![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ধর্ম সত্য আর অন্যান্য সকল ধর্ম মিথ্যা ও নিকৃষ্ট এমন মনোভাব আছে প্রতিটি ধর্মের অনুসারি মানুষের মধ্যেই। প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারিদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সুসজ্জিত স্বর্গ আর অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের জন্য অনেক তেল গ্যাস পুড়িয়ে তৈরি করে রেখেছেন অনেক বড় বড় নরক। এখন দেখুন যারা বলে থাকে আমার ধর্ম শান্তির ধর্ম বা আমার ধর্ম মানবতার কথা বলে তাদের আমি বলবো তারা হইত মানবতা কি তা ঠিক বোঝে না বা তাদের ধর্ম আসলে কি বলছে তা সঠিক ভাবে জানেই না। কারন আমরা জানি যেকোন সত্য একটি অখন্ড বিষয় যার কোন শাখা প্রশাখা থাকতে পারেনা। একই সত্য কোনদিন দুইভাবে উপস্থাপন হতে পারে না। আর তাই প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটি ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছে। কারন তারা যে জীবনাদর্শ অনুসরন করছে তা একটি ভুল জীবনাদর্শন বলে এখানেই প্রমানিত হচ্ছে। আর একটি ভুল জীবনাদর্শ মানুষকে শুধু প্রতারণাই দিতে পারে সঠিক পথ দেখাতে পারে না। এখন বর্তমানে এই পৃথিবীতে প্রচলিত কিছু ধর্মের কথা বলি দেখুন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবী তাদের এই ধর্মটি পৃথিবীর অন্যন্যা অনেক প্রচলিত ধর্ম থেকে অনেক খাটি একটি ধর্ম। কারন তাদের এই ধর্ম অনেক পুরাতন একটি ধর্ম যার আনুমানিক সৃষ্টি হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে। তাদের মুল ধর্ম গ্রন্থ বেদ অনুযায়ী আমরা তাই জানতে পারি। এই ধর্মটিতে অন্য ধর্মের মানুষের স্বাভাবিক ভাবে কোন প্রবেশ অধিকার নেই কেউ চাইলেই এই ধর্মের অনুশারি হতে পারবে না যদি সে জন্মগত হিন্দু না হয়ে থাকেন। তাদের ধর্ম বলছে যে, নিজের ধর্মে থেকে যদি মৃত্যুবরন কর তাহলে তোমার জন্য আছে পুরুষ্কার প্রাপ্তি আর যদি ভিন্ন ধর্ম গ্রহন কর তাহলে আছে ভয়ঙ্কর শাস্তি। তাদের ধর্মের বাইরে যারা আছে তাদের জন্য রয়েছে রৌরব নরক বাস এবং অহিন্দু মানেই যবন, স্লেচ্ছ জাতীয় কিছু। ঘুরে ফিরে আমরা সেই একই কথা দেখতে পাচ্ছি যে নিজের ধর্ম বিশ্বাস করলে আছে স্বর্গ আর অন্যান্য বাকি যারা আছে তাদের জন্য ভয়ানক নরক।
ইহুদী ধর্মাবলম্বীরা কি বলছে দেখুন। তাদের দাবী তারা একটি ধর্মীয় জাতীয়াতাবাদীতে বিশ্বাস করে। তাদের ধারনা এই পৃথিবীর সকল মানুষ জন্ম গ্রহন করে আদিপাপ নিয়ে আর তাই তারা সকলেই অনন্তকাল মানে যার কোন শেষ নাই সেই সময় ধরে নরক ভোগের উপযুক্ত। শুধুমাত্র ব্যাতিক্রম আছে খাটি ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্য ও খ্রস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য। তাদের এই জাতীয় বিশ্বাসকে আমি নিঃসন্ধেহে ভয়ানক বিশ্বাস বলবো। কারন তারা মনে করে তারাই এই পৃথিবীতে একমাত্র ঈশ্বরের মনোনিত জাতি। এই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের স্বর্গ আর নরকের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তার সাথে ইসলাম ধর্মের প্রায় মিল পাওয়া যায় তাই অনেকের ধারনা এই ধর্মটি থেকে আজকের ইসলাম ধর্ম তার অনেক কিছু কপি করেছে যা তাদের নিজস্ব প্রথা না।
এবার দেখুন বৌদ্ধ ধর্ম কি বলছে। এই ধর্মে আসলে কোন একক বা বহুঈশ্বর এর কোন প্রচার প্রচারনা নাই। তারা আসলে বিশ্বাস করে না কেউ একজন শ্রষ্টা আছেন বা তাদের কোন কালে কোন বিচার আচার হবে। তাদের ধারনা এই পৃথিবীর কোন শুরু বা শেষ নাই এটা অনন্তকাল এমন ভাবেই আছে। আর তারা এই পৃথিবীতে জীবনের তাগিতে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। অনেকের ধারনা এটি কোন ধর্ম নই বরং এটি একটি দর্শন বলা চলে আর অনেকে এটা মানেই সেই মতাবেক।
এবার ইসলাম ধর্ম দেখুন, এই ধর্মটি সেই ইহুদী আর খৃস্টান ধর্মের মতো তৈরি করে রেখেছে সুসজ্জিত স্বর্গ আর ভয়ঙ্কর নরক। সেই সাথে এই ধর্মটি এক বাক্যে পৃথিবীর বাদবাকি সকল ধর্মেকেই অস্বীকার করে। ইসলাম ধর্মের মুল গ্রন্থ কোরানে আছে “নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম (আল-কোরান ৩:১৯)” ইসলাম ধর্ম মতে সকল মুসলিম জাতি তাদের মৃত্যুর পরে (পাপ মোচনের পর) চিরদিনের জন্য বেহেশতে যাবে আর সেই সাথে যত অবিশ্বাসী আছেন তারা সবাই যাবে দোযোখে (আল-কোরান ২;৩৯)। তাহলে দেখুন এই একটি যায়গায় আমরা কিন্তু সব ধর্মেই মিল খুজে পায়। আরো অনেক হাজার হাজার ধর্ম পৃথিবীতে আছে যাদের মধ্যেও এর থেকেও অনেক বড় বড় ভ্রান্ত ধারনা আমরা দেখি।
এখন একটু পর্যালোচলা করলে আমরা দেখতে পাই এসব ধারনা আসলে প্রতিটি মানুষ পেয়েছে তার বা তাদের নিজ নিজ পরিবার ও পিতা মাতাদের কাছ থেকে। যখন কোন শিশুর জন্ম হয় তখন দেখা যায় সে যেই ধর্মের পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছেন পরবর্তীতে তাকে সেই ধর্মের অনুসারিই হতে হয়। এমন কোন নমুনা আমরা দেখি না যে কোন মুসলিম পরিবারে হিন্দু বা খৃস্টান ধর্মের শিশু জন্ম গ্রহন করেছে বা খ্রিস্টান কোন পরিবারে হিন্দু বা মুসলিম কোন শিশু জন্ম গ্রহন করেছে। তাই কোন শিশু জন্ম গ্রহনের পরেই তার ধর্ম নির্ধারন করা হয়। সেই শিশুটি একটু বড় হতে না হতেই তাকে শেখনো হয় নির্দিষ্ট একটি ধর্মের সকল আচার ব্যবহার। তার পরিবার থেকেই তাকে শোনানো হয় অলৌকিক কিছু ধর্মীয় কেচ্ছা কাহিনী যা সেই পৌরাণিক সব গল্প থেকে আগত। আর এই সমস্ত গল্প পৌরাণিক কাহিনী আর কেচ্ছা সেই সব শিশুদের মনে গভীর একটি দাগ কাটে যা থেকে বের হয়ে আসর চেষ্টাও সে আর কোন দিন করে না। পক্ষান্তরে সে কোন প্রকার যাচাই বাছাই করা ছাড়াই সারাজীবন তার সেই ধর্মকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে আসে। এটি ছাড়াও আমরা আরো কিছু কারন খুজে পায় যেমন ধর্ম পরিবর্তন বা ধর্ম গুলিতে অবিশ্বাস করে স্বাভাবিক জীবন পরিচালনায় নানান ধরনের বাধা বিপত্তি।
একটি ধর্ম থেকে আরেকটি ধর্ম তে যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। আমি আমাদের এই বাংলাদেশের কথা বলি। আমাদের দেশের প্রতিটি ধর্মই টিকে আছে পরিবার আর সমাজের সাথে এক হয়ে। আর এই সমাজে যদি জন্ম সুত্রে পাওয়া ধর্ম কেউ ত্যাগ করতে চায় বা নতুন কোন ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় তবে সেটা হয় আমাদের দেশের জন্য খুবই কঠিন একটি কাজ। কারন এমন কোন কিছু করতে হলে তাকে প্রথমেই তার পরিবার আর সমাজ ত্যাগ করতে হয় তাই ব্যাক্তি তার জানা বোঝার যায়গাকে যতই বৃদ্ধি করে তাতে কোন লাভ হয় না কারন পরিবার আর সমাজ ছাড়া একটি মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকতে পারে না। এর একটি কারন গবেষকেরা খুজে পায় বাংলাদেশের সমাজের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ধর্ম নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে বা বুঝতে একেবারেই অক্ষম। যতই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এদের থাকুক না কেন তারা এই ধর্ম নিয়ে কখনই গভীর আলোচনায় যায় না। বাংলাদেশের সমাজের বেশিরভাগ লোক বা কিছু কিছু মানুষের সেই সুযোগ একেবারেই নেই (যারা স্বল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর)।
আমাদের খুব বেশি আগের কথা চিন্তা করার দরকার নেই আজ থেকে মাত্র ২০০ বছর আগের কথায় আপনারা একবার ভেবে দেখুন তখন কিন্তু খুব কম লোকই ছিলো যারা একটু শিক্ষিত বলা যায়। এরা বাদে আর যারা ছিলো তারা সবাই একটু অতি মাত্রাই নিরক্ষর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মান্ধ ছিলো। এখন তাহলে আবার একটু ভেবে দেখুন এই হাজার হাজার বছর আগে যেসব ধর্ম গুলা তৈরি হয়েছিলো বা তখন যারা এই ধর্ম গুলা বিশ্বাস করে গ্রহন করেছিলো তারা কতটা সচেতন মানুষ হতে পারে। যে সকল ধর্ম আজো বংশপরম্পরায় মানুষের মাঝে সঞ্চারিত হয়ে আসছে তা কতটা যৌক্তিক তা কিন্তু বড়ই ভাবনার বিষয় যেটা বর্তমান সমাজের মানুষেরা কখনও ভেবে দেখে না। আমরা ইতিহাস পড়লে খুজে পায় অতীতে যত (ব্যাতিক্রমী দুই একজন বাদে) জ্ঞনী, গুনী, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীদের ধর্ম ত্যাগের কথা শোনা যায় তারা কিন্তু কেউ আর পরবর্তিতে নতুন কোন ধর্ম বা কোন সত্য ধর্ম গ্রহন করে নাই। সেখানে সমাজের সাধারন মানুষেরা যাদের চিন্তা ভাবনা ও জ্ঞানের পরিধি সীমাবদ্ধ তাদের ক্ষেত্রে এরকম আশা করা কি অবান্তর নই।
স্বর্গ ও নরক এমন একটি বিষয় যার কোন সত্যতা নেয়। কিছু প্রচলিত ধর্মীয় কিতাব ও কিছু ধর্মীয় গুরুদের কাছে মৌখিক ভাবে শোনা কথার উপরে এটা টিকে আছে। একটি জিনিষ ধর্ম বিশ্বাসীরা কখনই ভেবে দেখে না এই যে স্বর্গ নরক বা বেহেশত দোযোখ নামের যে যায়গার কথা বলা হয় তার সাথে পৃথিবীর কোন যায়গা বা কোন বিষয় বস্তুর কোন অমিল পাওয়া যায় না। এই সম্পর্কে যত ব্যাখ্যা আমরা পায় তা সবই এই পৃথিবীর সাথে মিলে যায়। পক্ষান্তরে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যেসব নতুন নতুন গ্রহ নক্ষত্র আবিষ্কার করে চলেছে সেসবের পরিবেশ ও অন্যান্য অনেক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই যা এই পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে মিলে না।
বিভাগ:
দর্শন
ধর্ম-অধর্ম
মুক্তচিন্তা
©somewhere in net ltd.