![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ পহেলা মে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
কিন্তু আনেকেই মে দিবসের তাৎপর্যতা বা দিবসটি সম্পর্কে তেমন ভাল জানে না। আজ আমরা যে আট ঘন্টা কাজ করতে পারি তখনকার শ্রমিক আন্দোলনের কারনেই।
দিবসটির প্রেক্ষাপট : আজ থেকে ১৫৮ বছর আগের ঘটনা। তখন চলছে ইউরোপ ও আমেরিকাই শিল্প বিপ্লব। কৃষি জমি থেকে থেকে কৃষকদের সদ্য তুলে এনে কল কারখানাই মালিকরা বসিয়ে দিয়েছে। ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা দৈনিক ও সপ্তাহে ৬ দিন কাজ ।বিনিময়ে মিলত খুবই নগণ্য মুজুরি। অমানবিক পরিশ্রম ও কর্মক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্নতা এবং পুষ্টিকর খাদ্য অভাবে শ্রমিকরা হয়ে পড়েছিল অন্তঃসার শূণ্য। তাই ১৮৬০ সালে শ্রমিকরা প্রথম দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবী জানাই কিন্তু শ্রমিকরা সংগঠিত বা কোন শ্রমিক সংগঠন না থাকার কারণে সে দাবী তেমন জোড়ালো হয়নি। সেই সময়ে শ্রমিকরা মালিক বা তাদের নিযুক্ত এজেন্ট দ্বারা এত নির্যাতিত হতো যে তারা বুজেছে মালিক আর শ্রমিক কখনোই এক হতে পারেনা। সর্বহারা শ্রেণীর হারানোর কিছুই নেই আছে জয় করার, তখন সমাজতন্ত্রের ধারনা ও শ্রমিকদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করে তারই ধারাবিহীকতাই ১৮৮০ সালে Federation of organized trade and labor unions of the United states and canada সেটাই (১৮৮৬ সালে নাম পরিবর্তন করে American Federation of labor) ।
এই সংগঠন এর মাধ্যমে শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে ১৮৮৪ সালে দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ ও দৈনিক মুজুরী এর প্রস্তাব পাস করে তা মালিকদের সামনে দাবী উত্থাপন করে এবং তা পাস করার জন্য মালিক শ্রেণীকে ১৮৮৬ সালের প্রহেলা মে সময় বেঁধে দেয়। এই দাবীর সাথে তৎকালীন সমাজতন্ত্রী দল গুলো একাত্মতা প্রকাশ করে এবং দাবী আদায়ের জন্য শ্রমিকদের মাঝে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চলতে থাকে। অন্য দিকে মালিক পক্ষ ও এই শ্রমিক আন্দোলন ঠেকানোর জন্য সরকার কে সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে থাকে।
তার আগে ১৮৭৫ সালে পেনসেলভেনিয়ার কয়লা খনিতে শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রমের প্রতিবাদে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়। সেখানে সেনাদের গুলিতে ১০ জন শ্রমিক নিহত হয়।
১৮৮৬ সালের প্রহেলা মে। মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবী প্রত্যাক্ষান করে। শ্রমিকরা শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে ৮ ঘন্টা কাজ - ৮ ঘন্টা ঘুম ও ৮ ঘন্টা বিনোদন এই দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরো করে। ৪০ হাজারের মত শ্রমিক হে মার্কেটের সামনে জমায়েত হয় এবং ৩০০০০০ লক্ষ এর মত শ্রমিক সেদিন কর্মবিরতি তে অংশগ্রহণ করে। পার্সন্স/ জোয়ান সোস্ট,আগষ্ট স্পীজ ও লুই লিং রা জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে শ্রমিকদের কে উজ্জবিত রাখছিলেন। ক্রমেই শ্রমিকদের জনস্রোত বেড়ে চলছিলো। সেই বিক্ষোভ চলছিলো প্রহেলা মে থেকে ৫ ই মে পর্যন্ত। মের ৩ তারিখ শ্রমিক বিক্ষোভে বোমা বিষ্ফরণে এক পুলিশ নিহত হলে পুলিশ গুলি চালাই। সেই মিছিলে এক শ্রমিকের ছোট মেয়ে জেদ ধরে যাবার জন্য এবং পুলিশের গুলিতে সেই ছোট শিশু নিহত হলে তার রক্তে ভেজা কাপড় তার বাবা উড়িয়ে বলে ছিলো তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও। সেই রক্ত ভেজা কাপড় হয়ে উঠে ছিলো শ্রমিকদের লাল পতাকা। সেই বিক্ষোভে পুলিশ ম্যাসাকারে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক নিহত হয় এবং আহত হয় আরো আনেকে।
১৮৮৭ সালে প্রহসনের বিচারের নামে ৬ জন শ্রমিক নেতাকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। শ্রমিক নেতা আগষ্ট স্পীজ মৃত্যুর আগে শাষক শ্রেণীদের উদ্যেশ্যে বলেছিলেন " আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা তোমাদের আওয়াজ আপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে"
তারই ধারাবাহিতা ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এবং সেই কংগ্রেসে রেমন্ড নাভিলে প্রস্তাব করেন শিকাগোর হে মার্কেটে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে ১৮৯০ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবাদ সভা পালন করার। এবং ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসে সে প্রস্তাব গৃহিত হয় এবং ১৯০৪ সালে আমস্টারডামে বিশ্ব দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এর ষষ্ঠ সম্মেলণে প্রহেলা মে তে দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবীতে বিক্ষোভ পালনের জন্য সারা বিশ্বের সকল সমাজন্ত্রিক দল, শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন গুলো র প্রতি আহবান জানানো হয়।
এবং জাতিসংঘ দ্বিতীয় বিশ্বযোদ্ধের পর প্রহেলা মে সর্বজনীন শ্রমিক দিবস ঘোষণা করে।
শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিকদের অত্মদানের ফসল উন্নত দেশের শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা পাচ্ছে।কিন্তু আমার দেশের শ্রমিক,গার্মেন্টস শ্রমিক বা চা শ্রমিকরা কি তাদের প্রাপ্য অধিকার টুকু পাচ্ছে...? তাদের বাঁচার নুন্যতম মুজুরি কি আজ নিশ্চিত....?
মহান মে দিবস অমর হোক। মহান মে দিবসে সকল শ্রমিকদের প্রতি জানাই আন্তরিক ভালবাসা ।
©somewhere in net ltd.