![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে বেহায়ার মত হাঁসতে পারি ।
চোখে আলো পড়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল পূর্বার। অন্য সময় হলে মেজাজ খারাপ হয়ে যেত ওর। কিন্তু আজ ওর খারাপ লাগছে না। এত সকালে ও সচরাচর ঘুম থেকে ওঠে না। এই বাসার জানালাটা পূর্ব পাশে। তাই ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই রোদ উঁকি দেয় ওদের বিছানায়। জানালায় অবশ্য পর্দার কাপড়ও লাগানো আছে। পর্দাটা একটু ফাঁকা করে জানালার গ্রিলের সাথে মশারি খাটানো হয়েছে। আর ওই ফাঁক দিয়েই সূর্যের আলো ওদের মুখে পড়ছে। তবে সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গায় বিরক্ত লাগছে না ওর। বরং ভালই লাগছে। বাহিরে এখনও কুয়াশা কাটেনি। জানালা ঘিরে হালকা কুয়াশা আচ্ছন্ন করে আছে। জানালার কাঁচে জমে থাকা ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দর উপর সূর্যের আলো পড়ায় হীরার মত দ্যুতি ছড়াচ্ছে সেগুলো। পূর্বা ভাবছে, পানির কণার উপর সূর্যের আলো পড়লেতো রংধনু সৃষ্টি হবার কথা। এখানে হচ্ছে না কেন? এই পাশেতো আলোর প্রতিসরণ হচ্ছে। তাহলে জানালার ওপাশে নিশ্চয়ই প্রতিফলন হচ্ছে। জানালার ওপাশে কি রংধনু সৃষ্টি
হয়েছে? গিয়ে দেখা দরকারতো।
কিন্তু পূর্বার এখন বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। ওর দিকে পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে রবিন। ওর চোখেও সূর্যের আলো পড়ছে। কিন্তু ওর ঘুম ভাঙছে না। এখনও এক হাত পূর্বার গায়ের উপর রেখে ঘুমাচ্ছে ও। পূর্বার এখন সেই হাত সরিয়ে রংধনু দেখার ইচ্ছে নাই। ও তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে। রবিন মুখটা একটু হা করে ঘুমাচ্ছে। চোখের মনি ঈষৎ নাড়াচাড়া করছে এখন। তার মানে স্বপ্ন দেখছে ও। স্বপ্ন দেখার সময় নাকি মানুষের Rapid Eye Movement (REM) হয়। আচ্ছা, মানুষ ব্যতীত অন্য সব জন্তু-জানোয়ার কি স্বপ্ন দেখে? ওরা স্বপ্নে কি দেখে? তা কি জানার কোনো উপায় আছে? একদিন নিশ্চয়ই এরও কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়ে যাবে। তখন আমরা জানতে পারব ওরা কি স্বপ্ন দেখে। আচ্ছা রবিন স্বপ্নে কি দেখছে এখন? ও কি স্বপ্নে পূর্বাকে দেখছে? উত্তরগুলো খুব জানতে ইচ্ছে করছে পুর্বার।
এসব ভাবতে ভাবতে পূর্বার মনে হলো এখন ওঠার দরকার। আস্তে করে রবিনের হাত সরিয়ে নিচ্ছে ওর ওপর থেকে। রবিন এবার একটু নড়ে উঠে পূর্বাকে আরও ভালোভাবে জড়িয়ে ধরল। পূর্বা এবার রবিনের হাত ছেড়ে দিলো। ও চায়না রবিনের ঘুমটা ভাঙ্গুক। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে খুব ভাল দেখায়। একেবারে নিষ্পাপ শিশুর মত। যদিও এই নিষ্পাপ শিশুটাই গত রাতে ওর উপর বাঘের মত হিংস্র হয়ে... ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে পূর্বা। ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে চুপ করে শুয়ে আছে পূর্বা। ওর পিঠে রবিনের হাতের ছোঁয়া লাগছে। এতে করে পূর্বার পিঠে সুরসুরি করছে এখন। আবার রবিনের হাতটা সরাতেও ইচ্ছে করছে না এখন। তবুও এবার ওর হাতটা সরিয়ে উঠে বসলো পূর্বা। এখন ফ্রেশ হওয়া দরকার। বাথরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবে ও এখন।
সবসময়ই ঠান্ডা পানিতে গোসল করার অভ্যাস পূর্বার। এই শীতেও ঠান্ডা পানিতেই গোসল করবে ও। বিছানা থেকে কম্বলটা তুলে নিয়ে ভাল করে রবিনের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বাথরুমে চলে গেল পূর্বা।
গোসল সেড়ে বাথরুম থেকে এসে দেখে এখনও ঘুমোচ্ছে রবিন। ওর একটা হাত পূর্বার বালিশের উপর রাখা। ভেজা চুল নিঙ্গরাতে নিঙ্গরাতে ওর পাশে বসে পূর্বা। বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে। ওর চোখ এখন আর নড়ছে না। বেশ গভীর ঘুমেই আছে মনে হয়। কি নিষ্পাপ-সরল মুখ ওর! একেবারে যেন নিষ্পাপ শিশু। পূর্বার খুব ইচ্ছে করছে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে। তাহলে কি ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে? উঠে বকুনি দেবে ওকে? পূর্বার এখন বকুনি খেতে ইচ্ছে করছে। ধীরে ধীরে ওর মুখের ওপর ঝুঁকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পূর্বা। তাতেও কোনও সাড়া-শব্দ নেই ওর। একেবারে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমোচ্ছে দেখছি! এত সুন্দর সকালটা রবিন দেখতে পাবে না! এই ভেবে এবার পূর্বা নাছোরবান্দার মত ওকে ডাকতে লাগলো। রবিন একটু নড়ে উঠে ঘুম কাতুরে গলায় বললো, -আরে হালা খাড়া। আরেকটু ঘুমাইয়া লই।
কথাটা শুনেই মাথায় আগুন ধরে গেল পূর্বার। রবিন এভাবে খারাপ ভাষায় গালি দিতে পারে, ভাবতেই পারেনি। হয়ত ও ঘুমের ঘোরে বলে বসেছে। তাই বলে এভাবে কথাটা বলতে পারলো! পূর্বা আবার রবিনকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
--- কি বললা তুমি?
কথাটা শুনেই ধড়মড় করে উঠে বসলো রবিন। ও বুঝতে পারছে ঘুমের ঘোরে খারাপ কিছু একটা বলে ফেলেছে।
--- খাইছে! ঘুমের ঘোরে কি সব বললাম আমি!
আপন মনে বিড়বিড় করে কথাটা বলছে রবিন। মুখ কাচুমাচু করে অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বসে আছে। এবার মাথা তুলে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে পূর্বার দিকে। পূর্বা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রাগে তার নাক বারবার ফুলে উঠছে। এরপর হয়ত পুরো গালটা লালবর্ণ ধারন করবে। পূর্বার চুল ভেজা মনে হচ্ছে একটু। ও কি গোসল করেছে? হুম। গোসল করেই এসে বসেছে। গোসলের পর এভাবে পূর্বাকে আজ প্রথম দেখছে রবিন। কোনো আটা-ময়দার সাহায্য ছাড়াই অপরূপ সাজে অপূর্ব লাগছে পূর্বাকে। ওর ভেজা চুল গামছা দিয়ে মুড়িয়ে পেছনের দিকে খোপা করে রাখা হয়েছে। এতে ভেজা চুল বেয়ে পানি নিচে পড়ার আগেই গামছায় সেগুলো শুষে নেয়। পূর্বাকে খোলা চুলে আরও সুন্দর দেখালেও এখন মনে হচ্ছে এভাবে খোপা করা চুলেই বেশ মানিয়েছে আজ।
--- কি ব্যাপার! এভাবে ভ্যম্পায়ারের মত তাকিয়ে আছো কেন?
--- হুম?
--- আর আমাকে কি বলেছিলে তুমি? হুম?
--- কি বলেছিলাম? কখন?
--- এই মাত্র। ভুলে যাচ্ছ এরই মধ্যে!
--- সরি। ঘুমের ঘোরে কি বলতে কি বলেছি...
--- তোমার মুখের ভাষা এত খারাপ!
--- সজ্ঞানে বলিনি তো।
--- সজ্ঞানে বলো, আর অজ্ঞানেই বলো, তুমি এভাবে আমাকে গালি দিবে?
--- এই তোমার কান ধরছি, আর কখনও এমনটি হবে না।
--- আমার কান ধরছো কেন? ছাড়ো বলছি।
--- আগে বলো, মারবে না তো?
--- আগে ছাড়ো।
--- হুম, ছাড়লাম।
--- এবার তোমার কান ধরো।
--- আমারটা কেন?
--- আমি বলেছি, ধরো।
--- এক কান? না দুই কান?
--- তুমি ধরবে নাকি আমিই ধরবো?
--- আচ্ছা, এই যে... দুই কানই ধরলাম।
--- এবার কান ধরে জোড়ে টান দাও।
--- এবারের মত মাফ করো না প্লিজ।
--- আর কখনও আমার সামনে এসব ভাষা ব্যবহার করবা না তো?
--- মাথা খারাপ! ভুলেও না।
--- আমার কাছে কখনও কিছু লুকাবে না। বলো।
--- হুম তোমার কাছে কিছু লুকাবো না। বললাম।
--- হুম। মনে রেখো, আগে আমি তোমার বন্ধু, পরে তোমার বউ। স্ত্রী হিসেবে আমাকে কিছু বলতে না পারলেও অন্তত বন্ধু হিসেবে আমাকে অবশ্যই সব জানাবে। তা না হলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো তোমার।
রবিনের কাছে পুরো কথাটা বোধগম্য হলো কিনা, তা বোঝা যাচ্ছে না। ওর মাথায় শুধু “তোমার বউ” কথাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। পূর্বার মুখে “তোমার বউ” কথাটা শুনতে বেশ ভালই লাগছে ওর। হুম। সত্যিই তো! পূর্বাই তো আমার বউ। আপন মনে নিজেকে নিজেই যেন বোঝাচ্ছে রবিন।
--
--
Written By: হলদে হিমুর নীল কাব্য (নীল আদনান)
©somewhere in net ltd.