![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দেশের মানুষ এখন ধার্মিক হওয়ার চেয়ে ধার্মিক সাজতে বেশি পছন্দ করে। ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে বললে বলা যায়: এখন একশ্রেণীর মানুষ ধার্মিক না হয়ে ‘ধার্মিক-পদে’ অভিনয় করতেই বেশি আগ্রহী। এরা ভেবে দেখেছে যে, এদের ধার্মিক হওয়ার কোনো যোগ্যতা বা সম্ভাবনা নাই! তাই, কী হয়েছে? এজন্য তো আর বসে থাকা যায় না। আর এক্ষেত্রে ধার্মিক না-হয়েও ধার্মিক সাজতে কারও কোনো বাধা নাই।
আগের দিনে বাঙালি-সতীসাধ্বী-রমণীরা (জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে) কী সুন্দর ঘোমটা ব্যবহার করতেন! আর তাদের কৌলিন্য-আভিজাত্য ও সৌন্দর্য ফুটে উঠতো এই ঘোমটায়। তাদের ঘোমটা ছিল নারীর সহজাতবোধের সহজ-সরল প্রকাশ। আর এটি ছিল তাদের জীবনযাত্রায় মানানসই, বাঙালিয়ানা ও নিজস্ব-স্বকীয়তাবোধের পরিচায়ক।
এখন দিনকাল বদলে গেছে। অনেকে ব্যবসায়িক ফায়দা-লুটতে এখন যথেচ্ছা ঘোমটা (আসলে, ঘোমটা নয়, হিজাব) ব্যবহার করছে। এগুলো সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ও ব্যক্তিগত স্বার্থে। তাই, এখনকার কারও-কারও ঘোমটা, বোরকা আর হিজাবের মধ্যে সেই আদর্শ ও কৌলিন্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং সেখানে এখন লোকদেখানো কিংবা ধার্মিক সাজার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।
এখন অনেকেই জোর করে ধার্মিক হতে চাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই ধার্মিক হতে পারছে না। তাই, তাদের বিভিন্ন লোগো-ট্রেন্ড-ব্যবহার করতে হচ্ছে। নারীদের পাশাপাশি ভণ্ডপুরুষগুলো ধার্মিক সাজার জন্য সৌদিআরবে গিয়ে একাধিকবার-বারবার হজ্জ-ওমরাহ আদায় করছে। আবার কেউ-কেউ বাংলাদেশে বসে মানুষখুন করে সৌদিআরবে চলে যায়। আর সেখানে হ্জ-ওমরার নাম করে মাসের-পর-মাস ওমরায় ডুবে থাকে! আর এসবের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। আর তাই, দেখা যায়, একটি লোক সৌদিআরবে গিয়ে ওমরাহজ্জে ডুবে আছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ ফাইভস্টার-হোটেলে বিলাসী-আয়েশী জীবনযাপন করছে। আর সে সেখানে বসেই ‘কিলারদের’ সহযোগিতায় বাংলাদেশে মানুষখুন করছে। আবার এও দেখা যায় যে, বহু ‘খুনী-গডফাদার’ বাংলাদেশে মানুষখুন করে নিজেকে আড়াল করার জন্য একদৌড়ে-সরাসরি সৌদিআরবে চলে যায়। আর দেশে তার চামচাদের মাঝে রটিয়ে যায়: “তিনি ওমরাহজ্জে গিয়েছেন। আর হজ্জ ছাড়া তিনি থাকতে পারেন না। প্রতিমাসে তাই তিনি ওমরাহজ্জ আদায় করতে সৌদিআরবে ছুটে যান! আর কাবাঘর তাকে সবসময় ডাকে!”
এই দেশে ভণ্ডের কোনো শেষ নাই। আবার ধার্মিকেরও কোনো অভাব নাই। সারাজীবন একটা লোক প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কয়েক ওয়াক্ত ঘুষ খেয়েছে। সে কিন্তু আবার নামাজও পড়েছে কয়েক ওয়াক্ত। আর কেউ-কেউ তো নামাজ না পড়লেও গুনে-গুনে পাঁচ-ওয়াক্ত ঘুষ খেয়েছে! এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনও বাদ দেয়নি। আর নিয়মিত ঘুষখাওয়াটাকেই সে জীবনের ধর্ম মনে করেছে। হঠাৎ এই ব্যক্তিই একদিন বদলে গেল (বদলে গেল কি ভরং ধরেছে আরকি)! সে কিছুদিনের মধ্যেই একহাতপরিমাণ দাড়ি, বিরাট জোব্বাপরিধান করে কাকরাইল-মসজিদে তাবলীগের চিল্লায় চলে গেল! আসলে, সে কি ধার্মিক হয়েছে? না, সে আপাদমস্তক একটা ভণ্ড ও জোচ্চোর হয়েছে। এখন বয়স হয়েছে না? তাই, তার সারাজীবনের অকাম-কুকামের চিহ্ন-ঢাকার জন্য সে এই বেশ ধরেছে। সে যদি ধার্মিক হতো—তাহলে, শুরু থেকেই ধর্ম মেনে জীবনে কখনও ঘুষ খেতো না। এইসব ভণ্ডামি আমাদের দেশে এখন সমানে চলছে। এখানে, প্রতিনিয়ত আর প্রতিমুহূর্তে ভণ্ডের বীজ-রোপণ করা হচ্ছে। আর তাই, সমাজে-রাষ্ট্রে এখন কারও-কারও কাছে ভণ্ডামিই একটি আদর্শ!
যাক, বলছিলাম এখনকার না-বুঝে ঘোমটা-দেওয়া একশ্রেণীর মানুষের কথা। এরা ধর্ম বোঝে না। কিন্তু ঘোমটা বোঝে। এরা মনে করে: শুধু একটা বোরকা কিংবা হিজাব পরিধান করলেই হলো। আর-কিছু লাগবে না। আর এই ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে এখন লোকদেখানো বোরকা-হিজাব পরিধানে ব্যস্ত। এটা এখন অনেকের কাছে একটা ফ্যাশন মাত্র। এমনকি আজকাল অনেক মেয়ে টাইট-জিন্স-প্যান্ট পরছে আবার বোরকা-হিজাবও পরছে! আবার অনেকে টাইট-জিন্স-প্যান্ট-গেঞ্জি পরেও আবার হিজাব পরছে! এছাড়াও আজকাল অনেকেই টাইট-জিন্স-প্যান্টসহ বোরকা পরছে। আর তাদের বোরকাও টাইটফিট! আসলে, তার কাছে ধর্ম বড় নয়। তার কাছে ফ্যাশনটাই এখন বড়। আর সে এই ফ্যাশনকেই ধর্মজ্ঞান করছে!
এছাড়াও, এখন এমন একটি শ্রেণী তাদের ব্যবসার কাজে বোরকা-হিজাব এতো বেশি ব্যবহার করছে যে, এখন রাস্তা-ঘাটে বোঝা মুস্কিল কে আসল আর কে নকল? সাধারণ মানুষ এখন হিমশিম খাচ্ছে। এখন যে ‘ঘোমটার ভিতরে খেমটা নাচে’! এখন একপ্রকার রাতের পাখিরাও নিয়মিত বোরকা-হিজাব পরে থাকে!
এক-ভদ্রলোক তার ছেলের জন্য পাশের বাড়ির বোরকা-হিজাব পরা সতেরো-আঠারে কিংবা খুব বেশি হলে ঊনিশ-বিশ বছরের একটি মেয়েকে পছন্দ করেছিলো। মানে, মেয়েটিকে তার পুত্রবধূ করে ঘরে তুলতে চেয়েছিলেন। মেয়েটিকে তারা পারিবারিকভাবে একদিন দেখেও এলেন। কিন্তু কয়েকদিন পরে শোনা গেল: ওই মেয়েটির একাধিক বয়ফ্রেন্ড-প্রেমিক রয়েছে। আর তাদের একজনের সঙ্গে সে পালিয়ে গিয়েছে! আসলে, তার বোরকা-হিজাব তাকে রক্ষা করতে পারেনি। আর সে কিন্তু ধার্মিক হওয়ার জন্য তার এই বোরকা-হিজাবপরিধান করেনি। সে একজন ‘হুজুগে বাঙালি’ হয়ে যুগের ‘ট্রেন্ড’ রক্ষা করেছে মাত্র।
সতীসাধ্বী হওয়ার জন্য বোরকা-হিজাব পরতে হয় না। সতীসাধ্বী ও ধার্মিক হওয়ার জন্য প্রয়োজন: সততা, পবিত্রতা, সৎচিন্তা, নিজেকে সংযত রাখা, মার্জিত-রুচিশীল ও শালীন পোশাকআশাক ব্যবহার করা, নিজদেহের পবিত্রতা বজায় রাখা, এক-স্বামী বা এক-স্ত্রীতে সন্তুষ্ট থাকা, প্রেমের নামে নিজদেহকে সবার জন্য উন্মুক্ত না করা ইত্যাদি। আর এজন্য সবাইকে সচ্চরিত্রবান তথা ভদ্র-ভব্য, শালীন, মার্জিত, সৎ, নীতিবান, রুচিশীল, দুর্নীতিমুক্ত, প্রেমের নামে ছলনামুক্ত হতে হবে।
আসলেই হিজাব কোনো পর্দা নয়, আর বোরকাও কোনো পোশাক নয়। এগুলো মানুষ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আর এটি এখন কারও-কারও কাছে শুধুই ফ্যাশন বা ট্রেন্ড। শালীন-মার্জিত-সুন্দর পোশাক পরলেই পর্দাপালন হয়ে যায়। আর আগের দিনে আমাদের সতীসাধ্বী-পতিব্রতা-রমণীরা এতো বোরকা-হিজাব পরতেন না। প্রথমেই বলেছি: তারা সামান্য ঘোমটাব্যবহার করেই তাদের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতেন, আর নিজেদের শালীনতা ও পবিত্রতা রক্ষা করতেন।
আজকাল অনেকে কোনোকিছু না বুঝেই এখন হিজাব পড়ছে। আর বোরকা পরছে। হুজুগে বাঙালি হলে যা হয় আরকি!
[বি.দ্র. বোরকা-হিজাবের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আক্রোশ নাই। এটা যে-কেউ পরিধান করতে পারে। আর প্রত্যেকেরই ব্যক্তিস্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু যারা বোরকা-হিজাব পরে প্রতিনিয়ত ভণ্ডামি করছে—তাদের কোনো ক্ষমা নাই।]
©somewhere in net ltd.