![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগ তো আমি এমনি এমনি পড়ি আর মাঝে মধ্যে লিখিও;) অন্যদের লেখায় মন্তব্য করার মজাটাই আলাদা। Tareq_chtg@ইয়াহু.কম
আজকে টিনার বিয়ে হয়ে গেল। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার এই সব বিষয় ভাল লাগেনা আবার খারাপ ও লাগেনা। যা গেছে সব তুহিনের গেছে। কপাল পুড়লে পুড়েছে তুহিন আর টিনার। তাতে আমার কি?
আজকের সারাটা দিন আমি তুহিনের সাথে কাটিয়েছি। দিনটি তুহিনের জন্য খুব ই দুঃখের দিন ছিল। আজকের তারিখটি ছিল ২৫শে অক্টোবর ২০০৭। ২৫ তারিখটি তুহিনের জীবনে অনেক অর্থ বহন করে। কোনো এক ২৫ তারিখেই টিনা তুহিনের কাছে সত্যি কথাটি প্রকাশ করে। ওই তারিখটিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য তুহিন একটা ইমেইল আইডিও খুলেছিল। তুহিন২৫৬ এট ইয়াহু ডট কম। আসলেই কম হয়ে গেছে।
তুহিন এইবার আমাদের এলাকা চুনারুঘাটে ঈদ করেছে। কেমন দুঃখ থাকলে একটা মানুষ তার নিজের এলাকা(সূতাং) ছেড়ে অন্য এলাকায় ঈদ করতে পারে! ঈদের সময় যখন আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল তখন আমাকে টিনার বিয়ের খবর দিয়েছিল। চোখ দুটি টলটল করছিল। তবে ও নিজেকে বেশ সামলে নিয়েছিল। সবকিছুকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিল। তাই আজকে সারাদিন কোন ধরনের হায় হুতাশ করেনি। শুধু টিনার সংসার জীবন যেন সুখের হয়ে সে জন্য কায়মনোবাক্যে দুয়া করেছিল। আল্লাহ সে দুয়া কবুল করবেন কি না জানিনা। কারন কাউকে কস্ট দিয়ে জীবনে সুখী হওয়া যায় না।
তুহিনের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০০১ সালে, বৃন্দাবন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে যখন ভর্তি হই। আমার ছোট বোনের প্রানপ্রিয় বান্ধবী সাব্বিনের মাধ্যমে। সম্পর্কে তুহিন আমার মামা হয়। দুজনে দুজনকে মামু বলে সম্বোধন করি। তবে ইদানিং আমি ওকে নানার পুত বলে ডাকি। শালার পুত বলে ডাকতে পারি না বলেই এই বিশেষ নামের আবিস্কার। বই পড়া আমাদের প্রিয় কাজ ছিল। সে সুবাদের দুজনের মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে। বইয়ের আদান প্রদানও ঘটে। পরবর্তীতে আমি, তুহিন আর হাফিজ এক মেসে আবাস গড়ি। আমাদের মেসের নাম দিয়েছিলাম তুহাতা সাইন্টিস্ট মেস। আমাদের মধ্যে তখন একটা বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী ভাব চলে আসে। সারাক্ষন শুধু বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা। তবে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কল্প কাহিনির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। হাফিজ ছিল মাল্টি টেলেন্ডেট পারসোনালিটি। ওর আকিবুকির হাত ছিল পাকা। তাই সে বড় একটা আর্ট পেপারে সুন্দর করে লিখে দিল তুহাতা সাইন্টিস্ট মেস। আর আমরা সেটা মেসের বাহিরের দেয়ালে আটা দিয়ে সেটে দিলাম।
এক মেসে, একই রুমে থাকার সুবাদে একে অন্যকে আরো ভালভাবে জানতে পারি। সবাই সবার মনের কথা শেয়ার করি। এক রাতে দেখি তুহিনের মনটা ভীষণ খারাপ। উদাস উদাস ভাব, মন বসেনা পড়ার টেবিলে অবস্থা। আমাদের থেকে একটু দূরে সরে বিছানার কোণায় বসে এক মনে একটি ছবির দিকে চেয়ে আছে আর দীর্ঘস্বাস ফেলে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম মায়াভরা নীল নয়না দীঘলকেশি বালিকাটি কে? নাম বলল টিনা। তার বাল্যকালের বনধু ইমনের একমাত্র ছোটবোন। আমি বললাম টিনা কি তার আসল নাম নাকি কুচ কুচ হোতা হ্যায় এর রানি মুখার্জীর থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে এই নামকরন? কুচ কুচ হোতা হ্যায় এর সাফল্য তখন তুঙ্গে। তাই এরকম নাম রাখাটা বিচিত্র কিছু নয়। যাই হোক সে আশায় গুড়ে বালি দিয়ে বলল না, ওটা টিনার আসল নাম ই। প্রায় রাতেই দেখতাম টিনার ছবিটা মানিব্যাগ থেকে বের করে দেখত। তুহিন টিনা কে খুব ভালবাসত। কিন্তু সেটা নাকি একতরফা। পেয়ার কা ইজহার আব তাক নেহি কিয়া। হোয়াট এ ট্রাজেডি!!!
আমি আর হাফিজ তুহিনের মজনু অধ্যায় নিয়ে অনেক হাসি তামাশা করতাম। একদিন আচানক হাফিজ মিয়ার থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসল। উনিও তুহিনের মত বাল্যকালের প্রেমিকার ছবি নিয়ে পঙ্কজ উদাস! তবে উনার তিনার ছবিটি থাকে ট্রাঙ্কে। মনের গহীনে। হাফিজ মিয়ার প্রেমিকার নাম স্মৃতি। পাশের বাড়ির মেয়ে। সম্পর্কে মামাতো বোন। আগুনলাগা সুন্দরী। যে দেখবে তার ই ভাল লাগবে। আর হাফিজ মিয়া তো ছোটবেলায় কত্ত তার সাথে বউ-জামাই, জামাই-বউ খেলা খেলেছে। সে খেলাটাই হয়ত হাফিজ মিয়ার সর্বনাশ করেছে। এখানেও সেইম ট্রাজেডি। পেয়ার কা ইজহার নেহি কিয়া আব তাক। আমি বললাম মিয়ারা, পিয়ার কিয়া ত ডরনা কিয়া??? ওরা হাসতে পারতনা শুধু আমাকে নিয়েই। আমি ছিলাম এবং আজো আছি অন্য ধাতে গড়া। তুহিন আর হাফিজ আমাকে বলত ভ্যান্ডোরিয়ান। অর্থাৎ ভ্যান্ডোরিয়া গ্রহ থেকে আগত এলিয়েন।
তবে পরে, অনেক পরে তুহিন টিনা কে আর হাফিজ স্মৃতিকে তাদের ভাললাগা ভালবাসার কথা বলতে পেরেছিল। টিনাও তার মনের কথা তুহিনেকে বলেছিল। বলেছিল সেও তুহিনকে ভালবাসে। আর স্মৃতি ইরানী ছিল নিমরাজী। তাতেই দুজনের খুশি দেখে কে। যেদিন টিনা তুহিনের কাছে স্বীকার করে যে সে ওকে ভালবাসে সেদিন ওরা ট্রেনে করে কুস্টিয়া টিনার মামার বাড়ি যাচ্ছিল। তারিখটি ছিল ২৫ তারিখ। সেদিনের জার্নি বাই ট্রেনটা নাকি তুহিনের জীবনের শ্রেষ্ট জার্নি ছিল। আর আজকে যখন টিনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কেলেন্ডারের পাতাটা তখন নির্মমের মত জানান দিচ্ছে আজকের দিনটাও ২৫ তারিখ। ভাগ্যের কি নির্দয় পরিহাস। এমন একটা তারিখ যা কি না আনন্দ ও বেদনা দুটিই একসাথে বহন করে। এ যেন মুসলিম জাহানের ১২ই রবিউল আওয়াল। নিয়তির এ কি খেলা। একেই বলে ভাগ্যের ফের। কপালের লিখন না যায় খন্ডন।
আজকের সারাটা দিন তুহিন আমার সাথে কাটিয়েছে। ওর এই করুন দিনে পাশে থেকে ভালই লেগেছে। সারাটা দিন আমরা মসজিদের পরিবেশে কাটিয়েছি। প্রথমে আমরা যাই হাই কোর্ট মাজারে। সেখান থেকে সোজা চলে আসি কাকরাইল মসজিদে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান শুনলাম ঈমান আমাল নিয়ে। নিজেরাও নিজেদের মধ্যে অনেক আলাপ আলোচনা করালাম। তুহিন আজকে রোজা রেখেছে। উদ্দেশ্য আল্লাহ যেন টিনার সংসার জীবনকে সুন্দর আর কামিয়াব করেন। এই যুগে এমন প্রেমিক পাওয়া মুশকিল। অনেককে দেখেছি প্রেমিকার বিয়ের দিন পাড় মাতাল হয়ে পড়ে থাকে নয়ত নেশার জগতে পা বাড়ায়। প্রেমিকার নতুন সংসার কে ভাঙ্গার জন্য জানপ্রাণ চেষ্ঠা চালায়। আমার মামু তুহিন ইজ দ্যা বেস্ট। আশা করি আল্লাহ তার জন্য বেস্ট ফয়সালা করবেন। আমিন।
তুহিন বলল প্রতি মাসের ২৫ তারিখ নাকি একটা করে রোজা রাখবে। ভালই ত। ইফতারি শেষে দুজন যার যার মেসে চলে গেলাম। সারাটা দিন তুহিন অনেক শক্ত হয়ে ছিল। রুমে ফেরার পর তুহিন কে ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ করেই সে কি কান্না! সালাতুল হাজত পড়ে টিনার জন্য দুয়া করতে গিয়ে নাকি কান্না কিছুতেই থামাতে পারছে না। তুহিনের কান্না শুনে আমার পাথর মনের কান্নার ঢেউ লাগলে লাগল। তবে আমি তাকে থামানোর চেস্টা করিনি। বললাম, কাদো মামু কাদো। বেশি করে কাদো। আজ ত তোমার কান্নার ই দিন। সব দুঃখ বেদনা আজ অশ্রু জলে বইয়ে দাও।
হায় রে বিয়ে! ছেলে মেয়ে দুজনেই কাদছে। ছেলে কাদছে মেয়েটির জন্যে। তবে মেয়েটিও কি ছেলেটার জন্যে একটু হলেও কাদছে? কে জানে! আল্লাহ তুমি দুজনের অন্তরে শান্তি দান করো। দুজনকেই একে অন্যকে ছেড়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করো। আমিন।
তার কয়েক বছর পর তুহিন চলে গেল বিলেতে। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য। সবাই সেটাই জানে। কিন্তু আমি জানি সে টিনাকে ভুলার জন্যই বিলেতে গেছে। এই জীবনে টিনাকে ভুলা কি আর সম্ভব? সত্যিকারের প্রেম এত সহজেই বিলীন হয় না। মনের গভীরে সর্ষে দানা হয়ে থেকে যায়। সর্ষে দানা তাই অন্য দিকে তুহিনের মনকে যেতে দেয় নি। একান্ত বাধ্যগত প্রেমিক হিসেবে ধরে রেখেছে। তিন বছর বিলেত থাকল। উচ্চশিক্ষা ও লাভ করল। তারপর দেশের টানে চলে গেল। যাবার কিছুদিন পরেই পারিবারিক ভাবে বিয়ে করল। শেষবার যখন তুহিনের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম তখন বলল ওদের একটা বাচ্চাও নাকি হয়ে গেছে। আজ সে পরিবার নিয়ে অনেক সুখী। সময় আসলে সব কিছুকেই ভুলিয়ে দেয়, সব ক্ষত কে ঠিক করে দেয়। কসম সময়ের! সময়ের মত ওসুধ আর দ্বিতীয়টি নেই।
১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ২:০০
আমি ভাল আছি বলেছেন: আমি ভাল আছি পরী আপু। না আমি তুহিন নই। আমি প্রেমিক ও না ব্যর্থও না। হাহাহাহা
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৮
শায়মা বলেছেন: ভাতভাইয়া!!!!!!!!!!!
কেমন আছো?????
তুহিনকে তো তুমি ভেবেছিলাম!!!!!!!!!