকারঘোষিত দিনটি এখানে নিতান্ত দায়ঠেকে ছুটি হিসাবে পালিত হয়। এমনকি শিক্ষার্থীদের কাছে এই ছুটি ঘোষণার সময় মাদ্রাসাকর্তৃপক্ষ (মাদ্রাসার প্রিন্সিপালরা) ছুটির নোটিশে লিখে থাকে: ‘আগামীকাল সরকার-ঘোষিত বিশেষ ছুটি’ পালিত হবে! কিন্তু কেন, কী জন্যে এই ছুটি পালিত হবে তা অধিকাংশ মাদ্রাসার নোটিশে বলা হয় না। এই হলো এদের হীনমন্যতা আর সাম্প্রদায়িকতার সীমাহীন নিদর্শন। আর এইসব পাতিহুজুর মুখে বলে থাকে: ‘মুসলমানরা সবসময় অসাম্প্রদায়িক!’ মাদ্রাসাগুলোতে পরমতসহিষ্ণুতা বলে কিছু নাই। সেখানে পরধর্মের প্রতি সামান্য বা বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধও নাই। এদের দৃষ্টিতে মুসলমান ব্যতীত আর কাউকে সম্মান বা শ্রদ্ধা করাটা অধর্ম বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও, এরা মুসলমান ব্যতীত আর-কাউকে মানুষ ভাবে না।
দেশে হিন্দুসম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজাউপলক্ষে ৩ দিনের সরকারি-ছুটির আবেদন করে থাকে। কিন্তু এতে সরকার কোনোপ্রকার কর্ণপাত করে না। দেশের বহু মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে হিন্দুধর্মাবলম্বী শিক্ষকও রয়েছেন। তা সত্ত্বেও দেশের সরকার অন্ধ হয়ে মাদ্রাসার পাতিহুজুরদের মতোই আচরণ করে চলেছে। সরকারের অদূরদর্শীসিদ্ধান্তেই মাদ্রাসাগুলো আজ ভিন্নধর্মের মানুষদের প্রতি অশ্রদ্ধাভাব প্রকাশ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। মাদ্রাসাগুলোতে শারদীয় দুর্গাপূজাউপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা তো হয়ই না—অধিকন্তু এরা শারদীয় দুর্গাপূজার বিরুদ্ধে যে-সব অপপ্রচার ও বিষোদগার করে থাকে তা হলো:
১. ‘দুর্গাপূজার জন্য মাদ্রাসায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা জায়েজ নাই’! [এগুলো এদের মনগড়া ও মুখের কথা। আর দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর অপকৌশল মাত্র।]
২. ‘মুসলমানদের দুর্গাপূজায় শামিল হওয়া জায়েজ নাই’! [আসলে, কোনো মুসলমান তো দুর্গাপূজা করে না বা এতে শামিলও হয় না। তারা এগুলো দেখতে গেলে এই পাতিহুজুররা একেই দুর্গাপূজায় শামিল হওয়া বলে থাকে!]
৩. ‘হিন্দুদের পূজামণ্ডপ দেখতে যাওয়া মুসলমানদের জন্য জায়েজ নাই! আর এগুলো হারাম!’ [১৯৭১ সালে, এরাই বলেছিলো: বাঙালি-নারীদের ধর্ষণ করা জায়েজ! আর এগুলো ‘মালে গনীমত’!]
৪. ‘দুর্গাপূজাকে সার্বজনীন বলা জায়েজ নাই! এটা শুধু হিন্দুদের’! [১৯৭১ সালে, এরা বলেছিলো: পাকিস্তান আর ইসলাম এক। তাই, সবাইকে পাকিস্তান-রক্ষা করতে হবে!]
৫. ‘ধর্ম যার-যার—আর উৎসব সবার—এটি ইসলামবিরোধী শ্লোগান’! [কিন্তু কীভাবে? তার কোনো প্রমাণ এই কাটমোল্লাদের হাতে নাই। আর যারা এই শ্লোগানকে বিতর্কিত করতে এবং এ-কে বিতর্কিত শ্লোগান বলে অপপ্রচার চালায় তারাও ধর্মান্ধ আর চরম সাম্প্রদায়িক।]
৬. দুর্গার প্রতিমা দেখা সম্পূর্ণ নাজায়েজ! এগুলো দেখলে মুসলমানদের ঈমান থাকবে না’! [এভাবে, তারা সবসময় পাকিস্তানীকায়দায় ‘মনগড়া ও শয়তানী’ কথাবার্তা বলে থাকে।]
৭. ‘হিন্দুদের মূর্তিপূজা দেখা শিরক’। ইত্যাদি-ইত্যাদি।
মাদ্রাসার হুজুররা সবসময় হিন্দুসম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এইজাতীয় শয়তানীকথাবার্তা বলে থাকে। আর এগুলো তারা মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষার্থীদের জোর করে এসব বিশ্বাসও করানো হচ্ছে। তবুও দেশের সরকার অন্ধ হয়ে বসে আছে! মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এইজাতীয় ঘৃণ্য ও সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কোনোভাবেই চলতে পারে না।
এই হলো বাংলাদেশের পাকিস্তানীমুসলমানদের ঈমান ও আকিদাহ। এরা আজ ইসলামধর্মকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির অপকর্মে আর জঙ্গিপনার কাজে অপব্যবহার করছে। এদের সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করাটা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।
©somewhere in net ltd.