নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীল আর হলুদের প্রতি দুর্বলতা বেশি আমার। ফেসবুকে আমার পোষ্ট পড়তে চাইলে সার্চ করুন, - হলদে হিমুর নীল কাব্য (নীল আদনান)

হলদে হিমুর নীল কাব্য

বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে বেহায়ার মত হাঁসতে পারি ।

হলদে হিমুর নীল কাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

→ স্বপ্নভাঙ্গা নষ্ট বালক

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৭

আকাশ পাণে তাকিয়েই ছেলেটা কাঁদতে শুরু করলো। মধ্যরাত, চারদিকে একাকিত্বের ধিক্কার জানিয়ে দিলো ছেলেটা হাজারো জোনাকিদের মাঝে। হাটুগেরে কেঁদে খুব জোড়ে জোড়ে কেঁদে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ভুলত্রুটিগুলি নিজ চোখের পানিতে দ্বিগুণ দেখতে পাচ্ছে। ঢাকা থেকে ফিরেই মায়ের কান্নাজড়িত মুখটি দেখতে পাবে ছেলেটি তা ভাবতেই পারেনি। বাবা-মায়ের অবাধ্য আর সমাজের কলংকিত এক সন্তান সে। ছেলেটির জন্যে বাবা-মা কারোর সাথে উঁচু গলায় কথাই বলতে পারেনা। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনার ছেলে কি করে? তখন উত্তরে মায়ের মন ভিতরে ভিতরে খুব কাঁদে। কিছুই বলার থাকেনা লজ্জায়। বাবা বলত ছেলে সবার মুখ খুব উজ্জ্বল করবে কিন্তু সে এমনি উজ্জ্বল করেছে যার জন্যে মুখ কালো রংয়ে ধারণ করে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তপু। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে তপু। দুই বোন তপু আর বাবা মা মিলিয়ে ৫ জন। অনেক সুখেই কাটে তাদের প্রতিটি দিন কিন্তু তপুর যখন বুঝার বয়স হয়েছে সে জীবনে ভুল করেছে তখন থেকেই সে পরিবার থেকে অনেক দূরে দূরে থাকে। কিছুই দিতে পারেনি তার বাবা-মাকে। ২০১০ এ এস এস সি পাশ করে তপু। কলেজে ভর্তি হয়েছে আর ১ টি বছর ভালোই কেটেছিলো। মন দিয়ে পড়াশুনাও করছিলো খুব। বাবা মায়ের তখনও খুশির শেষ ছিলোনা ছেলের ভালো দিক দেখে কিন্তু হঠাৎ খেলাধুলা আর ফেসবুকিং তপুকে অন্ধকারে আকড়ে নিলো দিনের পর দিন। বাবা মায়ের স্বপ্নগুলো নিজ হাতেই মেরে ফেললো তপু। কলেজে না যেয়ে মাঠে খেলতে চলে যেতো আর দিনশেষে বাড়ি ফিরত। মা জিজ্ঞেস করত " এতো দেড়ি কেন? " উত্তরে তপু জানাত " পড়ার খুব চাপ। " মাও সব বোকার মত বিশ্বাস করে যেতো। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার টাকা নিয়ে যেত ঠিকি কিন্তু পরীক্ষা দিতনা। কিন্তু তপুর বাজে ছেলেদের সাথে মিশার অভ্যাস ছিলোনা। শুধু খেলাধুলা আর ফেসবুকিংটার জন্যে এমন করত। সামান্য কটা লাইকের জন্যে সারাদিন ফেসবুকে লিখালিখি করত। অনেক বড় বড় আপুরাও প্রপোজ করত তপুর লিখায় মুগ্ধ হয়ে। ভালোবাসা কাকে বলে তাও বুঝতনা কিন্তু মেয়েদের সাথে একের পর এক মিথ্যে বলত খুব সাজিয়ে গুছিয়ে আর এতে মেয়েরাও বিশ্বাস করে করে ঠকত। কাউকে ঠকালে যে কত কষ্টের হয় তা অনুভব করার মত বুঝও ছিলোনা তার। যদি বুঝারি ক্ষমতা থাকতো হয়ত পরীক্ষার টাকা নিয়েও পরীক্ষা না দিয়ে বাটপারি করতনা। অবশ্য তখন এতটা বুঝারও ক্ষমতা তার ছিলোনা। এইচ এস সি পরীক্ষাও দেয়া হয়নি তার। সারাদিন ফেসবুকে লিখালিখি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। তপুর অনেকবছর গ্যাপ যাওয়ায় বাবা মায়ের কথায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হয়েছিলো কিন্তু সেখানেও বাটপারি করল। বাবা মাকে ঠকালো তপু। তপুর বাবা তপুর কাছে শ্রেষ্ঠ বাবা। এতো কিছুর পরও ত্যাজ্যপুত্র করেনি তপুকে। বাবা আর কথা বলেনা আগের মত। অনেক সুযোগ দিয়েছিলো তপুকে কিন্তু একের পর এক প্রতারণা করে করে বাবাকে পাথর বানিয়ে ফেলেছে। বাবা কাঁদতে পারেনা কিন্তু তপু বুঝে বাবা অন্ধকারে চুপিসারে কাঁদে। কি ছেলে কি হয়ে গেলো। তপু সিগারেট, জোয়ায় আসক্ত না শুধু ফেসবুকের। তপু ভাবে সে খুব বড় মাপের ফেসবুকে কিন্তু সেটা বাস্তবে কিছুই না। বাবাকে সান্তনা দিতে পারেনা বাবাগো আমি আর তোমার সেই আগের ছেলেটি নেই যে তোমাকে অযথা টেনশনে ফেলবে। মায়ের কথা আর কি বলব! মা হল খুব মমতাময়ী মা তপুর। বাবার চোখের আড়াল হয়ে মা একের পর এক সাহায্য করে গেছেন। অবশ্য প্রতিটি মায়ি চান তার সন্তান যেনো কোনকিছুর অভাব বুঝতে না পারে। মসজিদে আজান হত আর মা বলত " তপু নামাজ পড়তে যা"। মায়ের কথায় ঠিকি বের হত ঘর থেকে কিন্তু মসজিদের উদ্দেশ্যে নয় সে বের হত তার চিরচেনা গাছের শিকড়টিতে বসার জন্যে যেখানে সে সবসময় বসে আড্ডা দিতো ফেসবুক ফ্রেন্ডেদের সাথে। নামাজ শেষ হলেই ঘরে ফিরে আসত লক্ষি ছেলের মত আর মা খুব খুশি হতেন ছেলে নামাজ পড়েছে দেখে। তপুকে বাবা বলত তকে একদিন কাঁদতে হবে যখন ভালো চাকরি পাবিনা। কথাটা ঠিকি মিলে গেছে। ভালো চাকরি করা যায়না ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ালেও লাভ হয়না আর। ছেলেটার চেহারা, শরীর একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে চিন্তায় চিন্তায়।

এইসব মনে করে তপু কাঁদছে হাটুগেরে বসে খুব জোড়ে জোড়ে কাঁদছে। মায়ের কাছে বাবার কাছে ক্ষমাও চাইতে পারছেনা লজ্জায়। আর কত কষ্ট দিবে তাদের। জড়িয়ে ধরে মাকে বলতেও পারছেনা মাগো তুমি আর কষ্ট পেয়োনা, আর কেঁদোনা মা। আমি আর তোমাদের অবাধ্য হবোনা। পারছেনা তপু মাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনাও দিতে পারছেনা।

ফেসবুক কিছুই দিবেনা। বর্তমানে যারা ক্লাস সিক্স, সেভেনে পড়েও ফেসবুকে আছেন তাদের বলি এই ফেসবুক নেশায় নিজেকে এমনভাবে সোপে দিবেননা যাতে কিনা পরে কাঁদতে হয়। আবার যদি বলেন আমরা ডিজিটাল পোলা মাইয়্যা। এতো কম বয়সে ফেসবুক চালাচ্ছি তাই আমাদের বুঝার ক্ষমতাও অনেক বেশি। আমরা তপুর মত ভুল করবো নাকি! আমরা সব বুঝি। তপুও খুব বেশি বুঝত। তপুর মত ফেসবুকে কিছুই করতে পারবেননা আমি বিশ্বাস করি তাই মন দিয়ে পড়াশুনা করুন। কথায় আছেনা, "ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিওনা"।
--
--
Written By: হলদে হিমুর নীল কাব্য (নীল আদনান) :(

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.