![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগ তো আমি এমনি এমনি পড়ি আর মাঝে মধ্যে লিখিও;) অন্যদের লেখায় মন্তব্য করার মজাটাই আলাদা। Tareq_chtg@ইয়াহু.কম
আমার চেয়ে এক বছরের ছোট, খুব দুষ্টু, মারাত্নক জংলী। আমার জন্য ওর অনেক টান। অতি শৈশব থেকে বাল্যকালের অনেক সুন্দর সময় কেটেছে ওর সাথে। আমরা একসঙ্গে খেলতাম, খাওয়া দাওয়া করতাম, পুকুর দাবড়ে বেড়াতাম, পড়তে বসতাম, টিভি দেখতাম, টেপ রেকর্ডার ছেড়ে গায়ক গায়িকার সাথে গলা মিলিয়ে গান গাইতাম। আরো কত কি। দুজনে একই প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম। তখন আমি মনে হয় ক্লাস ফোরে আর ও ক্লাস থ্রী তে পড়ত। আমাদের স্কুল শুরু হত বেলা বারোটা থেকে। বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে শারীরিক ব্যায়ামের চর্চা শুরু হত। সবশেষে জাতীয় সংগীত গাওয়া তারপর শপথ গ্রহনের মাধ্যমে মধ্যবেলার সূর্য্যের প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলত। অতঃপর লাইন ধরে সবাই সবার ক্লাসে চলে যেত।
তখনকার দিনে(১৯৯৩ সনে) প্রতি রবিবারে ভারতীয় চ্যানেল ডিডিওয়ান(DD1) এ বেলা সাড়ে এগারোটায় একটা কার্টুন শো দেখাত। কার্টুন শো টির নাম ছিল “DuckTales”. আমার প্রিয় কার্টুন। মাত্র তিরিশ মিনিটের শো। কার্টুন টি আমার দেখা চাই ই চাই। ভাত খাওয়া ছেড়ে দিতে পারতাম ওই কার্টুনের জন্য। যতক্ষন না আমার কার্টুন দেখা শেষ হত ও ততক্ষন আমার জন্য অপেক্ষা করত। কার্টুন দেখা শেষ করে দুজনে একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। পায়ে হেটে স্কুলে যেতে দশ মিনিটের বেশি লাগত না। কার্টুন দেখা শেষ করে দৌড়ে চলে যেতাম। তবে বদ মেজাজী অংক স্যারের বেতের বাড়ি থেকে রেহাই মিলত না। আমার ত বটেই, সঙ্গে ওর ও। আমার জন্য স্যারের বেতের বাড়ি ও মুখ বুজে সহ্য করত। কখনো কোনদিন অনুযোগ অভিযোগটুকু করেনি।
হুম, সে হল আমার আদরের ছোট বোন। আমাদের মাঝে মাত্র এক বছর বয়সের ব্যবধান। ও আমাকে খুব ভালবাসত। আর অনেক যত্ন আত্তি করত। ওর ছিল অনেক সাহস আর আমি মিনমিনে। সমবয়সী এবং বড়দের অত্যাচার থেকে আমাকে রক্ষা করা ছিল ওর একমাত্র কাজ। কি জানি এক অদ্ভুত কারনে সবাই আমাকে অনেক জ্বালাতন করত, কথাবার্তা আচার আচরন দিয়ে। আমি কোন জবাব দিতে পারতাম না, না পারতাম প্রতিবাদ করতে। অপেক্ষা করতাম কখন আমার ছোটবোন এসে উদ্ধার করবে। ও এসে সবাই কে নাস্তানাবুদ করে দিতে। সে কি যে খুশি লাগত আমার।
ও ছিল আব্বা আম্মার প্রিয় পাত্রী। মাথা ভর্তি কোকড়া চুল আর দুধে আলতা রঙ। আমাদের এক নানা ওকে আদর করে ডাকতেন লালবানু। দুস্টু নানা আমার নাম দিয়েছিলেন কালিয়া। আমি ঠিক আমার বোনের উলটো। গায়ের রঙ শ্যামলা। দেখতেও কুশ্রী। আমার বাকি ভাই বোনেরাও দেখতে মোটামুটি। কিন্তু আমিই একমাত্র এক্সেপশনাল পিস। তাই আমাকে সবাই বলত আমি নাকি এই পরিবারের পালক ছেলে। এক আম্মা ছাড়া সবাই বলত। দুস্টুমির চরম সীমা অতিক্রম করলে আম্মাও বিরক্ত হয়ে বলতেন তুই আমার পালকা পোলা। তোর মা হইল এক ফকির বেটি। রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়ায়। বেশি দুস্টামি করলে তোকে তোর মায়ের কাছি ফিরিয়ে দেব। সারা দুনিয়ার মানুষেরা আমাকে পালক বললে আমার কিছু এসে যেত না কিন্তু আম্মার মুখে যখন শুনতাম তখন ছোট্ট এই মনটা দুমড়ে মোড়চে ভেঙ্গে চোখের জলের নহর বয়ে যেত। সে যে কি এক মন খারাপি এক অনুভুতি কাউকে বোঝানোর নয়। শুধুমাত্র আমার ছোটবোন এসে আম্মার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিত আর আমাকে শান্তনা দিত। ঘরে বাইরে সকলের কাছ থেকে একই কথা শুনতে শুনতে মনে বদ্ধ বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল যে আমি বুঝি সত্যিই এই পরিবারের পালক ছেলে। কোন একদিন হয়ত আমার আসল মা, ভিখারিনী মা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। এই জন্য সব সময় আমি মন মরা হয়ে থাকতাম। বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করতে একদম মন চাইত না। বদের হাড্ডি ছেলেপেলে গুলো আমাকে পালক ছেলে বলে খেপাত। তাই ঘরের কোনায় বসে থাকতাম আর টিভি দেখতাম। এই ঘরকুনো স্বভাবের কারনে আব্বা আমার নাম দিয়েছিলেন কুনোব্যাঙ। আমার চেহারা আর আম্মার চেহারায় মিল না থাকলে আমি নিজেও হয়ত আজ বিশ্বাস করতাম যে আমি এই পরিবারের পালক ছেলে। যাক বাবা সান্তনা একটা পেলাম। ছোটবোন আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলত তুমি কোন চিন্তা কর না। আমি তোমাকে কিছুতেই তোমার আসল মায়ের কাছে যেতে দেব না। গদা দিয়ে পিটিয়ে ওই ফকিন্নিকে তাড়িয়ে দেব যাতে জীবনে দ্বিতীয়বার এদিকে আসার সাহস না পায়। আর সকলের মত সেও বিশ্বাস করত আমি তার পালক ভাই। তবে আমাকে সে কিছুতেই যেতে দিবে না। আহা এমন ভালবাসা কোথায় পাবেন বলেন!!!
যাইহোক, ডিসেম্বর মাসের এক পড়ন্ত বিকেল, শীত তখনো এতটা ঝেকে বসেনি। আম্মা বাসায় নেই। গ্রামের বাড়িতে গেছেন। আমরা থাকতাম গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এক মফস্বল শহরে। সারা বছরের ধান চাল, তরিতরকারী, শাক সবজি, মাছ মাংসের অর্ধেক অংশই আসত গ্রামের বাড়ি থেকে। তখন ধান কাটার মওসুম চলছে। আম্মা গেছেন সেসব দেখতে। আসতে আসতে রাত দশটা বেজে যাবে। আব্বা ব্যস্ত বার্ষিক পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়ে। আমাদের পাচ ভাই বোনের দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আমাদের একমাত্র খালার উপর। খালা আমাদের প্রচন্ড রজচটা স্বভাবের, অল্পতেই মেজাজ বিগড়ে যায়। আম্মা বাসায় নেই, এইবার দুষ্টুমি করলে খালার হাত থেক রেহাই নেই। বড় দুই ভাই গেছেন খেলার মাঠে, বড় আপা বান্ধবীদের সাথে গোল্লাছুট খেলায় মগ্ন। আর এদিকে আমি আর মনা(ওকে আমি আদর করে মনা বলে ডাকতাম) কার্টুন দেখছি। হঠাত কি নিয়ে যেন আমাদের মধ্য ঝগড়া লেগে গেল। খালা এসে আমাকের শলার ঝাড়ু দিয়ে কয়েক ঘা দিয়ে বাথরুমে ছিটকিনি আটকে বন্ধ করে রাখলেন। অন্যদিকে মনাকে কিছুই বললেন না। বেলা গড়িয়ে যায়। ছিটকিনি খোলার নামগন্ধ নাই। এমন সময় শোনা গেল লোহার গেটে কে যেন কড়া নাড়ছে। খালা গিয়ে গেট খুলে দিলেন।
এক রুগ্ন ভগ্ন শরীর নিয়ে ভিখারিনী এসে হাজির। চোখে মুখে করুন আর্তি। দুই দিন যাবত নাকি কিছু খায়নি। কান্না জুড়ে দিল কিছু খেতে দেয়ার জন্য। খালার আবার নরম দিল। ভিখারিনী কে ভেতরে এনে খাবার বেড়ে দিলেন। মহিলাটি মনের সুখে খাচ্ছে আর বিড় বিড় করে কি যেন বলছে। আমি খালাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, খালা কে এসেছে? বাথরুমের দরজা খুলে দাও আমি দেখব। মনাকে ডাকলাম। বললাম দরজা খুলে দে। খালা বললেন, অবশ্যই দরজা খুলব। দেখে যা তোর আসল মা এসেছে। আজ তোকে নিয়ে যাবে। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আম্মা ত বাসায় নেই। যদি সত্যি আমাকে নিয়ে যায়। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগল। মনাও বুঝি ভয় পেয়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে আগে একটা গদা নিয়ে আসল। তড়িৎ গতিতে বাথরুমের দরজা খুলে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে খাটের নিচে ঠেলে দিল আর নিজে খাটের সামনে বসে গেল গদা নিয়ে, পাহাড়াদারের বেশে। রুমের দরজাটা লাগিয়ে ছিটকিনি টেনে দিল আর বলল, দেখি ফকিন্নি বেটির কি সাধ্য আমি থাকতে আজ তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যায়। তুমি একটুও ভয় পেও না ভাইয়া। আমি ফকিন্নি বেটির মাথা ফাটিয়ে দেব। তুমি খাটের নিচে বসে থাক। খাটের নিচে গরমে আর ভয়ে আমার শরীর ঘামতে লাগত। সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে লাগল। মাগরিবের আজানের ধ্বনি আল্লাহু আকবার শোনা মাত্রই লোডশেডিং শুরু হয়ে গেল। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হারিকেন জ্বালানোয়। এদিকে আমি আর মনা অনড়। মনাকে বললাম যে আমার ক্ষিধা পেয়েছে। মনা গিয়ে আমার জন্য বিস্কুট আর কেক নিয়ে আসল। আমি খাটের নিচে বসেই সেগুলো সাবাড় করলাম। তারপর পানি এনে দিল। পানি খেলাম। খালা এসে বললেন কি ব্যাপার তোমরা দুইজন এখানে কি করছ? মনা জিজ্ঞেস করল ফকিন্নি বেটি কই? খালা বললেন সে তো খেয়ে দেয়ে দোয়া দুরুদ পড়ে সেই কখন চলে গেছে!!! মনা খালাকে জিজ্ঞেস করল তবে যে তুমি বলছিলে ফকিন্নি বেটি ভাইয়াকে নিয়ে যাবে? আরে আমি ত মজা করছিলাম, খালার নিরুত্তাপ উত্তর। সেই সাথে আমিও খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসলাম। মনা আমার দিকে তাকিয়ে সে কি এক বিজয়ের হাসি দিল। আমিও বিজয়ের হাসি ফিরিয়ে দিলাম। খালা বললেন যাও তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। একটু পর তোমাদের প্রাইভেট টিউটর আসবেন, যাও তাড়াতাড়ি...
যদিও খালার তরফ থেকে সেটা মজা ছিল কিন্তু মনার তরফ থেকে শতভাগ চেষ্টা ছিল আমাকে রক্ষা করার। এমন আদরের বোন আমি কোথায় পাব!
সময়ের আবর্তে, জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মনা আর আমি আজ পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থান করছি। পারিপার্শিক দুরত্ব যাই হোক না কেন আমরা একে অপরের অতি নিকটে, সন্নিকটে আছি। ইনশাআল্লাহ সর্বদাই থাকব। আমিন।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১২
আমি ভাল আছি বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:১৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সময়ের আবর্তে, জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মনা আর আমি আজ পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থান করছি। পারিপার্শিক দুরত্ব যাই হোক না কেন আমরা একে অপরের অতি নিকটে, সন্নিকটে আছি।
এখনকার মনা আমার অতিআদরের ছোটবোনরা।। ভাল লাগা।। বাস্তবতায়।।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:১২
আমি ভাল আছি বলেছেন: ধন্যবাদ। লিখার সময় বার বার মনে সেই দিনগুলিতে ছুটাছুটি করছিল শুধু। ভাগ্যিস মনটা সেখানেই থেকে যেতে পারত যদি!
৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৩৫
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: না পারবে না,বাস্তবতার নীরিক্ষে।। ধন্যবাদ।।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৪
আমি ভাল আছি বলেছেন: ক্ষুধার রাজ্যে যেমন পৃথিবী গদ্যময় তেমনি বাস্তবতার নিরিখে কল্পনা অর্থহীন
৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বাস্তবে ক্ষুদার রাজ্যে পূণিমার ঝলসানো রুটির মত-তাই না??
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০১
আমি ভাল আছি বলেছেন: ক্ষুধার্ত উদরে পূর্নিমার চাঁদ দেখার সময় কই
৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯
আরমিন বলেছেন: পোস্টে অনেক অনেক ভালোলাগা!
আদরের ছোটবোনেরা ভালো থাকুক!
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০২
আমি ভাল আছি বলেছেন: ভাললাগা জানানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৩
শায়মা বলেছেন: আমার কমেন্টটা কোথায়???
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৮
আমি ভাল আছি বলেছেন: আমিও খুজতেছি। সেই প্রথম দিন থেকেই। আবার যদি কস্ট করে মন্তব্য করতেন তাহলে খুবই উপকৃত হতাম। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৯
বেগুনী ক্রেয়ন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন