![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে বেহায়ার মত হাঁসতে পারি ।
--- কাব্যঃ কিরে দোস্ত কেমন আছিস?
--- নীলঃ আরে আর বলিসনা, স্বপ্ন আমার যা হাল করেছে উফ...
--- কাব্যঃ কেন কি করেছে?
--- নীলঃ কি আর করেছে আমায় দেখেও বুঝতে পারছিসনা?
--- কাব্যঃ হুম একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছি তকে দেখে। আচ্ছা তুই আর হিমুর মতন I mean হিমুকে অনুকরণ করিসনা!!!
--- নীলঃ না বেটা ম্যাডামের নির্দেশ খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আর মুখে পাণ গুঁজে উদ্ভট পাগলাদের মতন ঘুরাঘুরি করা যাবেনা।
--- কাব্যঃ বাহ বেশ ভালই পরিবর্তন করেছিস নিজের। এবারে তাহলে রোমাঞ্চিত নীল তাও আবার নীল স্বপ্ন। বাহ বাহ চালিয়ে যা চালিয়ে যা। সালার আমি একটা পাইলে সারাজীবন বসে বসে খেতাম।
--- নীলঃ হুম এবারে তাইলে কাউকে বেছে নে। ভালোবাসাযুক্ত জীবনভর কাটা। দোআ করিস। আর বসে বসে খাবি মানে?
--- কাব্যঃ ওইতো আমার ভালোবাসার চাঁদমুখখানা দেখে বসেই পার করে দিতাম জীবনটা।
--- নীলঃ সালা ঝাটার বারি খাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছেরে দোস্ত সময় হলে জানাস কেমন খেতে। আসি...
--- কাব্যঃ তুই সালা সবসময় এমন করিস। আমি যখনি কিছু করে উঠবো ভাবি ঠিক তখনি তুই আমার মণ ভেঙ্গে দিস। তর নামে মণ ভাঙ্গনের মামলা করবো।
--- নীলঃ ধ্যাত তর ভাষণ থামা। গেলাম।
--- কাব্যঃ যা তর লগে আর কথাই কমুনা।
--- নীলঃ হিঁ,,,,,,হিঁ,,,,,,হিঁ,,,,,,
--- কাব্যঃ আবার বলদের মতো হাঁসে। যা ভাগ।
--- নীলঃ ওওওওকেএএএ গেলামরে দোস্ত...
নীল আর কাব্য দুইজন খুব ভালো বন্ধু একেবারে ছেলেবেলা থেকেই। তারা দুজনে হিমুর বই পড়তে পড়তে হিমুকে অনুকরণ করা শুরু করে। আর স্বপ্ন হলো নীলের বেস্ট ফ্রেন্ড। নীল অনেক ভালোবাসে স্বপ্নকে।
--- স্বপ্নঃ হ্যালো ভাইয়া আমাকে আপনার সাইকেলে একটু লিফট দিবেন?
--- নীলঃ আরে না না। গ্রামের মানুষ দেখলে কি বলবে!!
--- স্বপ্নঃ প্লীজ আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। আর কেউ কিছু বলবেনা।
--- নীলঃ এ হয়না। একজন মেয়ে আরেকজন ছেলে তাও আবার সাইকেলে লিফট!! আমি কারোর হাঁসির পাত্র হতে চাইনা।
--- স্বপ্নঃ দেখুন এমন কথা বলছেননা যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেননা।
--- নীলঃ আচ্ছা আচ্ছা উঠুন। মেপে দুই হাত দূরে বসবেন।
--- স্বপ্নঃ আপনার সাইকেলে আছে কতটুকু জায়গা?? গর্দভ একটা।
--- নীলঃ ওই হলো আরকি। যা বললাম তা মেনে বসবেন।
--- স্বপ্নঃ ওকে চলুন।
তারপর স্বপ্ন নীলের সাইকেল থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে কলেজে চলে গেলো। কেননা স্বপ্নের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার আর ৫ মিনিট বাকি ছিলো। নীলও কিছু বলেনি। নীল বুঝেছিল মেয়েটার সত্যি আর সময় নেই। তবে স্বপ্ন চলে যাওয়ার পর নীল উপলব্ধি করতে পারলো মেয়েটাকে সে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছে। বিভিন্ন ছাইপাঁশ মনের মাঝে অংকন করতে করতে কলেজ ছাড়লো।
নীল বাসায় গিয়ে ভাবছে আচ্ছা ওর সাথে কি আবার দেখা হবে, দেখা হলেই বা কি বলবো!! না না আমিতো হিমু প্রায়। হিমুদের এমন আশা নেই। আমি আর ওকে নিয়ে ভাববো না। যেই ভাবা সেই কাজ হতচ্ছাড়া নীল এক নিমিষেই ভুলে গেলো।
এদিকে স্বপ্ন বাসায় ফিরে এসে ছেলেটার কথা মনে করলো আর মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো। ইস আমি অনেকটা স্বার্থপর... কালকেই ছেলেটার সাথে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে হবে। এইসব বলে স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল হলো আর তৎক্ষণাত কিছু খেয়ে বেড়িয়ে পরলো গতদিনের রাস্তা ধরে। নীল বসে আছে তার প্রিয় হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আর মুখে পাণ গুঁজে হিজল গাছটির নিচে। স্বপ্ন দেখতে পেয়ে, ডাকলো...
--- স্বপ্নঃ এইযে মিঃ কাল আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে চলে এলেন কেন?
নীল নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আর বেমালুম ভুলে গেলো গতকাল রাতের কথা যে নীল আর ওই মেয়ের কথা স্মরণ করবেনা কিন্তু এবার আর কথা না বলে থাকতে পারলনা। কেননা মেয়েটা দোষ করে তার উপড়ে চাপাচ্ছে।
--- নীলঃ ওই কি বলছেন!! আপনার মতো এমন মেয়ে আর একটাও দেখিনি।
--- স্বপ্নঃ ওমা আপনি কি খালি মেয়ে দেখে বেড়ান নাকি? অবশ্য যা দেখতে দেখাচ্ছে আপনাকে।
--- নীলঃ আপনি এমন কেন? আল্লাহ কি ঘারের তার টেরা করে দিছে? ঠিকঠাক মতো কথা বলতে পারেননা।
--- স্বপ্নঃ না পারিনা। একটা কথা বলি?
--- নীলঃ আলাদা করে আরো কিছু বলার ফন্দি আছে নাকি?
--- স্বপ্নঃ যা সত্যি তাই বলছি। আপনাকে দেখতে না আমার মরহুম চাচার মতো লাগছে।
--- নীলঃ মানে?
--- স্বপ্নঃ এইযে খালি পায়ে, গায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে তাও আবার পাণ মুখে। ছিঃ ছিঃ... জানেন কতটা বাজে দেখাচ্ছে আপনাকে?
--- নীলঃ তাআআ,,,তেএএ আপনার কি!! আমার এভাবে ভালো লাগে। আর আপনি বেশিয়ে করছেন কিন্তু।
--- স্বপ্নঃ আরে আরে এভাবে তু তু তুতলাচ্ছেন কেন? মুখ দেখো হিঁ,,,হিঁ,,,হিঁ একেবারে জুকার।
--- নীলঃ আপনার সঙ্গে আর কোন কথা নাই। ফালতু বজ্জাত মেয়ে।
--- স্বপ্নঃ যান যান,,,, আর শুনুন কালকে আমায় আপনার সাইকেলে লিফট দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
--- নীলঃ ধুর....
--- স্বপ্নঃ হিঁ,,,হিঁ,,,হিঁ,,,
সেদিনের পর থেকে নীল সেই যে মেয়েটার সাথে রাগ করেছে দীর্ঘ দেড় মাস তার রাগ একটুও কমানোর চেষ্টা করেনি। আমাকে কিনা তার মরহুম চাচার মতো লাগে!! এইসব কথা মনে হলেই ইচ্ছে করে মেয়েটারে ধপাস কতে চড় বসিয়ে দেই। স্বপ্ন জানে, তার কাজ-কথা একটুও ঠিক ছিলনা কিন্তু যা সত্যি তা বললে দোষের কি!! এভাবে হাবাগুবা হয়ে ঘুরে বেড়ায়!! সবসময় এইসব ভাবে তারপরও বেহায়াপনা করে নীলের পাশ ঘেঁষে ক্ষমা চায় কান ধরে উঠবস করে। একসময় নীল স্বপ্নকে ক্ষমা করে দিলো। আর তাদের মাঝে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
--- স্বপ্নঃ তোমাকে চেইঞ্জ হতে হবে।
--- নীলঃ না। যেমন আছি তাতেই বেশ।
--- স্বপ্নঃ চুপ গর্দভ।
--- নীলঃ কেন মিছে মায়াডোরে বাঁধছো!! আমার এমনিতে ঘুরা খুব ভালো লাগছে।
--- স্বপ্নঃ না না না। আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা। প্লীজ অন্তত আমার জন্যে নীল প্লীজ নীল প্লীইইইইইজ,,,,
--- নীলঃ ঠিক আছে।
তারপর নীল চেইঞ্জ হয়ে যায় তার আগের জীবন আর বর্তমান জীবনের তফাৎ বুঝতে পারে। সে একসময় মনে মনে স্থির করলো স্বপ্নকে স্বপ্নিল ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরতে হবে। কিছুতেই হারাতে দেয়া যাবেনা। এইসব ভাবতে ভাবতে স্বপ্নের ফোন...
--- নীলঃ হ্যালো।
--- স্বপ্নঃ হ্যালো নীল কাল একবার দেখা করতে পারবে?
--- নীলঃ হুম। কোথায়?
--- স্বপ্নঃ বাস স্টেশন।
--- নীলঃ বাস স্টেশন কেন? আর আমি তোমায় খুব খুব খুবই ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে চাই।
--- স্বপ্নঃ আমিও কাল তোমায় একটা সারপ্রাইজ দিবো আর সেই সারপ্রাইজ বাস স্টেশন অপেক্ষারত।
--- নীলঃ আচ্ছা আসবো।
কাল সকাল হলেই স্বপ্নকে দেখতে পারবে আর তার অবচেতন মনের না বলা ব্যক্ত প্রকাশ ঘটাবে তাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে কিছুই খেলোনা রাতে। সকাল হলো। বাস স্টেশন গেলো নীল আর গিয়ে দেখতে পেলো স্বপ্নকে জড়িয়ে ধরে আছে অন্য আরেক ছেলে। কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সামনে এগুচ্ছে...
--- স্বপ্নঃ এই গর্দভ এতক্ষণে আসার সময় হলো!!
--- নীলঃ ইয়ে মানে রাস্তায় বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো তাই...
--- স্বপ্নঃ থাক আর বলতে হবেনা মিঃ লেইট লতিফ। এই হলো আমার জীবন মরণ আমার আত্মা আমার ভালোবাসা আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আর এটাই হলো আমার বন্ধু মানে তোমার জন্যে আজকের দিনে বড় সারপ্রাইজ।
--- নীলঃ খুব বড় সারপ্রাইজ(চোখ ছলছল করছে জলে)। হাই। আমি নীল।
--- স্বপ্নের বিএফঃ হ্যালো আমি জয়। আপনার কথা অনেক শুনেছি স্বপ্নের মুখে।
--- নীলঃ (কান্না চাপিয়ে) দেখুনতো মেয়েটা আজ আপনার কথা বললো। অথচ এতোদিন একবারো বলার প্রয়োজন মনে করলো না।
--- স্বপ্নঃ আরে বুদ্ধু আগে বলে দিলে আজ সারপ্রাইজ দিতাম কি করে!!
--- জয়ঃ হয়েছে আর ঝগড়া কোন নয়। চলুন কফি খাওয়া যাক।
--- নীলঃ স্যরি আজ না। আজ জরুরী কাজ আছে(মিথ্যে বললো)।
--- স্বপ্নঃ যাবে মানে!! গেলে খবর আছে।
--- জয়ঃ আরে কাজ অন্যদিন করবেন নীল সাহেব।
--- নীলঃ না গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে জয়। স্বপ্ন এদিকে শুনো।
--- স্বপ্নঃ কি?
--- নীলঃ কানে কানে বলি... আমি এখানে থাকলে তোমাদের ডিস্টার্ব হবে। তুমিতো সবসময় ওকে আলাদা করে সময় দিতে পারোনা। আমার সাথে পরে দেখা করিও।
--- স্বপ্নঃ আচ্ছা। যাও নীল।
---জয়ঃ তুমিও যেতে দিচ্ছো স্বপ্ন!!
--- স্বপ্নঃ ওর ইম্পরট্যান্ট কাজ তাই যেতে হবে ইমেডিয়েটলি। ওহ হ্যাঁ নীল কি যেন ইম্পরট্যান্ট কথা বলবা বলেছিলে না?
--- নীলঃ অন্য আরেকদিন বলবো। আসি জয় আসি স্বপ্ন।
--- জয়ঃ আবার দেখা হবে বাই।
নীল তার কান্না কিছুতেই আটকে রাখতে পারলোনা। রাস্তায় সবাই তাকিয়ে আছে কান্নারচোট প্রাপ্ত বালকটির মনের ব্যথা জানার জন্যে। নীল সবাইকে এড়িয়ে গিয়ে বাসায় গেলো। এতো ভালোবাসে নীল যার জন্যে চেইঞ্জ হলো কিন্তু স্বপ্ন অন্য কারোর। নীল মনে মনে ঠিক করলো আর সে কারোর প্রতি দুর্বল হবেনা। নীল আবার সেই হিমুকে অনুকরণ করা আরম্ভ করলো। স্বপ্নকে ঘিরে থেকে আর লাভ নেই। যদিও বন্ধুত্ব বড় কিন্তু সেই সম্পর্ক নীলকে ভালোভাবে বাঁচতে দিবেনা। নীল এখন হিমু প্রায়।
কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার আগে ১০ বার ভাববেন। সে অন্য কারোর স্বপ্ন কিনা, সেও কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে কিনা। যদিও জানাটা খুবই টাফ কিন্তু সব ভেবে চিন্তে করা উচিৎ। মনে রাখবেন একটি ভুল সারা জীবনের জন্যে দুঃখ বয়ে আনবে।
--
--
Written By: হলদে হিমুর নীল কাব্য (নীল আদনান)
©somewhere in net ltd.