![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিশরীয় সভ্যতা ও ইসলাম ধর্ম।
মুসলিম জাতির দাবি তারা পৃথিবীতে বিজ্ঞানের দিক দিয়ে সব চেয়ে এগিয়ে থাকা এবং জ্ঞান গর্ভ এক জাতি। কারন তাদের ধারনা তাদের প্রধান ঐশরিক কিতাব বলে প্রচলিত পবিত্র গ্রন্থ কোরান হচ্ছে সকল বিজ্ঞান জ্ঞানে পরিপুর্ন এমন এক কিতাব যেখানে বিগত ১৪০০ বছর ধরে বিজ্ঞান যত আবিষ্কার করেছে তা এবং আগামীতেও যত আবিষ্কার হবে তার সকল কথা সেখানে লেখা আছে বলে মুসলিম জাতির ধারনা। অর্থাৎ কোরান হচ্ছে সকল বিজ্ঞানের মূল। কিন্তু ইতিহাস দেখলে আমরা পাই অন্য আরেক নমুনা। এই ইসলাম ধর্ম তৈরি হবার হাজার হাজার বছর আগে মিশরীয় সভ্যতার মানুষ যা আবিষ্কার করে গিয়েছে তার কোন কিছুই মুসলিম বা আরব সভ্যতার মানুষের দ্বারা এই ১৪০০ বছরে করে দেখানো সম্ভব হয় নাই। শুধু তাই না মিশরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক একটা স্থপনা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের কাছে আশর্যের বিষয় হয়ে আছে। ইতিহাসবিদেরা যখন মিশরীয় সভ্যতার দিকে তাকান তখন তাদের চোখে থাকে রোমাঞ্চ, কৌতুহল, আর এডভেঞ্চার। তাদের দাবী এমন যে, পার্শবর্তী আরব্য সভ্যতা কোন আবিষ্কার তো দূর বরং যদি দাবি করা হয় মিশরীয় সভ্যতা থেকে তাদের গনিত বিদ্যা, জোতির্বিদ্যা, ও লেখার কৌশল কপি করে তারা বিজ্ঞানী হয়েছে তাহলে মুসলিম জাতির জবাব দেবার যায়গা থাকে না। দেখুন ইতিহাস কি বলে।
মিশরীয় সভ্যতার ফারাও রাজত্ব শুরু হয়েছিলো আনুমানিক আজ থেকে প্রায় ৫৫০০ বছর আগে অর্থাৎ খৃষ্টপুর্বাব্দ ৩৫০০ সালের দিকে। সে সময়ে মিশরে অনেক নতুন নতুন আবিষ্কার হয়েছিলো পাশাপাশি ধর্মীয় কুসংস্কারও ছিলো। এ পর্যন্ত মিশরে কয়েকশত দেব দেবীর আগমন ঘটেছিল তখনকার মন্দিরের পুরোহিতদের হাত ধরে। একসময় মিশরে ফারাও মামোস রাজাদের রাজত্ব শেষ হয়। শুরু হয় রামেসিস যাদেরকেও এই ফারাওদের বংশধর বলা হতো কিন্তু আসলে তারা মূল ফারাও ছিলো না। এই রামেসিস এর দ্বিতীয় ফারাও রাজা বা ইংরেজি রামেসিস ২ বলে যে রাজা ছিলো তাকে মুসলিম জাতি তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের সাথে মিশিয়ে ফেলেছেন। এই ফারাও রাজা দ্বিতীয় রামেসিসকে মুসলমানেরা চেনে ফেরাউন নামে। আরবী ফৌরান, মিশরিয়া ফারাও আর ইংরেজিতে যা রামেসিস। মমি বিজ্ঞান ছিলো মিশরীয় সভ্যতার একটি সামান্য আবিষ্কার। তারা ধারনা করতো মানুষ মৃত্যুর পরে আবার নতুন করে আরেকটি জীবন পায় যেখানে গিয়ে সে আবার তার নতুন জীবন শুরু করে। ভবিষৎ এ কোনোদিন সে আবার পৃথিবীতে ফিরেও আসতে পারে তাই তার মৃত দেহ তারা মমি করতে শুরু করে। ধারনা করা হয় সেসময় মিশরে বিভিন্ন প্রানীর মাংশ আচার করে দীর্ঘদিন রেখে খাবার প্রচলন চালু ছিলো আর সেই ধারনা থেকে তারা মানুষের মৃত দেহকে মমি করার বিজ্ঞান আবিষ্কার করে। আশ্চর্যের ব্যাপারে হচ্ছে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মমিতে ব্যবহার করা তাদের মূল উপাদান কি ছিলো তা আবিষ্কার করতে পারেনি। এরকম নানা রহস্য দিয়ে পরিপুর্ন আছে মিশরীয় সভ্যতা।
যখন আরব্য সভ্যতাতে প্যাগান ও আদীবাসী ধর্মাবলম্বীদের আরবের কুরাইশ বংস নামের এক আরব্য বেদুঈন জাতির হামলা শুরু হলো তখন থেকে সেখানে নতুন একটি ধর্ম শুরু হতে থাকলো যার নাম ইসলাম। অবশ্য কুরাইশ বংশের সকল পুর্বপুরুষেরা এই প্যাগান ধর্ম মেনে আসতো। মূলত প্রথমদিকে ইসলাম কোন ধর্ম ছিলো না। সকল প্যাগান ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করার পর আরবের মক্কায় একটি রাজনৌতিক দল গঠন করা হয়। এটা ছিলো একটি রাজনৈতিক সাংস্কৃতি যা পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের প্রধান প্রচারক ও প্রধান নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে ছিলো সেই কুরাইশ বংশের একজন তার হাত ধরে ইসলাম ধর্ম নামে প্রচারিত হতে থাকে। এই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সেই বিজ্ঞানে ভরা ইসলাম ধর্মের প্রধান ঐশরিক কিতাব পবিত্র কোরান নিয়ে আসেন। আর ঠিক সেই সময় মিশরে রাজত্ব করছিলো হেরাক্লিয়াস নামের এক রাজা। ততদিনে মিশর জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে ধর্ম নামের কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার সুত্রপাতও ঘটেছিলো যা পরে আবার ধর্মান্ধতাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলো তবে সেটা অন্য গল্প। এই সময় মিশরীয় সেই রাজা হেরাক্লিয়াস দক্ষিন আরবের সাথে বাণিজ্য স্থাপন করেছিলেন।
কিন্তু হেরাক্লিয়াস এর রাজ্যের সাথে আরবের ব্যবসা একসময় কাল হয়ে দড়িয়েছিলো সেসময়ের মিশরীয়দের জন্য। কারন আরব্য জাতির এই দলটি ছিল যুদ্ধ, মারামারি, আর ডাকাতি করাতে শ্রেষ্ট এক জাতি। তাদেরকে মিশরীরা উৎপাতকারী জাতি বলেই চিনতো। আরবের উত্তর পুর্বের সাম্রাজ্য আর দক্ষিন আরবের মধ্যে যখন এই যুদ্ধ আর হানাহানি লেগেই থাকতো তখন এক বালকের জন্ম হলো বর্তমান মক্কা নগরীতে যার নাম ছিলো মুহাম্মদ। এই বালককে পেয়ে সেখানকার মানুষেরা পেলো এক শক্তিশালী নেতৃত্ব। যে সময়টিকে বর্তমানে ইতিহাসবীদেরা একটি ধর্মীয় পুনর্জন্মের সমকাল বলে থাকে। তখন যদি আবার এই জাতীয় ধর্মের পুনর্জন্ম না হতো তবে আজ মানুষ এই কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকতে পারতো। এই বালক মুহাম্মদ পরবর্তীতে তার বয়স ৪০ হবার পর থেকে এই ইসলাম নামের নতুন ধর্মটি প্রচার করা শুরু করে। তখন আরবে খ্রিষ্টান, ইহুদী, প্যাগান ধর্মের প্রচলন ছিলো। তবে আরবের মানুষের ধরনা ছিলো এই সব ধর্ম অন্য দেশ বা বাইরে থেকে আরবে এসেছিলো তাই সেখানে একটি নতুন ঈশ্বর এর প্রয়োজন পড়লো।
এসবই তখন ঘটছিলো মিশর থেকে লোহিত সাগরের ওপারে আরব উপজাতির পবিত্র নগরী মক্কায় সময়টা ছিলো ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। মুহাম্মদ তখন যে ধর্ম প্রচার করা শুরু করেছিলেন তার আরেক নাম ছিলো আল্লাহর প্রতি সমর্পন। যারা তার কথা মতো তাদেরকে সমর্পন করেছিলো তাদের বলা হত মুসলমান। এই মুসলমানদের নিয়ে মুহাম্মদ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে সমর্থ হয়েছিলো। কিন্তু প্রথম দিকে তার এই বানী বা ইসলামিক সাংস্কৃতি কেউ মানতে চাইছিলো না। একটা সময় ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সাঃ) তার কিছু অনুগত সমর্থক সহ মক্কা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। মক্কা থেকে ৩৫০ মাইল উত্তরে মদিনা নামক একটি নগরীতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে থেকে মুহাম্মদ (সাঃ) ধীরে ধীরে আরো কিছু অনুসারী তৈরি করেন। তাদের তিনি বলতে থাকেন এমন অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তার কথা যিনি সাথে থাকলে তাদের যুদ্ধে হারাবার কেই নেই আর যদি যুদ্ধে গিয়ে মৃত্যুও হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই। এতে আছে নিশ্চিত জান্নাত বা বেহেশত নামক এক অন্য পৃথিবীর বাসস্থান। এই কথা শুনে শুনে পুর্বের ধর্ম পরিবর্তন করে অনেকেই মুহাম্মদ এর অনুসারী হন। ফাইনালি ৮ বছর পর তার সেই দলবল নিয়ে আবার মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। মুহাম্মদ (সাঃ)এবং সেই বছরে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা দখল করে নেন। তখন বাইরের বিশ্বের খুব কম মানুষই জেনেছিলো মুহাম্মদ এর মক্কা বিজয়ের কথা। তাই প্রথমদিকে মিশরের রাজা হেরাক্লিয়াস এর পক্ষেও তা জানা সম্ভব হয়নি। আর তার পরপরই মুহাম্মদ (সাঃ) এই মুসলিম নামের যোদ্ধা দলটি আশেপাশে বেশ কিছু রাজ্য দখল করে নিতে সক্ষম হয়।
মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর সময় ৬৩২ খৃস্টাব্দে আরবের প্রায় সমগ্র জাতি এই ইসলাম নামক মুসলিম দলের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়। মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর তার সঙ্গী হযরত আবু বকর তার উত্তরাধিকারী পান এবং পরবর্তিতে তার মৃত্যুর পরে আরেকজন সঙ্গী হযরত ওমর (রাঃ) তার উত্তরাধিকারী পান। ততদিনে মিশরের রাজা হেরাক্লিয়াস সিরিয়া সহ আর বেশ কিছু পারশ্য রাজ্য এমনকি মেসোপটেমীয়ার কিছু রাজ্য দখল করে ক্লান্ত হয়ে সীদ্ধান্ত নেন সে আর কোন যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। তার সাথে সিরিয়ার মনোফাইসাইট জনগন যুদ্ধের ব্যাপারে বিতৃষ্ণ ছিলো। আর তারা নতুন এই আরব্য শক্তি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতো না তবে তারা নিশ্চিত ছিলো এই আরব্য বর্বর শক্তিটি কনস্টান্টিনোপলের ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ পছন্দ করতো না কারন তারা এই ইসলামকেই ধর্ম বলে মানতো। এসবের মধ্যেই ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগষ্ট বর্তমান জর্ডানের যে নদীটি লোহিত সাগরে গিয়ে মিশেছে সেই ইয়ারমুক নদীর পাড়ে একটি যুদ্ধ হয়। এখানেও এই জাত জিহাদি মুসলিমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলো কারন তাদের কোন মৃত্যু ভয় ছিলোনা। সর্গে বা বেহেশতে যাবার আশায় তারা প্রানপন যুদ্ধ করে।
পরবর্তিতে মিসরের রাজা হেরাক্লিয়াস এর মৃত্যুর পর বিনা যুদ্ধে এই মুসলিম জাতি মিশর দখল করে নেয়। যেমনটি একবার হয়েছিলো সেই সময় থেকে ৩০০০ বছর আগে ১২তম ফারাও ফারাও মামোস এর সময়ে চাইনীজ হিকক্স জাতীর দ্বারা। এর পরেই মিশরীয় সভ্যতার অনেক আচার, রীতিনীতি, মুল্যবান সম্পদ আস্তে আস্তে আরবের দখলে চলে আসে। এমনকি ধারনা করা হয় মুহাম্মদ (সাঃ) যে মেরাজের গল্প বলে মুসলমানদের নামজ আর রোজার নিয়ম শিখিয়েছেন সেটাও কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই মিশরীয় সভ্যতাতে পালিত হয়ে আসছিলো। সে মিশরীয় প্রার্থনার সাথে এই মুসলিমদের নামাজের ৮০% মিল পাওয়া যায়। জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা বা শান্তির ও সুশৃঙ্খলার কথা ইসলামের ইতিহাস বা প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে কোথাও পাওয়া যায় না। ইসলামের ইতিহাস অটোমান সাম্রাজ্য, মিশরীয় সাম্রাজ্য দখল, মক্কা দখল এসবের কথা জানতে গেলে শুধুই দেখা যায় মুসলমানেরা ইসলাম ধর্মের নামে রক্তের হলিখেলায় মেতেছিলো সেসময়ে। সেখানে জ্ঞান বিজ্ঞান বা শিক্ষার কোন চিহ্ন ছিলো না। বরং শোনা যায় জ্ঞান ধ্বংশ করার কথা
©somewhere in net ltd.